জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের থেকে ভারত বেশি চিন্তিত। ইন্টেরিম সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ভারতের পশ্চিম বাংলার মিডিয়া যেন পলাতক আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে একটি মিডিয়া নাম না উল্লেখ করলেই নয় তা হচ্ছে রিপাবলিক বাংলা নিউজ চ্যানেল। হেন কোন প্রোপাগাণ্ডা নেই তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ভারতের ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ও আনন্দবাজার পত্রিকার প্রোপাগাণ্ডা নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের ভিতরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীকে নিয়ে অপপ্রচার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত শুরু করেছে গোদি মিডিয়া।
আইএসআই চীফের বাংলাদেশ সফর: বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক কোনকালেই স্বাভাবিক ছিলো না। কারণ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি। পাকিস্তানের প্রতি বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অংশের মনোভাব সবসময় নেগেটিভ। কারণ পাকিস্তান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের উপর যে অত্যাচার করেছে তার জন্য এখনও ক্ষমা চায়নি। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের বাংলাদেশের ভ্রমণ নিয়ে তাই দেশে শোরগোল হবে এটাই স্বাভাবিক। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে ইন্টেরিম সরকার বেশ আগ্রহী দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের উপর থেকে ভারতের প্রভাব কমানোর জন্য পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর কৌশল হিসাবে এটিকে দেখা হচ্ছে।
দুইদিন পূর্বে ভারতের একটি ইংরেজি অনলাইন পত্রিকা দাবী করেছে জানুয়ারি মাসের শেষ ভাগে আইএসআই চীফ অসিম মালিক গোপনে বাংলাদেশে এসেছে। কোন ফ্লাইটে এসেছেন তাও উল্লেখ করা হয়েছে। এমন খবরে ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই দাবীকে মিথ্যা বলে গোদি মিডিয়ার প্রতি নিন্দা জানানো হয়। ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে হাইব্রীড যুদ্ধ তথা ডিসিইনফরমেশন ছড়িয়ে মূলত দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলতে চায়। একটি ডিসইনফরমেশনমূলক প্রতিবেদন সাধারণত একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট গল্প দিয়ে শুরু হয়, যার কোনো প্রমাণ বা সূত্র থাকে না, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের মন্তব্য দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়। গল্পটি এমন রসালো ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয় যাতে অন্যান্য গণমাধ্যমও গল্পটি সত্য ভেবে প্রকাশ করে।
ডিপস্টেট কারিগরের বাংলাদেশ ভ্রমণ : ভারতের ইকোনমিক টাইমস নামে একটি পত্রিকা দাবী করেছে দেশে দেশে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা যে ডিপ স্টেট পরিচালনা করে থাকে সেই প্রকল্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ স্টেক হোল্ডার আলেক্স সোরেস প্রধান উপদেষ্টার সাথে বাংলাদেশে এসে সাক্ষাৎ করেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের শুরু থেকেই ভারত দাবী করে আসছিল আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ও পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থা মিলে ডিপ স্টেটের সহায়তায় শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছে। বর্তমানে আমেরিকার প্রশাসন চেঞ্জ হওয়াতে ইন্টেরিম সরকার বিপদে পড়তে পারে এইজন্য ডিপ স্টেট প্রকল্পের একজন প্রধান উপদেষ্টারকে সাহস যোগাতে এসেছেন। এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর বেশ আলোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে ভারতের এই দাবীকে প্রোপাগাণ্ডা হিসাবে তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
কল্পিত সেনাঅভ্যুত্থান : পলাতক আওয়ামী লীগ পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা রকম অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেনাবাহিনী অনেক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বলে আওয়ামী সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েঞ্জারা দাবী করেছেন। তবে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ৩০শে জানুয়ারি ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয় বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে বা ঘটতে যাচ্ছে। এত সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে ভারতীয় পত্রিকার খবরে সচেতন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এবারো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এমন দাবীকে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করা হয়।
জানুয়ারি মাসে ভারতের মিডিয়া যে ধরণের প্রোপাগাণ্ডা চালিয়েছে তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্যাদাকে হেয় করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা হিসাবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের সরকারের উচিত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ জানানো যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের ডিজইনফরমেশন পত্রিকায় ছাপানো থেকে গোদি মিডিয়া বিরত থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:৪০