দুনিয়াতে এতো এতো জাতি আছে তার মধ্যে এক বাঙ্গালি মুসলমান ছাড়া আর কোন জাতি আছে কিনা আমার জানা নেই যাদের নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি এতোটা ঘৃণা আর অবজ্ঞা রয়ে গেছে। প্রত্যেকটা জাতির নিজেদের দেশের জন্য নববর্ষ উৎসব আছে, যেটা তারা তাদের প্রতি বছর পালন করে থাকে। আমাদের এতো সমৃদ্ধ একটা সংস্কৃতি আছে আমাদের একটা সমৃদ্ধ নববর্ষ উৎসব আছে অথচ সেই আমাদেরই বিশাল এক জনগোষ্ঠী এটাকে মানতে চায় না। স্রেফ ধর্মের অজুহাতে। অথচ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশই আছে যাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে তাল রেখে নিজেদের নববর্ষ উৎসব আছে এবং সেটা তারা প্রতি বছরই পালন করে থাকে। সেটা নিয়ে তাদের কোনও সমস্যা হয়না।
সমস্যা হয় শুধু আমাদের।
ক্রমেই প্রচণ্ড রকমের ধর্মান্ধ হয়ে উঠতে থাকা এক জাতি নিজেদের নিয়ে এতোটাই হীনমন্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে যে আজ নিজেদের আবহমান সংস্কৃতি পর্যন্ত তারা বাদ দিয়ে দিতে চাইছে, অস্বীকার করতে চাইছে।
এগুলো নাকি শিরক। এগুলা নাকি ইসলামবিরোধী।
আচ্ছা তাহলে আমাকে বলেন তো, এগুলা শিরক কিভাবে হয়?
ইসলামে শিরকের কথা বলা আছে। একটা কাজ তখনই শিরক হবে যখন আপনি আল্লাহর সাথে কাউকে ইলাহ বলে মেনে নিবেন। অথচ, এখানে সেরকম কোনও ব্যাপারই নেই। আপনি নিজেদের প্রথম বছরের প্রথম দিনটিকে উদযাপন করতে যাচ্ছেন। এর ভেতরে তো কাউকে আল্লাহর সাথে তুলনা করা হচ্ছে না বা কাউকে তার সমকক্ষ ভাবা হচ্ছে না। তাহলে এটা কিকরে শিরক হয়?
ওয়েল, ধরে নিলাম যে এটা শিরক। তাহলে কি এরা বলবেন যে ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান, আলবেনিয়া এরাও তাহলে শিরক করছেন। এদের মতো প্রমিনেন্ট মুসলিম দেশ তারাও তো নিজেদের ধর্ম আর নিজেদের জাতীয় সংস্কৃতি একই সাথে পালন করে বেড়াচ্ছেন। তাদের তো কখনোই এসব নিয়ে নিজেদের সাথে নিজেদের দ্বন্দ্ব দেখা যায়না।
তাহলে আমাদের কেন এ সমস্যা?
একটা উত্তর হতে পারে যে আমরা আসলে অত্যন্ত হীনমন্য একটা জাতি।
ধর্মের খাতিরে নিজেদের সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে ক্রমেই “হটেনটট” হয়ে ওঠা একটা জাতি। বহু বছর আগে প্রখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী আমাদের এহেন নানা কীর্তির সমালোচনা করতে গিয়ে শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন। এখন দেখছি তিনি ভুল বলেন নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০২