একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করলে, কাফফারা বাবদ সত্তর হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে: আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাকিমুল হাদীছ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করলে, এর কাফফারা বাবদ সত্তর হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর একজন খলীফা উনাকে শহীদ করা হলে, এর কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ مَا قُتِلَ نَبِيُّ قَطُّ إِلَّا قُتِلَ بِهِ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنْ أُمَّتِهِ وَلَا قُتِلَ خَلِيفَةٌ قَطُّ إِلَّا قُتِلَ بِهِ خَمْسَةٌ وَثَلَاثُونَ أَلْفًا. অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন কোনো নবী আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা হয়নি যে, উনার কাফফারা বাবদ উনার উম্মতের সত্তর হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়নি। আর এমন কোনো খলীফা উনাকে শহীদ করা হয়নি যে, উনার কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়নি।” (মুছান্নাফে আবী শায়বাহ ১৫/২২৩, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক্ব ১১/৪৪৫, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ১৮/৫২, আছ ছওয়াইকুল মুহ্রিক্বহ ১/৩২৯, ত্ববাক্বতে ইবনে সা’দ ৩/৮৩, ইযালাতুল খফা’ ৬/৩১৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/১৪৬, খাযিন ৩/৩০৩, বাগভী ৬/৫৯, আত তামহীদ ওয়াল বায়ান ১/১৮১, তারীখুল খুলাফা ১/১২৮, আর রিয়াদুন নাদ্বরাহ ফী মানাক্বিবে আশারাহ ১/২২৮, আখবারুল মদীনা ২/২২৫, আল মুহাদ্বারাত ওয়াল মুহাওয়ারাত ১/৭১, ইত্যাদি) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تعالى عَنْهُمَا قَالَ أَوْحَى اللهُ تَعَالَى إِلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي قَتَلْتُ بِيَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّا سَبْعِينَ أَلْفًا وَإِنِّي قَاتِلٌ بِابْنِ ابْنَتِكَ سَبْعِينَ أَلْفًا وَسَبْعِينَ أَلْفًا. অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক করেন যে, নিশ্চয়ই আমি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, ধ্বংস করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই আমি আপনার লখতে জিগার, আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যিনি সম্মানিত আওলাদ ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, তাদের সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবো, ধ্বংস করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ ৩/১৯৫, খছায়িছুল কুবরা শরীফ ২/২১৪, ইমতা‘উল আসমা’ ১২/২৩৭, শরহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব ১০/১৫২ ইত্যাদি) এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, إِنِّي قَتَلْتُ بِيَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّا سَبْعِينَ أَلْفًا وَإِنِّي قَاتِلٌ بِابْنِ ابْنَتِكَ سَبْعِينَ أَلْفًا وَسَبْعِينَ أَلْفًا. অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, ধ্বংস করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই আমি আপনার লখতে জিগার, আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যিনি সম্মানিত আওলাদ ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবো, ধ্বংস করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ! আর এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুল মুহাদ্দিছীন মিনাল আউওয়ালিনা ইলাল আখিরীন, মুজাদ্দিদে আ’যম, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মূলত, এক লক্ষ চল্লিশ হাজার কাফির-মুনাফিকদেরকে তো নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছেই। শুধু তাই নয়, এইজন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি কাফির, মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে, তাদের অস্থিত্ব বিলীন করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! এখন বলার বিষয় হচ্ছে একজন খলীফা উনাকে শহীদ করার কারণে, কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন একজন বিশেষ নবী-রসূল। উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে জড়িত যারা ছিলো, কাফফারা বাবদ সত্তর হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে; কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফার বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি কাফির, মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে, তাদের অস্থিত্ব বিলীন করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহতাজ। এছাড়া কায়িনাতের অন্য কারো মুহতাজ নন; বরং কায়িনাতের সকলেই উনার মুহতাজ। উনার কারণেই কায়িনাতের সকলে সম্মানিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে। সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, اَنَّ نَبِـىَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ. অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (প্রায়) ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩) সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে জাহান্নামে যত শাস্তি