
১/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (১ম- পর্ব) এবং
২/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (২য়- পর্ব) -দেখে নিলে বুঝতে সুবিধা হবে।
................................................................................................
ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৩য়- পর্ব)
(vi) জনৈক পাঠকের মন্তব্য-
(তাই আমি বলেছি যে, জাহেলি যুগে দাসপ্রথার ব্যাপক প্রচলন ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের সাথে সাথে তাই হঠাৎ কোরে তা রহিত করা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে যুক্তিযুক্ত ছিলনা। ইসলামে দাসপ্রথাকে নিরুৎসাহিত করার মাধ্যমে তা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছিল তা অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ বলেই আমি বিশ্বাস করি।)
১/ ভাই, আপনি উপরে যেভাবে বলেছেন এইরূপ যারা ব্যখ্যা করেন তারা বর্তমান মূল্যবোধের আলোকে আল্লাহর নির্দেশকে ট্যুইষ্ট করছেন বলে আমার বিশ্বাস।
২/ ইসলামে দাস প্রথা নিরুৎসাহিত করে নাই। কারণ দাসত্ব প্রথাকে ইসলাম খারাপ দৃষ্টিতে দেখে নাই। আর বাস্তব সত্য যে দাসত্ব প্রথা আগে ছিল, এখনও আছে, আগামীতে থাকবে। শুধু বাইরের বোতল বদল হচ্ছে, ভিতরের মাল একই থাকছে। মানুষের সহজাত ধর্ম সে কারো না কারো কাছে সমর্পিত থাকে।
৩/ তবে ইসলাম যেটি বলে- মানুষ দাস হোক কিংবা আযাদ তাকে সমান ভাবে মর্যাদা দিতে হবে। শুধু মুখে নয় ইসলাম তা বাস্তবে করে দেখিয়ে দিয়েছে।
৪/ এই দুনিয়াতে যতদিন পর্যন্ত মানুষ ক্ষুধা নিবারনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হবে, এবং এই খাদ্য উৎপাদনের জন্য দাস বলেন, মজুর বলেন, শ্রমিক বলেন, জনশক্তি বলেন কিংবা আধুনা মানব সম্পদ বলেন, তা কিন্তু দাসত্বের নামান্তর।
………………................................................
লেখক বলেছেন-
আপনি বলেছেন- ১/ //*ভাই, এইরূপ যারা ব্যখ্যা করেন তারা বর্তমান মূল্যবোধের আলোকে আল্লাহর নির্দেশকে ট্যুইষ্ট করছেন বলে আমার বিশ্বাস।//
২/ //ইসলামে দাস প্রথা নিরুৎসাহিত করে নাই। কারণ দাসত্ব প্রথাকে ইসলাম খারাপ দৃষ্টিতে দেখে নাই। আর বাস্তব সত্য যে দাসত্ব প্রথা আগে ছিল, এখনও আছে, আগামীতে থাকবে। শুধু বাইরের বোতল বদল হচ্ছে, ভিতরের মাল একই থাকছে। মানুষের সহজাত ধর্ম সে কারো না কারো কাছে সমর্পিত থাকে।//
...................
আমার জবাব-
ভাই, আমি আপনার এহেন বক্তব্যে //ইসলামে দাস প্রথা নিরুৎসাহিত করে নাই-!!?// সত্যিই অবাক না হয়ে পারছি না!
আপনি কোন ধ্যান ধারনার আলোকে এমন বুলি আওড়ালেন? নিশ্চয় পুঁজিবাদী ধারনা। আসলে আপনি সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন। ইসলাম যদি দাসপ্রথাকে নিরুৎসাহিত না করেই থাকে, তাহলে ইসলামের মূল কিতাব যিনি পাঠিয়েছেন তিনি তাঁর নিচের এই বাণীগুলো কি এমনি এমনি তামাশা করার জন্য প্রেরণ করেছেন?
সূরা আল বাক্বারাহ (মদীনায় অবতীর্ণ )
(২:১৭৭) অর্থ- সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ )-
(৪:৯২) অর্থ- মুসলমানের কাজ নয় যে, মুসলমানকে হত্যা করে; কিন্তু ভুলক্রমে। যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন বিশ্বাসী ক্রীতদাস কিংবা দাসী (مُّؤْمِنَةٍ رَقَبَةٍ) মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে বিশ্বাসী ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন বিশ্বাসী ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহর কাছ থেকে গোনাহ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপুরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
সূরা আল মায়েদাহ (মদীনায় অবতীর্ণ )
(৫:৮৯) অর্থ- আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্ত্র প্রদান করবে অথবা, একজন ( رَقَبَةٍ) ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।
ইসলাম দাসত্ব প্রথাকে সব সময় খারাপ দৃষ্টিতেই দেখেছে। তবে দাস-দাসীদের কখনই খারাপ দৃষ্টিতে দেখে নাই। দাস-দাসীরাও মানুষ এবং সকল মানুষ শুধুমাত্র আল্লাহর দাস। তাই তো বার বার দাসমুক্তির কথাই বলেছে এবং তা বাস্তবে করেও দেখিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-
1) Sahih al-Bukhari > Sales and Trade > Hadith permalink
Narrated Abu Huraira: The Prophet said, "Allah says, 'I will be against three persons on the Day of Resurrection: -1. One who makes a covenant in My Name, but he proves treacherous. -2. One who sells a free person (as a slave) and eats the price, -3. And one who employs a laborer and gets the full work done by him but does not pay him his wages.'
