somewhere in... blog

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের উত্সব উদযাপনের ঠিক আগেই আমাদের সামনে চলে আসে গভীর বেদনায় ভরা একটি দিন ১৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত বিজয়শিখরে পৌঁছুবে, ঠিক তার প্রাক্কালে শেষ আঘাতটা হেনেছিলো দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহযোগীরা রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী। সে আঘাত ছিলো বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদের ওপর। তারা সুপরিকল্পিতভাবে বেছে বেছে হত্যা করেছিলো শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিত্সকদের। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যেনো মেধায়-মননে দীন হয়ে পড়ে, যেনো স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে এ ছিলো ঘাতকদের দূরপ্রসারী লক্ষ্য। আর তাত্ক্ষণিক লক্ষ্য ছিলো আসন্ন পরাজয়ের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা। সন্দেহ নেই এ এক চরম কাপুরুষতা।
আজ আমরা গভীর বেদনার সাথে স্মরণ করছি তাদের, যাদের আমরা হারিয়েছি একদম শেষ মুহূর্তে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি অধ্যাপক জিসি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলিম চৌধুরী, সাহিত্যিক সেলিনা পারভীনসহ স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি।
বুদ্ধিজীবী নিধনের এ ঘৃণ্যতম অপরাধটির এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, দেশেরই কিছু মানুষ তা ঘটানোর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে। রাজাকার, আলবদর আর আলশামস বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া পাকিস্তানি হানাদারদের পক্ষে এমন লক্ষ্যভেদি হত্যাযজ্ঞ চালানো এতোটা ব্যাপক মাত্রায় সম্ভব ছিলো না। স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ও আলবদর বাহিনী সদস্যরাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুদ্ধিজীবীদের উঠিয়ে এনেছে; তুলে দিয়েছে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে, কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে নিজেরাই। আর কী গ্লানির বিষয় যে সেই বিশ্বাসঘাতকদের অনেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের সমাজে ও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হয়েছেন, এমনকি মন্ত্রিত্বও পেয়েছেন। সেই পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা আজও স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে সক্রিয়। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাংলাদেশের চেতনাকে নস্যাৎ করার জন্য আজও তারা ষড়যন্ত্র করে চলেছে।
এ বছর আমরা যখন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উদযাপন করছি, তখন দেশজুড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা মনে করি, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড জঘন্যতম যুদ্ধাপরাধের দৃষ্টান্ত। এবং এ জঘন্যতম অপরাধযজ্ঞের অগ্রভাগে ছিলো এ দেশেরই কিছু কুসন্তান: রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের বিচার দিয়েই শুরু হোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সামগ্রিক প্রক্রিয়া। বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত শুরু হোক; যেসব ঘটনায় মামলা হয়েছিলো, বিচার চলেছিলো বা অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে বা রাজনৈতিক কারণে মামলা নষ্ট করা হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা, পুনঃতদন্তের উদ্যোগ নেয়া হোক। এভাবেই আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি।
১৪৮ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ছবিটি http://www.gettyimages.com থেকে সংগৃহিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক নৈকট্যের গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ‘হয় পানি, না হয় তোমাদের রক্ত​এই নদীতেই প্রবাহিত হবে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২০




কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এ ঘটনায় সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। এমনকি পাকিস্তানকে এক ফোঁটা পানিও দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৬


কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউসুফ সরকার

লিখেছেন তানভীর রাতুল, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭

নৈতিকতা এবং নীতিবোধ কখনোই আইনের মুখে পরিবর্তিত হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া উচিত নয়”)।

নৈতিকতা ও নীতিবোধ কখনোই সহিংসতা বা আইনী চাপের মুখে বদল হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাক-ভারত যুদ্ধ হলে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৭



সাবেক ভারত শাসক মোগলরা না থাকলেও আফগানরা তো আছেই। পাক-ভারত যুদ্ধে উভয়পক্ষ ক্লান্ত হলে আফগানরা তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেই পারে।তখন আবার দিল্লির মসনদে তাদেরকে দেখা যেতে পারে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×