অবিশ্বাসীদের কাছে বিজ্ঞানের বিশ্লেষক হিসেবে খ্যাত একজন ব্লগার কিছুদিন পূর্বে আমার পোষ্ট সম্পর্কে না বুঝেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস নিয়েছিলেন। সংগত কারনেই তার জবাব দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি। অবিশ্বাসীদের মধ্যে যারা অন্তত কিছুটা হলেও জ্ঞান রাখেন আমি তাদের কথা বলছিনা। অজ্ঞানতা ও বিভ্রান্তির আঁধারে হাবুডুবু খেয়ে যারা তার সাথে ছিলেন- আমি তাদের দৃষ্টিও আকর্ষণ করছি। শব্দ চয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে আমি যে ভাব প্রকাশ করতে চেয়েছি- হয়ত কোন কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে তা তার কাছে স্পষ্টরূপে ফুটে নাও উঠতে পারে। সেক্ষেত্র তিনি তো প্রশ্ন ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে সুস্থ-মস্তিষ্কে বিষয়টিকে বোঝার চেষ্টা করতে পারতেন। কিন্তু তা না কোরে- না বুঝেই শুধু প্রলাপই বকে গেলেন। হোক সে নাস্তিক বা আস্তিক- সে যে হালকা মনের একজন হুজুগে প্রকৃতির মানুষ, একটি পোষ্টের শিরোনামই সেই সাক্ষ্য বহন করছে। উত্তেজনার হুজুগে মেতে তিনি যে মিথ্যার বিষবাষ্প ছড়াবার অপচেষ্টা করেছেন তা সত্যসন্ধানীরা একদিন ঠিকই বুঝতে পারবেন। আমার লেখা যারা পড়েন এবং সব সময় সাথে থাকেন- আমার বিশ্বাস তারা এসব বিভ্রান্তিকর কথায় বিচলিত হবেন না। মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সবাইকে ধৈর্য সহকারে সত্যকে জানার ও বোঝার তৌফিক দান করেন।
তার রুচিবোধ এমনই যে পোষ্টের শিরোনামে 'ধর্ষন' শব্দটি চয়ন করতেও দ্বিধা করেন নাই। যারা এমনতর অপকর্মে অভ্যস্ত- তারা হয়ত সুস্থ জ্ঞান-চর্চার মাঝেও এ ধরনের শব্দ প্রয়োগ করে এক্সট্রা মজা ও ফায়দা লুটতে চান। জ্ঞান ও মনের দিক থেকে ম্যাচিউরিটির অভাব থাকলে যা হয় আরকি। আমাকে নিয়ে লেখা- তার একটি বিশাল কিন্তু সারগর্ভহীন পোষ্টে তিনি নিজেকে মহান আল্লাহতায়ালার ঐশী কিতাব আল-কোরআনের একজন (নকল) সমজদার ও ভক্তের ভাব দেখালেও তার অতীত বচন ও পোষ্টগুলো তো আসল রূপেরই সাক্ষ্য বহন করছে। হাজার চেষ্টা করলেও সত্যকে কি কখনো ঢেকে রাখা যায়? আমি তার নাম নিতে চাইনা। নিচে তার ঠিকানা দিলাম। গত ২৮/১০/১০ ইং তারিখে সামুতে ও ২৯/১০/২০১০ ইং তারিখে আমুতে আমাকে নিয়ে লেখা পোষ্টটি সহ তার আগের পোষ্টগুলোও সেখানে পাবেন।
http://www.somewhereinblog.net/blog/Horus
কোরানে বিজ্ঞান খুঁজতে যেয়ে যখন কোরান হয় বিকৃত আর বিজ্ঞান হয় ধর্ষিত!!
