মুঠো ফোনের আয়নায় আলোর কাঁপন থেকে চোখ ফেরালাম,হাত ঘড়িতে সময় এখন সকাল এগারো'টা বেজে তিরিশ মিনিট।
তারমানে দেশে এখন মধ্যরাত, মা ঘুমে বড় কোন বিপদ না হলে কল করবেন না সুতরাং মুঠো ফোন এর চোখ নাচানি কে অনায়েসে অবহেলা করাযায় অনায়াসে।
দূরে কোথাও থেকে তেজপাতা ঘ্রান মেশানো বাতাস আছড়ে পরছে আমার নাকে!!!
একটু না বেশ খানিক টা অবাক হয়ে জোরে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম আবার।
আশ্চর্য সত্যি ই তাজা সবুজ তেজপাতার সুবাস।
পৃথিবীর অপর প্রান্তে ফেলে আসা ,আমার লেখা লিখির একনিষ্ঠ শ্রোতা,একমাত্র প্রিয়বন্ধু ফরেস্ট একাডেমীর তেজপাতা গাছ স্মৃতি'তে উঁকি দিল। অধিকাংশ সময় দিনের এই প্রহরে ই সবচাইতে বেশি কাছে পেতাম ওকে ,কিন্তু এখন তো ওখানে রাত !!!!!
নাহ মাথা কিছুতেই কাজ করছে না, পাশ কাটিয়ে না গিয়ে দরুন মুগ্ধতায় সুবাস টা কে আপন করে নিয়ে হাতের কাজে মন দিলাম।
তিন টা ব্লগে বেশকিছু গল্প পূর্ণতার অপেক্ষায় রয়েছে যা আমার হৃদয় এর খোরাক । কয়েকজন নাট্যকার এর সাথে আলোচনা চলছে গল্প পরিমার্জন করে নাট্যরূপ দেয়ার।তবে স্বস্তির কথা এই যে চলচ্চিত্র কাহিনী টা আপাতত কোনোমতে দাড় করানো গেছে।
জি- মেইল এর চিঠি গুলো খোলা হয়নি, ইয়াহু আমাকে লাল ঝান্ডা উড়িয়ে মনে করিয়ে দিচ্ছে ;অনেক গুল প্রিয়মুখের ,প্রিয়কিছু বার্তা জমে আছে সেখানে। হটমেইল কে বিদায় জানিয়ে , লিঙ্কডিনের রক্ত চক্ষু কে ভেংচি কাটলাম ঠিক'ই কিন্তু শখ করে যে ফেসবুক কে আলিঙ্গন করেছি ,সেখান থেকে মুক্তি র পথ হারিয়েছি আমি। মুখবই এর আট জানালায় দুইটা গ্রুপ মেসেজ আর ছয় জন ভিন্ন জগতের শুভাকাঙ্ক্ষীর শুভকামনা' র প্রাপ্তি আমাকে ঘুমের জগতে স্বপ্ন বিলাসে ঠেলে দিচ্ছে সব গুলো জানালাতে একটা মেসেজ ই কপি পেস্ট করলাম।
সপ্তাহের এই একটা ছুটির দিন নিজের মত পাগলামি করার একটা পাগলা ইচ্ছে আমাকে তাড়া করতে'ই, হোম থিয়েটারে মুভি চালু করে দিয়ে বসলাম" ফড়িং ইচ্ছের রাশ টানতে " হাসির ছবি'ই সেরা মনে হল। ফেসবুক এর গোপন সংবাদদাতা টিকটিকি খান টিক টিক করাতে অনিচ্ছা সত্ত্বে ও গ্রুপ মেসেজে ওপেন করতে হল, " এটা আমাদের কাছা কাছি মনন এর তিন জনের সময়ে অসময়ে ভাললাগা গুলোর নিরাপদ আশ্রয়" এই গ্রুপ মেসেজ এ আমরা তিন জন আছি একজন আমি সাথে আমার উপর সারাক্ষন বিরক্ত থাকা আমার লেখার চমৎকার বিশ্লেষক একজন প্রিয়ব্লগার আর অন্যজন ব্লগার বড় আপু ।
এই মুহূর্তে যদিও মিহিসুরে আমার ইচ্ছা আমাকে জানান দিচ্ছে এখানে আসা চলবে নাএকদম তারপর ও বলতে দ্বিধা নেই এরা আমার জীবনের এই এপিসোডে সহ শিল্পীর ভুমিকায় চমৎকার ভাবে সহয়তা করে যাচ্ছেন ।
