আমাদের বাড়ীর কলা গাছ গুলো আরাম আয়েশের সাথে রাজকীয় শান শওকতের সাথে যুগ যুগ ধরে অবস্থান করছে। অনান্য ফল গাছের মত কবে প্রথম আমাদের বাড়ীতে কলা গাছ প্রথম লাগান হয়েছিল তার ইতিহাস জানা সম্ভব হয়নি। তবে কলার অশেষ গুণ রয়েছে। আমাদের বাড়ীর এই কলা চমত্কার মিস্টি। অবশ্য বানিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের বাড়ীতে যে কলা চাষ হয় তা কিন্তু নয়। এই কলার জন্য আমাদের গ্রামে আমাদের একটা বিশেষ সুনাম রয়েছে তা না বললেই নয়।মুড়ির সাথে এই কলা মেখে খেলে মনে আপনি যে নিদারুন সুখ অনুভব করবেন সেটা যে না খেয়েছে সে কিন্তু বুঝতে পারবে না। অমায়িক চমত্কার এই কলার নাম নিয়ে মুখে মুখে জনে জনে রয়েছে নকসী কাঁথার মত ইতিহাস। যখন দুধ ভাত আর এই কলার স্বাদে পেট থেকে নাক পর্যন্ত অনুভুত হত। প্রচুর পরিমান বিচিযুক্ত এই কলার শান মান যতই থাকুক এই কলা আমার জীবনেও স্বরনীয় ইতিহাস তৈরী করে রেখেছে। আমি মাত্র তৃতীয় শ্রণীতে উঠেছি। মধুর সুস্বাদু বড় বড় আকৃতির কলা গুলোর ওজন ২৫০গ্রাম পার হয়ে যাবে।হৃদয়গ্রাহী লালচে হলুদ বর্ণের এরকম একটি আতিকায় কলা আর বোরো ধানের মুড়ি একটি প্লেটে করে আম্মু আমাকে খেতে দিলেন।যদিও পুরো কলা খেতে পারিনি তবুও মনে হল পেট পূর্ণ হয়ে গলার কাছে পৌঁছিয়েছে। আহ কী স্বাদ রে ভাই! কেন যে পেটটা এত ছোট হল যদি আর একটু খেতে পারতাম! আফসুস নিয়ে ঘুমাতে যেতে হল যদিও মাত্র ইশা নামাজের আজান হয়েছে। গ্রাম অঞ্চলে এটাই অনেক রাত!
সকালে আমাদের ঘুমভাঙ্গে শত শত কাকের কা কা কা শব্দে। মনে হয় কাকগুলো কে কোথায় যাবে সারা দিনের প্রোগ্রাম কী তা এই মর্নিং আলোচনাতে সেরে নেয়। চারিদিকে বেশ ফর্সা হয়ে গিয়েছে। প্রচন্ড টয়লেটের চাপে পাশেই বাশ ঝারে টয়লেট করতে গেলাম। প্রচন্ড ফুর ফুরে হাওয়ায় খুব ভালো লাগছিল। কিন্তু এ কী? পায়খানা বের হচ্ছে না কেন?! সাধ্যমত জোড়ে কোথন দিলাম । নাহ! কিছুতেই কিছু হচ্ছে না ! এদিকে পায়খানার চাপ অন্যদিকে বের হচ্ছে না ! আমি তো ভরকে গেলাম! ভয়ে চিত্কার করতে লাগলাম। মা-আ-আ-আ, ওমা-আ ওমারেএএ ওমারেএএ। আমার চিত্কার শুনে আম্মুই প্রথম ছুটে এলেন। কী কী কী হয়েছে? কাঁনতেছো ক্যা ? কী হইছে? সাপ দেখেছো? কুত্তা আসছিলো? কী হয়ছে? কোন পোকা কামড় দিছে? আমি শুধু কেঁদেই চলেছি মা-আ-আ-আ, ওমা-আ ওমারেএএ ওমারেএএ। আমি লজ্জায়, শরমে, ভয়ে কিছুই বলতে পারছিলাম না। আম্মু ধরে ইতোমধ্যেই বাড়ির উঠানে নিয়ে এসেছে। আমার কাঁন্না দেখে বাড়ির সবাই হাজির! একেক জনের একেক মন্তব্য। আমি শুধু কেঁদেই চলেছি মা-আ-আ-আ, ওমা-আ ওমারেএএ ওমারেএএ। হঠাত্ আব্বু বললেন কী হয়েছে বাবা তোমার? আ? পায়খানা হচ্ছে না? আমি মাথা নাড়ালাম, হ! যেইনা বলেছি অমনি সবাই মিলে সে কী হাঁসি। হাঁসতে হাঁসতে একেক জন লুটোপুটি খাচ্ছে আর একেক জন একেক ধরনের মন্তব্য করছে দ্বিগুণ স্বতসাহে হেঁসেই চলেছে তারা।আমি আরো জোরে থেকে আরো জোরে শুধু কেঁদেই চলেছি মা-আ-আ-আ, ওমা-আ ওমারেএএ ওমারেএএ।