somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আমিই সাইফুল
আমি একজন ইউরোপ প্রবাসী, জীবনের ঝড়-ঝাপটায় পাক খেয়ে গড়ে ওঠা আজকের এই আমি। ব্লগে তুলে ধরি মনের গভীরে লুকানো আবেগের রং, যা সোশ্যাল মিডিয়ার চটকদার আলোয় মেলে না। আমি অনুভূতির এক ফেরিওয়ালা, শব্দে বুনে যাই জীবনের অলিখিত গল্প…

গলির মোড়ে অপেক্ষা - পর্ব তিন

২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তানিয়ার সাথে লিফটে সেই ছোট্ট কথোপকথনের পর আমার মনটা আরও বেশি উৎসুক হয়ে উঠলো। তার সেই হালকা হাসি আর “দেখি, সময় হলে যাবো” কথাটা আমার মাথায় ঘুরতে লাগলো। আমি ভাবলাম, সত্যি সত্যি কি সে আব্দুল চাচার দোকানে চা খেতে আসবে? নাকি এটা শুধুই একটা সৌজন্যমূলক কথা ছিল? যাই হোক, আমি ঠিক করলাম, আজ সন্ধ্যায় আমি গলির মোড়ে অপেক্ষা করবো।
সেদিন অফিসে কাজের চাপ একটু বেশি ছিল। বস আমাকে একটা প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে বলেছিলেন, যেটা শেষ করতে বিকেল গড়িয়ে গেল। কিন্তু মনের এক কোণে সবসময় তানিয়ার কথা ঘুরছিল। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ঘড়িতে দেখলাম, সন্ধ্যা ছয়টা বেজে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা দিলাম। মনে মনে ভাবলাম, আজ যদি তানিয়ার সাথে দেখা হয়, তাহলে একটু বেশি কথা বলার চেষ্টা করবো

বাসার কাছাকাছি পৌঁছে আমি সোজা আব্দুল চাচার দোকানে গেলাম। চাচা আমাকে দেখে হেসে বললেন, “কী রে রিয়াদ, আজ আবার চা?” আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ চাচা, আজ এক কাপ চা দেন। আর একটু বসবো এখানে।” চাচা চা বানাতে বানাতে বললেন, “কী ব্যাপার, আজ বড্ড চিন্তিত মনে হচ্ছে। কিছু হয়েছে নাকি?” আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম, “না, চাচা। শুধু একটু চা খেতে ইচ্ছে করলো।”
চাচা চায়ের কাপটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, “তোর চোখে-মুখে কিন্তু অন্য কিছু বলছে।” আমি হেসে চুপ করে গেলাম। চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমি গলির দিকে তাকিয়ে রইলাম। মিনিট দশেক পর দেখি, তানিয়া বিল্ডিং থেকে বের হচ্ছে। তার পরনে একটা কালো কুর্তি, আর হাতে একটা ছোট ব্যাগ। আমার বুকের ভেতরটা আবার ধক করে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালাম।
তানিয়া গলির মোড়ে এসে একটু থমকে দাঁড়ালো। আমার দিকে তাকালো। আমি হাত তুলে একটু ইশারা করলাম। সে ধীরে ধীরে দোকানের দিকে এগিয়ে এলো। আমি বললাম, “আপনি এসেছেন! আমি ভাবছিলাম, আসবেন কি না।” তানিয়া হেসে বলল, “আমি বলেছিলাম না, সময় হলে আসবো। আজ একটু সময় পেয়েছি।” আমি খুশি হয়ে বললাম, “বেশ, তাহলে এক কাপ চা খান। আব্দুল চাচার চা খুব ভালো।”
তানিয়া একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে।” আমি চাচাকে বললাম, “চাচা, আরেক কাপ চা দেন।” চাচা মুচকি হেসে চা বানাতে লাগলেন। তানিয়া দোকানের একটা চেয়ারে বসলো। আমিও তার পাশে বসলাম। আমি বললাম, “আপনার বান্ধবীর বাসায় যাওয়া কেমন হলো?” সে বলল, “ভালো। অনেকদিন পর ওর সাথে দেখা হলো। একটু গল্প করলাম।” আমি বললাম, “ওহ, ভালো। আমার তো এখানে তেমন কেউ নেই। বেশিরভাগ সময় একাই থাকি।”

তানিয়া একটু অবাক হয়ে বলল, “একা? আপনার ফ্যামিলি কোথায়?” আমি বললাম, “আমার বাবা-মা গ্রামে থাকেন। আমি এখানে চাকরির জন্য এসেছি।” সে বলল, “ওহ, তাই। আমারও বাবা-মা গ্রামে। আমি এখানে পড়াশোনা আর চাকরির জন্য থাকি।” আমি বললাম, “তাহলে তো আমরা একই নৌকায়।” সে হেসে বলল, “হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে।”
চাচা চায়ের কাপটা তানিয়ার সামনে রাখলেন। আমরা দুজনে চা খেতে শুরু করলাম। আমি বললাম, “আপনি কী করেন? মানে, চাকরি করেন, না পড়াশোনা?” তানিয়া বলল, “আমি একটা এনজিওতে চাকরি করি। আর পড়াশোনা শেষ করেছি গত বছর। আপনি?” আমি বললাম, “আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করি। মার্কেটিংয়ের কাজ।” সে বলল, “ওহ, বেশ। মার্কেটিং তো বেশ চ্যালেঞ্জিং।” আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ, তবে মজাও আছে।”

