কেবল জেলে পরিবারের জন্য বাংলাদেশের একমাত্র স্কুল!!!
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু কয়জন পারে এই অধিকারটি আদায় করে নিতে? পল্লীবাসী জনগন এক্ষেত্রে সবসময়ই পিছিয়ে থাকে, আর যাযাবর হলে তো এসবের কোন বালাই থাকে না। এই ছিন্নমূল মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? হ্যাঁ! তাদের জন্যও আশা আছে। কিছুদিন আগে আমার দেখা ধীবর বিদ্যানিকেতন এই ব্যাপারে আমার চোখ খুলে দিয়েছে। মেঘনা নদীর পারে লক্ষীপুর জেলার মজু চৌধুরীর হাটে অবস্থিত এই স্কুলটি দুই শতাধিক জেলে পরিবারের সন্তানদের মাঝে শিক্ষার আরো জ্বালিয়ে দিয়ে যাচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে।
এই রকমের স্কুল বাংলাদেশে এটাই একমাত্র কেন? এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কেবল মাত্র এমন সব জেলে পরিবারের সন্তানদের জন্য যাদের মাটিতে নিজের কোন আশ্রয় নেই। জলের উপরেই যাদের জীবন। বাংলা ধীবর শব্দের অর্থ জেলে। জেলে হলেও সাধারণত মাটিতে তাদের আশ্রয় থাকে। কিন্তু লক্সীপুরের মজু চৌধুরীর হাটের জেলেদের মাটিতে কোন আবাস নেই। জলের উপরে নৌকায় তাদের জন্ম, জীবিকা, বেড়ে ওঠা। এরকম জেলে গোত্র আমি বাংলাদেশে আর কোথাও দেখিনি যারা বেদে নয় কিন্তু যাযাবরের মত নৌকায় জীবনযাপন করে। কেবল শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের সময় তাদের পরিবারের বাচ্চাদের মাটিতে আসতে হয়। তাই তাদের এই স্কুলটিকে বাংলাদেশে এই ধরণের একমাত্র স্কুল বললে ভুল হবে না।
স্কুলটি শুরুর ইতিহাস খুব চমকপ্রদ। লক্সীপুর সরকারী মহিলা কলেজের তৎকালীন প্রভাষক জনাব আখতারুজ্জামান ভুইয়া ২০০৭ সালে তার চাকরির প্রারম্ভে একদিন বিকেলে নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। খেলাচ্ছলেই এক জেলেকে অনুরোধ করেছিলেন তাকে তাদের সাথে নৌকায় নেবার জন্য। হাসিমুখেই তাকে নৌকায় তুলেছিলেন জেলেটি। জেলেদের মানবেতর জীবনযাপন দেখে জনাব আখতারুজ্জামান জেলেদের জন্য একটা স্কুল খুলে দেবার প্রস্তাব করেন। জেলেরা এই প্রস্তাব অত্যন্ত আনন্দের সাথে গ্রহন করে। অবশেষে ২০০৮ সালের ১৪ জুলাই তারিখে জনাব আখতারুজ্জামান এবং তার কিছু উৎসাহী উদ্যমী সহকর্মীর সহায়তায় "মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন" মেঘনা নদীর পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে মাথা তুলে দাঁড়ায়।
ঢেউটিনে বানানো এই স্কুলটিতে বর্তমানে দুইটি ক্লাসরুম রয়েছে। এটি একটি প্রাইমারী স্কুল যেখানে নার্সারী ক্লাস থেকে পড়ানো হয়। প্রথম ব্যাচের বাচ্চারা ইতিমধ্যে ক্লাস ফোর এ উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষক রয়েছে মোট চারজন যাদের মধ্যে একজন গ্রাজুয়েট এবং বাকী তিনজন উচ্চ মাধ্যমিক পাস। শিক্ষার্থীদেরকে কোন বেতন দিতে হয়না বরং বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ওরা ফ্রী পায়। বিদ্যালয়টির তেমন কোন খরচ নেই, বিদ্যুত সংযোগ না থাকায় কোন বিল দিতে হয় না কিন্তু শিক্ষকদের বেতন দিতে হয় মাসে ৫০০০ টাকা। দারিদ্রসীমার অনেক নিচে বসবাস করা এই শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে তেমন কিছুই বলার নেই, কেবল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এটাই যে পড়াশুনার প্রতি প্রবল আকর্ষণ আর শিক্ষকদের প্রতি টানের জন্যই ওরা পানি ছেড়ে ডাঙায় আসে ক্লাস করতে। স্কুলটির ম্যানেজমেন্ট পরিচালনা করার জন্য জনাব আখতারুজ্জামান একটি প্যানেল গঠন করেছেন যেখানে সোহরাব মাঝি নামে একজন অভিভাবক প্রতিনিধিও আছেন।
স্কুলটি ব্যয় নির্বাহ করার জন্য জনাব আখতারুজ্জামান একটি মাশরুম চাষ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে দুই লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং প্রকল্পটি অত্যন্ত সফলতার সাথে আশার মুখ দেখেছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি সফল হলে এর লাভের টাকায়ই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ কেনা যাবে বলে জনাব আখতারুজ্জামান আশাবাদী।
আপনি যদি এই মহৎ উদ্যোগের অংশীদার হতে চান তাহলে আপনার জন্য ধীবর বিদ্যানিকেতনের দরজা সবসময়ই খোলা। স্কুলটি মূলত বিভিন্ন দাতাদের প্রদানকৃত অর্থেই চলে। আপনিও চাইলে এদের পাশে এসে দাঁড়াতে পারেন। ইতিমধ্যে স্কুলটি পরিচালনার জন্য একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে যার নম্বর
Meghnapar Dheebor Biddyaniketon
0087 121 0001 3296
Dania Branch, Jatrabari, Dhaka.
আপনার দান স্বাদরে গৃহীত হবে!
স্কুলটি স্বচক্ষে দেখতে চাইলে নিজেই চলে যেতে পারেন মেঘনা নদীর পাড়ে। ঢাকা এক্সপ্রেস নামে একটি বাস ছাড়ে প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটায় রিং রোড, শ্যামলী থেকে। লক্সীপুর মজু চৌধুরীর হাট পৌছুতে সময় নেবে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা, ভাড়া নেবে ৩৩০ টাকা। সুতরাং আপনি চাইলে দিনে গিয়ে স্কুল দেখে দিনেই ফেরত আসতে পারবেন। এবং যাবার আগে অবশ্যই সোহরাব মাঝিকে ফোন করে যাবেন। সোহরাব মাঝির নাম্বার হলো: 0177 1411611. ভাষায় আন্চলিকতার টান থাকলেও হৃদয়ে আতিথেয়তার কোন অভাব থাকবেনা বলে আমার বিশ্বাস।
একটি মানবিক আবেদন:
সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি স্টিকি হওয়া পোস্ট সামহোয়্যারইন ব্লগারদের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম'২০১২ এর দিকে।
এবারের টার্গেট করা হয়েছে সেই জেলে ফ্যামিলীদেরকে যাদের স্থলে কোন ঠিকানা নাই, যাদের ছেলে-মেয়েরা এই স্কুলে পড়ে। এখানে আমার আর বলার কিছুই নাই, ঐ পোস্টে গেলেই বুঝবেন। আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। আপনার দেওয়া একটি চাদরে হাসি ফুটবে সারাজীবন সার্ভাইভাল ট্রেনিংএ থাকা ছোট্ট এক বিয়ার গ্রিলসের।