somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাওয়াত

০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তো বাবা তোমার তো, অনেক গল্প শুনলাম। যা বুঝলাম এ বুড়ো বয়সে, তা হলো, তুমি বড্ড বেশী আবেগপ্রবণ। একটা মেয়ে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে বলে কি জীবন থেমে থাকে ! থাকে না, বুঝলে, থাকে না। পৃথিবী এমনি, একজন গেলে, আরেকজনের জীবনে আসার সুযোগ হয়
তোমার বয়সে থাকতে, আমি একটা মেয়ের প্রেমে পড়ি। তোমাদের মতো এখনকার মোবাইল, ফেসবুক এসব ছিলো না। কলেজে যেতাম, মেয়েটার সাথে রাস্তায় দেখা হতো, আমি তাকাতাম ও তাকানো। মনে হতো দুজন দুজনার খুব আপন।
একদিন সাহস করে, সামনে গিয়ে হড়বড়িয়ে সব বলে ফেললাম । মেয়েটা হাসতে হাসতে শেষ !
কিছু না বলে চলে গেলো
পরদিন, দেখি মেয়েটা কালো শাড়ি পড়ে আসে। মনে হলো স্বর্গরাণী নেমে এসেছে !
ভয়ে সামনে গেলাম, বললাম, তোমার একটু সময় হবে ? নদীর পাড়ে বসে গল্প করতাম!
মেয়েটা বুঝছো রাজি হয়ে গেছে ! আমি আনন্দে ভেতরে নাচছিলাম।
নদীর পাড়ে কেউ যেনো না দেখে সহজে, এমন একটা জায়গায় বসলাম দুজনে। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, আমি ওর পাশে বসে আছি , রোমাঞ্চকর অনুভূত হতে লাগলো, পরিবেশ
ও তোমাকে তো আমার নাম বলা হয় নি। আমার নাম রশিদ আলী।
যে মেয়েটার প্রেমে পড়েছি, তার নাম ছিলো, সুস্মিতা। সুস্মিতা দাশ
ওমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ো না, বাবা। মেয়েটার নাম তো জানতাম না। শুধু দেখেই প্রেমে পড়েছি !
নদীর ধারে, সিগ্ধ হাওয়া বইছে। আমার চুল উড়ছে। সুস্মিতার চুল ও এসে, আমার মুখে লাগছে । কি যে ভালো লাগছে।
ও বললো, তুমি আমাকে ভালোবাসো ? তুমি আমার নাম জানো?
আমি বললাম, ভালোবেসেছি। বাট নাম তো.... আচ্ছা, তোমার সাথো কখনো কথা হয় নি, নাম জানবো কি করে !
রশিদ তুমি আমার নাম জানলে অনেক কষ্ট পাবে । তোমার জেনে শুনে আমাকে ভালোবাসা উচিত ছিলো
আমি ভাবলাম সুস্মিতা দুষ্টমি করছে। পরে ও যখন,নাম বললো, আমি মনে হয়, কিছু বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছে, সুস্মিতা মিথ্যা বলছে আমার সাথে
ওই দিনের পর থেকে, আমি ওর গতিপথে কখনো দাঁড়াই নি। মাঝে মাঝে ভূল পথে ভূল ভাবে দেখা হয়ে গেলে, নিজেকে স্থির রাখতে পারতাম না
আমি উচ্চ মাধ্যমিক দিতে পারলাম না। পড়ায় মন বসতো না, খুব একা লাগতো নিজেকে।
তাকে যে কতো ভালোবাসতাম, এখনো তার কিশোরি মুখটি মনে পড়ে । আমার এখন দুই ছেলে দুই মেয়ে। সামনে তাদের বিয়ে দিবো। অথচ, এখনো পুরনো সেই দিনের কথা মনে পড়ে। কিছুদিন আগে চাকরির কাজে এক জায়গায় যাচ্ছি। সে বাসে সুস্মিতারর সাথে দেখা। সে নাকি আমার খোঁজ খবর রাখতো এবং এখনো রাখে। আমি শুনে খুব অবাক হয়েছি
ঠিক তখনি, আমাদের নৌকাটার পাঠাতন ভেঙ্গে পানি উঠতে লাগলো। নৌকায় আরো আট জন ছিলো। সবাই ভয় পেয়ে গেলো। মাঝি অনেক চেষ্ঠা করলো, পাঠাতনের ফুটো বন্ধ করতে কিন্তুু নৌকা ডুবে যেতে লাগলো। আমরা তখন ঠিক মাঝ নদীতে।
বাবা বেঁচে থাকলে তোমাকে একদিন আমার বাসায় আমার মেয়ের রান্না খাওয়াব। তবে মনে হয় বাঁচবো না, আমি সাঁতার পারি না
আমাদের নৌকা ডুবির খবর পাড়ে মনে হয় পৌছে গেছে। তবে আমাদের কাছাকাছি আসতে দশ মিনিট লেগেই যাবে।
কিভাবে যেনো নৌকার একটা লম্বা কাঠ ধরে আমি আর বুড়ো আঙ্কেলটা ভেসে আছি মাঝনদীতে। বাকি আট জনকে দেখতে পাচ্ছি না। তারমধ্যে দুজন সুন্দর মেয়ে ছিলো
রশিদ সাহেব বাসায় পৌছে খাবার টেবিলে, নৌকা ডুবির কথা এবং আমার সব কথা বলতে লাগলেন। তার বিশ্বাস আমার জন্য সে বেঁচে গেছে।
রশিদ সাহেবের ছোট মেয়ে ইরা বললো, ছেলেটার নাম কি !
