ব্লগার নুভানের রাতের ছবি (নাইট ফটোগ্রাফী) পোস্টে করা মন্তব্যটি পোস্ট আকারে দিলাম। Click This Link
আলোকচিত্র বা ফটোগ্রাফী আজকাল এক ধরণের সৃজনশীল, নান্দনিক ও ক্রিয়েটিভ পর্যায়ের শিল্প। আর এই শিল্পের প্রধান উপকরণ ক্যামেরা। এই শিল্প সৃষ্টিতে যে জিনিষটি খুব গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আলো। এই আলো আর ছায়ার যুগলবন্দীতেই সৃষ্টি হয় অপূর্ব সব শিল্পকর্ম। অতীতে আলোকিচত্রের মাধ্যম ছিল একটাই- সাদাকালো। পরবর্তীতে সাদাকালোর পাশাপাশি রঙিন বা কালার ফটোগ্রাফীর প্রচলন শুরু হয়। বিগত কয়েক দশকে বিশ্বজুড়ে রঙিন আলোকিচত্রের প্রভাবে সাদাকালো ছবির প্রায় বিলুপ্তি ঘটে।
কখনো কখনে আমরা আলোকচিত্র বিষয়ক বইপত্র বা ম্যাগাজিনে যা পড়ে থাকি বাস্তবে তা অনেকক্ষেত্রে ঠিকমতো প্রয়োগ করতে পারিনা বা করার সুযোগ হয়না বা ইচ্ছে থাকলেও হয়ে ওঠেনা। তার কারণ উপযুক্ত উপকরণ। আমরা যারা ফটোগ্রাফী করি তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। প্রয়োজনীয় রসদের অভাব, টেকনিক্যাল বা কারিগরী জ্ঞান ও উপকরণের অভাব বা স্বল্পতা এবং প্রয়োজনে হাতের কাছে তোমন যুৎসই কিছু না পাওয়া। তাই আমরা পরীক্ষানিরিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের উপযোগী কিছু একটা বিকল্প ব্যবস্থা বের করি কিংবা বের করতে বাধ্য হই। আর ক্রমশঃ তা ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। যা হয়তো ফটোগ্রাফীর মূলধারা বা প্রচলিত ব্যকরণের আওতায় পড়েনা। ফটোগ্রাফী এমনিতেই ব্যয়বহুল একটা শিল্প মাধ্যম বিশেষতঃ প্রফেশনাল ফটোগ্রাফী সত্যিই খুবই ব্যয়বহুল একটা ব্যাপার যা আমাদের অনেকের সামর্থের বাইরে।
আমাদের দেশে ফটোগ্রাফীকে প্রফেশন হিসেবে নিয়ে তেমন কেউ বিত্তশালী হয়েছে এমন নজির নেই আবার তেমন কোন বিত্তশালীরা ফটোগ্রাফীকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তেমন নজিরও নেই। উন্নত দেশগুলোতে যেমন ফ্রান্স, বৃটেন, ইতালী, জার্মানী, যুক্তরাস্ট্র ও কানাডায় পেশাদার আলোকচিত্র শিল্পীরা যে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বা এই মাধ্যমকে পেশা হিসেবে নিয়ে যে পরিমাণ আয় বা রোজগার করে তা দিয়ে তারা তাদের প্রয়োজনীয় সব উপকরণই কিনতে। বলতে গেলে তারা ফটোগ্রাফীকে পেশা হিসেবে নিয়ে সুনাম এবং অর্থ দুটোই অর্জন করতে পারে। কিন্তু আমরা সেক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছি। কারণ ফটোগ্রাফীর কাজে ব্যবহৃত সবকিছুই ব্যয়সাপেক্ষ। ক্যামেরা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের লেন্স, ফ্লাশ, ফিল্টার, ট্রাইপড এমন কি ক্যামেরা ক্যারিং ব্যাগ ও ক্যামেরার কভার কিনতেও বেশ পরিমান অর্থ ব্যয় করতে হয়।
একটা ব্যাপারে আমরা কিছুটা এগিয়ে আছি তা হলো নিজস্ব প্রয়োজনে ক্রিয়েটিভিটি ও মেধার ব্যবহার। আমাদের প্রয়োজনের তাগিদেই আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা বের করে নিতে হয়। আলোকচিত্র বা চলচ্চিত্রের বিশ্ববাজারে আমরা আজো সেভাবে জায়গা করে নিতে পারিনি আর সেকারণেই আন্তজার্তিক বাজারে আমাদের ফটোগ্রাফী বা সিনেমাটোগ্রাফী তেমন পরিচিত নয়। এ ব্যাপারে ভারত যথেষ্ট এগিয়ে। মুম্বাইয়ের বেশ কিছু আলোকচিত্রী তাঁদের কাজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন। তবে আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন আলোকচিত্র শিল্পী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছন। এঁদের মধ্যে যাঁরা অগ্রজ তাঁরা হলেন মাহবুব আলম বেগ, নওয়াজেশ আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, শফিকুল ইসলাম স্বপন, শামসুল ইসলাম আলমাজি প্রমুখ। আমার জানা মতে ফ্রান্স প্রবাসী জনাব আনোয়ার হোসেন বেশ কয়েকবার আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফী প্রতিযোগিতার জুরি কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আলোকচিত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যেতে পারে। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করছি ব্লগার জর্জিসের কয়েকটা প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে। নীচের লিংকের ১২ নং কমেন্টের প্রেক্ষিতে পোস্টদাতা নুভান অনেকটাই আলোচনা করেছিলেন। Click This Link
ব্লগার জর্জিস পোস্টের লেখক এবং আমার কাছে কয়েকটা প্রশ্ন রেখেছিল। প্রশ্নগুলো হুবহু এখানে তুলে দিলাম-
১। রাতের বেলা দূরের মুভিং অবজেক্টের (যেমন রাতের ষ্টেজ প্রোগ্রাম বা চলমান গাড়ি) ম্যানুয়াল মোডে জন্য ফ্ল্যাশ কতটুকু দরকারী? যদি ফ্ল্যাশ দিতে হয় সেক্ষেত্রেও কি আইএসও বাড়াতে হবে?
২। রাতের বেলা পোর্ট্রেইট + গুড ব্যাকগ্রাইন্ড ডিটেইলস এর জন্য সিন্ক্রো ফ্ল্যাশ দিলে রেজাল্ট কেমন হয়? যদি ফ্ল্যাশ দিতে হয় সেক্ষেত্রেও কি আইএসও বাড়াতে হবে?
৩। রাতের বেলা ফিক্সড অবজেক্টের ক্ষেত্রে/পোর্ট্রেইটে এপারচার কত রাখা উচিত?
৪। রাতের বেলা আইএসও কি সবসময় বাড়াতে হয়? (এপারচার আর এক্সপোজার কম বাড়াতে কোন সমস্যা নাই, তবে কেন জানি আমার বেশি আইএসও তে ছবি তুলতে ইচ্ছে হয় না)
৫। দিনের বেলা আউটডোরে সিন্ক্রো ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা উচিত কিনা??
৬। দেশে ট্রাইপড পাওয়া যায় কোথায়? দাম কেমন? (ম্যানুয়াল মোডে ট্রাইপড ছাড়া ১সেঃ এক্সপোজার পর্যন্ত ছবি তুলতে পারি...এরচে বেশি এক্সপোজারে হাত কেঁপে যায়, ব্লার আসে)রাতের বেলা ছবিতোলা প্রসঙ্গে-
প্রথম প্রশ্নঃ
রাতের বেলা দূরের মুভিং অবজেক্টের (যেমন রাতের ষ্টেজ প্রোগ্রাম বা চলমান গাড়ি) ম্যানুয়াল মোডে জন্য ফ্ল্যাশ কতটুকু দরকারী?...যদি ফ্ল্যাশ দিতে হয় সেক্ষেত্রেও কি আইএসও বাড়াতে হবে???
উত্তরঃ
এখানে বেশ কিছু ফ্যাক্টর কাজ করছে- ১। রাতের বেলা ২। মুভিং অবজেক্টে ৩। ম্যানুয়াল মোড ৪। ফ্লাশ এবং ৫। আইএসও।
১) রাতের বেলাঃ
আমি বহুদিন যাবৎ সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স (এসএলআর) ক্যামেরা ও ৩৫ মিমি নেগেটিভ ফিল্ম ব্যবহার করে অভ্যস্ত। তাই এখানে ডিজিটাল বিষয়টাকে ইচ্ছে করেই উহ্য রাখলাম। ডিজিটাল ক্যামেরার সাহায্যে একজন অন্ধ মানুষও যে কোন সাবজেক্টকে সামনে রেখে শ্যুট করলে নিঁখুত ছবি উঠবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা এসএলআর ক্যামেরায় অতো সহজে ছবিতোলা সম্ভব নয়। কারণ অটোফোকাস ক্যামেরা বা লেন্স না হলে সাবজেক্টকে নিঁখুতভাবে ফোকাস করতে হবে। এরপর এ্যাপারচার ও শাটারস্পীড প্রয়োজন মতো সেট করে নিতে হয়। আর ফ্লাশ ব্যবহার করলে নির্দ্দিষ্ট সিনক্রোনাইজিং স্পীড-এ সেট করতে হয়।
নেগেটিভ ফিল্ম সাধারণত আলোর উৎসের উপর নির্ভর করে দু'রকমের হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্রান্ডের একটা ধারা ধরে রাখে। যেমন ফুজি- ব্লুইশ টোন, কোডাক- রেডিশ টোন, সাকুরা- হলদে টোন, কণিকা- সবুজাভ টোন। তবে এগুলো এতোই সূক্ষ্ম ব্যাপার যে সহজে ধরা যায়না।
ক) ট্যাংগস্টান টাইপ (রাতের আলোয় ছবি তোলার জন্য)
খ) ডে-লাইট টাইপ (দিনের আলোয় ছবি তোলার জন্য)।
আমরা সাধারণত ডে-লাইট টাইপ ফিল্ম ব্যবহার করে থাকি। এই ফিল্মে দিনের আলোকে সোর্স বা স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ধরে নিয়ে “হোয়াইট ব্যালান্স” (কোন সাদা বস্তুকে পারফেক্ট সাদা দেখানো) করা হয়ে থাকে। আর বিশেষভাবে রাতের ছবি (যারা ন্যাচার বা ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফী বা মহাকাশ বিষয়ক ছবি তুলতে পছন্দ করেন) তোলার জন্য যে নেগেটিভ ফিল্ম ব্যবহার করা হয় তা হলো ট্যাংগস্টান টাইপ যা সাধারণ বাল্বের আলো বা ক্যান্ডেল লাইটকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে নিয়ে “হোয়াইট ব্যালান্স” করা হয়ে থাকে। রাতের আলোর উৎসের তারতম্যের কারণে যেমন- জোছনার আলো, সোডিয়াম আলো বা নিয়ন আলো, ফ্লোরেসেন্ট আলো বা টিউব লাইট, সাধারণ বাল্ব, মোমের আলো কিংবা ফ্লাশ লাইটের আলোর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের ফিল্টার (সাধারণত হালকা থেকে গাঢ় ব্লু ফিল্টার ব্যবহার করা হয়) ব্যবহার করা হয়। ট্যাংগস্টান টাইপ ফিল্মের “হোয়াইট ব্যালান্স”-এ বিভিন্ন রঙের কারণে তারতম্য ঘটে এবং তা এ্যাডজাস্ট করা খুবই কঠিন কাজ। আর যদি তা করা সম্ভব হয় তবে রাতের আলোয় ভাল ছবি পাওয়া সম্ভব। তবে বিপত্তি হলো রাতের আলোর উৎসের বিভিন্নতার কারণে যে কোন ছবির রঙ সম্পূর্ণ পাল্টে যেতে পারে। আর এই পরিবর্তনের কারণ হলো বিভিন্ন রঙের আলোর তরঙ্গের দৈর্ঘের পার্থক্য। বিভিন্ন রঙের আলো ফিল্মের সেনসিটিভিটির উপর প্রভাব ফেলে। তাই বাস্তবে আমরা যে রঙ দেখি রাতের ছবিতে সেই রঙ দেখতে হলে আমাদের উপরের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। রাতের ছবি তোলার জন্য যে আলোর স্বল্পতা মেটানোর জন্য হাই স্পীড (বেশী আইএসও) ফিল্ম ব্যবহার করা হয়ে থাকে যাকে আমরা আইএসও (এএসএ) বলি। রাতের ছবির জন্য ৪০০ বা ৮০০ আইএসও ফিল্ম ব্যবহার করে ভাল ছবি পেতে পারি। তবে যত বেশী আইএসও ভ্যালু হবে ছবির নয়েজ (ডিসটরশন লেভেল) তত বেশী হবে। সেক্ষেত্রে শাটার স্পীড সিলেকশন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফিক্সড্ অবজেক্ট হলে ট্রাইপড অত্যাবশ্যক। মুভিং অবজেক্ট হলে এ্যাপারচারের চেয়ে শাটার স্পীড অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
২) মুভিং অবজেক্টঃ
এখানে কিছু বিষয় খেয়াল করতে হবে।
ক) ক্যামেরা ও সাবজেক্টের মুভমেন্ট কি একই দিকে? সেই ক্ষেত্রে এ্যাপাচার সেটিং নরম্যাল (এফ ৪-৫.৬) ও শাটার স্পীড খুব না বাড়ালেও চলবে। মোটামুট ১/১২৫ থেকে ১/৫০০ এর মধ্যে থাকলেই ভাল হয়। তবে পেছনের দৃশ্য আরো বেশী ভাল পেতে হলে এ্যাপাচার সেটিং এফ ৮ থেকে ১৬ করে নিলে ভাল হয়।
খ) ক্যামেরা ফিক্স কিন্তু সাবজেক্ট মুভ করছে সেই ক্ষেত্রে সাবজেক্টের মুভমেন্ট বা প্রতিসরণ যদি শাটার স্পীডের (১/১২৫ বা ১/৫০০) চেয়ে কম হয় তবে সাবজেক্টের ছবি ভাল আসবে বা ডিসটরশন লেভেল কম হবে। আর যদি সাবজেক্ট খুব বেশী দ্রুতগামী হয় তবে শাটার স্পীড আরো বেশীতে সেট করতে হবে।
গ) ক্যামেরা ও সাবজেক্ট যদি বিপরীতমুখী হয় তবে সেইক্ষেত্রে শাটার স্পীড অবশ্যই দ্বিগুন সেট করতে হবে। এখানে ভাল ছবি বা ডিসটরশন লেভেল কম পেতে হলে নরম্যাল এ্যাপাচার সেটিং -এ (৩.৫-৫.৬, ডেপথ্ ওফ ফিল্ড বেশী পেতে হলে ৮-১৬) রেখে শাটার স্পীড অনেক বেশীতে (১/১০০০-১/২০০০) সেট করতে হবে। এসবই নির্ভর করছে সাবজেক্ট বা অবজেক্ট কতটা দ্রুত বা কতটা স্পীডে মুভ করছে তার উপর। উড়ন্ত মাছি, ফড়িং কিংবা প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর ছবি তুলতে হলে শাটার স্পীড তুলনামূলকভাবে অনেক বেশীতে সেট করতে হবে।
৩) ম্যানুয়াল মোডঃ
আগে যা কিছু বলা হলো সবই মোটামুটি ম্যানুয়াল সেটিং-এর আওতায় পড়ে। তবে ক্যামেরা সম্পূর্ণ বা সেমি-অটো হলে সেক্ষেত্রে ফটোগ্রাফার কি চাচ্ছে বা তার ছবির বিষয় কী বা কেমন হবে তার উপর নির্ভর করে সে এ্যাপাচার প্রাইয়োরিটি বা শাটার স্পীড প্রাইয়োরিটির যে কোন একটা মোড বেছে নিতে পারেন। যেমন এ্যাপারচার কমালে শাটার স্পীড বাড়তে হবে আর এ্যাপারচার বাড়ালে