হাতে আসার আগেই জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয় জ্ঞাত হওয়া জরুরী।
জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয়
১. নবি-রাছুল বা প্রেরণাপ্রাপ্তগণের একমাত্র দায়িত্ব স্রষ্টার প্রত্যক্ষ পরিচয় দিয়ে একক দর্শনে শান্তিবাদী (ইছলাম) সমাজ গঠন। কুরআন গ্রন্থের পাতায় পাতায় আল্লাহর প্রত্যক্ষ পরিচয় আছে; না জেনে বিশ্বাস অথবা অন্ধ বিশ্বাস আর অবিশ্বাস উভয়ই সমান; জ্ঞান বা আল্লাহতে ইহাদের তিল পরিমাণও মূল্যায়িত হয় না; বুঝে শুনে গ্রহণের কথা কুরআনগ্রন্থে অসংখ্যবার ঘোষিত আছে। কিন্তু মানুষ সর্বকালে সর্বদাই ব্যক্তি ও দলের অপপ্রচারে সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য ভেবে বিভ্রান্ত হয়।
২. এই প্রথম ভাববাদী কুরআন গ্রন্থের ভাবানুবাদের প্রচেষ্টা, যা সাধারণেরও বুঝতে দ্বিতীয় কোন গুরু বা গ্রন্থের সাহায্যের দরকার হবে না। মূলতঃ ভাববাদী বাণী বাক্যের ভাবাবাদী, দার্শনিক ব্যতীত অনুবাদ করা সম্ভব নয়; সঙ্গতও নয়। প্রচলিত অনুবাদগুলো বিশেষ করে ভাষা পণ্ডিত এবং প্রধানতঃ ব্যবসায়ীক দৃষ্টিতে অনুদিত; নিঃস্বার্থ দার্শনিক, ভাববাদী কর্তৃক অনুদিত নয়; আর ভাববাদ আভিধানিক অর্থের ঊর্ধ্বে থাকে।
৩. কুরআনগ্রন্থ পূর্ণভাবেই পরিপূর্ণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষেণসহ সহজ সরল ভাষায় প্রকাশিত; ইহা ব্যক্তি বা দলের পুনঃ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অনধিকার হস্তক্ষেপ মাত্র।
৪. মক্বা ও মদিনায় প্রকাশিত ছুরাগুলি আলাদা করা হয়েছে; ছোট ছোট ছুরাগুলিই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাথমিক যুগের বলেই মনে হয় এবং বড়গুলি বিশেষ করে সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট; এজন্য ছোটগুলি আগে ও বড়গুলি পরে সাজানোর কারণে প্রচলিত ক্রমিক নম্বর রক্ষিত হয়নি।
৫. ছুরাগুলোর নামকরণ, বাক্য ও ছুরার ক্রম বিন্যাস, শব্দ-বর্ণের হরকত প্রভৃতি সংযোজন করা হয়েছে রাছুলের ওফাতের অনেক পরে; এজন্য উহা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ নয়। পূর্ণ কুরআনের মৌলিক দর্শন রক্ষা করতঃ পূর্বের হরকত মুক্ত ও বর্তমানের হরকত যুক্ত শব্দ-বাক্যের ভাবার্থ পরস্পর মূল্যায়ণ করতঃ গ্রহণ-বর্জন করা হয়েছে এবং প্রায় শতভাগ বাংলা শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যা প্রচলিত অনুবাদ থেকে স্বতন্ত্র।
৬. কুরআন গ্রন্থের কিছু সাঙ্কেতিক শব্দ আছে যেমন আলিফ-লাম-মিম, হা-মিম, নু-ন, কা-ফ প্রভৃতির অনুবাদ কোথাও নেই; কিন্তু এখানে সেগুলোরও অনুবাদ করা হয়েছে; এ অনুবাদগুলি নিছক আনুমানিক নয়; কুরআন গ্রন্থের যথাস্থানে ব্যবহৃত সাঙ্কেতিক শব্দগুলোর ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট ছুরাগুলির মধ্যেই আছে। মনুষ্য পরিচিত ও জ্ঞাত ভাষায় প্রকাশিত ঐশীবাণীর এমন কোন বিষয় থাকতে পারে না যা মনুষ্য জ্ঞান বহির্ভূত। আল্লাহ ব্যতীত মানুষ যা জানে না বা জানবে না; এমন কোন বিষয় আল্লাহ মানুষের মারফত মানুষের ভাষায় প্রকাশ করেন না।
৭. কয়েকটি ছোট ছোট ছুরা এবং কয়েকটি বড় ছুরার বিক্ষিপ্ত বাক্যের ভাবানুবাদ প্রেরণাপ্রাপ্ত মজিবুল হকের লিখিত ‘প্রেরণাবাণী’ থেকে নেয়া; তিনি বলেছেন যে, ভাবানুবাদগুলো তার নিজস্ব রচনা নয়, ইহা আল্লাহ প্রেরণাপ্রাপ্ত; প্রচলিত অনুবাদের সাথে যার কোনই মিল খুঁজে পাওয়া যায় না; তবে ইহা যে গুরু গম্ভীর ঐশী ভাবপূর্ণ তা নিশ্চিৎ বলা যায়; তার ভাবানুবাদগুলি দ্রষ্টব্যসহকারে উদ্ধৃত আছে।
৮. প্রেরণাপ্রাপ্ত মজিবুল হকের ছান্দিক ভাবানুবাদের মতই কয়েকটি ছুরা বা ছুরার অংশ বিশেষের ছান্দিক ভাবার্থ করা হয়েছে।
৯. কুরআন গ্রন্থের প্রত্যেকটি শব্দ-বাক্যের আভিধানিক ও ভাববাদী পরস্পর দুটি অর্থ বিদ্যমান; ভাববাদী অর্থই সুঠাম ও মূল; এখানে যারা পৌঁছে তাদের সাথে মতবিরোধ হয় না। কিন্তু হুবহু আভিধানিক অর্থ আপেক্ষিক, কূটনৈতিক, রূপক ও অনুষ্ঠানসর্বস্ব; অহঙ্কারীগণ এ নিয়ে আদিকাল থেকেই দলাদলি, মতবিরোধে সমাজে গোলযোগ, অশান্তি বলবৎ রেখেছে, যা কুরআন গ্রন্থের মৌলিক দর্শনের পরিপন্থী। (তথ্যসুত্র: এমরান-৭)।
১০. প্রত্যেক ভাষা, বিশেষ করে আরবী শব্দের এক থেকে একাধিক অর্থ আছে; অনুবাদকগণ বিষয়টির গুরুত্ব না দিয়ে পরস্পর প্রায় হুবহু নকল অনুবাদ বাজারে প্রচলিত আছে; এত্থেকে গ্রন্থটি শতভাগ স্বতন্ত্র।
১১. প্রচলিত অনুবাদে পাঠকদের প্রায় শতভাগ অন্ধ বিশ্বাস; কিন্তু আনুমানিক, অন্ধবিশ্বাসী ধর্ম-কর্ম জ্ঞানে বা আল্লাহতে গৃহীত হয় না; কিন্তু এ ছাড়া সাধারণের অন্য কোন পথ এযাবৎ খোলা ছিল না; এবারে এ গ্রন্থটি পাঠকদের সাড়ে চৌদ্দশত বছরের অভাব পূরণ করতে সক্ষম হবে, সক্ষম হবে বুঝে-শুনে, বিচার-বিবেচনায় গ্রহণ-বর্জনের; তাছাড়া কালের বিবর্তনে আরও উন্নত ভাবার্থ প্রকাশের পথও উন্মুক্ত হলো। (তথ্যসুত্র: বনি ইছ্রাইল-৩৬; লোকমান- ২৭; কাহ্ফ-১০৯)।
১২. অনুবাদের যেখানে নতুন, সন্দেহজনক বা বিতর্কীত মনে হবে সেগুলির প্রায় অধিকাংশ শব্দের আভিধানিক সুত্র, দ্রষ্টব্যসহ অর্থ ও যুক্তি প্রমানসহ বইটির শেষাংশে ’কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ শব্দ পরিচিতি’ নামে একটি পরিচ্ছেদ দেয়া হয়েছে।
১৩. এর পূর্বে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে ৮৩টি ছুরা সম্বলিত ’কুরআন-ঐশীশ্লোক;’ প্রথম খ- প্রকাশিত হয়; উহার অধিকাংশ বাক্যের মধ্যে বন্দনীর মধ্যে প্রচুর শব্দার্থ বসানো হয়েছিল এবং একাধিক বাক্যের সংমিশ্রণ ছিল; যাতে পাঠকদের পড়তে খুবই অসুবিধা হত; তাছাড়া বিভিন্ন রকমের দুর্বলতা থাকায় এক্ষণে বইটি প্রত্যাহারের ঘোষনা দেয়া হল! ঐ সকল দুর্বলতাগুলি সংশোধন করতঃ পূর্ণ কুরআনগ্রনন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। যাদের কাছে প্রথম খন্ডটি আছে তারা যেন দয়া উহা বাতিল গণ্য করতঃ সংশ্লিষ্টের কাছে ফেরৎ দিয়ে বিনিময় এই পূর্ণ কুরআন গ্রন্থ অনুবাদটি সংগ্রহ করেন।
১৪. জ্ঞানী, আলেম-প-িদের প্রতি অনুরোধ: তারা যেন উশৃঙ্খলাতার আশ্রয় না নিয়ে বরং আপন ধর্ম স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে (ইছলামিক) নিরপেক্ষ চিত্তে স্পষ্ট যুক্তি ও সাক্ষি-প্রমাণ সাপেক্ষে ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দেন; সংশোধনের নিশ্চয়তা থাকল।
১৫. প্রধানতঃ ‘আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান; লেখক: ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান; রিয়াদ প্রকাশনী, ১ম প্রকাশ, ৯ম সংস্করণ; ৩৪ নর্থ ব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা, গ্রন্থটিই অনুসরণ করা হয়েছে। অধিকাংশ বাক্য ও শব্দার্থ শেষে ব্যবহৃত আ. আ-বা অভিধান এবং ঐ. ঐ’র অর্থ এই ’আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান’টিই বুঝানো হয়েছে।
বিনীত-মজবাসার।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৩