somewhere in... blog

রাইসা হিলে নড়াইলের মেয়ে শুভ্রা

০৬ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নড়াইল শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ভদ্রবিলা গ্রামে চিত্রা নদী প্রায় ৯০ ডিগ্রি বাঁক খেয়ে এক অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। এ গ্রামেরই এক জমিদার বাড়িতে ৬৯ বছর আগে জন্মেছিলেন ভারতের রাইসা হিলের (ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন) নতুন গৃহকর্ত্রী শুভ্রা মুখার্জি। ভারতের ১৩তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে তিনিই এখন সেদেশের ফার্স্টলেডি। জন্মের পর শুভ্রার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে বাংলাদেশের নড়াইলে। এখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিক না হলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা ও তুলারামপুর গ্রামে তার প্রচুর আত্দীয়-স্বজন বসবাস করেন। তাদের জামাই এখন ভারতের রাষ্ট্রপতি, মেয়ে ফার্স্টলেডি - এ কথা ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে উঠছে নড়াইলবাসীর।


১৯৪৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। জমিদার অমরেন্দ্র ঘোষ ও মীরা রানী ঘোষের কোল আলো করে জন্ম নেন শুভ্রা দেবী। গীতা তার ডাক নাম। শৈশবের প্রথম দিকটা ভদ্রবিলা গ্রামে পিত্রালয়ে কাটলেও পরে মা তাকে নিয়ে যান নড়াইলের সীতারামপুরে, মামার বাড়িতে। সেখানে চাঁচড়া বোলদেভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (বর্তমান নাম চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) ভর্তি করেন তাকে। এ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। এর পর পড়াশোনা করতে ১৯৫৫ সালে গীতা চলে যান কলকাতার তারকেশ্বর লাইনে, আরেক মামার বাড়িতে। ভাই কানাই লাল ঘোষ জানান, বিয়ের সময় গীতার বয়স ছিল ১৪, আর প্রণবের ২২। বিয়ের আগে থেকেই প্রণবকে চিনতেন কানাই লাল ঘোষ। তিনি বলেন, ভালোবাসা করে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের আগে প্রণব তাকে (কানাই লাল) নিয়ে অনেক ঘুরে বেড়িয়েছেন। কানাই লাল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী শুভ্রা স্বামীর প্রভাব-প্রতিপত্তিকে কখনো নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেননি। পেশায় তিনি অধ্যাপক। ভালো রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারেন। তিনি গীতাঞ্জলি নামের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার। লিখেছেন অসংখ্য গল্প, প্রবন্ধ ও ফিচার। তার পরিচালিত 'চালিকা' ভারতে এখনো জনপ্রিয়।

শুভ্রার স্বজনরা

কানাই লাল ঘোষ জানান, তাদের ৮ ভাই-বোনের মধ্যে শুভ্রা দ্বিতীয়। বাংলাদেশ স্বাধীনের আগেই তারা সবাই কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর কেবল তিনিই ফিরে আসেন জন্মভিটায়। (অবশ্য এ ৮ ভাই-বোনের বাইরে তাদের আরও একটি বোন আছে। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এক মুসলমান যুবককে বিয়ে করায় তাকে আর বোন হিসেবে পরিচয় দেন না তারা)। ভদ্রবিলা গ্রামে এখনো তাদের প্রচুর জমিজমা আছে। সেগুলো দেখাশোনা করেন কানাই লাল ও তার স্ত্রী দুলালী ঘোষ। শুভ্রার মামাতো দাদারা এখনো তুলারামপুরে বসবাস করেন। ওই গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়টি শুভ্রার মায়ের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি ও সুরজিৎ মুখার্জি, এক মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। অভিজিৎ মুখার্জি বর্তমানে ভারতের এমএলএ। শর্মিষ্ঠা কত্থক নৃত্যশিল্পী।

শুভ্রা এলেও আসতে পারেননি প্রণব

কানাই লাল ঘোষ বলেন, শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে করে এখনো স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন শুভ্রা। নাড়ির টানে ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে এসেছিলেন নড়াইল। ঘুরে বেড়িয়েছেন ভদ্রবিলার পৈতৃক ভিটায়, সীতারামপুরে মামাদের বাড়িতে। মায়ের জমিতে প্রতিষ্ঠিত বালিকা বিদ্যালয়ে ১০ হাজার টাকা অনুদানও দেন। সে সময় শুভ্রার সঙ্গে ছিলেন তার দূরসম্পর্কের আত্মীয় নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট সুভাস বোস। তিনি বলেন, জন্মভিটা আর শৈশবের সেই চিত্রা নদী দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে উঠেছিলেন শুভ্রা। যে কাঁঠাল গাছের নিচে বসে মা তাকে ভাত খাইয়ে দিতেন, সে স্থানটি দেখাতে গিয়ে চোখে জল এসে যায় তার।