2) Sunan Abi Dawud > Prayer (Kitab Al-Salat) > Hadith permalink
... Narrated Abdullah ibn Umar: The Prophet (peace_be_upon_him) said: There are three types of people whose prayer is not accepted by Allah: One who goes in front of people when they do not like him; a man who comes dibaran, which means that he comes to it too late; and a man who takes into slavery an emancipated male or female slave. ...
অপরদিকে আল-কোরআনে সত্যিকার ধার্মিক হবার জন্য দুটি পথের মধ্যে একটিকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এই পথটিকে ঊর্ধ্বগামী অর্থাৎ উচ্চমার্গের/উৎকৃষ্ট পথ (ধর্মের ঘাঁটি) হিসেবে আখ্যায়িত করে সেই পথে চলার শর্ত হিসেবে দাসমুক্তির কথা বলা হয়েছে-
সূরা আল বালাদ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৯০:১০) অর্থ- আর আমরা কি তাকে দুটি পথই প্রদর্শন করিনি।
(৯০:১১) অর্থ- কিন্তু সে ঊর্ধ্বগামী/উচ্চমার্গের/উৎকৃষ্ট পথটি ধরতে চায়নি (ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি)।
(৯০:১২) অর্থ- তুমি কি জান, সে ঊর্ধ্বগামী/উচ্চমার্গের/উৎকৃষ্ট পথটি (ঘাঁটি) কি?
(৯০:১৩) অর্থ- তা হচ্ছে দাসমুক্তি,
আবারও মন দিয়ে আল্লাহর প্রেরিত বাণী এবং রাসূলের (সাঃ) হাদিছগুলো পড়ে দেখুন। এরপরও কি আপনি বলবেন- ইসলাম দাস প্রথাকে নিরুৎসাহিত করে নাই!!? দাসত্বমুক্ত সমাজ গড়ার কথা বলে নাই!!??
আল-কোরআনের বাণী টুইস্ট করল কে- আপনি নাকি আমি!?
…………………..
আপনি বলেছেন-
৩/ //*তবে ইসলাম যেটি বলে- মানুষ দাস হোক কিংবা আযাদ তাকে সমান ভাবে মর্যাদা দিতে হবে। শুধু মুখে নয় ইসলাম তা বাস্তবে করে দেখিয়ে দিয়েছে।//
……...............
আমার জবাব-
ইসলামের প্রাথমিক পর্যায়ে যখন সমাজে দাসত্ব প্রথার প্রচলন ছিল তখন সেই প্রাচীন প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য "দাস হোক কিংবা আযাদ হোক" সকল মানুষকে সমান মর্যাদা দেবার কথা তো বলতেই হত- আর শুধু বুলি নয়, বরং বাস্তবে তা কোরে দেখানোর মাধ্যমে ইসলাম সেই কথাকে প্রমান করে দেখিয়েছে।
……………………...
আপনি বলেছেন-
৪/ //*এই দুনিয়াতে যতদিন পর্যন্ত মানুষের ক্ষুধা নিবারনের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন হবে, এবং এই খাদ্য উৎপাদনের জন্য দাস বলেন, মজুর বলেন, শ্রমিক বলেন, জনশক্তি বলেন কিংবা আধুনা মানব সম্পদ বলেন, তা কিন্তু দাসত্বের নামান্তর।//
………………….....
আমার জবাব-
কিন্তু তাই বলে মজুর, শ্রমিক অর্থাৎ দরিদ্র জনগণ এমনকি জনশক্তি ও মানব সম্পদকেও আপনি দাসদের কাতারে সামিল করে দেবেন!!? এটা পুঁজিবাদি ধ্যান ধারনা হতে জন্ম নিতে পারে, প্রকৃত ইসলাম কখনই এই শিক্ষা দেয় না। যদি কোন সমাজে এরূপ মতবাদ প্রচলিত থাকে তাহলে কখনই সেটাকে ইসলামি সমাজ বলা যেতে পারে না। আর যতদিন মুসলিমরা এ ধরনের ধ্যান-ধারনা থেকে মুক্ত হতে পারবে না, ততদিন আল্লাহতায়ালা তাদেরকে কখনই বিজয় দান করবেন না। একালে তো নয়ই, পরকালেও মুক্তি মিলবে কিনা সন্দেহ।
মাহফুজ-
(ক্রমশ চলবে-----------)
.............................................................................................
বিঃ দ্রঃ- এখন নয়, শেষ পর্বের পরে প্রশ্নের জবাব দেয়া হবে-
কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য মুছে ফেলা হবে, প্রয়োজনে ব্লক করতে বাধ্য হব-
৪/ ইসলাম কি দাসপ্রথাকে আদৌ সমর্থন করে? (৪র্থ- পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩৯