১. আনিস সাহেবে ফুরফুরে মেজাজে আছেন। পত্রিকা পড়ে জেনেছেন রোজার মাসে সরকার ভারত থেকে পেয়াজ আমদানি করবে। আনিস সাহেবকে মোটামুটি ভারতবিদ্বেষী বলা যায়। তবে ভারতীয় পেয়াজ আসলে বাজারে দেশি পেয়াজের দাম কমে যাবে এটা ভেবে তিনি আনন্দিত। কুরবানির ইদে তিনি মনে মনে প্রার্থনা করেন ভারত যেন সীমান্ত খুলে দেয়। ইন্ডিয়ান গরুর পানসে মাংস আনিস সাহেবের অপছন্দ হলেও এতে দেশি গরু সস্তায় পাওয়া যাবে। তার একমাত্র সন্তান বস্তাপচা বলিউড মুভির পোকা। বউয়ের কাছে জীবন মানে জি বাংলা। তিনি নিজেও মাঝেমধ্যে দিদি নাম্বার ওয়ানের সুন্দরী বৌদিদের দেখে ভাবেন, বৌটা যদি এমন করিতকর্মা হতো। বেটি সারাদিন শুয়ে বসে থেকে ধুমসি হচ্ছে।
আজকে পত্রিকা খুলে আনিস সাহেব আঁৎকে উঠলেন। সরকার ভারতের সাথে সামরিক চুক্তি করছে। দেশটা বিক্রি হয়ে গেল!
২. জাফর সাহেব প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করেন। বউ সরকারি চাকরির সুবাদে অন্যত্র থাকে। এটা নিয়ে তার কোন আফসোস নেই। সংসারে উপরি আয়ের সাথে অনেক স্বাধীনতা পাওয়া যায়। সংগ দেয়ার জন্য তো বন্ধুবান্ধব কলিগরা তো আছেই। বিশেষ করে নারী কলিগদের সাথে তার হেব্বি খাতির। বাজার করা থেকে শুরু করে মোটরসাইকেলে বাসায় পৌছে দেয়া সব কাজে তার সাহায্য পাওয়া যায়। ছুটির দিনে বউ না থাকলে কলিগ, বন্ধুদের সাথে তাস পিটান, মুভি দেখতে যান, মাঝেমধ্যে পাগলাপানি পান করেন।
ডিনার সেরে রাতের নিউজ দেখতে বসে জাফর সাহেব হায়হায় করে উঠলেন। সৌদিআরব নাকি কট্টরপন্থা থেকে সরে এসে মোডারেট মুসলিম কান্ট্রি হয়ে যাবে। বার-ক্যাসিনী চালু হবে, হলে মুভি চলবে, নারীরা চাকরিবাকরি করবে। মুসলিমদের পবিত্রভূমিতে একেমন নফরমানি!
৩. করাচি বিশ্ববিদ্যালয় র্যংকিংয়ে ঢাবির আগে, প্রযুক্তিতে পাকিরা এগিয়ে, সুখি দেশের তালিকায় পাকিস্তান আমাদের আগে এসব - শুনে আমাদের নেতারা বিরক্ত হয়ে বলেন, একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের সাথে আমাদের তুলনা হচ্ছে কেন? অথচ হাসিমুখে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের চাইতে আমাদের জিডিপি বেশি এটা জানাতে কারো লজ্জা লাগেনি। যে জাতি যেমন তার শাসকরাও সেরকম হয়।
৪. ভিআইপিদের সন্তানরা মাদক, ছিনতাই, জংগিবাদে জড়িয়ে গেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের পরিবার নিয়ে যে কাটাছেড়া হয় তাতে বিরক্ত হয়ে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা ফেবুতে অপরাধীর পরিবারকে টেনে না আনার অনুরোধ করেন। অথচ সাধারণ ঘরের সন্তান অপরাধ করলে পুলিশরা যখন তাদের চৌদ্দগুষ্ঠী নিয়ে টানাটানি শুরু করে তখন ভদ্রলোকদের খুজে পাওয়া যায় না।
৫. এককালে শাহবাগের পাঠক সমাবেশে যাতায়াত করতাম। একদিন এক সুশীল দম্পতির দেখা পেয়ে গেলাম। দুজনেই সংস্কৃতি কর্মী। হাজার বছরের বাংলা সংস্কৃতি রক্ষায় তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাদের কন্যাকে দেখে হতাশ হলাম। পোশাকআশাকে বাংলা সংস্কৃতির 'ব'-ও নেই। বাপের সাথে ইংলিশে কথা বলছে, মাঝেমধ্যে মহিলাও ভাঙাভাঙা ইংলিশে আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন। পরিবারটির অবস্থা দেখে আমার এক মহান শিক্ষাবিদের কথা মনে পড়ে গেল, যিনি দেশ নিয়ে অনেক আশার বাণী শোনালেও নিজের ছেলেমেয়ে দুজনকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:১৫