তনু হত্যার বিচার চাওয়ার বিষয়টি দিনদিন কেমন যেন তিতা হয়ে যাচ্ছে। লেবু বেশি চিপলে যা হয়, ওইরকম মনে হচ্ছে।
সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম রাখার জন্য হুজুরের দল যেভাবে হুমকি-ধমকি, আল্টিমেটাম, মিছিল-সমাবেশ করতে পারল আমার আন্দোলনকারী ভাই-বোনেরা (তনু হত্যার বিচার যারা চান) কিছুই করতে পারলেন না আজ দশ দিনেও।
আমি ভেবেছিলাম ( মেরুদণ্ড ভাঙা মানুষ) এই ইস্যুতে দেশে বড়রকমের কিছু একটা হয়ে যাবে। কিন্তু না, বড়রকমের কিছু একটার বদলে যা হচ্ছে তা মানববন্ধন। সারাদেশে মানববন্ধনের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এতে উপকার হচ্ছে আর্টিস্টদের। তারা ব্যানার লিখে এই সিজনে বেশ ভালো উপার্জন করতে পারছেন। সেই সঙ্গে বাড়ছে মাইক ভাড়ার ব্যবসাও। কেউ কেউ মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসছেন, কেউ সেলফির জোয়ারে ভাসছেন।
সরকারও বেশ আরামেই আছে। তারা কোনো চাপ বোধ করছেন বলে মনে হচ্ছে না। কারণ তারা ভালো করেই জানে, মানববন্ধনের মতো অমন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। শান্তিপূর্ণ এই কারণে, রাস্তার একপাশে লম্বা হয়ে দাঁড়াও, আধাঘণ্টা-একঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকো। তারপর ব্যানার গুটিয়ে হাঁটা দাও। এই হলো শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন।
আমার মনে হচ্ছে, মানববন্ধন করতে করতে আন্দোলনকারী ভাই-বোনরা ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরবেন খুব শীঘ্রই। কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন বলেছিলেন : সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন। আমার মতে- সব পাখি ঘরে আসে ফুরায় আন্দোলন।
আন্দোলনকারী ভাই-বোনদের থেকে হেফাজত-জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন এগিয়ে। দাবি আদায়ের বেলায় রসুনের কোয়া সব জায়গায়। কীভাবে একাত্ম হতে হয় তা জামায়াত-হেফাজত-ইসলামী আন্দোলনের কাছ থেকে শেখার আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, শীঘ্রই তনু হত্যার রহস্য উন্মোচন হবে। তিনদিন আগেও মন্ত্রী ‘শীঘ্রই’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনদিন পরও একই শব্দ। মন্ত্রীর কাছে জানতে ইচ্ছে করছে শীঘ্রই মানে আরো কতদিন!
তনু হত্যার বিচার দাবিতে একদল লোক ঢাকা থেকে কুমিল্লায় রোডমার্চ করে এলেন। তাদের আন্দোলনের এত তেজ, তাদের পায়ে এত জোর যে তারা ১০০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যেতে পারলেন না। রংচঙ করা বাসে চড়ে মাইকে দেশাত্মবোধক গান গাইতে গাইতে তারা আন্দোলন করে আসলেন।
অথচ মাওসেতুং এর নেতৃত্বে লংমার্চ চার হাজার মাইল, চব্বিশ নদী এবং আঠারটি মাউনটেন্ট রেঞ্জ পাড়ি দিয়েছিল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ২:৪০