পাবলো এসকোবারঃ কিং অফ কোকেন
“He was the Da Vinci of crime.”
“The man was bandits of bandits.”
৭০ ও ৮০ এর দশকে দক্ষিন আমেরিকার মাদক ব্যবসার কথা বললেই অবধারিত ভাবে চলে আসবে তার নাম। ৭০ও ৮০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন এর অবাধ সরবরাহের জন্য দায়ী করা হয় তাকে। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রে কোকেন এর ব্যবসা বিস্তার করেছিলো তার মেডেলিন কার্টেল। ১৯৮০ এর দশকে বিখ্যাত “FORBES” সাময়িকীতে পৃথিবীর সপ্তম ধনী হিসেবে নাম আসে এ কোকেন সম্রাটের। “পাবলো এমিলিও গাভিরিয়া এসকোবার” যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত “ডন পাবলো” নামে। ১৯৭০ ও ১৯৮০ এর দশকে কোকেন ব্যবসায়ে একচেটিয়া আধিপত্য এর জন্য তাকে বলা হতো কিং অফ কোকেন। প্রতিপক্ষের কাছে তার ভয়াবহতা ও নৃশংসতা ছিল কিংবদন্তীতুল্য।
কলম্বিয়ান এ কোকেন সম্রাট পৃথিবীর অন্যতম সংগঠিত ও ভয়াবহ নৃশংস মাদক চক্র মেডেলিন কার্টেল এর প্রধান ছিলেন। ৭০ ও ৮০ এর দশকের সারা পৃথিবীর কোকেন ব্যবসার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো তার “মেডেলিন” চক্র। কলোম্বিয়াতে এ ধনী মাদক ব্যবসায়ীর ছিল “হাসিয়েণ্টা নেপলস” নামক বিশাল খামার বাড়ি, মাদক পরিবহনের জন্য নিজস্ব বিমান, নিজস্ব চিড়িয়াখানা, তার নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব “ARMS WING” কুখ্যাত এ মাদক সম্রাট ছিল কয়েক হাজার খুন এর সরাসরি নির্দেশদাতা।
১৯৪৯ এর ১লা ডিসেম্বর কলোম্বিয়ার মেডেলিন এ জন্মগ্রহণ করা এসকোবার অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল। বলা হয়ে থাকে কোকেন এর ব্যবসায় আসবার আগে সে কবরের নামফলক চুরি করে বিক্রি করতো। ১৯৭০ এর দশকে সে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ক্ষমতা লাভের পথ খুঁজে নেয় কোকেন ব্যবসা শুরুর মাধ্যমে।
১৯৭৫ এ মেডেলিন এর সবচেয়ে বড় কোকেন ব্যবসায়ী “ফাবীও রেসট্রেপো” কে খুন করা হয়। বলা হয়ে থাকে এসকোবার এর সরাসরি নির্দেশেই ফাবীও কে খুন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ফাবীও এর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এসকোবার। যুক্তরাষ্ট্রে সেই সময় ৮০ ভাগ কোকেন সরবরাহ করতো এসকোবার এর মেডেলিন কার্টেল।
এসকোবার এর শত্রুদের কাছে তার নৃশংসতা কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলো। কলোম্বিয়ার বেশির ভাগ সৎ রাজনীতিবিদ, বিচারক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা এই মাদক সম্রাটের ভয়াবহ উত্থান ও ক্ষমতাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভালো চোখে দেখেনি। এসকোবার এর ক্ষমতা এতোটাই বেশি ছিল যে তাকে আইনের আওতায় আনা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসকোবার তার শত্রুকে দমন করবার জন্য নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করতো যা তার নিজের ভাষায়- “PLATA O’ PLOMO” অর্থাৎ “SILVER OR LEAD” । সোজা কথায় প্রথমে তাদের বিশাল অংকের ঘুষ এর লোভ দেখানো হতো এবং যদি প্রথমটিতে অর্থাৎ “PLATA OR SILVER” এ কাজ না হয় তখন তাদের পরিণতি ছিল “PLOMO OR LEAD” অর্থাৎ এসকোবার তখন তার শত্রুকে পরিবার সহ খুন করবার সরাসরি নির্দেশ দিতো। এসকোবার কতো খুন এর জন্য দায়ী তা অজানা থাকলেও বলা হয়ে থাকে সে কয়েক হাজার খুন এর জন্য সরাসরি দায়ী।
“Sometimes I am God….When I say a man dies….He dies that same day.” – Pablo Escobar
