১. হে ঈছা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার মধ্যে তোমাকে তুলে নিচ্ছি, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করছে তাদের মধ্য থেকে তোমার মৃত্যু (ওফাত) ঘটিয়ে। আর তোমার অনুসারীগণকে উত্থান/পুনরুত্থান (কিয়ামত) কাল পর্যন্ত বর্বর/মূর্খদের (কাফের) উপর প্রাধান্য দিতেছি/দিব; অত:পর আমার কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন; তারপর যে বিষয়ে তোমাদের মতান্তর ঘটছে আমি তা মীমাংসা করে দেই/দেব। (এমরান-৫৫)
আয়াতটির প্রতিটি অংশ গুরুত্ত্বপূর্ণ ও সমার্থবোধক বিধায় গভীরভাবে লক্ষণীয়। যেমন:’কাল পূর্ণ’ অর্থাৎ সময় শেষ অর্থই মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসা। ’মৃত্যু/মুক্ত’ (ওফাত) করছি অর্থাৎ আত্মার মুক্তি বা মৃত্যু সমাগত; ‘ওফাত’এর প্রকৃত অর্থই মৃত্যু। ‘তুলে নেয়া’ ও ‘প্রত্যাবর্তন’ সরাসরি সমার্থবোধক। শব্দদ্বয় বহুবার কুরআনগ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, সকলেই আল্লাহ থেকে আসে এবং আল্লাতেই প্রত্যাবর্তন করে বা ফিরে যায় এবং তার একমাত্র সুত্র ‘মৃত্যু’ মৃত্যুর মাধ্যমে।
২.--আর আমরা উপাস্য (আল্লাহ) প্রেরণাপ্রাপ্ত (রাছুল) মরিযম তনয় ঈছা মসীহকে হত্যা করেছি--অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি কিন্তু তাদের এরূপ বিভ্রম হয়েছিল। যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল তারা নিশ্চয় এই সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এই সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোনই জ্ঞান ছিল না। এটা নিশ্চিত যে, তাকে হত্যা করেনি। না, উপাস্য তাকে তার মধ্যে তুলে নিয়েছেন যেহেতু উপাস্য পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। কিতাবিদের মধ্যে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে বিশ্বাস করবেই, উত্থান কালে/পুনর্জন্মে (কিয়ামত) সে’ই তাদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সাক্ষি। (নিছা-১৫৭-১৫৯)
উল্লিখিত আয়াতদ্বয় আকাশে তুলে নেয়ার ভ্রান্ত বিশ্বাসের কোন আলামত নেই তো বটেই বরং ‘ওফাত’ ’কাল শেষ’ বাক্যাংশে ‘মৃত্যু’ই সুস্পষ্ট। কিন্তু তাকে ‘হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি’ সুতরাং গেল কোথায়! এই ‘গেল কোথায়!’ প্রশ্নটির উত্তরই উল্লিখিত ‘ওফাত=সাধারণ মৃত্যু,’ আকাশে তুলে নেয়ার উদ্ভট ধারণা নয়। কিন্তু তৎসমাজ ঈছার কোথায়! কিভাবে মৃত্যু হয়েছে! তা তাদের জানা ছিল না বলে তাদের সংশয় সন্দেহ ছিল।
এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের ইন্দন যুগিয়েছে ‘আদম-হাওয়া’কে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় নিক্ষেপ করা’ও ঈছা শুল থেকে আকাশে উড়ে যাওায়ার বিভ্রান্তকর অনুবাদ ও বিশ্বাস।
আকাশে থেকে ধপাস করে মানুষ পতনের ঘটনা সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত ঘটেনি; অনুরূপ দুনিয়া থেকে টপাস করে জ্যাতা-মরা মানুষকে আকাশে তুলে নেয়ার কোন অপ্রাকৃতিক ঘটনাও ঘটেনি; আয়াতেও ইহার সাক্ষ্য প্রমান নেই।
আল্লাহ=শক্তি, জ্ঞান বা উপাস্য এমন দুর্বল নয় যে প্রাকৃতিক শক্তির কাছে হার মেনে অপ্রাকৃতিক অলৌকিকত্বের আশ্রয় নেয়।
বিনীত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৬