দেয়া হবে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে শহীদ করেছে, তাকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে: সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ حَضْرَتْ عَليّ بن اَبِـىْ طَالِب عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تُحْشَرُ ابْنَتِي حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَمَعَهَا ثِيَابٌ مَصْبُوغَةٌ بِدَمٍ فَتَتَعَلَّقُ بِقَائِمَةٌ مِنْ قَوَائِمِ الْعَرْشِ فَتَقُولُ يَا عَدْلُ احْكُمْ بَيْنِي وَبَيْنَ قَاتِلِ وَلَدِي فَيُحْكَمُ لابْنَتِي وَرَبِّ الْكَعْبَةِ. অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি হাশরের ময়দানে নূরুন নাজাত মুবারক রঞ্জিত (রক্ত রঞ্জিত) পোশাক মুবারক নিয়ে উপস্থিত হবেন। অতঃপর তিনি সম্মানিত আরশ উনার স্তম্ভসমূহের এক সম্মানিত স্তম্ভ মুবারক উনার নিকটবর্তী হবেন। তারপর তিনি বলবেন, হে ন্যায়বিচারক (মহান আল্লাহ পাক), আপনি আমার এবং আমার সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শহীদকারীদের মাঝে মীমাংসা করুন। সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সম্মানিত লখতে জিগার, সম্মানিতা আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানার্থে এই বিষয়ে সর্বোত্তম ফায়ছালা মুবারক করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৫/৪৭৬, শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ حَضْرَتْ عَليّ بن اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاتِلُ الْـحُسَيْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে শহীদ করেছে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে। ওই নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৩/২১০, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ ১/৪৮৩, কাশফুল খফা’ ২/৯১, শরহুয যারক্বানী আলালা মাওয়াহিব ১০/১৫২, শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪, তাফসীরে হাক্কী ৫/৪৩৭, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৪/৮৮ ইত্যাদি) অপর বর্ণনায় এসেছে, وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ قَاتِلَ الْـحُسَيْنِ عليه السلام فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا وَقَدْ شدت يَدَاهُ وَرِجْلَاهُ بِسَلَاسِلَ مِنْ نَّارٍ، مَنْكِب حتى يقع في قَعْرِ جهنم وله ريح يتعوذ أهل النار من شدة نَتْن ريحه. অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে শহীদ করেছে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে। ওই সর্বনিকৃষ্টি ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! তার হাত এবং পাগুলো আগুনের শিকল দ্বারা শক্তভাবে বাঁধা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করা হবে। তার কঠিন দুর্গন্ধ থাকবে। সমস্ত জাহান্নামবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত লোক জাহান্নামে যাবে, তারা সকলেই সেই কঠিন পঁচা দূর্গন্ধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।” (শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪) পঞ্চম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মুকাশাফাতুল কুলূব’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন, “সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তার সাতটি দরজা রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায়, لها سبعة ابواب. “জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ: আয়াত শরীফ: ৪৪) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لا ولكنها طباق بعضها اسفل من بعض من الباب الى الباب مسير سبعين سنة كل باب منها اشد حرا من الذى يليه بسبعين ضعفا وساله ايضا عن مكان هذه الابواب فقال اما الاسفل ففيه المنافقون واسمه الهاوية. كما قال الله تعالى إِنَّ ٱلْمُنَـٰفِقِينَ فِى ٱلدَّرْكِ ٱلْأَسْفَلِ مِنَ ٱلنَّارِ. والباب الثاني فيه المشركون واسمه الجحيم والباب الثاث فيه الصابئون واسمه سقر والباب الرابع فيه ابليس عليه اللعنة ومن تبعه من المجوس واسمه لظى والباب الخامس فيه اليهود واسمه الحطمة والباب السادس فيه النصارى واسمه السعير ثم امسك جبريل عليه السلام فقال له صلى الله عليه وسلم لم لم تخبرنى عن سكان الباب السابع فقال جبريل يا محمد صلى الله عليه وسلم لا تسالنى عنه فقال ففيه اهل الكبائر من امتك الذين ماتوا ولم يتوبوا. অর্থ: “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহান্নামের দরজা এই পৃথিবীর ঘর-বাড়ির দরজার মতো নয়; বরং উপরে-নিচে স্তরে স্তরে বিন্যস্ত এবং এক দরজা হতে অপর দরজা পর্যন্ত সত্তর বছরের পথ পরিমাণ দূরত্ব। উপরের দিক থেকে প্রথম দরজার তুলনায় দ্বিতীয়টির এবং এভাবে পরবর্তী দরজাগুলোর একটির তুলনায় অপরটির উত্তাপ ও দাহন ক্ষমতা সত্তরগুণ অধিক হবে।’ অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে এসব স্তরে অবস্থানকারীদের সমন্ধে বলতে বললেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, ‘দোযখের সর্বনি¤œ স্তরে নিক্ষেপ করা হবে মুনাফিক্বদেরকে। এই স্তরের নাম হবে ‘হাবিয়াহ’। এস্তরে মুনাফিক্বদের অবস্থান প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ. “নিঃসন্দেহে মুনাফিক্বদের স্থান হচ্ছে, জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৫) নিম্ন দিক হতে দ্বিতীয় স্তরের অধিবাসী হবে মুশরিকরা। এস্তরের নাম ‘জাহীম’। তৃতীয় পর্যায়ে ছাবিঈনদের স্তর। এর নাম ‘সাক্বার’। চতুর্থ পর্যায়ে অভিশপ্ত ইবলীস ও তার অগ্নিপূজক অনুচরদের স্তর। এর নাম ‘লাযা’। পঞ্চম স্তরে হবে ইহুদীরা; এর নাম ‘হুতামাহ’। ষষ্ঠ স্তরে হবে খ্রিস্টানরা; এর নাম হবে ‘সাঈর’। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি থেমে গেলেন। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন: হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি সপ্তম স্তর সম্পর্কে কিছু বলছেন না কেন? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমাকে এই স্তর সম্পর্কে সুওয়াল না করলে ভালো হয়। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহান্নামের এই সপ্তম স্তরে আপনার উম্মত উনাদের মধ্যে ওই সব লোক নিক্ষিপ্ত হবে; যারা দুনিয়াতে কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হয়েছে এবং তাওবা না করে মারা গেছে।” (মুকাশাফাতুল কুলূব: ২৫-২৬) মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’রা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর ‘হাবিয়া’-এর মধ্যে প্রবেশ করবে এবং সেখানে কঠিন-ভয়াবহ ‘আযাব-গযব উপভোগ করবে; যেখানে ইহূদী, খ্রিস্টান, কাফির, মুশরিক, মূর্তি-পূজক, অগ্নিপূজক; এমনকি স্বয়ং মালঊন ইবলীসও প্রবেশ করবে না এবং এতো কঠিন-ভয়াবহ ‘আযাব-গযবও উপভোগ করবে না; বরং ইবলীস প্রবেশ করবে জাহান্নামের চতুর্থ স্তর ‘লাযা’-এর মধ্যে, যেখানে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর ‘হাবিয়া’-এর তুলনায় ২১০গুণ কম শাস্তি হবে, আর ‘হাবিয়া’-এর মধ্যে জাহান্নামের চতুর্থ স্তর ‘লাযা’-এর তুলনায় কমপক্ষে ২১০গুণ বেশি শাস্তি হবে। অর্থাৎ তাহলে বুঝা গেল যে, মুনাফিক্বদের শাস্তি হবে স্বয়ং ইবলীসের তুলনায় কমপক্ষে ২১০গুণ বেশি, আর স্বয়ং ইবলীসের শাস্তি হবে মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দের তুলনায় ২১০গুণ কম। না‘ঊযুবিল্লাহ! সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم تعوذوا بالله من حب الحزن قالوا يا رسول الله وما جب الحزن ؟ قال واد في جهنم يتعوذ منه جهنم كل يوم أربعمائة مرة قيل ومن يدخله؟ قال القراء المرائون بأعمالهم . অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জুব্বুল হুযন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জুব্বুল হুযন কী? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। যেখান থেকে স্বয়ং জাহান্নাম নিজে প্রতিদিন চারশতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে এতে প্রবেশ করবে? জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ওই সমস্ত লোক- যারা লোকদেখানোর জন্য সম্মানিত কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে অর্থাৎ মুনাফিক্ব রিয়াকার উলামায়ে সূ’রা।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কাফির, মুশরকি, ইবলীসসহ, মুনাফিক্ব-উলামায়ে সূ’দের যত শাস্তি হবে। যেই কুখ্যাত কাফির ও মুনাফিক্বটি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে, তার এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি হবে। তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! আর এই কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ شَجَرَةُ النُّبُوَّةِ وَمَعْدِنُ الرِّسَالَـةِ لَيْسَ اَحَدٌ مِّنَ الْـخَلَائِقِ يَفْضُلُ اَهْلَ بَيْـتِـىْ غَيْرِىْ. অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক অর্থাৎ মূল এবং সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার সম্মানিত খনি মুবারক অর্থাৎ মুল। সমগ্র সৃষ্টি জগতে আমি ব্যতীত আর কেউ আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার অধিকারী নেই। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টি জগতের মাঝে আমার পরপরই আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (তারতীবুল আমালী ১/২০২, আল ঈমা ইলা যাওয়ায়িদিল আমালী ৫/১৭৯) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ. অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল ‘উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি) মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুঝার, উপলব্ধি করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ كُنَّا نُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ فَإِذَا سَجَدَ وَثَبَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ عَلَى ظَهْرِهِ فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ أَخَذَهُمَا بِيَدِهِ مِنْ خَلْفِهِ أَخْذًا رَفِيقًا فَيَضَعُهُمَا عَلَى الأَرْض فَإِذَا عَادَ عَادَا حَتَّى قَضَى صَلاَتَهُ أَقْعَدَهُمَا عَلَى فَخِذَيْهِ. অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত ইশা উনার নামায পড়ছিলাম। অতঃপর তিনি যখন সিজদা মুবারক-এ গেলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে বসলেন। সুবহানাল্লাহ! যখন তিনি সিজদা মুবারক থেকে মাথা উঠালেন, তখন উভয়কে পেছন থেকে মুহব্বত উনার সাথে ধরে যমীনে বসিয়ে দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবার সিজদা মুবারক-এ গেলে উনারা দু’জন