মেসেজ এলো_
" ফোন রিসিভ করছ না কেন ? "
নাম্বার এর সাথে সেভ করা নাম দেখে বিট মিস হোল-
কয়েকবার এর চেষ্টা তেও কল রিসিভ করার সাহস সঞ্চয় করতে পারলাম না, প্রতিবার আলোর নাচন এর সাথে ভেসে আসা নাম টা আমাকে অতীতের অতল জলে আহ্বান করছিল ।ওর সীমানায় ঘিরে থাকা যে কেউ এভাবে আমার এই প্রতি দিনের রবোটিক জীবনধারা থেকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও অসময়ের বৃষ্টিতে ভেজার মত আনন্দিত করে তোলে ।
আর এই আপু তো সবচাইতে কাছের প্রিয়জন ই ছিলেন রুম মেট ছিলেন ওর রোকেয়া হলে'র। এত বছর পর ও ছবি দেখে ঠিক ঠিক চিনে নিয়েছিলাম আমি। তবে আপু 'র আমাকে চেনার কথা নয়, অজান্তে যদি কোনভাবে প্রকাশ হয়ে যায় !!!!! তা ছাড়া অযৌক্তিক এক অভিমান আমাকে পেয়ে বসল_
এত দিন পরে কেন !!!!!!!
চোখ বন্ধ করে মুখ বই ফেলে মনবহি তে চলে গেলাম যেখানে লগ ইন করতে লাগে না কোন মেইল ঠিকানা বা গোপন সংখ্যা; যেখানে ছবিগুলো সবসময়ই অনলি মি করা থাকে আর বন্ধুর তালিকায় আছে শুধু একটা'ই আই ডি।
মনের এ্যালবামে কভার পিকে বাঁধ ভাঙা হাসির জোয়ারে রুমমেট আপুর হাত ধরে উড়তে থাকা দুইজনের মুখ ভেসে উঠল।
সত্যি এতটা উচ্ছল প্রাণবন্ত আফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে চলা পজিটিভ কাউকে ভালবাসতে পেরে আমি পূর্ণ!!!!!!
ছবি তুলতে যেয়ে ক্যামেরার চোখে সেতু'কে দেখেছি প্রথম। এইচ এস সি তে জাতীয় মেধা তালিকায় থাকা ছাত্র ছাত্রী দের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল সেটা।ওর সার্টিফিকেট গ্রহন এর ছবি সহ একদিন কোচিং এ দেখা ও করে এলাম; বিশাল ফ্রেমে বাধানো ছবি বিস্ময়ে বোবা হয়ে দেখতে যেয়ে আনমনে ছুঁয়েছিল আমার হাত আর সেই সুবাসে'র সেই ছোয়ার-
"একটুকু ছোঁয়া লাগে একটুকু কথা শুনি তাই নিয়ে মনে মনে রচি মম ফাল্গুনী "তে ই কেটে যাচ্ছিল আমার উন্মাতাল দিন গুলো।
প্রতিটা পদক্ষেপ জেনে নিতে খুব বেশী সময় লাগেনি।পরিবারের ইচ্ছা কে বিসর্জন দিয়ে সবার অমতে সুধু মাত্র ওকে কাছে পাব ভেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ চলে এলাম। কমার্স ফ্যাকাল্টি হয়ে উঠলো আমার নিজস্ব প্রাঙ্গণ ।
দূরে, নিরাপদ দূরত্ব থেকে ভালোবাসে গেলাম একটু ও ফুসরত মিলল না অন্য কিছু ভাবনার বা তাকে জানানোর।অন্যদিকে আমার মত সাধারণ এক মুখচোরা বিভিন্ন সাপ্তাহিক এ গল্প লেখা,বার দুই দেখা হওয়া একজন কে স্মৃতি ঘেটে চিনে নেবার সামান্য সময় ও যে সেতু দের কাছে থাকতে নেই_
কে ই বা না জানে সে কথা!!!!!!