ছবির নাম – মোষ্ট ওয়েলকাম
পরিচালনা – অনন্য মামুন
প্রযোজনা - এম এ জলিল অনন্ত
অভিনয়ে - এম এ জলিল অনন্ত, বর্ষা, বাপ্পারাজ, রাজ্জাক, স্নেহা উল্লাল ও প্রমুখ
২০১২ এর এই রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে মোট ৬টি চলচ্চিত্র। এরমধ্যে সাকিব খানই অভিনয় করেছেন ৪টি ছবিতে যা ছিল গতানুগতিক। তবে এবারের ঈদের সবচেয়ে ব্যায়বহুল ছবির নাম মোষ্ট ওয়েলকাম। ছবিটির প্রযোজনা আর প্রধান চরিত্রে অভিনয়ে ছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে নতুন অ্যাকশান হিরো হিসেবে আবির্ভূত এম এ জলিল অনন্ত।
অনন্তের আগের ছবিগুলোতে (খোঁজ দ্য সার্চ, হৃদয় ভাঙা ঢেউ, দ্য স্পিড) তার মুনসুন ফিল্মসের ব্যানার থেকে বেশ কয়েকজন নামি পরিচালক ছবি বানিয়েছেন। এবার এ ছবিটি পরিচালনার ভারটা ছিল অর্ধশতাধিক ছবির কাহিনীকার অনন্য মামুনের উপর। ছবিটির বাজেট ছিল প্রায় ১৬ কোটি টাকা (মতান্তরে ৮ কোটি) !
ছবির কাহিনীর দিকে তাকালে দেখা যায় আরিয়ান (অনন্ত) দুদকের সৎ অফিসার যে দুর্নিতীবাজদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে। ওদিকে পুলিশ সমাজের মানুষের নিরাপত্তা আর সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় মানুষ গিয়ে দারস্থ হয় মুশকিল আসান বাবার মাজারে। মাজারের এক বাক্সে সবাই তাদের সমস্যার কথা লিখে ফেলে দেয় আর মাজারের খাদিম (রাজ্জাক) সেগুলোকে নিয়ে এক মুখোশধারী সুপারহিরোর কাছে দ্বায়িত্ব দেয় সমস্যাগুলো সমাধানের। এই সুপারহিরো একে একে দুর্নিতীবাজ খারাপ লোকদের সাইজ করে আর তাদের সবার উদ্দেশ্যে প্রথমবার একটি ডায়লগ ছেড়ে যায় : "যারা ভালো হতে চায় তাদেরকে মোস্ট ওয়েলকাম, আর যারা চায়না তাদের গুড বাই" ! এক ডায়লগেই কাজ হাসিল হতে দেখা যায়, সবাই মাজারে এসে তাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়। এই ডায়লগ থেকেই হয়তোবা ছবির নাম মোষ্ট ওয়েলকাম রাখা হয়েছে।
নতুন এই সুপারহিরোর পরিচয়ের সাস্পেন্স রক্ষায় একদমই মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে পারেননি ডেবুট্যান্ট পরিচালক অনন্য মামুন। ছবির মাঝপথেই খাদিমের সাথে সেই মুস্কিল আসান বাবার সুপারহিরোর কথোপকথনে দর্শক দেখতে পায় এই সুপারহিরো আর কেউ নয়, আমাদের ছবির নায়ক আরিয়ান।
ওদিকে অসৎ ব্যাবসায়ী মিজু আহমেদ তার ভাস্তে মিশা সওদাগর (সিনেমায় তাদের নামটা এ-বি-সি-ডি টাইপ কি ছিল তা ঠিক খেয়াল নেই) এর দুর্নিতী দিয়ে কামানো কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করে দুদক অফিসার আরিয়ান। এই টাকার শোধ নিতে এ-বি-সি-ডি (মিজু আহমেদ) তার মেয়ে বর্ষাকে আরিয়ানের পিছনে লেলিয়ে দেয়। শুরু হয় বর্ষা কতৃক আরিয়ানকে ইভটিজিং (!) থুরি অ্যাডামটিজিং।
বর্ষার এই অ্যাডামটিজিং কিছুটা হলেও কাজে দেয়। ওদিকে মিশা সওদাগর মুশকিল আসান বাবার সুপারহিরোকে ধরতে এক নতুন ফাঁদ পাতে। ফাঁদে পাড়া দিয়ে ধরাও পরে এ সুপারহিরো। এভাবে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জিরো সাসপেন্সে ছবিটি শেষ হয়।
ছবিটির কাহিনী তামিল চলচ্চিত্র শিভা দ্য সুপার হিরো (বিক্রম, শ্রেয়া সারান) থেকে প্রায় পুরোটাই অনুপ্রানিত বলে মনে হয়েছে। মোষ্ট ওয়েলকাম, শিভা দ্য সুপার হিরোর অফিসিয়াল রিমেক কিনা তা জানা নেই আমার।
ওদিকে বলিউড অভিনেত্রী স্নেহা উল্লাহকে দিয়ে একটি আইটেম সং এ অভিনয় করানো হলেও ছবির প্রমোশনে তার নাম সবচেয়ে বেশী এসেছে। ভারতীয় অভিনেত্রী এনে এত রাকঢাক পিটিয়ে তাকে স্ক্রিনে শুধুমাত্র ৫ মিনিট দেখিয়ে ছবির দর্শক বাড়ানোর স্ট্রাজেটিটা পছদ হয়নি আমার।
তবে এ ছবির গানগুলো বেশ সুন্দর ছিল। গানের চিত্রায়ন খুব বেশী ভালো না লাগলেও আরেফিন রুমি-ন্যান্সির পড়েনা পলক, মিলার আমার মন দরিয়াতে এবং ছবির টাইটেল ট্রাকটি বেশ শ্রুতিমধুর ছিল।
অনন্ত জলিলের আগের ছবিগুলোর মত এবারের ছবিতেও তার ভাষাগত সমস্যা প্রকটভাবেই থেকে গেছে যা ছবিটার মান অনেকটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে গানের দৃশ্য ছাড়াও ছবির অন্যান্য দৃশ্যেও দেশী-বিদেশী লোকেশনের কন্টিনিউটি ছাড়া যথেচ্ছা মিক্সআপ মনে অযাচিত ভাবনার উদ্রেগ করে। ছবির কিছু কিছু অ্যাকশান দৃশ্য খেলো বলে মনে হলেও এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।
উল্লেখ্য বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মনপুরার পরে এটি দ্বিতীয় চলচ্চিত্র যার টিকিট সংগ্রহের জন্য হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় ছবিটি কতটা ব্যবসাসফল।
সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রটি সাকিব খানের গতানুতিক ঢালিউড ছবির স্বাদের বাইরে আলাদা কিছু দিয়ে নিম্নবিত্ত দর্শকদের বিপুল বিনোদন দিতে পারলেও মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তদের বিনোদন দানে মোষ্ট ওয়েলকাম ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে গেছে। তবে আশা রাখি এখান থেকেই ভালো কিছুর শুরু হবে। বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে আবারো সোনালী দিন ফিরে আসুক। দেশের হলগুল সংস্কার এবং চলচ্চিত্রগুলো তাদের কাজের মান উন্নয়নের মাধ্যমে অচিরেই দেশের সব শ্রেনীর দর্শককে হলে ফিরিয়ে আনবে, দেশের মানুষের প্রতিটা ছুটিতে সিনেমা হল হবে লোকে লোকারন্য, এ আশা দেশের সকল চলচ্চিত্রপ্রেমীর।