পুনরায় উনার পিঠ মুবারক-এ উঠে বসলেন। নামায মুবারক শেষ করা পর্যন্ত উনারা দু’জন এরূপ করে যাচ্ছিলেন। অতঃপর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায মুবারক শেষ করলেন, তখন উনাদের দু’জনকে উনার সম্মানিত উরু মুবারক উনার উপর বসালেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ২/৫১৩, কানযুল উম্মাল ১৩/৬৬৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১১১, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৩১, আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৬/২২৫ ইত্যাদি) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَسْجُدُ فَيَجِيءُ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ فَيَرْكَبُ عَلَى ظَهْرِهِ فَيُطِيلُ السُّجُودَ فَيُقَالُ يَا نَبِيَّ الله أَطَلْتَ السُّجُودَ فَيَقُولُ ارْتَحَلَنِي ابْنِي فَكَرِهْتُ أَنْ أُعْجِلَهُ অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সিজদা মুবারক-এ যেতেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সম্মানিত পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে যেতেন। এ কারণে তিনি সিজদা মুবারক লম্বা করতেন। ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলা হতো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি কি সিজদা মুবারক লম্বা করলেন? তখন তিনি জবাবে ইরশাদ মুবারক করতেন, আমার আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনারা আমার পিঠ মুবারক-এ আরোহন করেছেন, তাই আমি (সিজদা থেকে) তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়াটা পছন্দ করিনি।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/৩৮০, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১৮১, আল মাত্বালিবুল আলীয়াহ ১৬/২১০) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَمْشِي عَلَى أَرْبَعَةٍ وَعَلَى ظَهْرِهِ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُمَا وَهُوَ يَقُولُ نِعْمَ الْجَمَلُ جَمَلُكُمَا وَنِعْمَ الْعِدْلانِ أَنْتُمَا. অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলাম, দেখলাম, তিনি দুই হাঁটু ও দুই হাত মুবারক উনাদের উপর ভর করে চলছেন এবং উনার পিঠ মুবারক উনার উপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আরোহিত ছিলেন। তিনি বলতেছিলেন, আপনাদের উট মুবারক কতই না উত্তম! আর আপনারা কতই না উত্তম আরোহী।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৩/৫২, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১১১, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ) শুধু তাই নয়, স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে খুশি করার জন্য উনাদেরকে উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ নিয়ে তিনি দুই হাত মুবারক ও দুই পা মুবারক-এ চলতেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা বলতেন, নানাজান, প্রত্যেকের ঘোড়ার তো লাগাম রয়েছে, আমাদের ঘোড়ার লাগাম কোথায়? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে উনার সম্মানিত নূরুল ফাত্হ (চুল) মুবারক দিতেন, উনারা সম্মানিত নূরুল ফাত্হ (চুল) মুবারক ধরতেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা আরো বলতেন, নানাজান, প্রত্যেকের ঘোড়া তো আওয়াজ করে থাকে, আমাদের ঘোড় তো আওয়াজ করে না। তখন তিনি উনাদেরকে খুশি করার জন্য আওয়াজ মুবারক করতেন এবং উনাদেরকে সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ নিয়ে মসজিদে নববী শরীফ উনার একপ্রান্ত মুবারক থেকে অপর প্রান্ত মুবারক-এ যেতেন। সুবহানাল্লাহ! এখন ফিকিরের বিষয়- যেখনে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক উনার ধূলি মুবারক নেয়ার জন্য বেকারার পেরেশান, সেখানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে খুশি করার জন্য এরূপ করতেন, তাহলে উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করলে, কাফফারা বাবদ সত্তর হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে: আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাকিমুল হাদীছ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, একজন নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করলে, এর কাফফারা বাবদ সত্তর হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর একজন খলীফা উনাকে শহীদ করা হলে, এর কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে ধ্বংস করে দেয়া হয়। আর ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَلَامٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ مَا قُتِلَ نَبِيُّ قَطُّ إِلَّا قُتِلَ بِهِ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنْ أُمَّتِهِ وَلَا قُتِلَ خَلِيفَةٌ قَطُّ إِلَّا قُتِلَ بِهِ خَمْسَةٌ وَثَلَاثُونَ أَلْفًا. অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন কোনো নবী আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা হয়নি যে, উনার কাফফারা বাবদ উনার উম্মতের সত্তর হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়নি। আর এমন কোনো খলীফা উনাকে শহীদ করা হয়নি যে, উনার কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়নি।” (মুছান্নাফে আবী শায়বাহ ১৫/২২৩, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক্ব ১১/৪৪৫, আল মাত্বালিবুল আলিয়াহ ১৮/৫২, আছ ছওয়াইকুল মুহ্রিক্বহ ১/৩২৯, ত্ববাক্বতে ইবনে সা’দ ৩/৮৩, ইযালাতুল খফা’ ৬/৩১৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/১৪৬, খাযিন ৩/৩০৩, বাগভী ৬/৫৯, আত তামহীদ ওয়াল বায়ান ১/১৮১, তারীখুল খুলাফা ১/১২৮, আর রিয়াদুন নাদ্বরাহ ফী মানাক্বিবে আশারাহ ১/২২৮, আখবারুল মদীনা ২/২২৫, আল মুহাদ্বারাত ওয়াল মুহাওয়ারাত ১/৭১, ইত্যাদি) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنِ حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تعالى عَنْهُمَا قَالَ أَوْحَى اللهُ تَعَالَى إِلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي قَتَلْتُ بِيَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّا سَبْعِينَ أَلْفًا وَإِنِّي قَاتِلٌ بِابْنِ ابْنَتِكَ سَبْعِينَ أَلْفًا وَسَبْعِينَ أَلْفًا. অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সম্মানিত ওহী মুবারক করেন যে, নিশ্চয়ই আমি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, ধ্বংস করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই আমি আপনার লখতে জিগার, আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যিনি সম্মানিত আওলাদ ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, তাদের সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবো, ধ্বংস করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদরকে হাকিম শরীফ ৩/১৯৫, খছায়িছুল কুবরা শরীফ ২/২১৪, ইমতা‘উল আসমা’ ১২/২৩৭, শরহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব ১০/১৫২ ইত্যাদি) এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, إِنِّي قَتَلْتُ بِيَحْيَى بْنِ زَكَرِيَّا سَبْعِينَ أَلْفًا وَإِنِّي قَاتِلٌ بِابْنِ ابْنَتِكَ سَبْعِينَ أَلْفًا وَسَبْعِينَ أَلْفًا. অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সত্তর হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, ধ্বংস করে দিয়েছি। সুবহানাল্লাহ! আর নিশ্চয়ই আমি আপনার লখতে জিগার, আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যিনি সম্মানিত আওলাদ ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবে, সত্তর হাজার এবং সত্তর হাজার তথা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফারা বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দিবো, ধ্বংস করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ! আর এই সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইমামুল মুহাদ্দিছীন মিনাল আউওয়ালিনা ইলাল আখিরীন, মুজাদ্দিদে আ’যম, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মূলত, এক লক্ষ চল্লিশ হাজার কাফির-মুনাফিকদেরকে তো নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছেই। শুধু তাই নয়, এইজন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি কাফির, মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে, তাদের অস্থিত্ব বিলীন করে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! এখন বলার বিষয় হচ্ছে একজন খলীফা উনাকে শহীদ করার কারণে, কাফফারা বাবদ পঁয়ত্রিশ হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। হযরত ইয়াহইয়া ইবনে যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন একজন বিশেষ নবী-রসূল। উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে জড়িত যারা ছিলো, কাফফারা বাবদ সত্তর হাজার লোককে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে; কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক উনার সাথে জড়িত, তাদের কমপক্ষে এক লক্ষ চল্লিশ হাজার লোককে কাফফার বাবদ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোটি কোটি কাফির, মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে, ধ্বংস করে দেয়া হবে, তাদের অস্থিত্ব বিলীন করে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! তিনি একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহতাজ। এছাড়া কায়িনাতের অন্য কারো মুহতাজ নন; বরং কায়িনাতের সকলেই উনার মুহতাজ। উনার কারণেই কায়িনাতের সকলে সম্মানিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে। সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, اَنَّ نَبِـىَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُوْلُ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ طَهَّرَهُمُ اللهُ مِنْ شَجَرَةِ النُّبُوَّةِ وَمَوْضِعِ الرِّسَالَـةِ وَمُـخْتَلِفِ الْمَلَائِكَةِ وَبَيْتِ الرَّحْمَةِ وَمَعْدِنِ الْعِلْمِ. অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (প্রায়) ইরশাদ মুবারক করতেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে (আমাদেরকে) সম্মানিত নুবুওয়াত মুবারক উনার বৃক্ষ, সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার স্থান, বিভিন্ন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের দ্বারা সম্মানিত খিদমত মুবারক, সম্মানিত রহমত মুবারক উনার ঘর মুবারক এবং সম্মানিত ইলম মুবারক উনার খনি মুবারক (ইত্যাদি সমস্ত কিছু) থেকে পবিত্র রেখেছেন, ছমাদ তথা বেনিয়ায (অমুখাপেক্ষী) করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে দুররে মানছূর লিস সুয়ূত্বী ৬/৬০৬, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৩১৩৩) সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে জাহান্নামে যত শাস্তি দেয়া হবে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে শহীদ করেছে, তাকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে: সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ حَضْرَتْ عَليّ بن اَبِـىْ طَالِب عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تُحْشَرُ ابْنَتِي حَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَمَعَهَا ثِيَابٌ مَصْبُوغَةٌ بِدَمٍ فَتَتَعَلَّقُ بِقَائِمَةٌ مِنْ قَوَائِمِ الْعَرْشِ فَتَقُولُ يَا عَدْلُ احْكُمْ بَيْنِي وَبَيْنَ قَاتِلِ وَلَدِي فَيُحْكَمُ لابْنَتِي وَرَبِّ الْكَعْبَةِ. অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি হাশরের ময়দানে নূরুন নাজাত মুবারক রঞ্জিত (রক্ত রঞ্জিত) পোশাক মুবারক নিয়ে উপস্থিত হবেন। অতঃপর তিনি সম্মানিত আরশ উনার স্তম্ভসমূহের এক সম্মানিত স্তম্ভ মুবারক উনার নিকটবর্তী হবেন। তারপর তিনি বলবেন, হে ন্যায়বিচারক (মহান আল্লাহ পাক), আপনি আমার এবং আমার সম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শহীদকারীদের মাঝে মীমাংসা করুন। সম্মানিত কা’বা শরীফ উনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার সম্মানিত লখতে জিগার, সম্মানিতা আওলাদ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানার্থে এই বিষয়ে সর্বোত্তম ফায়ছালা মুবারক করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৫/৪৭৬, শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ حَضْرَتْ عَليّ بن اَبِـىْ طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاتِلُ الْـحُسَيْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে শহীদ করেছে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে। ওই নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ ৩/২১০, আল মাক্বাছিদুল হাসানাহ ১/৪৮৩, কাশফুল খফা’ ২/৯১, শরহুয যারক্বানী আলালা মাওয়াহিব ১০/১৫২, শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪, তাফসীরে হাক্কী ৫/৪৩৭, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৪/৮৮ ইত্যাদি) অপর বর্ণনায় এসেছে, وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ قَاتِلَ الْـحُسَيْنِ عليه السلام فِـىْ تَابُوْتٍ مِّنْ نَّارٍ عَلَيْهِ نِصْفُ عَذَابِ اَهْلِ الدُّنْيَا وَقَدْ شدت يَدَاهُ وَرِجْلَاهُ بِسَلَاسِلَ مِنْ نَّارٍ، مَنْكِب حتى يقع في قَعْرِ جهنم وله ريح يتعوذ أهل النار من شدة نَتْن ريحه. অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে শহীদ করেছে, তাকে জাহান্নামে আগুনের বক্সে রাখা হবে। সমস্ত দুনিয়াবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত জিন-ইনসানকে যত শাস্তি দেয়া হবে। ওই সর্বনিকৃষ্টি ব্যক্তিকে এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! তার হাত এবং পাগুলো আগুনের শিকল দ্বারা শক্তভাবে বাঁধা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করা হবে। তার কঠিন দুর্গন্ধ থাকবে। সমস্ত জাহান্নামবাসী তথা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত লোক জাহান্নামে যাবে, তারা সকলেই সেই কঠিন পঁচা দূর্গন্ধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে।” (শরফুল মুস্ত¡ফা শরীফ ৫/৩১৪) পঞ্চম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মুকাশাফাতুল কুলূব’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন, “সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জাহান্নামকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তার সাতটি দরজা রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষায়, لها سبعة ابواب. “জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ: আয়াত শরীফ: ৪৪) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لا ولكنها طباق بعضها اسفل من بعض من الباب الى الباب مسير سبعين سنة كل باب منها اشد حرا من الذى يليه بسبعين ضعفا وساله ايضا عن مكان هذه الابواب فقال اما الاسفل ففيه المنافقون واسمه الهاوية. كما قال الله تعالى إِنَّ ٱلْمُنَـٰفِقِينَ فِى ٱلدَّرْكِ ٱلْأَسْفَلِ مِنَ ٱلنَّارِ. والباب الثاني فيه المشركون واسمه الجحيم والباب الثاث فيه الصابئون واسمه سقر والباب الرابع فيه ابليس عليه اللعنة ومن تبعه من المجوس واسمه لظى والباب الخامس فيه اليهود واسمه الحطمة والباب السادس فيه النصارى واسمه السعير ثم امسك جبريل عليه السلام فقال له صلى الله عليه وسلم لم لم تخبرنى عن سكان الباب السابع فقال جبريل يا محمد صلى الله عليه وسلم لا تسالنى عنه فقال ففيه اهل الكبائر من امتك الذين ماتوا ولم يتوبوا. অর্থ: “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহান্নামের দরজা এই পৃথিবীর ঘর-বাড়ির দরজার মতো নয়; বরং উপরে-নিচে স্তরে স্তরে বিন্যস্ত এবং এক দরজা হতে অপর দরজা পর্যন্ত সত্তর বছরের পথ পরিমাণ দূরত্ব। উপরের দিক থেকে প্রথম দরজার তুলনায় দ্বিতীয়টির এবং এভাবে পরবর্তী দরজাগুলোর একটির তুলনায় অপরটির উত্তাপ ও দাহন ক্ষমতা সত্তরগুণ অধিক হবে।’ অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে এসব স্তরে অবস্থানকারীদের সমন্ধে বলতে বললেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, ‘দোযখের সর্বনি¤œ স্তরে নিক্ষেপ করা হবে মুনাফিক্বদেরকে। এই স্তরের নাম হবে ‘হাবিয়াহ’। এস্তরে মুনাফিক্বদের অবস্থান প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ. “নিঃসন্দেহে মুনাফিক্বদের স্থান হচ্ছে, জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৫) নিম্ন দিক হতে দ্বিতীয় স্তরের অধিবাসী হবে মুশরিকরা। এস্তরের নাম ‘জাহীম’। তৃতীয় পর্যায়ে ছাবিঈনদের স্তর। এর নাম ‘সাক্বার’। চতুর্থ পর্যায়ে অভিশপ্ত ইবলীস ও তার অগ্নিপূজক অনুচরদের স্তর। এর নাম ‘লাযা’। পঞ্চম স্তরে হবে ইহুদীরা; এর নাম ‘হুতামাহ’। ষষ্ঠ স্তরে হবে খ্রিস্টানরা; এর নাম হবে ‘সাঈর’। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি থেমে গেলেন। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন: হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি সপ্তম স্তর সম্পর্কে কিছু বলছেন না কেন? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমাকে এই স্তর সম্পর্কে সুওয়াল না করলে ভালো হয়। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহান্নামের এই সপ্তম স্তরে আপনার উম্মত উনাদের মধ্যে ওই সব লোক নিক্ষিপ্ত হবে; যারা দুনিয়াতে কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হয়েছে এবং তাওবা না করে মারা গেছে।” (মুকাশাফাতুল কুলূব: ২৫-২৬) মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’রা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর ‘হাবিয়া’-এর মধ্যে প্রবেশ করবে এবং সেখানে কঠিন-ভয়াবহ ‘আযাব-গযব উপভোগ করবে; যেখানে ইহূদী, খ্রিস্টান, কাফির, মুশরিক, মূর্তি-পূজক, অগ্নিপূজক; এমনকি স্বয়ং মালঊন ইবলীসও প্রবেশ করবে না এবং এতো কঠিন-ভয়াবহ ‘আযাব-গযবও উপভোগ করবে না; বরং ইবলীস প্রবেশ করবে জাহান্নামের চতুর্থ স্তর ‘লাযা’-এর মধ্যে, যেখানে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর ‘হাবিয়া’-এর তুলনায় ২১০গুণ কম শাস্তি হবে, আর ‘হাবিয়া’-এর মধ্যে জাহান্নামের চতুর্থ স্তর ‘লাযা’-এর তুলনায় কমপক্ষে ২১০গুণ বেশি শাস্তি হবে। অর্থাৎ তাহলে বুঝা গেল যে, মুনাফিক্বদের শাস্তি হবে স্বয়ং ইবলীসের তুলনায় কমপক্ষে ২১০গুণ বেশি, আর স্বয়ং ইবলীসের শাস্তি হবে মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দের তুলনায় ২১০গুণ কম। না‘ঊযুবিল্লাহ! সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم تعوذوا بالله من حب الحزن قالوا يا رسول الله وما جب الحزن ؟ قال واد في جهنم يتعوذ منه جهنم كل يوم أربعمائة مرة قيل ومن يدخله؟ قال القراء المرائون بأعمالهم . অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জুব্বুল হুযন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জুব্বুল হুযন কী? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। যেখান থেকে স্বয়ং জাহান্নাম নিজে প্রতিদিন চারশতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, কে এতে প্রবেশ করবে? জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ওই সমস্ত লোক- যারা লোকদেখানোর জন্য সম্মানিত কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে অর্থাৎ মুনাফিক্ব রিয়াকার উলামায়ে সূ’রা।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কাফির, মুশরকি, ইবলীসসহ, মুনাফিক্ব-উলামায়ে সূ’দের যত শাস্তি হবে। যেই কুখ্যাত কাফির ও মুনাফিক্বটি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করেছে, তার এককভাবে সকলের অর্ধেক শাস্তি হবে। তাহলে এখান থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় তিনি শুধু যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! আর এই কারণেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, عَنْ حَضْرَتْ عَلِـىٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ شَجَرَةُ النُّبُوَّةِ وَمَعْدِنُ الرِّسَالَـةِ لَيْسَ اَحَدٌ مِّنَ الْـخَلَائِقِ يَفْضُلُ اَهْلَ بَيْـتِـىْ غَيْرِىْ. অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক উনার সম্মানিত বৃক্ষ মুবারক অর্থাৎ মূল এবং সম্মানিত রিসালাত মুবারক উনার সম্মানিত খনি মুবারক অর্থাৎ মুল। সমগ্র সৃষ্টি জগতে আমি ব্যতীত আর কেউ আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার অধিকারী নেই। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টি জগতের মাঝে আমার পরপরই আমার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (তারতীবুল আমালী ১/২০২, আল ঈমা ইলা যাওয়ায়িদিল আমালী ৫/১৭৯) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـحْنُ اَهْلُ بَيْتٍ لَّا يُقَاسُ بِنَا اَحَدٌ. অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমরা মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। আমাদের সাথে অন্য কারো তুলনা করা যাবে না।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী ৪/২৮৩, জামি‘উল আহাদীছ ২২/২১৯, কানজুল ‘উম্মাল ১২/১০৪, জাম‘উল জাওয়ামি’ ১/২৪৯৫০, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ফী মানাক্বিবে যাওইল কুরবা লিমুহিব্বে ত্ববারী ১/১৭, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/৭ ইত্যাদি) মহান আল্লাহ পাক তিনি আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানার্থে আমাদের সবাইকে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক বুঝার, উপলব্ধি করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন! সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ كُنَّا نُصَلِّي مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعِشَاءَ فَإِذَا سَجَدَ وَثَبَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ عَلَى ظَهْرِهِ فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ أَخَذَهُمَا بِيَدِهِ مِنْ خَلْفِهِ أَخْذًا رَفِيقًا فَيَضَعُهُمَا عَلَى الأَرْض فَإِذَا عَادَ عَادَا حَتَّى قَضَى صَلاَتَهُ أَقْعَدَهُمَا عَلَى فَخِذَيْهِ. অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত ইশা উনার নামায পড়ছিলাম। অতঃপর তিনি যখন সিজদা মুবারক-এ গেলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে বসলেন। সুবহানাল্লাহ! যখন তিনি সিজদা মুবারক থেকে মাথা উঠালেন, তখন উভয়কে পেছন থেকে মুহব্বত উনার সাথে ধরে যমীনে বসিয়ে দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবার সিজদা মুবারক-এ গেলে উনারা দু’জন পুনরায় উনার পিঠ মুবারক-এ উঠে বসলেন। নামায মুবারক শেষ করা পর্যন্ত উনারা দু’জন এরূপ করে যাচ্ছিলেন। অতঃপর যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায মুবারক শেষ করলেন, তখন উনাদের দু’জনকে উনার সম্মানিত উরু মুবারক উনার উপর বসালেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ২/৫১৩, কানযুল উম্মাল ১৩/৬৬৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১১১, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ ১/১৩১, আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৬/২২৫ ইত্যাদি) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَسْجُدُ فَيَجِيءُ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ فَيَرْكَبُ عَلَى ظَهْرِهِ فَيُطِيلُ السُّجُودَ فَيُقَالُ يَا نَبِيَّ الله أَطَلْتَ السُّجُودَ فَيَقُولُ ارْتَحَلَنِي ابْنِي فَكَرِهْتُ أَنْ أُعْجِلَهُ অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সিজদা মুবারক-এ যেতেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সম্মানিত পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে যেতেন। এ কারণে তিনি সিজদা মুবারক লম্বা করতেন। ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলা হতো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি কি সিজদা মুবারক লম্বা করলেন? তখন তিনি জবাবে ইরশাদ মুবারক করতেন, আমার আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনারা আমার পিঠ মুবারক-এ আরোহন করেছেন, তাই আমি (সিজদা থেকে) তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়াটা পছন্দ করিনি।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/৩৮০, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১৮১, আল মাত্বালিবুল আলীয়াহ ১৬/২১০) সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَمْشِي عَلَى أَرْبَعَةٍ وَعَلَى ظَهْرِهِ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُمَا وَهُوَ يَقُولُ نِعْمَ الْجَمَلُ جَمَلُكُمَا وَنِعْمَ الْعِدْلانِ أَنْتُمَا. অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলাম, দেখলাম, তিনি দুই হাঁটু ও দুই হাত মুবারক উনাদের উপর ভর করে চলছেন এবং উনার পিঠ মুবারক উনার উপর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আরোহিত ছিলেন। তিনি বলতেছিলেন, আপনাদের উট মুবারক কতই না উত্তম! আর আপনারা কতই না উত্তম আরোহী।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ৩/৫২, মাজমাউয যাওয়ায়িদ ৯/১১১, যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ) শুধু তাই নয়, স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে খুশি করার জন্য উনাদেরকে উনার সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ নিয়ে তিনি দুই হাত মুবারক ও দুই পা মুবারক-এ চলতেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা বলতেন, নানাজান, প্রত্যেকের ঘোড়ার তো লাগাম রয়েছে, আমাদের ঘোড়ার লাগাম কোথায়? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে উনার সম্মানিত নূরুল ফাত্হ (চুল) মুবারক দিতেন, উনারা সম্মানিত নূরুল ফাত্হ (চুল) মুবারক ধরতেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা আরো বলতেন, নানাজান, প্রত্যেকের ঘোড়া তো আওয়াজ করে থাকে, আমাদের ঘোড় তো আওয়াজ করে না। তখন তিনি উনাদেরকে খুশি করার জন্য আওয়াজ মুবারক করতেন এবং উনাদেরকে সম্মানিত পিঠ মুবারক-এ নিয়ে মসজিদে নববী শরীফ উনার একপ্রান্ত মুবারক থেকে অপর প্রান্ত মুবারক-এ যেতেন। সুবহানাল্লাহ! এখন ফিকিরের বিষয়- যেখনে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ক্বদম মুবারক উনার ধূলি মুবারক নেয়ার জন্য বেকারার পেরেশান, সেখানে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে খুশি করার জন্য এরূপ করতেন, তাহলে উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, সেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:২৭