নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদরের লক্ষ্মীপাশা আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এসব অনিয়ম ধামাচাপা দিতে স্থানীয় সাংসদকে ব্যবহার করে মেয়াদ পূর্তির আগেই পরিচালনা পর্ষদের পাঁচজন সদস্য পরিবর্তন ও মামলা দিয়ে তাঁদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদের আটজন সদস্য শিক্ষামন্ত্রী বরাবর এবং শিক্ষকেরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ-দলীয় সাংসদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস কে আবু বাকের এ কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং তাঁর ছেলে এরিক মোর্শেদ সভাপতি।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ২৪ জানুয়ারি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের তিনজন সদস্য নিয়ে নিরীক্ষা (অডিট) কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিতে মঞ্জুরুল করিম আহ্বায়ক এবং শেখ আবদুর রহিম ও টি এম ফেরদৌস ওয়াহিদ সদস্য। গত ১৫ মে কমিটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ৫৫ হাজার ৪৯১ টাকা আত্মসাৎ ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৭ জুলাই কলেজের পরিচালনা পর্ষদের তিন বছর মেয়াদি কমিটি গঠিত হয়। নিরীক্ষার পর মেয়াদ পূর্তির আগেই এ পর্ষদের সদস্য (ডিজি প্রতিনিধি) হেমায়েত হোসেনকে বাদ দিয়ে খান আবদুল মতিনকে সদস্য করা হয়েছে। তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি টি এম ফেরদৌস ওয়াহিদ, বি এম শাহ আলম ও শরিফুল ইসলামকে বাদ দিয়ে নতুন সদস্য নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাদ দেওয়া তিন শিক্ষক প্রতিনিধিসহ পাঁচজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ বাদী হয়ে মুঠোফোন, ঘড়ি ও টাকা ছিনতাই এবং মারধরের অভিযোগ এনে লোহাগড়া থানায় মামলা করেছেন।
মামলার প্রধান আসামি প্রভাষক টি এম ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘তিন বছর মেয়াদি পরিচালনা পর্ষদে প্রতিবছর তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত হন। দ্বিতীয় বছরের জন্য গত ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে অধ্যক্ষ তফসিল ঘোষণা করেন। তা স্থগিত করে ২৪ সেপ্টেম্বর আবার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সে তারিখেও নির্বাচন হয়নি। ১৬ অক্টোবর কলেজের শিক্ষক পরিষদের সভায় অধ্যক্ষের কাছে নির্বাচনের বিষয় জানতে চাইলে এ নিয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে বাগিবতণ্ডা হয়। এর জের ধরে ওই রাতেই অধ্যক্ষ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন।’
হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘নিরীক্ষা প্রতিবেদনের পর থেকে অধ্যক্ষ সাংসদের ছেলেকে (কলেজ সভাপতি) ব্যবহার করে পরিচালনা পর্ষদ থেকে আমাদের বাদ দিয়ে পছন্দের লোক নিচ্ছেন।’ এ বিষয়ে ২ ডিসেম্বর কলেজের পরিচালনা পর্ষদ সভায় সাংসদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ডিও লেটারে আপনাকে সদস্য বানিয়েছিলাম, আবার আমি বাদ দিয়েছি।’
পরিচালনা পর্ষদ সদস্য মঞ্জুরুল করিম জানান, তাঁকে কলেজের সদস্যপদ থেকে বাদ দিতে যশোর শিক্ষা বোর্ড কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়ার পর অধ্যক্ষ পছন্দের কমিটি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এরিক মোর্শেদ অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়েছেন।
অধ্যক্ষ তরফদার কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে, এ নিয়ে যা হয় হবে। সভাপতি বা এমপি কাকে কমিটিতে রাখবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। তবে আমার যদি অন্যায় থাকত তাহলে সভাপতি আমার পক্ষ নিতেন না।’
কলেজের সভাপতি এরিক মোর্শেদ বলেন, ‘পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বাদ যেতেই পারেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যও বাদ গিয়ে নতুন সদস্য হচ্ছে, তাতে সমস্যা কী? আর অধ্যক্ষ কেন, আমিও যদি আর্থিক অনিয়ম করি, তবে তার বিচার হবে।’
সাংসদ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস কে আবু বাকের গত রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন, বলতে থাক। আর অধ্যক্ষের দুর্নীতির বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। এর জন্য সময়ের প্রয়োজন।’