মুক্তমনা
এই মুক্ত মনা শব্দ নিয়ে অনেকের অনেক চুলকানী। সাধারণত
কয়েক প্রকার মানুষ দেখা যায়,
যারা আসলেই মুক্ত মনা,
মুক্ত মনা হেটারস,
মুক্তমনা শব্দ টি ফেবুর মাধ্যমে জানা পাব্লিক।
মুক্তমনা শব্দ টি দেখলেই বোঝা যায়, এটার মানে মুক্তচিন্তার অধিকারী হওয়া। এই মুক্তচিন্তা নিয়েও আবার অনেকের চুল্কানী আছে।
মুক্তচিন্তা কি??
বাকস্বাধীনতা??
আবার বাক স্বাধীনতা কি??
এটা বলতে গেলেই কয়েক শ্রেণীর মানুষ তুলে আনবেন দ্যা মাদার অফ এক্সামপল।
"ইভ টিসিং"
না ভাই । এত খুশীর কিছু নাই। বাকস্বাধীনতা মানে এই না যে আপনি আপনার এক্স রে সযুক্ত মহান সৃষ্টিকর্তার দেওয়া চক্ষু দিয়া রাস্তায় কন্যাদের দেখে আপনাদের উত্তেজিত মনের বাস্তব করার আশা আকাঙ্খা প্রকাশ করবেন।
আবার অনেকের ধারণা মুক্তমনা মানেই নাস্তিক। এটা ধারণা করার মূল কারণ, বিভিন্ন ধর্মীয় কুসংস্কার মেনে এগিয়ে না চলে, তারা কেবল একটা জাতি, মনুষ্য জাতি কে নিয়েই ভাবে। আর ধর্মীয় বিভিন্ন মতামত কে প্রাধান্য না দিয়ে তারা নিজ মতামত বা প্র্যাক্টিক্যাল লাইফ এ বিশ্বাসী।
আমার সংকীর্ণ মস্তিষ্ক দিয়ে আমি যা বুঝি তা এই দুটার কোনটাকেই পুরোপুরি সাপোর্ট করে না।
মুক্তমনা হওয়া মানেই অবশ্যই বাকস্বাধীনতা। এই বাকস্বাধীনতা মানে ইভ টিসিং না। এই বাকস্বাধীনতা হচ্ছে, কোন ইভ টিসার কে টিস করতে দেখলে তারে গিয়া ঠাডায়া দুইটা লাগায়া, তারে তার ভাষায় বুঝায়া দেওয়া। বাকস্বাধীনতা হচ্ছে, চোখের সামনে অন্যায় দেখলে চুপ করে থাকার প্রবণতা কে বাদ দিয়ে মুখ খোলা। বাকস্বাধীনতা হচ্ছে, বাস-লেগুনা তে উঠলে আপনাদের এলবো দিয়ে ঠেলবো এই নিয়মের প্রতিবাদ করা।
আর মুক্তচিন্তা মানে এই না যে মেয়েরা ইচ্ছামত অশালীন চলা ফেরা করবে। মুক্তচিন্তাবিদ কন্যাগন এটা কখনোই ভাবা উচিত না যে মুক্তচিন্তা মানেই, তাঁর উগ্র চলাফেরা কে সমর্থন করা।আর একটা অদ্ভুত ব্যাপার আমি অনেকের মাঝে লক্ষ্য করি, ছেলেদের একটা চিন্তা,
"সে এভাবে আসছে কেন?? তাকে ত টিস করবই।" যেন এটা তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য। "মেয়ে ওমনে আসছে কেন? মেয়ে ছেলেদের হলের সামনে গেসে কেন??"
কেন ভাই??? তুমি যখন তোমার মেয়ে বন্ধু নিয়ে যাও?? তখন?? যখন তোমার বোন নিয়ে যাও? অন্যের বান্ধবী বা বোনের সাথে সব করা জায়েজ। আপনাদের জন্য কয়েক হাজার বছর নিরবতা পালন করলেও কম হবে।
মুক্তমনা মানে এইসব না। মুক্তমনা মানে হচ্ছে সবার মতামত কে মূল্য দেওয়া, তাদের পার্সপেক্টিভ থেকে চিন্তা করার ন্যূনতম চেষ্টা করা। মাথা দিয়া ভাবা। মুক্তমনা মানে প্রত্যেকটা পসেটিভ সাইট গুলো গ্রহণ করা, আমেরিকান রা ভারতীয় রা কি খারাপ কাজ করতেসে, আম্রিকায় কত শ' পর্ণ সাইট আসে, ভারতীয় রা কি চুরি করতেসে এগুলা থেকে ফোকাস টা সরিয়ে ভাল জিনিসে আনুন। ওটাই হবে মুক্ত চিন্তা। ফোকাস টা সরিয়ে আনা টাই মুক্ত চিন্তার উদাহরণ। আপনি গতানুগতিক থেকে একটু আলাদা ভাবে ভাবছেন। যেখানে মানুষ পর্ন সাইটের লিস্ট বানাতে ব্যাস্ত, সেখানে আপনি আপনার চোখ দিয়ে অন্যভাবে দেখছেন, দেখছেন তাদের লিবারেল সাইড গুলো।
একজন ধর্ম মনা মুক্তমনা হতে পারেন, যদি তিনি তাঁর পার্সপেক্টিভ সহ অন্যান্য জনের অপিনয়ন কেও মূল্য দেয়, আর নিজের ধর্ম এর প্রতি বিশ্বাস রাখা টাও জরুরী, আপনার কাছে আপনার বিশ্বাসের যেমন যুক্তি আছে, তেমনি হয়ত অন্য জনের কাছে অবিশ্বাসের যুক্তি আছে। তাকে তাঁর যুক্তি নিয়ে থাকতে দিন, নিজে নিজের যুক্তি নিয়ে থাকুন। Marketing Myopia থেকে বেরিয়ে আসুন। আর যদি কারো যুক্তি পছন্দ না হয়, তর্ক করুন, নিজের যুক্তি উপস্থাপন করুন। আর বিজ্ঞান আর ধর্ম কে মিলাবেন না। বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায়, ধর্ম ধর্মের জায়গায়।
বিবর্তনবাদ' এ যারা বিশ্বাসী তারাই নাকি নাস্তিক। এ কথাটার সাথে আমি নাস্তিকতা বা আস্তিকতার কোন মিল পাই না। বিবর্তনে অবিশ্বাসী রা বলেছেন, এটা কেবল ই একটা তত্ব, এটা বিশ্বাস করার কিছু না, তাহলে কি আপনি বলেন,
১) মহাকর্ষ বলের তত্ত্ব
২) কোষ তত্ত
৩) জীবাণু তত্ত্ব
৪) পরমাণু তত্ত্ব
৫) তড়িৎ-চৌম্বকীয় বলের তত্ত্ব
৬) প্লেট টেকটনিক্স তত্ত্ব
সব ই ভুয়া, কেবল পাঠ্যপুস্তকের পৃষ্ঠা বৃদ্ধি? বিবর্তন সম্পর্কে জানুন। নিজের স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস টা রেখেই না হয় জানুন।
ঈশ্বর সব কিছুর স্রষ্টা, তাই ত? তিনিই এই পৃথিবী বানিয়েছেন, তিনিই আলো বাতাস, প্রত্যেকটা মাধ্যম বানিয়েছেন, শব্দ বানিয়েছেন। সব ই। তিনিই নিয়ম করে দিয়েছেন, শব্দ চলাচলে মাধ্যমের প্রয়োজন। তাহলে তিনি কেন নিজের সৃষ্টির বিপক্ষে গিয়ে নীল আর্মস্ট্রং কে "আজান" এর বাণী শোনালেন চাঁদে? শব্দ চলাচলে মাধ্যমের প্রয়োজন, মহাকাশে শুন্য মাধ্যম, এখানে শব্দ চলাচল করে না। তাছাড়া ১৯৮৩ সালে মালয়েশিয়ান এক ইন্টারভিউ তে আর্মস্ট্রং নিজেই এই গুজব কে অসত্য বলেন এবং তাঁর মৃত্যু ও একজন খ্রিষ্টান হিসেবেই।
এপ্রিল ফুল এর গুজব এর কথাও আমরা অনেকেই জানি। এখানে বলা হয়
১৯৪২ সালের ১লা এপ্রিল, ৭ লক্ষাধিক মুসলীম নারী ও পুরুষ কে হত্যা করেন গ্রানাডার ওপর হামলা কারী খ্রীষ্টান রাজা ফারদিনান্ড । তিনি প্রথমে তাঁর সামরিক বাহীনি দিয়ে গ্রানাডার শস্য সম্ভার ধংস করেন, পরবর্তীতে তিনি ঘোষনা দেন, "
মুসলমানেরা যদি শহরের প্রধান ফটক খুলে দেয় এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় গ্রহন করেন, তাহলে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে, আর খ্রীষ্টান জাহাজে আশ্রয়গ্রহন কারী দের অন্য মুসলমান রাষ্ট্রে পাঠানো হবে"
কোন উপায় না দেখে মুসলিম নেতারা তাদের কথায় সমর্থন জানিয়ে ফটক খুলে দেন, এবং হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেন মসজিদে আর খ্রীষ্টান জাহাজ গুলোতে। কিন্তু শহরে ঢুকে খ্রীষ্টান সামরিক বাহিনী মসজিদে তালা লাগিয়ে তাতে আগুন দেয়, আর সাগরের মাঝে জাহাজ ডুবী করে, এতে মৃত্যু হয় গ্রানাডার মুসলমান দের।
আনন্দে আত্মহারা হয়ে রাজা ফারদিনান্ড তাঁর স্ত্রী কে জড়িয়ে ধরে বলেন "OH MUSLIM!! HOW FOOL YOU ARE" এখান থেকেই প্রচলন এপ্রিল ফুল।
এখন আসি মূল কথায়।
A history of Medieval Spain বই থেকে কোট করলে, "১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারি ইসাবেলা আর ফারদিনান্ড গ্রানাডায় প্রবেশ করেন। তারা শান্তিপূর্ণভাবে সেদিন গ্রানাডার শাসক দ্বাদশ মুহাম্মাদের কাছ থেকে গ্রানাডার চাবি নেন।"
এত বড় গনহত্যার কোন কথাই নাই ইতিহাসে কোথাও।
ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখল করে মুসলিমদের যেভাবে গণহত্যা করেছিল সেটা সুন্দর করে সংরক্ষিত আছে। তাহলে গ্রানাডার গনহত্যার কথা বেমালুম চেপে গেল?
কোন ঘটনা না ঘটলে থাকা ইতিহাসে না থাকা টাই স্বাভাবিক।
এসব যুক্তিহীন কথায় বিশ্বাস করে আপনি নিজেকে ঈশ্বরের অনুগত মনে করলে এখানেই আপনার সাথে মুক্তচিন্তক দের পার্থক্য টা হয়।
সবশেষে বলি,
প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব মানসিকতা থেকেই সে তাঁর পথ বেছে নেয়, আপনি তাকে বলার কেও না। কাউকে জোর করে ধর্ম পালন করানো যায় না, এটা কোন নিয়ম ও না। আর ঈশ্বর নিজের অস্তিত্ব নিজেই রক্ষা করবেন।
মানসিকতার পরিসর টা কে বাড়ান। শুধু মাত্র আপনার পছন্দ নয় দেখে আপনি অন্যের ধারণা কে যাচাই বাছাই না করে ভূল বলতে পারেন না, এখানে মুক্তচিন্তার আবির্ভাব, অন্যের দিক টা ভাবুন। ভূল জানবেন না, জানাবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:১৩