somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই হাল আসুন একটু আলোচনা করা যাক!

৩০ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আসলে এখন তেমন কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করে না। একটা সময় খুব ইচ্ছে করতো, এমন কি এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত। কারণ এখানে এতো পদের ফাতরামো দেখতে হচ্ছে, সহ্য করতে হচ্ছে আর হতাশ হতে হচ্ছে যে এখন এগুলো প্রকাশ করার আর ঠিক কোনও ভাষা খুঁজে পাইনা। ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সেই সময় থেকে অর্থাৎ সেই আকরাম খানদের যুগ থেকে ক্রিকেট দেখতে দেখতেই বড় হয়েছি। যখন বাংলাদশের মূল প্রতিপক্ষ ছিল কেনিয়া। তাদের সাথে যখন বাজেভাবে লাইনে হারতে থাকতো তখনও যে হতাশা কাজ করতো বাংলাদেশের খেলা দেখে আজ তার থেকেও বেশী হতাশা কাজ করে যখন বাংলাদেশের খেলা দেখি, বিশেষ করে যখন ঐ আফঘানিস্তানের কাছে হারে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই সমস্ত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পেছনে সবথেকে বেশী দায়ী। আমাদের সব থেকে বড় দুর্বলতা হচ্ছে ঘরোয়া লীগের ক্রিকেট। ঘরোয়া ক্রিকেট হচ্ছে একটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম। একটা উদাহরণ দেই। ভারতের উদাহরণ দিলে সবচেয়ে ভালো হতো কিন্তু আমি ক্রিকেট খেলার সূত্রপাত যেখান থেকে সেই ইংল্যান্ড এর উদাহরণটাই দেই। ইংল্যান্ড যদিও ১ নম্বর শক্তিশালী দেশ নয় কিন্তু অবশ্যই প্রথম সারির একটি দেশ। আন্তর্জাতিকভাবে খুব সফল না হলেও তারা একেবারে গোঁড়া থেকেই সমীহ জাগানো শক্তিশালী একটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ। কারণ কি? তাদের রয়েছে দেশজুড়ে অসংখ্য কাউণ্টি লীগ। এই কাউণ্টি লীগগুলোতে বেশ কঠিনভাবে খেলার মান বজায় রাখা হয়। ইংলিশ ক্রিকেটে ঘরোয়া আসরে খেলার মান বজায় রাখার ব্যাপারে যে পরিমাণ কড়াকড়ি করা হয় আমাদের দেশে তার ১০ ভাগের ১ ভাগও হয়না। সবচেয়ে বড় কথা সেখানে প্রফেশনালিজম কঠিনভাবে মেইনটেইন করা হয়। যার কারণে সেখানে মানসম্মত খেলোয়াড় তৈরি করা হয় এবং এজন্য ক্রিকেট ইংল্যান্ডে জনপ্রিয়তায় অন্যান্য খেলার চেয়ে অনেক পেছনে থাকা সত্ত্বেও তারা ক্রিকেটে সবসময়ই যথেষ্ট সমীহ জাগানো একটি দল।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন কেন ইংল্যান্ড এর উদাহরণ শুরুতেই দিলাম? কারণ ইংল্যান্ড এ ক্রিকেট এর জনপ্রিয়তা কম এজন্য ক্রিকেট এর প্রতি তাদের ফোকাসও কম, ফুটবল, টেনিস বা রাগবির তুলনায় আর্থিক বিনিয়োগও কম কিন্তু তারপরও সেখানে ঘরোয়া কাউণ্টি লীগগুলোতে কড়াকড়ির কারণে তাদের খেলার মান সবসময়ই উঁচু লেভেল এর।
ভারতের কথা না বললেই নয়। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে রঞ্জি ট্রফির নাম কোনও ক্রিকেটফ্যান শোনেনি এমনটা নেই। এই সমস্ত ঘরোয়া লীগগুলোতে কিন্তু খুব কড়াকড়ি করে নিয়মকানুন বজায় রাখা হয়, খেলার মান বজায় রাখা হয়, প্রফেশনালিজম বজায় রাখা হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা মেধার উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হয়। যার কারণে সেই ব্রিটিশদের অধীনতা থেকে মুক্তির পর থেকেই তারা অনেক নামকরা, বিখ্যাত ক্রিকেটার উপহার দিয়ে আসছে। ওদের রঞ্জি ট্রফিতে যে পরিমাণ কড়াকড়ি করা হয় আর খেলার মান বজায় রাখা হয় সেটার ১০০ ভাগের ১ ভাগও আমাদের দেশে হয়না। আমাদের দেশের জাতীয় দলে খেলা টপ লেভেলের খেলোয়াড়দেরও যদি ওদের ঐ রঞ্জি ট্রফিতে খেলতে পাঠানো হয় তো দেখা যাবে যে তারাও ওদের ঐ খেলোয়াড়দের সাথে মোটেই সুবিধা করে উঠতে পারছেনা। তাছাড়া তাদের আই পি এল আরও ভূমিকা রাখছে মানসম্মত ক্রিকেটার তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে। আই পি এল এর মতো জমকালো টুর্নামেন্টে খেলে তাদের ক্রিকেটাররা আরও বেশী দক্ষ হয়ে উঠছে। যেটা আমাদের বি পি এল খেলেও সেরকম হচ্ছে না। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের শক্তির কারণেই ভারত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতোটা ভালো খেলে বেড়াতে পারছে। এই মাত্র তারা টি ২০ বিশ্বকাপও জিতে নিলো।
আসি আমাদের পেয়ারা জানেমান বাংলাদেশের কথায়। আমাদের ঘরোয়া লীগগুলোতে খেলার মান যথেষ্ট নিম্নশ্রেণীর। এমন নয় যে ক্রিকেটে আর্থিক বিনিয়োগ নেই। বরং একেবারে উল্টো। সেই আকরাম খানদের সময় থেকে দেশের খেলাধুলার ক্ষেত্রে ক্রিকেট সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সবচেয়ে বেশী অর্থ বরাদ্দ পেয়ে আসছে দেশের ক্রিকেট। দেশের ক্রিকেট বোর্ড পারতো এদেশে ভারতের রঞ্জি ট্রফির মতো একটা খুবই মানসম্মত খুবই প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট এর আয়োজন করতে। দেশের জাতীয় লীগগুলো যাতে আরও বেশী মানসম্মত হয়, খেলার মাঠ, উইকেট, খেলার আয়োজক, কোচ এরা যাতে মানসম্মত হয় সেগুলো কড়াকড়িভাবে নজরে রাখতে পারতো ক্রিকেট বোর্ড। নতুন নতুন মেধা খুঁজে আনা, পেসার হান্ট, ট্যালেন্ট হান্ট, স্পিনার হান্ট এসব প্রোগ্রাম নিয়মিত চালু করতে পারতো। ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের সবার প্রিয় মাশরাফি বিন মুর্তজা উঠে এসেছিলো এরকম এক পেসার হান্ট প্রোগ্রাম থেকেই। ওরকম প্রোগ্রাম যদি রেগুলার করা যেতো তাহলে হয়তো মাশরাফির মতো এরকম আরও খেলোয়াড় পাওয়া যেতো। এরকম স্পিনার হান্ট বা ব্যাটসম্যান হান্ট প্রোগ্রাম করতে পারতো বিসিবি। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পর আজ ২০ বছরের বেশী পার হয়ে গেছে, বাংলাদেশের স্কোয়াডে কয়জন উন্নত মানের একজন লেগ স্পিনার/ লেগ ব্রেক বোলার দেখেছেন? ভালো মানের, কার্যকরী কয়জন অফ স্পিনার দেখেছেন?, যেকোনো উইকেটে ভালো ব্যাট করতে পারে, ধৈর্য ধরে টীকে থাকতে পারে (বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে, যেটা আসল ক্রিকেট) এরকম কয়জন ভালো ব্যাটসম্যান দেখেছেন (সাকিব, তামিম, মুশফিকসহ)?
এগুলোর পাশাপাশি যে কয়জন নাম নেওয়ার মতো ক্রিকেটার পাওয়া গেছে সেই টপ লেভেল এর খেলোয়াড়দের নিয়েও রয়েছে নানা সমস্যা। এগুলোর জন্য আসলে তাদের যার যার নিজস্ব মানসিকতাই সব থেকে বেশী দায়ী।
প্রথমেই আসা যাক দেশের সেরা পোষ্টারবয় সাকিব আল হাসানের কথায়। সাকিব ভালো খেলোয়াড়, সন্দেহ নেই। কিন্তু তার সবথেকে বড় সমস্যা তার টীকে থাকার ধৈর্য নেই। এরকম বহু বহু ম্যাচ গেছে যখন অল্প রানে ৩/৪ উইকেট পড়ে গেছে আর সাকিব উইকেটে এসেছে, আর এসেই কয়েকটি ৪, ৬ মেরে অযথা তেড়ে মারতে গিয়ে আউট!! অথচ তার যতোটুকু ট্যালেন্ট আছে তাই দিয়ে সে যদি ঐ শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার মতো ধৈর্য ধরে খেলে যেতে পারতো তাহলে বাংলাদেশ জিতে জেতে পারতো। সাকিব ভালো অলরাউণ্ডার সন্দেহ নেই, কিন্তু তার অবিবেচকের মতো খেলার নজীর ভুরি ভুরি!!
সাকিবের মতো তামিম ইকবালও ট্যালেন্ট থাকার পরও অনেক ম্যাচ সে হতাশ করেছে। বোলার বল করতে আসলে তার প্রথম বোলটা রীড করার চেষ্টা না করে সোজা ব্যাট চালিয়ে দিয়ে আউট। এছাড়াও ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ তার মনে হল একটা ছক্কা মারতে হবে, ব্যাস কোনও হিসাব বিবেচনা না করে ধাম করে ব্যাট দিলেন চালিয়ে আর ওদিকে ফিল্ডার তো ক্যাচ ধরার জন্য প্রস্তুত হয়েই থাকতো (সাকিবের ক্ষেত্রেও একই কাহিনী) !! এরকম ধৈর্যহারা মানসিকতা না থাকলে বাংলাদেশ যেমন অনেক ম্যাচ জিততে পারতো তেমনি তার নিজেরও ব্যাটিং ক্যারিয়ার আরও অনেক সমৃদ্ধ হতো।
আসা যাক আমাদের এককালের সবচেয়ে “ট্যালেন্টেড” ব্যাটসম্যান আশার ফুল আশরাফুল এর কথায়। আশরাফুল মেধাবী হলেও তার অবিবেচকের মতো খেলার কারণে তাকে অনেকবার ব্যর্থ হতে দেখেছি। বিশেষ করে ভালো ব্যাট করতে করতে তার অযথা স্লিপে ক্যাচ তুলে আউট হবার কারণে এখনো তাকে সমালোচনা করি। সে পারতো নিজেকে সংশোধন করতে। কিন্তু বাদবাকি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মতোই কিছু কিছু ম্যাচ ছাড়া চিরকালই সে ঐ পদের দায়দায়িত্বহীন খেলা খেলে এসেছে। মনে আছে সেই সময়ের কোচ জেমি সিডন্সের কথা। আশরাফুল সম্পর্কে একবার ম্যাচ এর আগেই বলেছিলেন যে “আশরাফুল শুন্য পাবেন”। পরের ম্যাচে ঠিক তার কথাই ফলেছিল। তার ঘুষকাণ্ডের কথা না হয় বাদই দিলাম।
টীকে থাকার দরকার এরকম মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা করে খেলে গিয়ে কই ম্যাচ জিতিয়ে আসবে তা নয়, ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ মনে হল একটা ছক্কা মারতে হবে, ব্যাস ওমনি তুলে মারতে গিয়ে আউট। এই কাজটা সেই আশরাফুল থেকে শুরু করে সাকিব, তামিম, মুশফিক এর মতো টপ লেভেল এর খেলোয়াড় থেকে তো বটেই বাকি টীমের সবার মধ্যেই এই স্বভাবটা আছে। এরকম মানসিকতা থাকলে কিছু কিছু ম্যাচ ছাড়া, কিছু কিছু সিরিজ ছাড়া বাকি সবই হারবে বাংলাদেশ, এবং এটাই হয়ে চলেছে বেশিরভাগ সময়।
বিসিবি পারতো এদের এইসব মানসিক ব্যাপারগুলোকে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে ঠিক করতে কিন্তু কখনোই কার্যকরী কিছুই করেনি। বলা ভালো করার চেষ্টা করেনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ড কখনোই যত্নশীল ছিলনা দেশের কোচদের ব্যাপারে। সেই আকরাম খানদের সময়ে গর্ডন গ্রিনিজের কথা ভুলিনি। বাংলাদেশকে আইসিসি ট্রফি জেতানোর সময় থেকেই গ্রিনিজকে মনে আছে। সেকালের বিসিবির দায়দায়িত্বহীন আচরণ আর সেই আকরাম খানদের অসহযোগিতামূলক আচরণের কারণে শেষ পর্যন্ত অসম্মানজনক বিদায়ই ঘটেছিলো বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের আসরে তুলে দেয়া সেই কোচকে। মনে আছে ক্ষোভ আর হতাশা নিয়েই দেশ ছেড়েছিলেন তিনি।
এর পরের কোচ এর কাছেই সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেট সবচেয়ে বেশী ঋণী থাকবে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার এডি বার্লো। সেই হাবিবুল বাশার সুমনদের সময়কার কোচ। তাঁর পরামর্শ আর নির্দেশনাতে চলার কারণে অনেক উপকৃত হয়েছিলো বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেট। অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে তিনি কোচ থাকা অবস্থায় হঠাৎ ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অক্ষম হয়ে গেছিলেন। উনিই সম্ভবত একমাত্র কোচ যার বিদায়টা ছিল সবচেয়ে আবেগপূর্ণ। তিনিও থাকতে চেয়েছিলেন আর বিসিবিও তাঁকে ধরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কি!! হুইলচেয়ারে করে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি।
এর পরের কোচ হলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে কোচদের একজন। পাকিস্তানের মহসিন কামাল। সে সময়কার বিসিবি প্রেসিডেন্ট আলী আসগর লবির খায়েশ ছিল তিনি যে করেই হোক পাকিস্তান থেকেই একজন কোচ আনবেন। সেসময় পাকিস্তানের অন্য আর কেউই যখন বাংলাদেশের কোচ হতে রাজি হচ্ছিলেন না তখন পাকিস্তানের অখ্যাত এক কোচ মহসিন কামাল রাজি হলেন কোচ হতে। আশরাফুলদের সময়ের এই কোচ নাকি কোচিং করাতেন চক আর ব্ল্যাকবোর্ড নিয়ে (অন্তত পত্রিকায় যা দেখেছি)!! তার সময়ে বাংলাদেশ এর কেমন পারফর্মেন্স ছিল সেটা “জানিতে চাহিয়া আর লজ্জা দিবেন না!!!”
বাংলাদেশের এর পরের কোচ ছিলেন সবচেয়ে হাই প্রোফাইল কোচ। শ্রীলংকাকে বিশ্বকাপ জেতানো কোচ ডেভ হোয়াটমোর। তিনি তখন কোচ হলেন যখন সাকিব, তামিম, মুশফিক, এরা এসে গিয়েছেন। সবারই আশা ছিল তিনি বাংলাদেশকে “আরেকটি শ্রীলংকা” বানাবেন! কিন্তু বিধিবাম!! তিনি যা শেখাতেন খেলোয়াড়েরা মাঠে গিয়ে “সবই ভুলে যেতেন”(তাঁর নিজেরই ভাষ্যমতে)!! মনে আছে তখন জিম্বাবুয়ে না কার সাথে সিরিজের এক ম্যাচ এ লজ্জাজনক পারফর্মেন্স এর পর তাঁর ক্ষোভে হতাশায় চেহারা লাল হয়ে গিয়েছিলো। না বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা তাঁর কথামতো চলে তাঁর মর্যাদা রাখতে পেরেছে আর না আমাদের পেয়ারা ক্রিকেট বোর্ড। ক্ষোভ আর হতাশায় পুড়ে তিনিও শেষ পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ছেড়ে।
প্রায় একই কাহিনী জেমি সিডন্স, শেন জার্গেনসন আর ষ্টুয়ার্ট লো এর ক্ষেত্রে হয়েছে। খেলোয়াড়েরা তাদের কথা অনুযায়ী ঠিকমতো চলতো না আর ক্রিকেট বোর্ডও কোচদের সেভাবে সহযোগিতা করেনি। শেষমেশ সবারই ভাগ্যে জুটেছে অসম্মানজনক বিদায়।
আজকের কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহের ক্ষেত্রেও একদফা এরকম অসম্মানজনক বিদায় ঘটেছিলো। পরে এই বিসিবিই আবার তাঁকে ফিরিয়ে এনেছে। হাথুরুর সম্ভবত না ফিরেও উপায় ছিল না। শ্রীলংকা তার ব্যর্থতার জন্য তাকে বাতিল করে দিলে তার আর কোনও যাওয়ার জায়গা ছিল না। এদিকে আবার বাংলাদেশের কোচ হতে অন্য কেউ আর রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিসিবির আমন্ত্রণে হাথুরুই ফের বাংলাদেশে হাজির।
এ তো গেলো কোচদের নিয়ে কাহিনী।
বাংলাদেশের ক্রিকেট সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বোর্ড আর খেলোয়াড়দের মধ্যে নানা ধরণের রাজনীতি ঢুকে যাওয়ায়। এই সর্বনাশা রাজনীতি দেশের প্রত্যেকটি খাত যেমন ক্ষতিগ্রস্থ করেছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ করেছে ক্রিকেটকেও। বিশেষ করে সিনিয়র খেলোয়াড়দের ভেতর রয়েছে নানা ধরণের গ্রুপিং। এই গ্রুপিং আর নানা কিসিমের রাজনীতি রয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে বোর্ড এর কর্মকর্তাদের মধ্যেও। টীমে সাকিবের পক্ষে এক গ্রুপ, মুশফিকের পক্ষে এক গ্রুপ, তামিমের পক্ষে আরেক গ্রুপ, খালেদ মাহমুদ সুজনের পক্ষে আরেকটা গ্রুপ এই ধরণের নানা রকমের ইন্টারনাল গ্রুপিং আর রাজনীতি রয়েছে বাংলাদেশ শিবিরে। আর আমাদের পেয়ারা বিসিবি প্রেসিডেন্ট এর কথা না হয় বাদই দিলাম!!
এর সাথে গত বেশ কয়েকবছর যাবত শুরু হয়েছে নতুন ধারা।
ম্যাচ বা সিরিজ জিতলেই সরকার থেকে এদের বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাট দেয়া আর এদের নানা ধরণের বিজ্ঞাপনে মডেলিং এ যাওয়া থেকে আরেক ধরণের সর্বনাশের শুরু। তার সাথে মরার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো শুরু হয়েছে সরকার থেকে এদের কাউকে কাউকে দলীয় মননায়ন দিয়ে দলে ভিড়িয়ে সাংসদ বানানো। এদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সরকার এদের এক এক জনকে দলে ভিড়িয়ে ক্রিকেট এর ভেতর নোংরা সঙ্কীর্ণ রাজনীতি আরও ভালোভাবে গেড়ে দিচ্ছে।
একদিকে টাকা পয়সার লোভ আরেকদিকে ক্ষমতার লোভ বিশেষ করে দেশের ক্ষমতায় যারা আছে তাদের সঙ্গে মাখামাখি করে ক্ষমতাশালী হওয়ার লোভ বেশ ভালোমতোই ঢুকে গেছে বাংলাদেশ শিবিরে।বড় একটা ম্যাচ জিতলেই বাড়ি গাড়ি, মডেলিং এ নামলেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, একটু ভালো পারফর্ম করলেই বড় বড় পুরস্কার, বিপিএল এ টাকার ছড়াছড়ি আর আরও বড় আসর আই পি এল এ যেতে পারলে তো হলোই!! এসব হলে শিবিরে খেলোয়াড়দের মধ্যে লোভের সঞ্চার হবেনা কেন? ক্রিকেট খেলে এমন দেশের মধ্যে কয়জনকে আপনি দেখাতে পারবেন যে ক্রিকেট ক্যারিয়ার চলাকালীন অবস্থায় সেদেশের রাজনীতিটিতে জড়িয়ে নির্বাচনে নেমে সাংসদ হতে?
এদিকে বিসিবির বোর্ড এ এমন এক এক জনকে রাখা হয়েছে যাদের কোনও দিন ক্রিকেট সংশ্লিষ্টতা ছিল না। খোদ বিসিবি প্রেসিডেন্ট নিজেই তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এরা বোর্ড সদস্য হতে পেরেছেন জাস্ট সরকারী দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে। অন্য কোনও যোগ্যতা এদের নাই। জানা যায়, গত একযুগে ভারতের ক্রিকেট বোর্ডে সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে ১০ বার, অস্ট্রেলিয়াতে ৬ বার, অন্যান্য দেশেও অন্তত একাধিকবার। বাংলাদেশে কয়বার হয়েছে?
হ্যাঁ, খেলার সাথে রাজনীতি থাকেই। প্রত্যেকটা দেশের জাতীয় পর্যায়ের হোক, ক্লাব পর্যায়ের হোক সব দলে কিছু না কিছু রাজনীতি থাকেই। কিন্তু কোনও দেশেরই আমাদের দেশের মতো এতো এতো ধারার নষ্ট রাজনীতি নেই। হ্যাঁ, আপনি হয়তো ভারত পাকিস্তানের উদাহরণ দিতে চাইবেন সেকথা জানি। কিন্তু এ দুটো দেশেও সেই রাজনীতি এতোটা নিম্নশ্রেণীর নয় যতোটা আমাদের দেশে আছে।
আর তাছাড়া ভারত - পাকিস্তান যতোই খারাপ হোক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের অনেক বড় বড় সাফল্য আছে বিভিন্ন নোংরামি ছাড়াও। বাংলাদেশ সেরকম সাফল্যের ধারে কাছেও যেতে পারেনি।
মানে পাকতে না পাকতেই ঘুণ ধরে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে।
এতো সমস্তকিছুর ভিড়ে দেশের ক্রিকেট শক্তিশালী অবকাঠামোর অপর দাঁড় করানো, মানসম্মত খেলোয়াড় তৈরি করা আর খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে মেধাবীদের বের করে আনা কোন তলে চাপা পড়ে গেছে সেসবের কোনও হদিস নেই।
এসবের জন্য সংশ্লিষ্টদের কেউই দায় নেবেনা, কোনও জবাবদিহিতার মুখে কাউকে পড়তে হবে না কাউকে।
একটা দলে এতো ধারার রাজনীতি, দায়দায়িত্বহীনতা, কাণ্ডজ্ঞানহীনতা, জবাবদিহিতার অভাব, অর্থবিত্তের লোভ, বিশৃঙ্খলা আর দুর্নীতির ছড়াছড়ি থাকলে সে দলে কোনও স্পোর্টিং স্পিরিট থাকে?
আমাদের কষ্ট করে পরিশ্রমের বিনিময়ে কামানো টাকার বিনিময়ে, সরকারের হাতে তুলে দেয়া ট্যাক্স এর টাকায় লাখ লাখ টাকা বেতন পাওয়া প্লাস আরও বিভিন্ন প্রাইজমানি থেকে উপরি পাওয়া ক্রিকেটারদের এসব কি হচ্ছে ভেবে দেখেছেন?
দেশের ক্রিকেট নিয়ে আবেগ এর কথা না হয় বাদই দিলাম!!