এভাবে আমাদের কথা চলতে লাগলো। আমি লক্ষ্য করলাম, তানিয়ার সাথে কথা বলতে আমার আর তেমন নার্ভাস লাগছে না। তার কথার মধ্যে একটা সরলতা আছে, যেটা আমাকে আরাম দেয়। আমি বললাম, “আপনি কি প্রায়ই এখানে চা খেতে আসেন?” সে বলল, “না, খুব একটা না। তবে আজ এলাম, কারণ আপনি বলেছিলেন।” আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম, “ওহ, তাহলে তো আমার জন্যই এসেছেন।” সে হেসে বলল, “একটু-আধটু তাই।”
আমরা দুজনে হাসলাম। চা শেষ করে তানিয়া বলল, “আমি এখন যাই। একটু কাজ আছে।” আমি বললাম, “ঠিক আছে। আবার কখনো চা খেতে আসবেন?” সে বলল, “দেখি। আপনি যদি আবার ডাকেন, তাহলে আসতে পারি।” আমি হেসে বললাম, “তাহলে ডাকবো।” সে হেসে উঠে চলে গেল।

তানিয়া চলে যাওয়ার পর আমি আরেকটু দোকানে বসে রইলাম। আব্দুল চাচা এসে বললেন, “কী রে, কথা হলো?” আমি হেসে বললাম, “হ্যাঁ, চাচা। একটু হলো।” চাচা বললেন, “ভালো। এইভাবে শুরু হয়। তুই একটু ধৈর্য ধর।” আমি বললাম, “দেখি, চাচা। কী হয়।”
রাতে বাসায় ফিরে আমি শুয়ে শুয়ে ভাবলাম। তানিয়ার সাথে এই কথোপকথন আমার জন্য একটা বড় পাওয়া। আমি বুঝতে পারলাম, সে আমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী। কিন্তু আমার মনের কথা কি সে বুঝতে পারে? আমি কি তাকে বলে দেবো যে আমি তাকে পছন্দ করি? নাকি আরেকটু অপেক্ষা করবো?

পরের দিন সকালে আমি আবার জানালা দিয়ে তাকালাম। তানিয়া বিল্ডিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। আমি তাড়াতাড়ি নিচে নামলাম। কিন্তু এবারও সে গাড়িতে উঠে চলে গেল। আমি হতাশ হয়ে আব্দুল চাচার দোকানে গেলাম। চাচা বললেন, “কী রে, আজ আবার চা?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, চাচা। আর একটু অপেক্ষা করবো।”
আমি চা হাতে নিয়ে গলির মোড়ে দাঁড়ালাম। মনে মনে ভাবলাম, তানিয়া যদি আবার আসে, তাহলে এবার আমি একটু বেশি সাহস দেখাবো। আমি জানি, এই অপেক্ষার শেষ কোথায়, তা আমার হাতে নেই। কিন্তু এই গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা আমার জন্য একটা আলাদা জগৎ। আর সেই জগতে তানিয়া একটা উজ্জ্বল তারা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুম্মাবার

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

জুম্মাবার
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

প্রতি শুক্রবার ইমাম এর নেতৃত্ব
মেনে নিয়ে আমরা মুসলিমরা
হই একত্রিত, হই সম্মিলিত
ভুলে যাই সবাই হৃদয় ক্ষত!
খুতবা শুনি আমরা একাগ্রচিত্তে
চলে আসি সকলে একই বৃত্তে।
কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মসজিদ
ঐক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষেরা একজোট হতে চাই

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৭ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫১



ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে কি করতে পারি আমরা? একজন নীতিবান, যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে একক এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। চলুন নিচে দেখা যাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেই পুরোনো সিনেমা

লিখেছেন প্রফেসর সাহেব, ০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০৮



ঘটনা হইতেছে, পাকিস্তান জ*গী পাঠাইয়া আক্রমণ করাইছে।

ভারত বলছে 'কাম কি করলি? তোর সাথে যুদ্ধ'। পাকিস্তান বলছে 'মাইরেন না মাইরেন না আমরা মারিনাই, ওই কুলাংগার জ*গীরা মারছে'

'আমরা আপনাগরে ওদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেষমেষ লুইচ্চা হামিদও পালিয়ে গেলো!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩



৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হয় ফেসিস্ট হাসিনা ও তার দল আম্লিগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছে দলটির চোরচোট্টা নেতাকর্মীরা। অনেক চোরচোট্টা দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলো আম্লিগ সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×