অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রগুলো:
পর্ব ১
পর্ব ২
বেশ আগে থেকেই অস্কারজয়ী মুভিগুলো টানা দেখে ফেলার একটা ইচ্ছে ছিলো। ভেবেছিলাম একদম ১৯২৯ সালে অস্কার পাওয়া মুভি থেকে সিরিয়ালি দেখা শুরু করে নিয়মিত পোস্ট দিবো। কিন্তু প্রতিবারই কয়েকটি মুভি দেখার পর বিরতি পড়ে যেত। আর মুভিগুলোও সিরিয়ালি দেখা হতোনা । তাই পোস্টও দিলাম ইচ্ছেমতো, কোন সিরিয়াল মেইনটেইন না করেই। এভাবেই দেখি কতদূর যাওয়া যায়...
অস্কারজয়ী ৫টি মুভি নিয়ে আজ থাকছে ৩য় পর্ব-
All About Eve (1950)
Director: Joseph L. Mankiewicz
Starring : Bette Davis, Anne Baxter, George Sanders, Celeste Holm, Thelma Ritter
পদে পদে হঠকারিতা আর কূট বুদ্ধির আশ্রয় নিয়ে একজন সাধারন নারী হয়ে উঠেন অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্রডওয়ে তারকা। খ্যাতনামা ব্রডওয়ে তারকা ম্যাগি একরকম রাস্তা থেকেই ইভকে তুলে নিয়ে আসে। ইভ মিথ্যে পরিচয়ে ম্যাগির সংগে থাকতে শুরু করে। একটা সময় ম্যাগিকে ব্যবহার করেই ইভ ব্রডওয়েতে খ্যাতি লাভ করে। ইভের জনপ্রিয়তা ও মেধা তাকে হলিউডের হাতছানি দেয়। অন্যদিকে ম্যাগির ক্যারিয়ারে শুরু হয় পতন। ছবিটিতে তৎকালীন তারকা জগতের অভ্যন্তরীন নানা দিক উঠে এসেছে।
এই ছবিটি মোট ১৪ টি বিভাগে অস্কার মনোনয়ন পায়। শ্রেষ্ঠ পরিচালক সহ মোট ৬টি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়। অস্কার ইতিহাসে এটিই একমাত্র চলচ্চিত্র যে ছবিতে অভিনয়ের জন্য চারজন নারী অস্কার মনোনয়ন পান। বেটি ডেভিস আর অ্যানি ব্যাক্সটার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে এবং সিলেস্টে হোম আর থেলমা রিটার পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে। মজার বিষয় চারজনের একজনও পুরষ্কার জিততে পারেননি। কিন্তু একেকজন দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে বেটি ডেভিস আর অ্যানি ব্যাক্সটার তো পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন! আরেকটি মজার তথ্য এ ছবিতে মেরিলিন মনোর ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু জনপ্রিয়তা দূরে থাক তখন মনরোকে কেউ ভালো করে চিনতোইনা।
আইএমডিবি
স্টেজেভু লিংক
From Here to Eternity (1953)
Director: Fred Zinnemann
Starring: Burt Lancaster, Montgomery Clift, Deborah Kerr, Donna Reed, Frank Sinatra
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঐতিহাসিক পার্ল হারবার আক্রমনের ঘটনা নিয়ে নির্মিত ক্লাসিক চলচ্চিত্র। যদিও যুদ্ধের চেয়েও এ ছবি অনেক বেশি ভালোবাসার। হাওয়াই দ্বীপে আমেরিকান সেনাবাহিনীর একটি কোম্পানীর ক্যাপ্টেনের স্ত্রী আর তার ইউনিটের সেকেন্ড ইন কমান্ড জড়িয়ে পড়েন প্রেমের সম্পর্কে। ছবিটিতে সেনাবাহিনী ইউনিটের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতি ও দ্বন্দ্বের চিত্রও উঠে এসেছে। এ ছবিতে Burt Lancaster আর Deborah Kerr সমুদ্র সৈকতে চুমো খাওয়া দৃশ্যটি বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দৃশ্য বিবেচনা করা হয়। চলচ্চিত্রটি ১৩ টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে শ্রেষ্ঠ পরিচালক সহ মোট ৮টি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়। ফ্রম হেয়ার টু এটারনিটি ছবিটি শুধু অস্কার মাতায়নি বরং অস্কার পাওয়া চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যবসাসফল একটি ছবি। ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরষ্কার লাভ করেন। মজার বিষয় এ ছবিটিতে ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার অভিনয় করার কথাই ছিলোনা। মাফিযাদের সাথে সিনাত্রার ভালো যোগাযোগ থাকায় সেই প্রভাব খাটিয়ে তিনি চলচ্চিত্রটিতে কাজের সুযোগ পান। এই ছবি মুক্তির প্রায় ২০ বছর পর মুক্তি পায় দি গডফাদার। ধারণা করা হয় হলিউডে মাফিয়াদের প্রভাব তুলে ধরতেই সিনাত্রার এই ঘটনাটিকেই মারিও পূজো আর ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা ব্যবহার করেছিলেন অন্য কায়দায় । এ ছবিতে '৫০ এর দশকের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ 'সুপারম্যান' এর অভিনেতা জর্জ রিভসও একটি চরিত্রে অভিনয় করেন।
আইএমডিবি
স্টেজেভু লিংক
দৃশ্যটা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা
On the Waterfront (1954)
Director: Elia Kazan
Starring: Marlon Brando, Eva Marie Saint, Lee J. Cobb
দি নিউইয়ক সান পত্রিকায় প্রকাশিত ম্যালকম জনসনের ২৪ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবদেন 'ক্রাইম অন দ্য ওয়াটার ফ্রন্ট' এর উপর ভিত্তি করে এ ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়। ম্যালকম জনসন এই প্রতিবেদনটির জন্য ১৯৪৯ সালে লোকাল রিপোটিং বিভাগে পুলিৎজার পুরষ্কার পান। ওয়াটারফ্রন্টে সংঘটিত অপরাধ জীবনের চিত্র নিয়ে এলিয়া কাজান সেলুলয়েডে সৃষ্টি করেছেন অন দ্য ওয়াটার ফ্রন্ট। ওয়টারফ্রন্টের অপরাধীচক্র সম্পর্কে পুলিশ থেকে শুরু করে সবাই ওয়াকবিহাল থাকলেও কারো ক্ষমতা ছিলোনা কিছু করার। ওয়াটারফ্রন্টে কর্মরত মানুষরা প্রতিনিয়ত নীপিড়ন সহ্য করে বেঁচে থাকত। সবাই সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করত। They were playing D & D (Deaf & Dumb)। এতাটই দাপট ছিলো মব বসদের, তটস্থ থাকতো সবাই। ব্রান্ডোও ছিলো সেই দলের মানুষ, ওয়াটারফ্রন্টে খালাসির কাজ করে যে জীবিকা নির্বিহা করে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেনা। তার ভাই অপরাধীচক্রের অন্যতম সদস্য। কিন্তু একটি খুনের ঘটনা আমূলে পাল্টে দেয় ব্রান্ডোর জীবনের গতিধারা। এ ছবির শেষ দৃশ্য একটি এপিক! প্রচন্ড মার খেতে থাকা ব্রান্ডো শেষ পর্যন্ত উঠে দাঁড়ায় । টালামটাল ভাবে হেঁটে যায় তার কর্মক্ষেত্রে। এ যেন নিপীড়িত মানুষের শোষনের দেয়ালকে গুড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে যাওয়া! মার্লোন ব্রান্ডো এ ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে ক্যারিয়ারের প্রথম অস্কারটি জিতে নেন। ছবিটি মোট ১২ টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পরিচালক সহ মোট ৮টি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়। এ ছবিটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতে নির্মিত হয় আমির খান অভিনীত 'গোলাম'।
সিনেমাখোরদের জন্য মাস্ট সী ক্লাসিক মুভি অন দ্য ওয়াটারফ্রন্ট।
আইএমডিবি
স্টেজেভু লিংক
A Man for All Seasons (1966)
Director: Fred Zinnemann
Starring: Paul Scofield, Wendy Hiller, Leo McKern, Orson Welles Robert Shaw, Susannah York
স্যার থমাস মুর ইতিহাসের এক ট্র্যাজিক হিরো। ষোল শতকে তিনি ছিলেন লন্ডনের লর্ড চ্যান্সেলর এবং ক্যাথলিক চার্চের একনিষ্ঠ অনুরাগী। রাজা হেনরি অষ্টম , ক্যাথরিন অফ অ্যারগনকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাথরিন বিবাহিত থাকায় রাজা তাকে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে বলেন। সেজন্য পোপের কাছে রাজা অনমুতি চান। কিন্তু ক্যাথলিক ধর্মমত অনুযায়ী তা সম্ভব ছিলোনা। কিন্তু রাজার বিপক্ষে কেউ কথা বলার সাহস করতেন না। একমাত্র স্যার থমাস এর বিরোধীতা করেন। সাধারন মানুষের কাছে স্যার থমাসের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকায় রাজা বিপাকে পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত রাজা নিজেকে ক্যাথলিক চার্চের প্রধান ঘোষণা করেন। স্যার থমাস তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে ঘোষণা দেন ক্যাথলিক চার্চের প্রধান একমাত্র পোপই হতে পারেন আর কেউ নন। রাজার সঙ্গে মুরের বিরোধ শেষ পর্যন্ত তাকে ঠেলে দেয় করুণ এক পরিণতির দিকে। স্যার থমাস মুর চরিত্রে পল স্কফিল্ড দুর্দান্ত অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটিতে তনি অভিনয়ের আগে একই শিরোনামের মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনয় দেখে সত্যিই মনে হয়েছিলো অভিনয় শিল্পীদের ক্যারিয়ার শুরুর আগে মঞ্চ থেকে দীক্ষা নিয়ে আসা বাধ্যতামূলক করা উচিত। চলচ্চিত্রটি ৮টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ পরিচালক সহ মোট ৬টি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়।
আইএমডিবি
স্টেজেভু লিংক
In the Heat of the Night (1967)
Director: Norman Jewison
Starring: Sidney Poitier, Rod Steiger and Warren Oates
ক্রাইম-মিস্ট্রি ঘরানার এই ছবিটি মূলত আলোচিত হয় মূলত বর্ণবাদবিরোধী মনোভাব প্রদর্শনের জন্য। আফ্রো আমেরিকান একজন ডিটেকটিভ একটি খুনের তদন্তের জন্য মিসিসিপির একটি শহরে আসেন । শহরের মানুষের বর্ণবাদী আচরণের জন্য পদে পদে তিনি বাঁধার সম্মুখীন হন। কিন্তু মেধা আর দক্ষতার জোরে ডিটেকটিভ নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হন। এই ছবিটির দুটো সিক্যুয়েল আছে। They Call Me MISTER Tibbs! (1970) আর The Organization (1971)। জনপ্রিয়তার কারনে ১৯৮৮ সালে এই সিনেমা অবলম্বনে একই শিরোনামে টিভি সিরিজ নির্মিত হয়। চলচ্চিত্রটি সাতটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে মোট ৫টি বিভাগে অস্কার জিতে নেয়।রড স্টেইজার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার অস্কার পুরষ্কার লাভ করেন।
ছবিটি ভালো লাগলেও আমার কাছে একটু ওভার রেটেড মনে হয়েছে।
আইএমডিবি
স্টেজেভু লিংক