গ্রীক পুরাণ এর অপরূপ সুন্দরী এবং মুখরা রমণী ইকো ছিল দেবীরানি জুনোর সহচরী। তার আচরনে বিরক্ত হয়ে একদিন জুনো তাকে দেবালয় থেকে অভিশাপ দিয়ে বের করে দেয়। নির্বাসিত হয়ে গভীর বনে আশ্রয় নেয় ইকো।
একসময় ইকোর রূপে পাগল হয়ে দেবরাজ জিউস তার প্রেমে পড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই জিউস এর স্ত্রী হেরা এতে ক্রোধান্বিত হয়ে স্বর্গ থেকে মর্তে নেমে আসতে থাকে কিন্তু জিউস তার ঐশ্বরিক ক্ষমতা বলে তা জানতে পেরে ইকোকে মর্ত্য হতে তার প্রস্থান পর্যন্ত হেরাকে অপেক্ষা করানোর বুদ্ধি দেয় এবং সেই অনুসারে ইকো হেরাকে মিথ্যা গল্প শুনিয়ে দেয়। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে হেরা ইকোকে অভিশাপ দিয়ে তার কণ্ঠ কেড়ে নেয় কিন্তু অন্য একজন যখন কথা বলবে শুধু সেটারই প্রতিধ্বনি করতে পারবে ইকো এরকম শাস্তি দিয়ে যায়।
একদিন সেই বনেই নার্সিসাস নামে এক অপরূপ সুন্দর শিকারি পুরুষের দেখা পায় ইকো এবং তার প্রেমে পড়ে যায়। সে তার ভালবাসার কথা জানাতে চাইলেও হেরার অভিশাপে তা আড়ষ্ট হয়ে থাকে এবং তা অসম্ভব হয়ে পড়ে। দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে ইকো চলে যায় পাহাড়ের ঢালে এবং একসময় তার দেহ রুক্ষ পাথরে পরিনত হয়।
এদিকে নার্সিসাস গভীর বনে তৃষ্ণার্ত হয়ে একটি ঝরনার সামনে যখনই পানি পান করবার জন্য বসলো ঠিক তখনই সেই স্বচ্ছ পানিতে তার ছায়া পড়ে। সে তার নিজের রূপ দেখে এতটাই মুগ্ধ হয় যে সে ক্ষুধা, তৃষ্ণা সব ভুলে তার প্রতিচ্ছবির দিকেই শুধু তাকিয়ে থাকে এবং একসময় ওভাবেই মৃত্যুবরণ করে এবং একদিন সে পরিনত হয় একটি বৃক্ষে। ইকো পাহাড়ের কাছে সেই গাছটির নামই নার্সিসাস।
নার্সিসাসকে বলা হয় আত্মপ্রেমের প্রতীক। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী “সালভাদর দালি” এর একটি চিত্রকর্মের নাম “মেটামরফোসিস অফ নার্সিসাস”। “সিগমুণ্ড ফ্রয়েড” ১৯১৪ সালে “On Narcissism: An Introduction” নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন।