somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ: মুহম্মদ বিন কাসিম-নসীম হিজাযী

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন ছিল এমন এক সময় যখন তারা ছিল নৈতিক দিক দিয়ে পৃথিবীর দরিদ্রতম জাতি। কিন্তু এক আদর্শিক বিপ্লব সেই জাতিকে ফিল্টার করে সম্পূর্ণ নতুন এক আদর্শে উজ্জীবিত করল। তারা এতটাই উঁচুতে উঠে গেল যে,পুরো পৃথিবী তাদের জয়যাত্রার খবর শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেল এবং তাদেরকেই সভ্যতা,মানবতা ও সাম্যের রক্ষক হিসেবে মন থেকে স্বীকার করে নিল। হ্যাঁ, আমি আরবদের কথাই বলছি।
উপমহাদেশের মানুষ তখনো অধিকাংশ রাজ্যের অত্যাচারী রাজাদের দ্বারা উৎপীড়িত হচ্ছে। তবে তাদের নিপীড়ন ততক্ষণ পর্যন্ত আরবদের কানে পৌঁছায় নি, যতক্ষণ না দেবলের শাসনকর্তা আরব বিধবা নারী ও এতীম শিশু বহনকারী এক আরব জাহাজ এবং বসরার শাসনকর্তার উদ্দেশ্যে প্রেরিত সিন্ধুর এক প্রদেশের এক বন্ধুত্বকামী সরলপ্রাণ রাজার পুরষ্কার সমৃদ্ধ জাহাজকে দেবল বন্দরে না আটকায়। অনেক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে কিছু বন্দী আরব মুক্ত হয়ে এক বন্দী আরব বালিকার চিঠি দামেস্কে খলীফার নিকট পেশ করে। আর বাকীটা মুহাম্মদ ইবনে কাসিম নামক এক সতের বছর বয়স্ক বালকের ইতিহাস এবং সম্ভবত মুসলিম জাতির এক আক্ষেপের ইতিহাসও বটে।
একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে শেষ করলাম উপমহাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক নসীম হিজাযীর এক অনবদ্য রচনা “মুহাম্মদ ইবনে কাসিম”। লেখকের সাহিত্যকর্মগুলোকে মূল্যায়নের জন্য সবচাইতে ভাল বাক্য হল, “তিনি ইতিহাসের প্রয়োজনে উপন্যাস সৃষ্টি করেছেন”। সুতরাং আদর্শগতভাবেই তার উপন্যাসে কোন ঐতিহাসিক সত্যের বিন্দুমাত্র বিকৃতি হয়নি। ইতিহাসের ঘটনা পরম্পরাই উপন্যাসের লক্ষ্যবস্তু। এই শক্তিশালী উপন্যাসিকের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে উদাসীন ছিলাম বলে নিজের উপরই বিরক্ত হচ্ছি। আমি এখন নিশ্চিত যে, আমার পাঠকজীবন পুরেটাই ব্যর্থ হয়নি,আমি এরকম একটা বই ও তার লেখকের সন্ধান পেয়েছি। ফেসবুকের এক গ্রুপে আমি বইটার খোঁজ পাই। কিছুদিন ফেসবুকে বইয়ের গ্রুপটাতে বইটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সেখানে কমেন্টকারীদের একজন বললেন যে এই বই পড়েই ইসলাম সম্পর্কে তার ভূল ধারণার পরিবর্তন হতে শুরু করে। তাদের পোষ্ট আর মন্তব্যেই মূলত বইটার ব্যাপারে আমার আগ্রহ তৈরি হয়। তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। এখন আমি আমার শেকড় চিনি,আমার পূূর্বপুরুষদের কীর্তি সম্পর্কে জানি। আর আমার দায়িত্বের তাড়নাও অনুভব করি।
অশ্লীলতা আর যৌন সুড়সুড়ির মাধ্যমে পাঠককে কু-প্রবৃত্তির চর্চা না শিখিয়েও যে জনপ্রিয় উপন্যাস রচনা করা যায়, তার সহজ উদাহনরণ হলেন নসীম হিজাযী। তিনি সত্যব্রতী লেখক, একইসাথে সু-সাহিত্যিক।
অনুবাদের ক্ষেত্রে এক্কেবারে সরল অনুবাদের চাইতে শৈল্পিক অনুবাদ আমার বেশী ভাল লাগে। এক্ষেত্রে অনুবাদক আমাকে সন্তুষ্ট করেছেন একইসাথে সরলপ্রেমীদেরও নিরাশ করেননি। অনুবাদ যথেষ্ট শৈল্পিক হলেও অনুবাদক এর সরলতা বজায় রেখেছেন। পাঠককে হিজাযীর সুলিখিত ইতিহাসকেন্দ্রিক উপন্যাসের জগতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এরইমধ্যে অনেকেই হয়ত পড়ে ফেলেছেন।
মুহাম্মদ ইবনে কাসিমের বক্তৃতাগুলো ছিল সোনার অক্ষরে বাঁধিয়ে রাখার মত। তার পরিণতি আর মুসলিম জাতির অধঃপতন একে অপরকে জড়িয়ে আছে। প্রকাশক হিজাযীর উপন্যাস সম্পর্কে লিখেছেন, “তার উপন্যাসগুলো বোনের কাছে মায়ের মৃত্যুর গল্প শোনার মত। চোখ বেয়ে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পড়ে”। ভাল থাকুক নসীম হিজাযী, আপাতত তার অমর কীর্তিগুলোই আমাদের আনন্দিত ও গর্বিত করার পাশাপাশি পথও দেখাক। আমরা “আঁধার রাতের মুসাফির”।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৫২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×