সাধারণ ক্যামেরার চোখ আর মানুষের চোখের দর্শনক্ষমতা একই।অতঃপর ধরা যাক: ক. বিশেষ ক্যামেরা খ. এক্স-রে ক্যামেরা গ. ওয়াই-রে ক্যামেরা।
বিশেষ ক্যামেরা: এটি জামা-কাপড়,পোশাক-পরিচ্ছদ জাতীয় কোনো কিছুই দেখতে পায় না।এগুলো বস্তু হয়েও এর চোখে অবস্তু ও অদৃশ্য।তাই যতই রং বে-রং-এর পোশাক পরিধান করুক না কেন,এই ক্যামেরার চোখে ছবিটি আসে সম্পূর্ণ উলঙ্গ, দিগম্বর।একটি জড় পদার্থ বা বস্তু অর্থাৎ কাচ বা প্লাস্টিকের মধ্যে বৈজ্ঞানিক উপায় বিশেষ শক্তি প্রয়োগ করে ক্যামেরাটি তৈরি করা হয়;অবশ্য এই লেন্সটিই যে যথাসর্বস্ব নয় তা স্থানবিশেষে আলোচিত হবে।
একটি জড় বস্তুর মধ্যে যদি এই বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় তবে, একটি জ্যান্ত মানুষের মধ্যে প্রয়োগ করা আরো সহজ হওয়ার কথা। কিন্তু বিজ্ঞানীদের এরকম উদ্ভট ধারণা কোনোদিন জন্মায়নি;তাই চেষ্টাও কখনও করা হয়নি ।ধরা যাক,যদি এমন দর্শনক্ষমতা মানুষের মধ্যে স্থায়ীভাবে প্রয়োগ করা যায়;তখন সে দেখবে সকল মানুষ দিগম্বর;আর সকল মানুষের মধ্যেই যদি প্রয়োগ করা যায়,তবে হঠাৎ করে আজকের গৌরবের আধুনিক যুগটি থমকে দাঁড়ায় ;ফিরে যায় প্রাগ-ঐতিহাসিক বর্বর,বন্য,প্রস্তর যুগে।সাধারণ সান-গ্লাস চোখে লাগালেই তো দুনিয়ার আলো-আধার,চন্দ্র,সূর্য,গ্রহ, নক্ষত্র,গাছ-পালা,পশুপক্ষী তথা প্রাকৃতিক দৃশ্য মুহূর্তের মধ্যেই পাল্টে যায় ;মিথ্যা হয়ে যায় অনেক কিছু!
এক্স-রে ক্যামেরা: এর চোখে পোশাক-পরিচ্ছদ,এমনকি রক্ত-মাংসও কোনো বস্তু নয়।এটি দেখতে পায় হাড়-হাড্ডি,কঙ্কালমাত্র।এই দর্শন ক্ষমতা মানুষের মধ্যে স্থায়ীভাবে প্রয়োগ করতে পারলে,আমরা এক বীভৎস ও ভৌতিক জগতে প্রবেশ করি। শুধু কঙ্কাল আর কঙ্কালের দুনিয়া।এরা খায় দায়,ঘুমায়,চলাফেরা করে,জন্ম দেয়,জন্ম নেয়,সভা সমিতি,রাজনীতি করে,গবেষণা,রকেট তৈরি করে,চাঁদে যায়,আরো কত কী! অত:পর মৃত্যুও হয়! দুটোই বস্তু ও জড় জগত;অথচ একের দৃষ্টিতে অন্যে সম্পূর্ণ অজড়, অদৃশ্য ও অবাস্তব! এ জগতের সবুজ-শ্যামল পৃথিবীর পূর্ণিমার চাঁদে বুড়ির সুতো কাটা, সোনার থালার চাঁদ আর ঝলসানো রুটির মতো কবিতা নেই;নেই রূপ,রস,গন্ধ ;আবার আছে সবই।কিন্তু যা আছে তা আমাদের কাছে দুর্ভেদ্য,অস্পষ্ট।
ওয়াই রে ক্যামেরা: এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।মানুষের যখন হাড্ডি বা মজ্জাজনিত দুরারোগ্য ব্যাধি দেখা দেবে আর এর চিকিৎসায় ঐ মজ্জার ছবি প্রয়োজন হবে তখনই আবিষ্কৃত হবে এই ক্যামেরা।এর দৃষ্টিতে মানুষের ছবি হবে মানুষাকৃতির একটি আলো রেখা বা সংকেতচিহ্ন মাত্র;অবিকল আজকের নিয়ন সাইনের মতো।এদের অবস্থান এবং গতি মাটি থেকে প্রায় ইঞ্চিখানেক শূন্যে থাকে,অর্থাৎ মাংস ও হাড্ডির অবস্থান বাদে অর্থাৎ যাবতীয় বস্তু থেকে এরা ইঞ্চিখানেক শূন্যে অবস্থান করে।এরাও খায় দায়,অফিস আদালত করে,বিয়ে সংসার করে,জন্ম দেয়,জন্ম নেয়,মৃত্যুও হয়! কিন্তু জন্ম-মৃত্যুটা কংকাল জগতের চেয়েও অস্বাভাবিক,অলৌকিক;হঠাৎ করে নিয়ন সাইনের মধ্য থেকে আর একটি ছোট্ট নিয়ন সাইনের ভৌতিক আবির্ভাব আর হঠাৎ করে আলোটি নিষ্প্রভ হয়ে যায়,অদৃশ্য হয়ে যায়,অর্থাৎ মৃত্যু হয়।নারী পুরুষ আছে কিন্তু কোন্টা নারী আর কোন্টা পুরুষ তা সনাক্ত করা কঙ্কালদেহের চেয়েও কঠিনতর।
একই দেহে তিনটি দেহ,পরস্পর মিলিত আবার ভিন্ন,স্বতন্ত্র;একই জগতে তিনটি জগত অর্থাৎ আমি তুমি সে;তিনটিই স্ব স্ব ক্ষেত্রে জড় ও বস্তু।কিন্তু একে অন্যের কাছে অদৃশ্য,অবস্তু ও অবাস্তব।একের চিন্তাধারা ধ্যান ধারণা,জ্ঞান-বিজ্ঞান ;স্রষ্টা-সৃষ্টি,ধর্মা-ধর্মের সকল সূত্র উল্টাপাল্টা হয়ে যায়,একমাত্র দর্শন,জ্ঞান শক্তির বিভিন্নতার কারণে,যা সত্য তাই-ই মিথ্যা! যা বস্তু,বাস্তব তাই অদৃশ্য ও অবাস্তব,যাই আধ্যাত্মিক তাই বাস্তবিক, বৈজ্ঞানিক।
উল্লিখিত ক্যামেরার যে কোনো একটির দর্শন ক্ষমতা স্থায়ীভাবে আমাদের বর্তমান আছেই।অতএব, টি ব্যতিরেকে অপর যে কোনো একটির দর্শনক্ষমতা আমাদের জন্মগতভাবে থাকতে পারতো;এটা যুক্তিসংগত বটে।
আলো বা শক্তির সংযোগ ব্যতীত ক্যামেরাগুলো যেমন যথাসর্বস্ব নয়,বরং অন্ধ-অবাস্তব ;আলোর সংযোগ ব্যতীত উল্লিখিত দেহগুলোও অন্ধ ও জড় বটে! অর্থাৎ বস্তু সনাক্ত করে আলো,শক্তি,যাকে জীবন বলা হয়।(চলবে-৩)
বিনীত।