শুভ্রা একবার এলেও জামাইবাবু প্রণব মুখার্জি একবারও এলেন না তার শ্বশুরালয়ে_ এ আক্ষেপ থেকেই গেল নড়াইলবাসীর মনে। কানাই লাল ঘোষ বলেন, এর আগে জামাইবাবু দুইবার এ বাড়িতে আসতে চেয়েও আসতে পারেননি। একবার তো হেলিপ্যাডও তৈরি করা হলো। কিন্তু ভারতে অভ্যন্তরীণ সমস্যা তৈরি হওয়ায় সেবারও আসতে পারলেন না তিনি। কানাই লাল জানান, তাদের এক ভাই সুব্রত ঘোষ খোকন শুভ্রার সঙ্গেই থাকেন। জামাইবাবু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর খোকনের সঙ্গে ফোনে কানাই লালের আলাপ হয়েছে। আসছে দুর্গাপূজায় তিনি (কানাই লাল) জামাইবাবুর বাড়ি মিরাট কির্ণহার যাবেন। সেখানে সবার সঙ্গে দেখা হবে। সুযোগ পেলে রাষ্ট্রপতি ভবনেও যেতে চান তিনি। বোন ও জামাইকে নড়াইলে আসার আমন্ত্রণও জানাবেন তিনি।

আনন্দ-আবেগে ভাসছে নড়াইল

নিজেদের গ্রামের মেয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের ফার্স্টলেডি_ সেই আবেগ আর আনন্দে এখনো ভাসছেন নড়াইলের মানুষ। ভদ্রবিলা গ্রামের লিয়াকত হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্য অবশ্যই আনন্দের ও গৌরবের। একই গ্রামের বরুণ ঘোষের স্ত্রী অঞ্জু ঘোষ বলেন, গীতা আর জামাইকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। পাশের গ্রাম ফুলসারার আনন্দ কুমার গাছি বলেন, আমরা আনন্দ মিছিল করেছি, মিষ্টি খাইয়েছি। আমাদের মেয়ে ও তার জামাইকে আমরা অভিনন্দন জানাতে চাই। পলাইডাঙ্গা গ্রামের বদিয়ার রহমান কাজীও একই ধরনের কথা বললেন। শুভ্রা যে স্কুলে পড়তেন, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিতোষ কুমার ঘটক বলেন, '৯৫ সালে শুভ্রা মুখার্জি স্কুলটিতে এলে সে সময়ের অনেক স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি। স্কুল কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান বুলু বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় বনমালি কনক নামে এক সহপাঠীর সঙ্গে শুভ্রার বন্ধুত্ব হয়। এত বছর পর নিজের স্কুল দেখতে এসে শুভ্রা এলাকাবাসীকে সেই বনমালি কনকের কথা জিজ্ঞাসা করেন ও তার সঙ্গে দেখা করতে চান। নড়াইল জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাস বোস বলেন, ভারতের মতো দেশের রাষ্ট্রপতিকে ইচ্ছা করলেই এখানে আনা যাবে না। তবে তার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তা ছাড়া তিনি বাঙালি, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও বাংলাদেশের জামাই। এসব কিছুকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের সম্পর্ককে আগামীতে একটি অর্থপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আর এসব বিষয়ে সরকারও সচেতন রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ছবিটি http://www.gettyimages.com থেকে সংগৃহিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক নৈকট্যের গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ‘হয় পানি, না হয় তোমাদের রক্ত​এই নদীতেই প্রবাহিত হবে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২০




কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এ ঘটনায় সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। এমনকি পাকিস্তানকে এক ফোঁটা পানিও দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৬


কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউসুফ সরকার

লিখেছেন তানভীর রাতুল, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭

নৈতিকতা এবং নীতিবোধ কখনোই আইনের মুখে পরিবর্তিত হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া উচিত নয়”)।

নৈতিকতা ও নীতিবোধ কখনোই সহিংসতা বা আইনী চাপের মুখে বদল হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাক-ভারত যুদ্ধ হলে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৭



সাবেক ভারত শাসক মোগলরা না থাকলেও আফগানরা তো আছেই। পাক-ভারত যুদ্ধে উভয়পক্ষ ক্লান্ত হলে আফগানরা তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেই পারে।তখন আবার দিল্লির মসনদে তাদেরকে দেখা যেতে পারে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×