এবার আমি তার সেই বিশাল পোষ্টের (“মাথা নিচে, পা উপরে”- কোরে)সর্বশেষ অনুচ্ছেদ থেকে শুরু করতে চাই। কারন এখানে তিনি আমার ভুল ধরতে গিয়ে যে তার স্বজাতির একজন খ্যাতিমান বিজ্ঞানীর দেয়া তথ্যেরই ভুল ধরার দুঃসাহস দেখিয়েছেন- প্রথমে সেটা তো পরিষ্কার করা দরকার।
{ তিনি অবুঝের মত বলেছেন- (যাই হোক, লেখাটা অনেক বড় হয়ে গেল। আশা করি পাঠকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি। তবে শেষ করার আগে আরেকটি কথা বলতে চাই। আমার উল্লেখকরা পয়েন্টগুলা ছাড়াও আরও বেশ কিছু ভুল তথ্য আছে তার পোস্টে। একটা উদাহরণ দেই। উনি বলেছেন, "সূর্যের চেয়ে অনেক বেশী ভরসম্পন্ন বড় বড় তারকাগুলো ইতিমধ্যে তাদের জ্বালানী জ্বালীয়ে শেষ করেছে।" কথাটা যে কতটা ভুল তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। আমাদের মিল্কিওয়েতেই আছে ৪ বিলিয়ন নক্ষত্র। এর বেশির ভাগই সূর্য্যের চেয়ে অনেক অনেক বড়। আর বাকি মহাবিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সির শত কোটি বিলিয়ন নক্ষত্রের কথা নাইবা বললাম। সব নিয়ে লিখতে গেলে মহাকাব্য হয়ে যাবে। তার নতুন পোস্টটিতেও এরকম অনেক ভুল এবং গোঁজামিল দেয়া উদাহরণ আছে। তবে সেগুলো নিয়ে লেখার প্রয়োজন হবে বলে মনে করিনা। আর আশা করব আজকের পর কোরানকে বিজ্ঞানময় প্রমাণ করার জন্য বিজ্ঞানের ধর্ষন বন্ধ হবে এবং সুস্হ্য বিজ্ঞান চর্চার জয় হবে। সবাই ভালো থাকবেন।)}
উপরের বক্তব্যে তিনি মহাকাব্য লেখারও অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন । বাহ বাহ লিখুক লিখুক। আমার বেদৌলতে নাস্তিক জাতি যদি একজন লেখক এবং একই সাথে একটি মহাকাব্য পেয়েই যায়- যাকনা,তাতে ক্ষতি কি!!! শ্রদ্ধেয় পাঠকগন, লক্ষ করুন- উনি এখানে যে লাইনটির নিচে দাগিয়ে দিয়েছে ("সূর্যের চেয়ে অনেক বেশী ভরসম্পন্ন বড় বড় তারকাগুলো ইতিমধ্যে তাদের জ্বালানী জ্বালীয়ে শেষ করেছে।") এবং ভুল বলার সাহস দেখিয়েছে তা দেখলে হাসতে হাসতে আমার-------কি আর বলব!!
তিনি বলেছেন - "কথাটা যে কতটা ভুল তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।"
আবারও হাসি পাচ্ছে। অল্পবিদ্যা কি যে ভয়ংকর!!! তিনি যে খোদ তার গুরু স্টিফেন হকিংস- এরই ভুল ধরেছেন, তা কি তিনি জানেন? কেমনে জানবে?? না জেনে-শুনেই এমন কাজে হাত দিলে যা হয়, তাই হয়েছে। তার গুরুই যে এই তথ্যের কথা বলেছে- "কুষ্হগহ্বর এবং শিশুমহাবিশ্ব ও অন্যান্য রচনা" বইটির এগার আধ্যায়ের ১০৯ পৃষ্ঠায় এবং "কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস" বইটির ছয় অধ্যায়ের ৯৮ পৃষ্ঠায় তা আপনারা দেখে নিতে পারেন।
{এখানে আমি সেই বই দু'ট থেকে সংক্ষেপে আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত কিছু অংশ হাইলাইট করছি-
"কুষ্হগহ্বর এবং শিশুমহাবিশ্ব ও অন্যান্য রচনা"- এগার আধ্যায়- ১০৯ পৃষ্ঠা- শেষ পর্যন্ত কিন্তু সূর্যের পারমানবিক জ্বালানী ফুরিয়ে যাবে। এরকম ঘটনা পাঁচশ কোটি বছরের আগে হবে না।----তবে সূর্যের চাইতে অধিক ভর সম্পন্ন তারকাগুলো, তাদের জ্বালানী আরও দ্রুত জ্বালিয়ে শেষ করবে। তাদের ভর যদি সূর্যের দ্বিগুনের চাইতে কম হয় তাহলে তারা শেষে সঙ্কুচিত হওয়া বন্ধ করবে এবং একটা সুস্থির অবস্থায় স্থিতি লাভ করবে। এইরকম একটি অবস্থার নাম শ্বত বামন (white dwarf) । ১১০ পৃষ্ঠা-----এই রকম আরও একটি অবস্থার নাম নিউট্রন তারকা।-----আমাদের নীহারিকায় আমাদের নিকট সান্নিধ্যে বহু শ্বেত বামন আমরা পর্যবেক্ষণ করি।
"কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"- ছয় অধ্যায়- ৯৭ পৃষ্ঠা - একটি স্ববিরোধী ব্যাপার হল: শুরুতে তারকাটির জ্বালানী যত বেশী থাকে জ্বালানী ফুরিয়ে যায় তত তাড়াতাড়ি।----- ৯৮ পৃষ্ঠা- আমাদের সূর্যের বোধহয় আর পাঁচশো কোটি বছর কিংবা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত চলবার মত জ্বালানী আছে, কিন্তু আরও ভরসম্পন্ন তারকাগুলি দশ কোটি বছরের মতো অল্প সময়েই তাদের জ্বালানী শেষ করে দিতে পারে। এই কাল মহাবিশ্বের বয়সের চাইতে অনেক কম। একটি তারকার জ্বালানী শেষ হয়ে গেলে সেটা শীতল হতে থাকে আর সঙ্কুচিত হতে থাকে। তখন সেটা কি হতে পারে সেটা বোঝা গিয়েছিল শুধুমাত্র ঊনিশশো কুড়ির দশকের শেষে। ------৯৯ পৃষ্ঠা- একটি তারকার ভর যদি চন্দ্রশেখর সীমার চাইতে কম হয় তাহলে সেটা সম্ভব্য অন্তিম দশায়"শ্বেত বামন" (white dwarf) রূপে স্থিতিলাভ করতে পারে।---------বহু সংখ্যক এইরকম শ্বেত বামন তারকা আমরা পর্যবেক্ষণ করে থাকি। প্রথম যে কটি এই ধরনের তারকা আবিষ্কৃত হয়েছিল তার ভিতরে একটি সিরিয়াস (Sirius) নামক তারকাকে প্রদক্ষিণ করে।}
উপরের দেয়া তথ্য থেকে নিশ্চ্য় বুঝতে পারছেন, তিনি কত বড় ভ্রান্তির মধ্যে বাস করছেন। আমার পোষ্টটি নিয়ে তিনি একই কান্ড করেছেন।
তিনি তার পোষ্টে শ্বেত বামনের যে ছবি দিয়েছেন- এ ধরনের অসংখ্য শ্বত-বামন কি মহাকাশে আবিষ্কৃত হচ্ছেনা? অবশ্যই হচ্ছে। সূর্যের চাইতে অধিক ভরসম্পন্ন তারকাগুলো তাদের জ্বালানী দ্রুত জ্বালীয়ে শেষ করার কারনেই তো সেগুলো শ্বেত-বামনে পরিণত হয়েছে। পাঠকদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বিজ্ঞানের তথ্য অনুসারে যে সব তারকার ভর সূর্যের ভরের ৮ গুণের চেয়ে কম সেগুলো শ্বেত-বামন হিসেবে স্থিতি লাভ করে অর্থাৎ এগুলোর ভর চন্দ্রশেখরের সীমার নিচে থাকে। চন্দ্রশেখর সীমার চাইতে কম ভর সম্পন্ন অন্যান্য তারকাগুলোও কালের প্রবাহে অবশেষে শ্বেতবামনে পরিণত হবে।
How does a star become a white dwarf?
What is Chandrasehkar's limit?
চন্দ্রশেখর সীমার চাইতে বেশী ভর সম্পন্ন অন্যান্য তারকাগুলোর দশা পরবর্তীতে আলোচনা করব। আজ আর বেশি কিছু লিখে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাইনা।
তবে শেষ করবার আগে শুধু বলে যাই- আমি কিন্তু আমার পোষ্টে কখনই বলিনি যে, "সূর্যটা একেবারে নিভে যাবে এবং কিয়ামতের আগেই শ্বেত-বামনে পরিণত হবে।"
নিচে পোষ্টের লিংকটি দিলাম, আপনারা দেখে নিতে পারেন এবং কোন বক্তব্য বুঝতে না পারলে সে সম্পর্কে এই পোষ্টে প্রশ্ন করতে পারেন।
মহাজাগতিক বিস্ময়গুলো সম্পর্কে আল-কোরআনের নির্ভুল তথ্যগুলো সত্যিই বিস্ময়কর!
আমি শুধু বলেছি- "সূর্যটা জ্যাতিহীন বা নিষ্প্রভ হয়ে আসবে। কিন্তু তা তখনও একেবারে নিভে যাবেনা।" তবে কিয়ামতের অনেক আগেই অসংখ্য নক্ষত্র শ্বেত-বামনে ও নিউট্রন তারায় পরিনত হবে। তাই তো হচ্ছে। কিন্তু সজ্ঞানেই হোক বা না বুঝেই হোক- আমার বক্তব্যকে তিনি সম্পূর্ণ উল্টাভাবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা করেছেন।
আল-কোরআনের ঐশী তথ্য আর বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত প্রতিষ্ঠিত তথ্যের মধ্যে যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই তা ধৈর্য সহ আমার পরবর্তী পোষ্টগুলো পড়ার পাশাপাশি একটু চিন্তা-ভাবনা করলে সুস্থ-মস্তিষ্কের যে কোন পাঠকই বুঝতে পারবেন, ইনশাল্লাহ্।
হোরাসের অজ্ঞতা দূর করার জন্য দেয়া এই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত আমার অন্যান্য পোষ্ট-
* "ব্ল্যাকহোল" সম্পর্কে নিখুঁত তথ্যগুলো আল-কোরআনে কিভাবে এলো?- তা সত্যিই ভাবায়
* তারকা থেকে ব্ল্যাকহোলে রূপান্তর- এই তথ্যটি কিরূপে আল-কোরআনে এলো? সত্যিই অবাক লাগে!
* মিথ্যাচার কোরে ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে কি আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের সত্য তথ্যকে আড়াল করা যায়?
* আল-কোরআন সম্পর্কে অবিশ্বাসীরা যতই ভ্রান্তি ছড়ায়, আল্লাহর বাণীর মহীমা যে ততই প্রকাশিত হয়- তার নমুনা দেখুন
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৯:৩৫