দেখতে দেখতে দু'বছর হয়ে এলো... মনে হয় সেদিনের কথা ... ভাবতে ভালই লাগে...
দিনটি ছিল ১৩ই আগষ্ট সকাল বেলা আনুমানিক ১০.০০-১০.৩০মিঃ কয়েক জন ছেলে আমাকে ডাকল। আমি ঘর থেকে বের হলাম সবাই আমাকে ঘিরে চার পাশে আমতা আমতা করছে, মনে হয় কছু একটা ওরা বলতে চায়, কিন্তু বলতে পারছে না। আমি নিজেই জিঞ্জাস করলাম
--কি ব্যপার তোমরা এমন করছো কেনো?
কোন জবাব ছাই একজন আর একজনের দিকে চোখা-চোখ করতেছে। আসলে ওরা সবাই লেখা পড়া করে ছাত্র বয়সের দিক দিয়ে ৬ ক্লাস থেকে ১১ ক্লাসের ছাত্র। আমাকে ওরা কেউ বলে চাচা/কাকা, মামা, দাদা, নানা ডাকতো আমকে। একজন হুট করে বল্ল দাদা... আর কিছু বলতে পারে না। একজন আর একজন কে গুতা দেয় বলে তুই বল... আমি আর হাঁসি ধরে রাখতে পারলাম না বল্লাম চল একজায়গায় বসে কথা বলি...
খোলা একটা জায়গায় আমরা সবাই গোল হয়ে বসলাম এবং আমি বল্লাম তোমরা কে কি করছো বল সবাই এক এক করে। সবাই নিজ নিজ লেখা-পড়ার কথাই বল্ললো। ওদের অনেক কথা...
তাদের মূল কথা হলো লেখা-পড়ার পাশা-পাশি কিছু করতে চায়। আমি নিজের চোখে দেখেছি ওরা এক বাস্তব স্বপ্ন দেখতে চায়। দেখাতে চায় এক আলোর সন্ধান। যেখানে সব কুলষতা কে দূরকরে এক প্রশান্তির বাতাস প্রবাহিত হবে অন্তরের গহীনে। আমি গভীরভাবে ভাবতে লাগলাম ওরা আসলেই কিছু একটা করতে চায়। বল্লাম তোমারা কি করতে চাও? এক এক জন এক এক ধরনের চিন্তা চেতনা ওরা আমার কাছে মন খুলে বলতে লাগল। আমি মনযোগ দিয়ে সব শুনলাম। কেউ বলে নাটক করবে, নিজেদের ই প্রতিভার মাধ্যমে। কেউ বলে গান শিক্ষার একাডেমী করবে, কেউ বলে আবার যাত্রার দল গঠন করবে। কেউ বলে রাস্তার ধারে সমবায়ের মাধ্যমে গাছ লাগাবে। আবার যুব ক্লাব গঠন করবে। কেউ বলে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম চালু , করবে। আবার বিতর্ক প্রতিযোগীতার আয়জন করবে ইত্যাদি ইত্যাদি... ওদের নানা রকমের উদ্যেগ সব শুনলাম।
আমি শুনলাম আর ভাবছি ও এত উৎসাহ নিয়ে আমার কাছে এসেছে আমি ওদে কি জবাব দিব? আমি দেখেছি ওদের মধে এক প্রতিভা কাজ করতেছে যে সমাজে কিছু করার জন্য অধীর আগ্রহ। সেই আগ্রহকে কাজে লাগতেই হবে। কিন্তু কিভাবে?
ওরা অনেক সমস্যার কথা আমকে জানালো এবং ইচ্ছে থাকে সত্তেও ওরা কিছু করতে পারছে না । তাই আমার কাছে আশা নিয়ে বসে আছে এই তরুন যুবকের দল। তাদের সঠিক দিক নির্দেশনা আমদেরই দিতে হবে কারো না করো।
আমি বল্লাম আমি তোমাদের সাথে কাজ করবো যদি তোমরা সবাই এক সাথে থাকো এবং এসব কাজের মধে যে কোন একটা কাজ দিয়ে শুরু করতে হবে। সবাই রাজি হলো। এখন সবার কাজ গুলো আমি নোট করলাম সবার মধ্যে ভোটে দিলাম এর মধে যে কাজের ভোট বেশী হবে তাই আমরা সবাই মিলে মিশে করবো। সবাই একমত হলো একটি পাঠাগার তৈরী করবো। কিছু নীতিমালার ভিত্তিতে পাঠাগার এর নাম করন করা হলো ইক্করা শান্তি সংঘ ও পাঠাগার যার শ্লোগান হলো "বইয়ের আলোয় দূর হোক সকল আঁধার" । মাত্র ১৪টি বই আর ১৮জন সদশ্য দিয়ে শুরু করা হয় আনুষ্ঠানিক পথ চলা। সাংগঠনিক দিক দিয়ে একটা ছো্ট্র কমিটি তৈরী করে দেই। যা নিদৃষ্ট নিয়ম নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
কার্যক্রমের দিকদিয় এই পাঠাগার আজ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে শিশু চিত্রাংকন, বির্তত প্রতিযোগীতা, খেলাদুলা, মধাবী শিক্ষার্থীদের বীনা মূল্যে বই বা লেখাপড়ার সামগ্রী বিতরন ইত্যাদি কার্যক্রম পালন করে আসছে।
গতসপ্তাহে আমি দেখা করতে পাঠাগারে গেলাম। অনেক কিছুই হয়েছ যা আমি অবাক হয়ে যাই। আনন্দে চোখে পানি এসে যাচ্ছে। স্থানিয় লোকজন ওদের কাজে অনেক মুগ্ধ। তাই অনেকেই পাঠাগারে স্বেচ্ছায় বই সহ নগদ অর্থ অনুদান করতেছে। জানলাম পাঠাগার এর ওয়েভ সাইট হয়েছে ইক্করা শান্তি সংঘ ও পাঠাগার । আশার কথা হলো যে ওয়েবিং নেট পাঠাগারে একটি ডোমেইন এবং একটি ১জি. বি. হোস্টিং দেওয়ার কথা দিয়েছে।
আনন্দের খবর হলো প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে এক বিতর্ক প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে। তা ফাইনাল পর্ব ১১ই আগষ্ট বিকাল ৩.৩০মি. আর প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরন করবেন স্হানীয় উনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান।
আজ এ টুকুই থাক পাঠাগার এর আপডেট আবার দিব। এই আশায় এখানেই শেষ করি ।
সবাই ভাল থাকবেন সুন্দর থাকবে।
সবার জন্য শুভ কামনা।
"বইয়ের আলোয় দূর হোক সকল আঁধার"
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ২:১১