ডাঃ জাকির নায়েক গণমাধ্যমকে "সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক অস্ত্র" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন যা "সাদাকে কালো এবং খলনায়ককে নায়কে পরিণত করে"।
.
তিনি পরামর্শ দেন যে, "এই একই গণমাধ্যমকে আমাদের ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা, ভুল উদ্ধৃতি, ভুল ব্যাখ্যা এবং ভুল প্রদর্শনগুলোকে মুছে দেয়ার জন্য ব্যবহার করা উচিৎ।" তিনি দাবি করেন, পশ্চিমা ক্ষমতা এবং গণমাধ্যম একটি দ্বিমুখী-আদর্শের কৌশল অবলবম্বন করে, যারা ইসলামের সম্মানকে খাটো করার জন্য মুসলিমদেরকে চরমপন্থি এবং মৌলবাদী হিসেবে বর্ণনা করে। তিনি বলেন, "আজকের দিনে ইসলামের ইমেজের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দ্বারা, যা দিনরাত একটি পরিকল্পিত কৌশলের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলো গলা ফাটিয়ে প্রচার করছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, হোক তা প্রিন্ট, অডিও, ভিডিও, বা অনলাইন, তারা সকলেই একগুচ্ছ কৌশল অবলম্বন করে ইসলামের পরিচিতিকে খাটো করতে সর্বপ্রথম মুসলিম সম্প্রদায়ের কুলঙ্গারদেরকে তুলে আনে এবং এদেরকে এমনভাবে চিত্রায়িত করে যেন এরাই হল মুসলিমদের উদাহরণ।" ডাঃ জাকির নায়েক আরও দাবি করেন যে গণমাধ্যমের তৃতীয় ও চতুর্থ কৌশল হল, "কুরআন ও সুন্নাহ থেকে কোন কথা তুলে আনা এবং তা ভুলভাবে অনুবাদ করা" এবং "ইসলাম সম্পর্কে এমন কিছু বলে ইসলামের মর্যাদাকে খাটো করা যা আদৌ ইসলামের মধ্যে নেই"।
.
ডাঃ জাকির নায়েক আরও বলেন, "কোন মুসলিম মহিলা যদি হিজাব বা বোরকা পড়ে তবে তারা এর ওপর নারীর পশ্চাৎপদতার লেবেল এঁটে দেয়, কিন্তু যদি কোন খ্রিস্টান পাদ্রী মহিলা একই কাজ করে তবে তা বদলে গিয়ে তাদের কাছে সম্মান ও শালীনতার প্রতীক হয়ে দাড়ায়। ৫০ বছরের বৃদ্ধ মুসলিম ১৬ বছরের মেয়েকে তার সম্মতিতে বিয়ে করলে তা হেডলাইনে ছাপা হয়, আর ৫০ বছরের অমুসলিম ৬ বছরের কোন মেয়েকে ধর্ষণ করলে তা সংক্ষিপ্ত সংবাদ বা ফিল্টারে ছাপা হয়। তারা বলে ইসলাম নারীকে অধিকার দেয় না, এবং এটি একটি অযৌক্তিক ধর্ম। তারা ইসলামকে মানবতার সমস্যা হিসেবে চিত্রায়িত করে যেন এটি শুধুই পুরুষদের সকল সমস্যার সমাধান দেয়। একই ঘটনা ঘটে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা শব্দ "মৌলবাদী" এবং "চরম্পন্থী"র ক্ষেত্রে, যেগুলো মূলত পশ্চিমা শব্দ। একজন প্রকৃত মুসলিমকে অবশ্যই সঠিক দিকে চরমপন্থি হতে হবে, চরমভাবে দয়ালু, স্নেহপ্রবন, সহনশীল, সৎ এবং ভদ্র হওয়ার মাধ্যমে। যখন ভারতীয়রা তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছিল, ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে সন্ত্রাসীর তকমা দিত; একই কাজ, একই ব্যক্তি, কিন্তু দুটি ভিন্ন তকমা। একই ঘটনা ঘটেছে মুসলিমদের সাথে যাদেরকে গণমাধ্যমে সন্ত্রাসীর তকমা দেয়া হয়েছে, তাই কাওকে কোন কাজের জন্য তকমা দেয়ার আগে আমাদের প্রসঙ্গ ও কারণের দিকে তাকানো উচিৎ।"
.
তিনি চলচ্চিত্রে মুসলিমদের চিত্রায়িত করার সমালোচনা করে বলেন, "ইসলামের ইমেজকে হেয় করার জন্য হলিউডে এত শত শত চলচ্চিত্র বানানো হয়েছে যে, একজন মুসলিমকে আল্লাহু আকবর বলতে শুনলেই একজন অমুসলিম ভয় পেয়ে যায়, ভাবে যে সে হয়তো তাকে খুন করতে আসছে। যদি কেউ আসলেই ভালো ইসলামকে জানতে চায়, তাকে ইসলামের বিশুদ্ধ সূত্রকে পড়তে হবে; মহিমান্বিত কুরআন ও হাদিস বাদ দিয়ে এর অনুসারীদের (মুসলিমদের) দিকে তাকানো হল সেই গাড়িচালকের প্রসঙ্গের মত যার বেপরোয়া গাড়িচালনার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও তার দ্বারা চালানো সর্বশেষ হালনাগাদকৃত মারসিটিজ গাড়িকেই ওই দুর্ঘটনার জন্য দোষ দেয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম হলেন সর্বশেষ ও চূড়ান্ত বার্তাবাহক নবী মুহাম্মাদ, তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।"
.
এছাড়াও তিনি "সালমান রুশদির মত ইসলামের সমালোচনাকারী মুসলিমদের তুলে এনে তাদেরকে পদক দিয়ে পুরস্কৃত করার জন্য" গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন এবং বলেন, "যদি কোন মুসলিম কোন মহৎ কাজ করে, তারা হয়তো তাকে তার কাজের কৃতিত্ব দেয় কিন্তু তার ধর্মকে এড়িয়ে যায় অথবা তার মুসলিম নামকে বদলে দেয়; যেমন প্রাচ্যের অ্যারিস্টটল "আভিসেনা" যার প্রকৃত নাম ছিল "আলী ইবনে সিনা"। এই হলো গণমাধ্যমের অবস্থা।