দুই আলবদর মীর কাশেম আলী আর কামারুজ্জামান নাকি বাকিগো পল্টি দিয়া নতুনভাবে দল গড়ার উদ্যোগ নিছে। যুদ্ধাপরাধী ইমেজ ঝাইড়া এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার এই পরিকল্পনায় তারা নতুন নামে আসতে চায়। আসেন তাদের সাহায্য করি। কি হৈতারে জামাতে ইসলামীর নতুন নাম? মূল নিউজে কিছু ক্লু আছে ফলো কর্তারেন।
মূল নিউজটা এইরকম : জামায়াতে ইসলামীর নাম পরিবর্তন কিংবা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা যায় কি না, তার একটি উদ্যোগ নিয়েছেন এই দলেরই নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। একাত্তর সালে স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য জামায়াতের গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ জনগণের কাছে নেই। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর লেখায় ইসলামী শরিয়তের বিভিন্ন বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, সেই ব্যাখ্যা এদেশের হক্কানি আলেমদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা একে বাতিল মতবাদ বলে মনে করেন। এ ছাড়াও দলের রেজিমেন্টেড পরিবেশ ও দুর্বল নেতৃত্বের জন্য দীর্ঘ ৫০ বছর রাজনীতি করেও দলটি ক্ষমতাসীন হতে না পারার কারণে এর বিকল্প হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।উদ্যোক্তারা ঢাকায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন। এক পর্যায়ে পুরানা পল্টনে অবস্থিত তাদের একটি টেলিভিশন কেন্দ্রের রুদ্ধদ্বার কক্ষে গোলটেবিল বৈঠকও করেন। এতে 'কেন এবং কীভাবে' জামায়াতের নাম পরিবর্তন করে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা যায়_ তা নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা হয়। এ নিয়ে জামায়াতের প্রথম কাতারের নেতৃত্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়। এই উদ্যোগের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সতর্কও করে দেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।চলতি বছরের ৯ জুন ঢাকার একটি বেসরকারি 'থিঙ্ক ট্যাঙ্ক' ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যালোচনা করে একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ দাঁড় করায়। এতে তারা জামায়াত সম্পর্কে মন্তব্য করে এই বলে যে, 'জামায়াত বর্তমানে ইমেজ সংকটে ভুগছে। ভবিষ্যতে এই অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে পারে। এমতাবস্থায় জামায়াতের রাজনীতির প্রতি অনুগত সব ব্যক্তি ও শক্তিকে কৌশল হিসেবে একটি নয়া প্লাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে নতুন নামে রাজনৈতিক দল সৃষ্টির বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে।'ওই থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের এই বিশ্লেষণ ইংরেজিতে অনুবাদ করে ঢাকার কূটনীতিকপাড়ায় বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতের কাছেও উপস্থাপন করা হয়। এই বিশ্লেষণটি জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও দেওয়া হয়। জামায়াত সাংগঠনিকভাবে এই বিশ্লেষণের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি।তবে জামায়াতেরই একটি প্রভাবশালী অংশ বাংলাদেশের রাজনীতির চালচিত্র নামের এই থিসিসটি লুফে নেয়। জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মীর কাশেম আলী এ নিয়ে তার সমমনাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি তাদের সমর্থন পেয়ে এ ব্যাপারে আরো একটি নতুন থিসিস তৈরির দায়িত্ব দেন জামায়াতে তারই অনুগত একটি গ্রুপকে। তারা একটি ব্যাপকভিত্তিক থিসিস তৈরি করে দেখালে মীর কাশেম আলী থিসিসকে 'সামআপ' করতে বলেন। পরে একটি গোলটেবিল বৈঠকে এই থিসিসটি পাওয়ার পয়েন্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।সূত্রটি জানায়, এই গোলটেবিল বৈঠকে মীর কাশেম আলী ছাড়াও জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক বেশ কয়েকজন সভাপতি উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকের এই খবর জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জানতে পেরে মীর কাশেম আলী ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের কাছে কৈফিয়ত তলব করেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করে। মাওলানা নিজামী তাদের বলেন, কার অনুমতি নিয়ে এ ধরনের একটি কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হলো।নিজামী ছাত্রশিবিরের নেতাদের এই বলে বোঝান যে, মীর কাশেম আলী ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সুযোগ-সন্ধানী। তাদের কথায় কান না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। নিজামীর এই কথার জবাব দেন ছাত্রশিবিরের ক'জন সাবেক সভাপতি। তারা নিজামীকে বলেন, তারা সুযোগ-সন্ধানী হলে তাদের জামায়াতের নেতৃত্বে রাখা হলো কেন? এর উত্তর আর নিজামী দিতে পারেননি বলে জানা যায়।গোলটেবিল বৈঠকে যে পাওয়ার পয়েন্টটি উপস্থাপন করা হয়, তাতে মুসলিম দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা হয়, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোনো মুসলিম দেশেই সংসদ নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন লাভ করতে পারেনি। বরং দেখা যায় তাদের প্রাপ্য ভোটের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে।'ওই পাওয়ার পয়েন্টে বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে উপস্থাপন করা বক্তব্যে বলা হয়, 'বাংলাদেশের গত তিন-চার দশকের ইসলামী রাজনীতি প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনতে পারেনি। সেক্যুলার আওয়ামী লীগ, জাতীয়তাবাদী বিএনপি ও ও সুবিধাবাদী জাতীয় পার্টি ঘুরে-ফিরে বিভিন্ন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য দলগুলোর সাংগঠনিক ও জনভিত্তি উল্লেখ করার মতো নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও জামায়াত নির্বাচনী দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছে। বাস্তবতা এমন দাঁড়িয়েছে, সততার সুনাম থাকা সত্ত্বেও বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে জামায়াতের পক্ষে ভবিষ্যতে এককভাবে সরকার গঠনের মতো জনপ্রিয়তা অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয় বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেন।পাওয়ার পয়েন্টে জামায়াতে বেশ কয়েকটি সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয় : এক, একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করায় জামায়াতের প্রথম সারির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা থাকায় সর্বজনগ্রাহ্য জাতীয়ভিত্তিক ইমেজ তৈরি তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রায় চার দশক জামায়াতের বিরুদ্ধে এই প্রচারণা বন্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা আবার শুরু হয়েছে। এতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জামায়াতের ব্যাপারে একটি বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে যুদ্ধাপরাধী বিষয়টি সামনে চলে আসায় এটি আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। এমতাবস্থায় জামায়াতের রাজনৈতিক ইমেজ পুনরুদ্ধার বা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত কঠিন হবে। দুই, দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে রয়েছে দুর্বলতা। তাদের কেউ কেউ বৃদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। নতুন উদ্যমে দলকে এগিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। তিন, জামায়াতের পরিবেশ রুদ্ধদ্বার (রেজিমেন্টেড) ধরনের। এ জন্য ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন উদারনৈতিক ব্যক্তিরা এই দলে প্রবেশ করতে পারে না। দলটিতে সৎ মানুষের অভাব না হলেও দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত ও দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। জামায়াতের বাইরে যেসব সৎ ও দক্ষ লোক রয়েছে, তারা যে কোনো পর্যায়ে জামায়াতে যোগ দিতে উৎসাহবোধ করে না। চার, জামায়াতের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা বর্তমানে আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এতে ভোটারের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। পাঁচ, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে আধুনিক ধ্যান-ধারণার অভাব রয়েছে। সমস্যাসংকুল বাংলাদেশের বেশকিছু মৌলিক সমস্যা রয়েছে। সব দলই এসব বিষয়ে কোনো না কোনো বক্তব্য দিয়ে থাকে। এসব সমস্যার অগ্রাধিকার নির্ণয় করে জামায়াত উত্তম বিকল্প কোনো সমাধানের দিকনির্দেশনা জাতির সামনে পেশ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অসৎ নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে জামায়াতের নেতারা তাদের দলকে জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেননি। ছয়, ভোটের রাজনীতিতে বর্তমানে যে কৌশল নেওয়া হয়, তা নিতে জামায়াতের বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সাত, জামায়াত নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনার আলোকে নিজেদের উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন প্রজন্মের ভোটারদের কাছে নিজেদের কর্মসূচি উপস্থাপনের জন্য যে ধরনের আধুনিক পরিভাষা ব্যবহার করা প্রয়োজন, তা ব্যবহারে জামায়াতের ব্যর্থতা রয়েছে। আট, নীতি ও আদর্শের সঙ্গে আপস না করেও কৌশলগত কারণে উদারনীতি অনুসরণ করে সমর্থনের পরিধি বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি জামায়াতের নেই। নয়, বর্তমানে বিএনপির ভঙ্গুর অবস্থার কারণে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তির ঐক্য ভবিষ্যতে কতটা কার্যকর হবে তা বলা কঠিন।এমনি এক পরিস্থিতিতে বিকল্প রাজনীতির সন্ধানের জন্য মত প্রকাশ করা হয় পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায়। এতে বলা হয়, দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর জামায়াত বাংলাদেশের মাটিতে কাজ করে ব্যাপক সাংগঠনিক ভিত্তি অর্জন করলেও ভোটারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমর্থন তৈরি করতে পারেনি। বিএনপিও এক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ জন্য জনগণ আওয়ামী লীগের বিপরীতে বিএনপি ও জামায়াতের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়।প্রস্তাবিত এই দলটি কেমন হবে তারও একটা চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে পাওয়ার পয়েন্টে। এতে বলা হয়, দলটি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বলে ঘোষণা দেবে। তবে 'ইসলামী রাষ্ট্র' বা 'শরিয়াহ আইন' চালু করার মতো হার্ড লাইন অনুসরণ করবে না। এটি কোনো রেজিমেন্টেড বা ক্যাডারভিত্তিক দল হবে না। এই দলের নামকরণে কোনো ইসলামী শব্দ বা পরিভাষা ব্যবহার করা ঠিক হবে না। প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে তৃণমূল থেকে নতুন নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। এই দলকে পাশ্চাত্যের ধাঁচে অত্যন্ত সুশৃৃঙ্খল একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যায়।উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অঙ্গন ছাড়াও বাংলাদেশেই নাম পরিবর্তন করে জামায়াতের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে কাজ করে আসছে। জামায়াতও মাওলানা আবদুর রহীমের নেতৃত্বে ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ নামে কাজ করেছে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১০ রাত ১০:৩৯