ছেলে ব্যাংকে জয়েন করেছে। ভালো বেতন। এবার বিয়ে করা উচিৎ। কিন্তু বিয়ের কথা উঠলেই বলে, বেতন আরেকটু বাড়ুক, প্রবেশন পিরিয়ডে অফিসে বেশি সময় দিতে হবে হেনতেন। কয়েকবছর পর বিয়ের পিড়িতে বসল। কিন্তু এখনই বাচ্চা নেয়া যাবে না কারণ বউয়ের ক্যারিয়ার সবেমাত্র শুরু হয়েছে। - বর্তমান সময়ের কমন চিত্র।
ভার্সিটি পড়ুয়াদের একটা অংশের অভিভাবক থাকে অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। তাদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। কোচিংয়ে ক্লাস নিয়ে অনেকে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দেয়। এদেশে সরকারি-বেসরকারি সব সেক্টরেই ভালো জব পেতে হলে প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করতে হয় যার সাথে একাডেমিক পড়াশোনার কোন সম্পর্ক নেই। ক্লাস আর কোচিং সামলে তারা চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে না। পাস করার পর দ্রুত একটা চাকরিতে ঢোকার তাড়া থাকে। বেশিরভাগই যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পায় না। এমনই একজন একটা দেশি কোম্পানিতে দুই বছর বিশ হাজার টাকায় চাকরি করেছেন। বর্তমানে আমার কলিগ। গ্রেড ৯ সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার যোগ্যতা যার আছে পরিবারের পিছুটানের জন্য তিনি দুইটা বছর নামমাত্র মূল্যে শ্রম দিয়ে গেছেন। অফিসে অনেককে দেখি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু সন্তানদের পড়ালেখা শেষ হচ্ছে না। বাবা-মার অসমাপ্ত দায়ীত্ব চলে যাচ্ছে বড় সন্তানের উপর, হোক সে ছাত্র বা চাকরিজীবী। স্টুডেন্ট লাইফের সোনালি সময়টুকু কাটছে পরিবারের দুশ্চিন্তায়। যে ক্যারিয়ারের জন্য দেরিতে সন্তান নিচ্ছেন তা থেকে অর্জন বলতে বৃদ্ধ বয়সে সামান্য পেনশন আর সন্তানের জন্য সীমাহীন টেনশন।
নিজের কথা বলে লেখাটা শেষ করছি। আমার বাবা গ্রামের ছেলে। ব্যাংকে চাকরি পাওয়ার একমাসের মাথায় দাদা বিয়ে দিয়ে দেন। ছোটকালে টানাটানিতে থাকলেও পরবর্তিতে তার সুফল পেতে থাকি। ভার্সিটি থেকে পাস করেই একটা বেসরকারি চাকরিতে গিয়েছিলাম। দুমাস চাকরি করে বুঝলাম এভাবে জীবন চলবে না। বাবার চাকরি আছে তাই কোন রকম চিন্তা ছাড়াই চাকরিটা ছেড়ে দেই। একবছর বেকার থাকার পর একসাথে দুইটা সরকারি ব্যাংকে চাকরি পেয়ে যাই। তখনো আমার বাবার চাকরি ছিল আরো দুবছর। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে ছয়মাসের মাথায় বিয়ে সেরে ফেলি। ত্রিশের আগেই নিজে বাবা হওয়ার অপেক্ষায় আছি। বাবা এখন এলপিআরে আছেন। এই বয়সেও আমার পিছুটান জিনিসটার মুখোমুখি হতে হয়নি।
তাই যাদের সামর্থ্য হয়েছে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত বিয়ে করুন। দেরিতে বিয়ে করার বাজে ট্রেন্ড বাদ দিন। ক্যারিয়ারের শুরুতে বিয়ে, বাচ্চাকাচ্চা বাড়তি চাপ তৈরি করে। কিন্তু শুরুর ধাক্কাটা সামলে নিতে পারলে বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটাতে পারবেন, সন্তানরাও ভালো থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ১২:২২