শাটার স্পীড কমাতে হবে। আবার প্রয়োজনে দুটোই কমিয়ে বা দুটোই বাড়িয়ে ছবি তোলা যাবে। সবই নির্ভর করছে একজন ফটোগ্রাফার কি চায় তার উপর। অনেক অটোমেটিক বা ইলেকট্রনিক ক্যামেরায় “পি” সেটিং অপশন থাকে। সেটাকে বলে “প্রোগ্রামড্” সেটিং। সেক্ষেত্রে ক্যামেরার লাইট সেন্সর বা আই নিজে থেকেই বাইরের আলোর উপর নির্ভর করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার পছন্দসই এ্যাপাচার ও শাটার স্পীড দুটোই বেছে নেবে। এখানে ফটোগ্রাফারএর কাজ হলো ফোকাস এন্ড শ্যুট্। আর যদি আটো-ফোকাস ক্যামেরা হয় তাহলে জাস্ট ফোকাস দা সাবজেক্ট এন্ড শ্যুট্। তবে সব সময় ক্যামেরায় ফোকাস করার আগে সুন্দর বা দৃষ্টিনন্দন একটা কম্পোজিশন অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
৪) ফ্লাশ ফটোগ্রাফীঃ
প্রতিটি ক্যামেরায় ফ্লাশের জন্য নির্দ্দিষ্ট একটা সিনক্রোনাইজিং শাটার স্পীড রেঞ্জ (১/৩০ থেকে ১/১২৫) সেট করা থাকে যা ক্যামেরার শাটার ক্লিক করার সাথে সাথে ফ্লাশ জ্বলে ওঠে। প্রতিটি ফ্লাশ নির্দ্দিষ্ট একটা রেঞ্জ পর্যন্ত আলো সরবরাহ করে যার কারণে ছবি পরিস্কার বা অস্বচ্ছ হতে পারে। সাবজেক্ট যত কাছে হবে আলো তত কম লাগবে আর এজন্যে এ্যাপাচার সেটিং করতে হয় উপরের দিকে (এফ ৫.৬-১৬/২২)। আবার দূরত্ব যত বাড়বে এ্যাপারচার সেটিং তত কমবে।
ফ্লাশ ফটোগ্রাফী করার ক্ষেত্রে ক্যামেরার শাটার স্পীড সেটিং বলতে গেলে ফিক্সড। তবে বিভিন্ন ফ্লাশের আলো দেবার ক্ষমতা, ব্যবহারের সুবিধে এবং ছবি তোলার কোয়ালিটি সবকিছউ দামের উপর নির্ভর করে। সাধারণতো ম্যানুয়াল ও অটো দুই ধরণের ফ্লাশ বাজারে পাওয়া যায়। প্রফেশনাল ফটোগ্রাফাদের জন্য আরো বিভিন্ন ধরণের ফ্লাশ পাওয়া যায়। যেমন রিং ফ্লাশ, সিনক্রোনাইজড্ ফ্লাশ, আন্ডার ওয়াটার ফ্লাশ, মিরর ফ্লাশ, টাইম-ডিল্যে ফ্লাশ।
ম্যানুয়াল ফ্লাশে সবসময়ই ক্যামেরা ও সাবজেক্ট উভয়ের দূরত্বের উপর নির্ভর করে এ্যাপারচার সেটিং করতে হয় আর অটো ফ্লাশ তার নিজস্ব “সেন্সর আই” দিয়ে সাবজেক্টের দূরত্ব নির্নয় করে অপটিমাম বা প্রয়োজনীয় পরিমাণ আলো সরবরাহ করে। এতে ছবি ওভার বা আন্ডার হবার আশংকা কম থাকে। তবে ফ্লাশ ফটোগ্রাফীর জন্য ১০০ বা ২০০ আইএসও ফ্লিম ব্যবহার করা ভাল এতে নয়েজ বা ডিসটরশন কম আসে। অত্যাধুনিক বা ডিজিটাল ফ্লাশগুলোতে সরাসরি বা রিফ্লেক্টেড লাইটে ছবি তোলার সুবিধে আছে। কারণ এই ফ্লাশগুলোকে টিল্ট করার বা উপর-নীচ করার সুবিধে আছে। এতে ছবির বা সাবজেক্টের পেছনের শেড বা ছায়াকে এড়ানো যায়।
৫। আইএসওঃ
এটা হলো ফিল্মের সেনসিটিভিটি বা ফিল্মের আলো স্পর্শকাতরতার মাত্রা বা স্কেল। আইএসও যত কম হবে ছবি তুলতে তত বেশী আলো প্রয়োজন হবে আর ছবির রেজ্যুলুশন অনেক ভাল হবে। আর আইএসও যত বেশী হবে তত কম আলোতে ছবি তোলা যাবে তবে এতে ছবির নয়েজ বা ডিসটরশন লেভেল বেশী হবে। সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ আইএসও-র ফ্লিমকে স্ট্যান্ডার্ড বা অল পারপাস ফিল্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে একসময় বাজারে ২৫ থেকে ৮০০ আইএসও লেভেল পর্যন্ত ফিল্ম পাওয়া যেত। ২৫ ও ৬৪ আইএসও ফিল্ম ইদানিং পাওয়া যায়না। এককালে ইস্টম্যান-কোডাকের কোডাকক্রোম বা এক্সট্রাক্রোম যার আইএসও ছিল ২৫ ও ৬৪ এই ট্রান্সপারেন্সী ফিল্মগুলো (পজিটিভ ফিল্ম যা থেকে স্লাইড তৈরী করা যায়) প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারদের খুব পছন্দের ফিল্ম ছিল। এখনো অবশ্য কোডাকক্রোম বা ফুজিক্রোম পজিটিভ ফিল্ম বাজারে খুঁজলে পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ
রাতের বেলা পোর্ট্রেইট+ গুড ব্যাকগ্রাইন্ড ডিটেইলস এর জন্য সিন্ক্রো ফ্ল্যাশ দিলে রেজাল্ট কেমন হয়??...যদি ফ্ল্যাশ দিতে হয় সেক্ষেত্রেও কি আইএসও বাড়াতে হবে???
উত্তরঃ
একটা ফিল্মের আইএসও হলো ফিক্স। তেমন ফ্লাশ ব্যবহার করলে শাটার স্পীডও ফিক্স। সেক্ষেত্রে একমাত্র যা বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে তা হলো এ্যাপারচার। তবে ফ্লাশ ব্যবহার না করে রাতের ছবি তুলতে গেলে এ্যাপাচার ও শাটার স্পীড দুটোই ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরণের ছবি তোলা সম্ভব সেক্ষেত্রে অবশ্যই ট্রাইপড ও শাটার রিলিজ ক্যাবল বা ষেলফ্ টাইমার ব্যবহার করতে হবে। কারণ হাতে নিয়ে লো-শাটার স্পীডে যে কোন ছবি তুলতে গেলেই হাত কাঁপবে বা শাটার টিপতে গেলে ক্যামেরা নড়বেই তাই সেটা ফিক্স বা স্ট্যাবল কিছুর উপর রেখেই ছবি তোলা উচিৎ।
গুড ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য সেই ব্যাকগ্রাউন্ডে আলো কেমন আছে সেটা অবশ্যই দেখতে হবে। যদি আলোর স্বল্পতা থাকে তবে এ্যাপারচার বাড়িয়ে শাটার স্পীড কমাতেই হবে। লং ব্যাকগ্রাউন্ডে ফ্লাশের আলো অকার্যকর। তবে সামনে কোন সাবজেক্ট থাকলে সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে আর তখন প্রয়োজন টাইম-ডিল্যে সিনক্রোনাইজড্ ফ্লাশ। একটা নির্দ্দিষ্ট সময় পরে যা জ্বলে উঠবে। এক্ষেত্রে সিরিজভাবে ফ্লাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। সিরিজ ফ্লাশগুলো একটার আলোতে আরেকটা জ্বলে উঠবে অর্থাৎ অন্য ফ্লশের সেন্সরে এসে আরেকটা ফ্লাশের আলো পড়ার সাথে সাথেই সেই ফ্লাশটি জ্বলে উঠবে। এটা একটা একস্পেন্সিভ এন্ড টাইম কনজ্যুমিং প্রসেস।
তৃতীয় প্রশ্নঃ
রাতের বেলা ফিক্সড অবজেক্টের ক্ষেত্রে/পোর্ট্রেইটে এপারচার কত রাখা উচিত?