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৭
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:০৩

আগে বুঝতে হবে রিসেট বাটন কি......

বেশ কিছুদিন যাবত ডক্টর ইউনুস সাহেব এক সাক্ষাৎকারে "রিসেট বাটন" শব্দদ্বয় বলেছিলেন- যা নিয়ে নেটিজেনদের ম্যাতকার করতে করতে মস্তিষ্ক এবং গলায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধু ভগবান না হয় ইশ্বর!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:৫২



মানুষ বঙ্গবন্ধুর ওপর এতোই ত্যক্তবিরক্ত যে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলছে বা বলার সাহস পাচ্ছে। এর জন্য আম্লিগ ও হাসিনাই দায়ী। যেমন- বঙ্গবন্ধু কলেজ, বঙ্গবন্ধু স্কুল (হাজারের কাছাকাছি),... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:২৮





বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টের গণহত্যার মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ শুনে কোন গালিটা আপনার মুখে এসেছিলো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬



"খবিশ মহিলা", গালিটি বা তার কাছাকাছি কিছু?

মতিয়া চৌধুরী (১৯৪২-২০২৪) ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ রাজনীতিবিদ। গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সবচেয়ে নিবেদিত-প্রাণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বে চরম দারিদ্র্যে বাস করা প্রায় অর্ধেক মানুষই ভারতের

লিখেছেন সরকার পায়েল, ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮


বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ দারিদ্রে দিন কাটাচ্ছে। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-সংঘাত লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা। জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।


ইউএনডিপির বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×