প্রকৃতির এক অহঙ্কারের নাম এভারেস্ট। ২৯ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় সগর্বে সে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে পদদলিত করতে পারে, এমন সাধ্য কার? কিন্তু মর্ত্যের রাজত্ব যে সেই সৃষ্টিকাল থেকেই মানুষ তার নিজ হাতে নিয়ে বসে আছে। আর মানুষের জন্য অজেয় নয় কিছুই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোটা পৃথিবীই চলে আসছে মানুষের হাতের নাগালে। এভারেস্ট তো কোন ছার! ১৯৫৩ সালের ২৯ মে এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে নামে দুঃসাহসী দু'জন মানুষ এভারেস্টের দম্ভকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছিলেন তার চূড়ায় পা রেখে। সেই শুরু! এরপর থেকে যুগে যুগে দুঃসাহসীদের অদম্য নেশায় পরিণত হয় এভারেস্টকে পদদলিত করার। ২০১০ সালে এসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই সম্মান অর্জন করেন মুসা ইব্রাহীম। এরপর আরও চারজন বাংলাদেশি এই গৌরবের ভাগীদার হন। এ বছর পালিত হলো এভারেস্ট জয়ের হীরক জয়ন্তী। রূপালি পর্দায় এভারেস্ট নিয়ে নির্মিত হয়েছে বহু পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং তথ্যচিত্র। এই বিষয়টি নিয়ে সারাবিশ্বে অসংখ্য ছবি থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে মাত্র পাঁচটি।
ইনটু থিন এয়ার : ডেথ অন এভারেস্ট (১৯৯৭)
১৯৯৬ সালে ৩৬ ঘণ্টার ব্যবধানে এভারেস্টে আট পর্বতারোহীর মৃত্যুকে এ যাবতকালের সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা বলে বিবেচনা করা হয়। এই ঘটনা অবলম্বনে জন ক্রাকাওয়ার লিখেন 'ইনটু থিন এয়ার : এ পারসোনাল অ্যাকাউন্ট অব দ্য মাউন্ট এভারেস্ট ডিজাস্টার' বইটি। পরবর্তীতে রবার্ট মার্কোউইটজ টেলিভিশনের জন্য এভারেস্ট অভিযানের সবচেয়ে দুঃখজনক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
আইএমডিবি
টাচ দ্য টপ অব দ্য ওয়ার্ল্ড (২০০৬)
প্রথম এভারেস্টজয়ী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এরিখ উইহেনমেয়ারের জীবন অবলম্ব্বনে নির্মিত হয়েছে টাচ দ্য টপ অব দ্য ওয়ার্ল্ড চলচ্চিত্রটি। ২০০১ সালে এরিখ উইহেনমেয়ারের এভারেস্ট জয়ের অসাধারণ অর্জন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল পৃথিবীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীসহ সব মানুষকে। মাত্র তিন বছর বয়সে এরিখের চোখে সমস্যা দেখা দেয়। তার কিছু সময় পর আজীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারান এরিখ। কিন্তু আর সবার মতো নিজের শারীরিক এই সীমাবদ্ধতাকে জীবনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে নেননি তিনি। বরং প্রকৃতির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতাকে জয়ের জন্য প্রস্তুতি নেন। টেলিভিশনের জন্য চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন পিটার উইন্থার।
আইএমডিবি
দ্য ওয়াইল্ডেস্ট ড্রিম (২০১০)
১৯২৪ সালে জর্জ ম্যালোরি ও অ্যান্ড্রু আরভিনের এভারেস্ট অভিযান এখনও ঘোলা করে রেখেছে এভারেস্ট জয়ের ইতিহাসকে। ম্যালোরি-আরভিনের এভারেস্ট অভিমুখে যাত্রা এবং হারিয়ে যাওয়া আজও মানুষের মনে প্রশ্ন রেখে গেছে, তবে কি হিলারি ও তেনজিংয়ের আগেই ম্যালোরি-আরভিন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে দেখেছিলেন পৃথিবীটাকে? ৭৫ বছর পর ১৯৯৯ সালে পর্বতারোহী কনরাড এনকার হারিয়ে যাওয়া জর্জ ম্যালোরির মৃতদেহ খুঁজে পান এভারেস্টের ২৬ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে। আবারও হিলারি-তেনজিংকে হটিয়ে আলোচনায় আসেন ম্যালোরি-আরভিন। আট বছর পর ২০০৭ সালে এনকার আবার এভারেস্টে ফেরেন ম্যালোরি রহস্য উদঘাটনের জন্য। ম্যালোরি যে পথে এবং যে উপায়ে এভারেস্ট অভিযানে নেমেছিলেন কনরাড ঠিক একইভাবে শুরু করেন এভারেস্ট মিশন এবং শেষ পর্যন্ত সামিট করতে সক্ষম হন। কনরাডের এই সফল অভিযান ম্যালোরি-আরভিন এর এভারেস্ট জয়ের সম্ভাবনাকে আরো মজবুত করে। তবে দিনশেষে এ সবই অনুমান। সত্যটি হয়তো আর কখনই জানা সম্ভব হবেনা। কারন মানব সভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত এই রহস্য নিয়ে জর্জ ম্যালোরি ঘুমিয়ে আছেন তার প্রিয় এভারেস্টে।
অ্যান্থনি গেফেন পরিচালিত দ্য ওয়াইল্ডেস্ট ড্রিম তথ্যচিত্রটি ম্যালোরির জীবন আর কনরাড এনকারের এভারেস্ট অভিযানের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং সাক্ষাৎকার দিয়ে সাজানো হয়েছে। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ রোমাঞ্চে ভরপুর এই তথ্যচিত্রটি কোন অ্যাডভেঞ্চার মুভির চেয়ে কোন অংশে কম নয়।। তথ্যচিত্রটির ধারা বর্ণনায় ছিলেন লিয়াম নেসন, রালফ ফিনসের মতো তারকারা।
জর্জ ম্যালোরি তখন দু'বার অভিযানে গিয়েও শেষ পর্যন্ত এভারেস্ট সামিট করতে পারেননি। কিন্তু ততদিনে বিখ্যাত হয়ে গেছেন। আমেরিকায় একটি প্রেস কনফারেন্সে তাঁকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন, 'হোয়াই ক্লাইম্ব মাউন্ট এভারেস্ট?'
ম্যালোরির চটজলদি উত্তর, 'বিকজ ইট'স দেয়ার'
এই ঘটনা এবং উক্তির জন্যও তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
আইএমডিবি
স্টর্ম ওভার এভারেস্ট (২০০৮)
১৯৯৬ সালের এভারেস্ট অভিযানের সেই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া পর্বতারোহীদের উদ্ধার অভিযান নিয়ে ২০০৮ সালের ১৩ মে একটি তথ্যচিত্র প্রচার করে আমেরিকান টিভি সিরিজ ফ্রন্টলাইন। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই সিরিজের ২৬তম সিজনের নবম এপিসোডটি প্রচারিত হয় ডেভিড ব্রিশিয়ার্সের তত্ত্বাবধানে। ১৯৮৩ সাল থেকেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্যচিত্র প্রচারের জন্য এই টিভি সিরিজটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
আইএমডিবি
এভারেস্ট (১৯৯৮)
১৯৯৬ সালে একদল অভিযাত্রীর এভারেস্ট অভিযান নিয়ে চুয়ালি্লশ মিনিটের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে। তথ্যচিত্রটিতে পর্বতারোহীদের লম্বা সময়ের প্রস্তুতি, এভারেস্ট অভিযান, অভিযানের পদে পদে বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দেওয়া, চূড়ায় আরোহণ, বেজ ক্যাম্পে ফিরে আসা ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
আইএমডিবি
___________________________________________________
(৬ জুন ২০১৩ দৈনিক সমকালের সাপ্তাহিক বিনোদন পাতা নন্দন-এ প্রকাশিত )
___________________________________________________
গত ১ জুন অনলাইনে এসেছে দেশের প্রথম অনলাইন সিনে ম্যাগাজিন 'মুখ ও মুখোশ'। ত্রৈমাসিক এই ম্যাগাজিনটি প্রতি সপ্তাহে দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্রের খবরাখবর দিয়ে হালনাগাদ হচ্ছে। বিশ্বের সিনেমা বিষয়ক যে কোন তথ্যের জন্য মুখ ও মুখোশ-এ চোখ রাখুন।
ফেসবুকে মুখ ও মুখোশ এর সঙ্গে থাকুন