কলম্বিয়াতে তখন বলা হতো “তুমি যতই ক্ষমতাশালী ও গুরুত্বপূর্ণ হও না কেন যদি এসকোবার তোমাকে খুন করতে চায় কেও তোমাকে বাঁচাতে পারবে না।“ এসকোবার এর নৃশংসতার শিকার ছিল বিচারক, সাংবাদিক, ম্যাজিস্ত্রেট, পুলিশ এমনকি নিজের দলের লোক পর্যন্ত। তার ভয়াবহ গাড়ি বোমা হামলার শিকার হয়ে অনেক নিরীহ নারী, পুরুষ, শিশু নিহত হয়েছিলো। তখন এটা বলা হতো যে- “এসকোবার যে কোন সময়, যে কোন স্থানে, যে কোন শত্রুকে হত্যার” নির্দেশ দিতে পারে।
এই কুখ্যাত কোকেন সম্রাটের নৃশংসতার চরম নিদর্শন ছিল ১৯৮৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট ভবনে হামলা চালিয়ে ১১ জন বিচারককে হত্যা। এছাড়াও ১৯৮৯ এর ২৭শে নভেম্বর এসকোবার এর নির্দেশে একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে হত্যার জন্য “আভিয়াঙ্কা ফ্লাইট ২০৩” এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায় যাতে ১১০ নিরীহ যাত্রীর সবাই নিহত হয়। যদিও সেই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সেই ফ্লাইট এ ছিল না। এছাড়াও কলম্বিয়ার বিচারমন্ত্রি “রডরিগো লারা” কে এসকোবার এর “কিলিং স্কোয়াড” খুন করে কারন লারা কলম্বিয়ান কংগ্রেসে এসকোবার এর বিরোধিতা করেছিল। এসকোবার এর নির্দেশে “প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী” এবং “মাদক বিরোধী” লুই কার্লোস গালান কেও তার নির্বাচনী জনসভাতে প্রকাশ্য হত্যা করা হয়।
মেডেলিন এর গরীব অধিবাসীদের কাছে এসকোবার এর অবস্থান ছিল দেবতার মতো। বলা হতো-
“Escobar was a ruthless as well as brilliant criminal and he knows how to win the mind of the poor’s of Medellin. It seems he was like a Robin Hood to them.”
মেডেলিন এর অধিবাসীদের জন্য এসকোবার পার্ক, স্কুল, হাসপাতাল, বিশাল স্টেডিয়াম, চার্চ, গরীব অধিবাসীদের জন্য বিশাল আবাসিক প্রকল্পের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করেছিল। এসকোবার কে খুন করবার পর বিশ্ব মিডিয়া দেখল একজন কুখ্যাত মাদক সম্রাট এর জন্য মেডেলিন এর সব বয়সী নারী পুরুষ কাঁদছে।
কলম্বিয়ার সরকার যখন এই পরাক্রমশালী ও নৃশংস কোকেন সম্রাটকে কিছুই করতে পারছিল না তখনই তারা যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করবার আহবান জানায়। মার্কিন প্রশিক্ষন ও সাহায্য ১৯৯৩ এর ২ রা ডিসেম্বর মেডেলিন এর এক সাধারণ বাসায় পলায়নরত এসকোবার এর অবস্থান সনাক্ত করে কলম্বিয়ান পুলিশ এবং ওই ভবনের ছাদেই গোলাগুলিতে ৪৪ বছর বয়সে পতন হয় এই কুখ্যাত মাদক সম্রাট এর।
**এসকোবার সম্পর্কে কয়েকটি অজানা তথ্যঃ
প্রতিবছর তার আয়ের ১ বিলিয়ন ডলার “Store House” থেকে ইদুর খেয়ে ফেলত।
মেডেলিন কার্টেল প্রতিমাসে টাকা বাধবার জন্য ২৫০০ ডলার খরচ করতো রবার ব্যান্ড এর পেছনে।
১৯৯৩ সালের “World Trade Center” এ বোমা হামলার জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
মেডেলিন এর অত্যন্ত দরিদ্র কয়েক হাজার অধিবাসীদের জন্য এসকোবার ৪৫০ টি বাড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন এবং এর অধিবাসীদের কোন ভাড়া বা ট্যাক্স দিতে হতো না।
তথ্যসূত্র ঃ
১. উইকিপিডিয়া [ পাবলো এসকোবার, মেডেলিন কার্টেল, রডরিগো লারা, লুই কার্লোস গালান]
*ইমেজ কার্টেসি
১. গুগল ইমেজেস।
*ডকুমেন্টারি:
1. Sins of My Father.
2. The true story of killing Pablo.
3. Pablo Escobar [Documentary]
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন