somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাঁদের জন্য ভালোবাসা

১৩ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর ঘুরে ফিরে এলো মার্চ মাস। বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা ঘটে এ মার্চ মাসে। তাই এ দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে মার্চ মাস বিশেষ কিছু এবং অত্যন্ত আবেগের। স্মরণ করছি সেই সব শহীদকে যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা।


আমাদের গৌরবময় অধ্যায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ছিলেন ভিনদেশী কিছু মমতাময় মানুষ। আমরা কী ভুলতে পারি সেই ওডারল্যান্ডের কথা? অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হয়েও যিনি এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে পেয়েছিলেন বীর প্রতীক খেতাব।


সরাসরি যুদ্ধ, যুদ্ধের একমাত্র উপায় নয়। প্রমাণ করেছিলেন পন্ডিত রবিশঙ্কর আর বাংলার বন্ধু স্যার জর্জ হ্যারিসন। বাংলাদেশের হতভাগ্য শরণার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে তাঁরা আয়োজন করেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। সেদিন এরিক ক্ল্যাপটন, রিংগোস্টার, লিওন রাসেল, বব ডিলান সহ বিশ্বের তাবৎ নামীদামী শিল্পীদের সংগীতের মাদকতায় ভেসেছিলো লাখ লাখ মানুষ। জোয়ান বায়েজ কনসার্টে আসতে না পারলেও লিখেছিলেন তাঁর অমর ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানটি।

বাংলার সংকট ও মরণোন্মুখ মানুষকে সহায়তা করার জন্য ‘অক্সফাম’ ষাটজনের সাক্ষ্য শীর্ষক একটি দলিল প্রকাশ করে। ষাটজন ভিনদেশী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক, ত্রাণকর্মী, সংগঠক ও টিভি রিপোর্টারের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করার সরেজমিন দলিল এ সাক্ষ্য।


যুদ্ধের সময় আমেরিকান কবি ‘অ্যালেন গিন্সবার্গ’ লিখেছিলেন September on Jessore Road কবিতাটি। যার আলোকে মৌসুমী ভৌমিক গেয়েছিলেন বিখ্যাত ‘যশোর রোড’ গানটি। স্মরণ করতে হয়, ফরাসি লেখক আঁদ্রে মালরোকে, যিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করে এ দেশকে আপন করে নিয়েছিলেন।


মুক্তিযুদ্ধের সময় একদল নিবেদিত প্রাণ সাংস্কৃতিক কর্মী শরনার্থী শিবির ও মুক্তিফৌজ ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে, পুতুলনাচ দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত রাখতেন, শরনার্থীদের বুকে যোগাতেন সাহস। আর দু:সাহসী মার্কিন চিত্রপরিচালক লেয়ার লেভিন ক্যামেরা হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘুরেছেন " মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার" কর্মীদের সাথে সাথে, প্রায় ২০ ঘন্টার ভিডিও ধারণ করেছেন, সেলুলয়েডে লিখেছেন তাদের আরেক যুদ্ধের দিনলিপি। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তিনি ডকুমেন্টারি তৈরী করতে পারেননি। দীর্ঘ দুই দশক পর ১৯৯০ সালে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ নিউইয়র্কে এই ফুটেজ সংগ্রহ করে তৈরি করেন "মুক্তির গান" এবং "মুক্তির কথা"

আমি যে ক্যাম্পাসের ছাত্র তার নাম চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)। আমার ক্যাম্পাসেও রয়েছেন এমন একজন মহৎপ্রাণ ব্যক্তি। তিনি এহতাজ মিয়া। তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেন চুয়েটের কর্মচারী। এহতাজ মিয়ার কারনেই পাকিস্তানি হানাদাররা চুয়েট ক্যাম্পাসে বর্বরতা চালাতে পারেনি। পকিস্তানি হয়েও যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষকে তিনি আগলে রেখেছিলেন। যুদ্ধ শেষে রয়ে গিয়েছিলেন এ বাংলাতেই।

ভালোবাসা। এ ভালোবাসাই বুঝি পারে মানুষকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিভেদকে ভুলে কাছে নিয়ে আসতে। পৃথিবী জুড়ে আজ যুদ্ধ, ধ্বংস আর রক্তের খেলা। তারপরও ভালোবাসা আছে বলেই আমরা বেঁচে আছি। যেসব ভিনদেশী মানুষ এ দেশের ক্রান্তিকালের সময় ভালোবাসা অর মমতা দেখিয়েছিলেন তাঁদের জন্য ভালোবাসা, ভালোবাসা আর ভালোবাসা।#
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:২৯
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×