somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোকের উচ্চারণ।

২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে উঠা ঢাকা। সেই কাকডাকা অমঙ্গলে ভোর। হোটেলে হোটেলে চুলা জ্বালাবার তোরজোড়, রিকশার টুংটাং মায়ের বালিশের নিচে মোবাইলের অ্যালার্ম। বাচ্চাদের স্কুল বাবাদের অফিস আর মায়েদের কাজের ফেরার ব্যস্ততা নিয়ে জেগে উঠে এই শহর। খুব খুঁজে দেখলে তেমন কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু রেসিডেন্টশিয়াল স্কুলের রাষ্ট্রের হাতে খুন হওয়া বাচ্চাটার বাসায় আজ সেই প্রতিদিনের ঢাকা হয়ে আসে নাই। আসে নাই এক এম আই এস টির বাচ্চাটার বাসার সেই রুমে। এইসব ঠিকানার আনন্দ বেদনা ভবিষ্যৎ সবকিছু কেঁড়ে নিয়েছে একটা দেশের অবৈধ স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ক্ষমতা।


অযুত সাফল্য হাতছানি দিয়ে ডাকা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গর্বিত পিতামাতা হিসেবে যাদের মিডিয়া আলো করে উজ্জ্বল হাসিতে সাক্ষাতকার দেবার কথা। আনন্দিত ঈষৎ লজ্জিত অথচ গর্বিত কণ্ঠে যাদের বলার কথা জানেন ছোট বেলায় একদম সবজি ভালোবাসতো না। ওর আগ্রহ ছিল রোবট নিয়ে সারাদিন বাসায় ভাঙা টুকরো জোরা দিয়ে কেবল নতুন কিছু তৈরি। সেই বাবা মাকে আজ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলতে হচ্ছে আমার সান্তান হত্যার বিচার চাই। কাঁপা আঙুলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে টাইপ করতে হচ্ছে “ আমার বুকের ধন কে কেঁড়ে নিয়েছে ওরা , আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। ওহ কী বলছি এখন তো আমাদের সেটুকু বিষাদ প্রকাশের ও অধিকার নেই।


পীরগাছা গ্রামের আবু সাইদের বাসার কিচিমিচি পাখি ঢাকা ভোর ও অন্যদিনের চাইতে আলাদা। বাসার সবচাইতে ছোট ছেলে, আদরের বোনের ভাই আজ শুয়ে আছে একলা কবরে। চট্টগ্রামের সেই যুবকের পরিবারের আজকের সকাল কেমন ছিল ? সকালের গ্যাসের চুলায় কি চায়ের পানি ফুটছে ? পাশের দোকানের ছোলার ডাল আর পরোটা আনতে কি কাউকে পাঠানো হয়েছে? না না মরা বাড়িতে তো চুলা জ্বালাতে নেই, নিশ্চয়ই প্রতিবেশী আত্মীয় পরিজনদের বাসা থেকে আজকে খাবার এসেছে।


‘বুকের ভিতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ -
প্রথমে ভয় দেখালো, নাহ এর সিনা দেখি এখন ও টানটান! আবু সাঈদ রা বুঝতে পেরেছিলো এই পুলিশ গোলাভরা রেশনের চাল চিনি ডাল আর উৎসব ভাতা ক্ষমতার অপব্যবহারের বিবেক বন্ধক দিয়ে আসা। তাই গুলি খাবে সেটুকু বিশ্বাস নিয়েই এসেছিলো।
ভয় দেখানোর পর প্রথম একটা গুলিতে সে বিশ্বাসের ভিতে টলতে টলতে দাঁড়িয়ে গেছে। হাতে পায়ে পিঠে গুলিতে কি মারতে পারবে ? না পারবে না তাই সহপাঠী বন্ধুদের সাহসের বাতিঘর হিসেবে আলোক বিচ্ছুরণ শুরু করলো সটান শাল বৃক্ষের মতন। পরের গুলিতে আর আধপেটা খাওয়া শরীর আর মানলো না। যেনো কাটা কলাগাছ হয়ে মাটি স্পর্শ করলো। না মাথা নীচুকরে নেতিয়ে পরা নয় মোটেই।


আবু সাঈদ তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই বুঝে গিয়েছে সে অর্ধমৃত। তাদের শিক্ষা শেষে চাকুরীর সম্ভাবনা নেই। আবু সাঈদদের কোটা নেই , দরিদ্র পিতার প্রশ্ন কেনার টাকা নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কর্পোরেট চাকুরীর যোগ্যতা নেই। দেশ ছাড়ার বিন্দুমাত্র সুযোগও নেই তার কাছে। রাষ্ট্র যোগ্য হতে সুযোগ দেয় না সাহায্য করে না, কারন সে জায়গায় ভিনদেশীদের রাজত্ব করে দিয়েছে, দিয়েছে অবাধ চাকুরীর সুযোগ। অর্ধ মৃতদের মৃত্যুর ভয় থাকবে না সেটুকু কী রাষ্ট্রের লেলিয়ে দেয়া সংস্থা বুঝতে পেরেছিলো?


রাস্টের প্রধান, অবাধ্য ছাত্রদের দেখে নেবে ছাত্রলীগ হুকুম দেয়া মন্ত্রী অন্যান্য মন্ত্রী, ইতিহাসের পাতায় নিকৃষ্ট ন্যায়নীতি বিহীন একটা রাজনৈতিক দলের সমর্থক, পুলিশ বিজিবি এমন কি নির্বিচারে গুলি করা সমস্ত বাহিনীর সবাই আজ সকালে পরিপূর্ণ পরিবার নিয়ে নিত্যদিনের মত ব্যস্ততা নিয়ে জেগে উঠা একটা ভোর দেখছে। শুধু কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহীদ হওয়া পরিবার গুলো বুকের ভেতর অপরিসীম যন্ত্রণা নিয়ে অক্ষম আক্রোশ আর কণ্ঠে অভিশাপ নিয়ে জেগে উঠেছে।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:০৭
৪৫৬ বার পঠিত
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গল্পকে আধুনিকায়নের চেষ্টা

লিখেছেন জটিল ভাই, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

বনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বর্তমান সময়ের রাজনীতি নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১৩

বর্তমান সময়ের রাজনীতি নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ সমুহঃ
১। শেখ হাসিনা এখন হুমকি ধামকি না দিয়ে হাল্কা পাতলা কান্না কাটি করলে এবং দুঃখ প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের উপকার হত।
২। সারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। এবং খালেদা জিয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২৬






২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে যাওয়ার পর ছয় বছরের মধ্যে এই প্রথম তিনি জনসমক্ষে উপস্থিত হলেন এবং রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন। শেষবার তিনি ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আলোচনার বাহিরের খবর

লিখেছেন জটিল ভাই, ২১ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

রসুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরুর রচনা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৬

একজন সাধারণ পাঠক হলেও দেশী-বিদেশী আমার প্রিয় লেখক সাহিত্যিকদের তালিকা বেশ দীর্ঘ! বনফুল, যার আসল নাম- বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়। শখের বশে তিনি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।
বলাই চাঁদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×