তার বাবা, আমার নাম জিজ্ঞাস করেন নি, তাই তিনি বলতে পারলেন না।
ইরার মন ছটফট করতে লাগলো। কেনো জানি মনে হচ্ছে ওই ছেলেটার সাথে, তাকে পছন্দ করতো রবির মিল খুঁজে পাচ্ছে।
রশিদ সাহেব রুমে ডুকে, আমার মানিব্যাগ, যেটা তিনি, আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময়, নিয়ে নিয়েছিলেন।
মানিব্যাগ আমার ভার্সিটির আইডি কার্ড দেখে, খুশিই হলেন। যাক, পরিচয় পাওয়া গেলো মোঃ গোলাম রব্বানি । তখন তার মনে পড়লো রবি নামটার কথা। বয়সঅনেক কিছু ভুলিয়ে দেয়
ইরা, এই ইরা ! ছেলেটার আইডি কার্ড, দেখ
মাথাটা ঘুরে উঠলো ইরার। এ যে সে পাগলটা, তার জন্য পাগল ছিলো।ইরা তার রুমে গিয়ে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ কাঁদলো
ডাক্তার সাহেব, ওকে কি নিয়ে যেতে পারি ?
জ্বি, অবশ্যই । তবে ঔষুধ, ঠিকমতো খাওয়াবেন
রবি চলো, তোমাকে বলেছিলাম, বেঁচে থাকলে, আমার মেয়ের রান্না খাওয়াবো। সে খুব ভালো রাঁধে
ইরার রান্নার দায়িত্ব পেয়ে, তার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্ঠা করছে, আজ যেনো সবচেয়ে ভালো রান্নাটা করতে পারে।
কেনো যে রান্নাটা ভালো হতে হবে, এটা ইরা নিজে ও জানে না। অথচ, রবি যখন পছন্দের কথা জানায়, ইরা নাখচ করে দিয়েছে। ঘৃণার দৃষ্টিতে প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে আজ কেনো !
আমার ঘোর এখনো কাটে নি। মাথাটা ভার হয়ে গেছে। শুনতে পেলাম, আমি আঙ্কেল এবং আর একজন সাঁতরে বেঁচে গেছে। বাকি সাত জনকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায় নি
আমি তখনো জানতাম না, ইরার বাবার সাথে দশ মিনিট একটা কাঠ ধরে বেঁচে থাকার লড়াই করেছি নদীতে
খাবার এতো ভালো হয়েছিলো, যে, আমি আঙ্কেলকে বললাম, আপনার মেয়েকে দেখতে পারি ? খুব ভালো রেঁধেছে
ইরা সামনে আসলো। চোখ দুটি ফুলিয়ে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে
রশিদ আঙ্কেল, মেয়ের মাথায়, হাত বুলিয়ে, কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করলেন
আমি রশিদ আঙ্কেল কে বললাম, নৌকা ডুবে যাওয়ার আগে যে মেয়েটির কথা আপনাকে বলেছিলাম, সে মেয়েটি হচ্ছে, আপনার মেয়ে। ইরা...
ইরা তখন তার বাবাকে জড়িয়ে জোরে কাঁদলে লাগলো। বাবা....
রশিদ সাহেব ভাবলেশহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে, বললেন, আল্লাহ তোমাদের মঙ্গল করুক
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×