উত্তরঃ
দুটো বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। ফিক্স অবজেক্ট হলো যা নড়াচড়া করেনা বা করবেনা। সেক্ষেত্রে ছবি তুলতে হলে ট্রাইপড দরকার হবে এবং এ্যাপারচার নরম্যাল (এফ ৪-৫.৬) সেটিং-এ রাখলেই চলবে। ফ্লাশ ব্যবহার না করলে আলোর স্বল্পতা অনুসারে শাটার স্পীড ৮ থেকে ৩০ সেকেন্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।
আর পোট্রেইট ছবি তুলতে হলে স্পশাল রিং ফ্লাশ বা নরম্যাল ফ্লাশের উপর সফট বা ডিফিউজড্ ফিল্টার ব্যবহার করে (দূরত্বের উপরে আর কি ধরণের লেন্স ব্যবহার করা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে) এ্যাপারচার সেটিং করতে হবে (এফ ৮ থকে ১৬, নরম্যাল ৫০এমএম বা ৮৫এমএম টেলি লেন্স ব্যবহার করলে)।
চতুর্থ প্রশ্নঃ
রাতের বেলা আইএসও কি সবসময় বাড়াতে হয়?? (এপারচার আর এক্সপোজার কম বাড়াতে কোন সমস্যা নাই, তবে কেন জানি আমার বেশি আইএসও তে ছবি তুলতে ইচ্ছে হয় না)
উত্তরঃ
আইএসও হলো ফিল্মের সেনসিটিভিটি। এটা ইচ্ছেমতো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। তবে বিভিন্ন আইএসও মাণ দেখেনিজের পছন্দমতো ফিল্ম ব্যবহার করার সুযোগ আছে। রাতের ছবির জন্য ৪০০ আইএসও বেশী সমাদৃত।
পঞ্চম প্রশ্নঃ
দিনের বেলা আউটডোরে সিন্ক্রো ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা উচিত কিনা??
উত্তরঃ
দিনের বেলা আউটডোর মানে খোলা আকাশের নীচ থেকে শুরু করে গাছের ছায়া বা বীচ সবই হতে পারে। আবার মেঘলা দিনের ঘোলাটে আলোও হতে পারে। যদি পরিস্কার আলো হয় তবে সেক্ষেত্রে ফ্লাশের দরকার হবেনা। আর যদি সোর্স লাইটের বিপরীতে কারো ছবি তোলা হয় তবে ফ্লাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। আর সান-সেটের ছবি তুলতে গেলে কেউ যদি সামনে এসে দাঁড়ায় যেমন বীচে অনেকেই সানসেট পেছনে রেখে নিজের ছবি তুলতে চান সেক্ষেত্রে ফ্লাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ ক্যামেরার সামনে যে দাঁড়িয়েছে তাকে পরিস্কার দেখার জন্য। নয়তো শুধু ছায়ার মতোই তার কায়াই দেখা যাবে। ফ্লাশ ছাড়া স্পষ্ট চেনা যাবেনা। আর শুধু সানসেটের ছবি তুলতে গেলে ফ্লাশের দরকার নেই।
ষষ্ঠ প্রশ্নঃ
দেশে ট্রাইপড পাওয়া যায় কোথায়? দাম কেমন? (ম্যানুয়াল মোডে ট্রাইপড ছাড়া ১সেঃ এক্সপোজার পর্যন্ত ছবি তুলতে পারি...এরচে বেশি এক্সপোজারে হাত কেঁপে যায়, ব্লার আসে)
উত্তরঃ
স্টেডিয়াম ও বায়তুল মোকাররম মার্কেটে পাবেন। দাম ২০০০ থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত আছে। দামটা কোয়ালিটি, সাইজ, ব্রান্ড ও কোন দেশে তৈরী সেটার উপর নির্ভর করে। জার্মানীর তৈরী ট্রাইপডের দাম তুলনামূলকভাবে বেশী।
হাত কোনকিছুর উপর রেখে বা ক্যামেরা কোন কোন কিছুর উপর রেখে শাটার ক্লিক করলে একটু কম কাঁপার সম্ভবনা থাকে।
ছবি সূত্রঃ আমার বউ। ছবিটা অবশ্যই গ্রামে তোলা নয়, এই ঢাকা শহরেই তোলা। সম্ভবত বিয়ের ২/৩ বছর পরে। তখন ঢাকা শহরে নিয়মিত লোড শেডিং হতো। থাকতাম বড় মগ বাজার এলাকায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৪৭