সরকারি প্রাইমারি নামটা শুনলেই চোখের সামনে ধ্বজভঙ্গ একটা প্রতিষ্ঠানের ছবি ভেসে উঠে। "পুরাই সরকারি প্রাইমারি" শব্দটা আমরা প্রতিদিনই ট্রল করতে ব্যবহার করছি। দেশের সর্ববৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করছে সেটা কেন সবার মশকরার বিষয়?
কথায় আছে বাঙালি ফ্রি পেলে আলকাতরাও খায়। সরকারি স্কুলে নামমাত্র মূল্যে শিক্ষা বিতরণ করা হলেও কেউ এখানে বাচ্চাদের পড়াতে আগ্রহী না। যারা পড়াচ্ছে সামর্থ্য নেই বলে পড়াচ্ছে। কারণ সন্তানের ভবিষ্যৎ খারাপ হোক কেউই চায় না। প্রাথমিকের ভিত্তিটা ভালো না হলে সারাজীবন ভুগতে হয়। বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন আর সরকারি প্রাইমারির ছাত্রদের তুলনা করলে দেখা যায় দুয়ের মধ্যে কি আকাশ পাতাল ব্যবধান। কালেভদ্রে দুএকজন মেধাবী বের হয়, কিন্তু ব্যতিক্রম তো আর উদাহরণ না। প্রশ্ন হল, সরকারের কাছ থেকে এতো সুবিধা পাওয়ার পরও সরকারি প্রাইমারির এই হতশ্রী দশা কেন?
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা দেশের সবচেয়ে প্রহসন মূলক নিয়োগ পরীক্ষার একটি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের 'দোয়া' ছাড়া ভাইভায় পাস করা কঠিন। সাথে আছে বিশাল পার্সেন্টেজের কোটা। শিক্ষকদের র্যাংক পুলিশের এসআইয়ের নিচে। মেধাবীরা কেন আসবে? ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মসূচীতে হাজিরা দেয়া সব কাজই শিক্ষকদের করা লাগে। সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলির দ্বারা গায়ের বধূদের হাত খরচের ব্যবস্থা হয়েছে, সুশিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলার কাজটাই হয়নি।
এখন তাহলে করণীয় কি?
কোটা ব্যবস্থা তুলে দেয়া হচ্ছে, সরিকারি প্রাইমারিতেও কোটা আর রাখা যাবে না। নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সহকারি শিক্ষকদের গ্রেড ১০ আর প্রধান শিক্ষককে গ্রেড ৯ কর্মকর্তায় উন্নীত করতে হবে। তাহলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আগ্রহী হবে। শিক্ষা বহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের ব্যবহার করা যাবে না। এভাবে চালাতে পারলে কয়েক বছরের মধ্যেই স্কুলগুলির চেহারা পালটে যাবে। আমরা মধ্যবিত্তরা ভরসা পাবো। রক্তচোষা শিক্ষাব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমতে থাকবে। বইয়ের বোঝা টেনে বাচ্চাদের আর হয়রান হতে হবে না। শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবাই হাফ ছেড়ে বাচবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:২০