প্রেমের কবিতা
আমি কী প্রেমে পড়েছি? তোমার কী মনে হয়? প্রেম মানেইতো ভালবাসার অন্য এক রূপ। কখনো মুগ্ধতা, কখনো নীরবতা, কখনো অপলক দৃষ্টিতে শুধুই চেয়ে থাকা। মুখ ফুটে ভালবাসার কথা সবসময় বলা হয়ে ওঠেনা। বলা না গেলেও বুঝতে মোটেও অসুবিধা হয়না- ভালবাসা কী, ভালবাসা কাকে বলে? ভালবাসা এমনই এক অনুভূতি যা কোন না কোন ভাবে মনকে ছুঁয়ে যায়, মনকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়। ভালবাসাকে ঘিরেই মনে এক অজানা আবেগে শিহরিত হয়। আমার মনেও তাই হয়। তবে কী আমি ভালবাসায় জড়িয়ে গেলাম! মনের মধ্যে সব উদ্ভট ভাবনা এসে জট পাকায়। তোমাকে ঘিরে আমার সব ভাললাগা কখন যেন ভালবাসা হয়ে যায়। মন চায় তোমার কাছে সেই ভালবাসা ব্যক্ত করি। তোমাকে আমার মনের সব কথা জানিয়ে দিই। কিন্তু কিভাবে জানাবো বলতে পারো? তুমিতো সেভাবে কাছে আসোনি। পাশে বসোনি। নির্জন কোন প্রহর কাটাইনি কখনো দুজনে। তবে কী লিখে জানাবো? চিঠি লিখতে বারণ করেছিলে। বলেছিলে, বাসায় যদি কেউ দেখে ফেলে তবে লজ্জার কোন শেষ থাকবে না। আমি গল্প লিখতে জানিনা। গল্প অনেক সময় সত্যি হয়না। তবে কী কবিতা লিখে জানাবো? এখন কী আমার কবিতা লেখার সময়? আমার ভালবাসার সবটুকু কী কবিতায় প্রকাশ পাবে? তুমি বুঝবে তো!
জানো, সেই কবে থেকেই একটু একটু করে তোমাকে ভাল লাগছিল। তোমার কথা বলার ভঙ্গি, তোমার মুখের হাসি, চোখের চাহনি, ভুরু, নাক, ঠোঁট, গ্রীবা, চিবুকের তিল, লম্বা কালো চুল, গায়ের রঙ, সর্পিল গড়ন, মোহনীয় ভঙ্গিমায় হেঁটে চলা- সবকিছুতেই কেমন যেন ভাললাগা ছড়িয়ে ছিল। টুকরো টুকরো সেই ভাললাগা সমষ্টিগতভাবে ভালবাসারই রূপ যেন। তবে কী সত্যিই আমি তোমাকে ভালবাসি? হয়তো বাসি কিংবা তার চেয়েও বেশী কিছু। আমার সেই ভালবাসার কথা তোমাকে জানাতে চাই। তোমার কাছে সবকিছু প্রকাশ করতে চাই। তাইতো তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখবো ভেবেছিলাম। ভালবাসার সব কবিতা। সামনের কোন বই মেলায় সেই কবিতাগুলো বই আকারে প্রকাশ পাবে। গোটা চল্লিশেক কবিতা এমন আর কি! তোমাকেই উৎসর্গ করবো আমার সেই কবিতার বই। কী দারুন ব্যাপার তাইনা! তুমি সব জেনে যাবে।
বইয়ের শিরোনাম কী হবে, তা’ও ভেবে রেখেছি। মোড়ক উন্মোচনের দিন সবাই উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করবে- আচ্ছা, এই “অনিন্দিতা” কে? আমি মুচকি হসে বলবো- আমার কবিতার নায়িকা। এইসব ছাইপাস ভেবেইতো গত একুশের বই মেলায় একগুচ্ছ কবিতার বই কিনেছিলাম। তোমাকেও দিয়েছিলাম আমার প্রিয় কিছু কবিতার বই। নামী দামী সব কবিদের শ্রেষ্ঠ কবিতার বই থেকে কবিতা পড়ছিলাম রাত জেগে। মায়ের ঘুম ভাঙ্গবে বলে কখনো ছাদে, কখনো বা দরজা বন্ধ করে, বাতি নিভিয়ে মোম জ্বেলে আওড়াচ্ছিলাম আমার পছন্দের সব কবিতা। সুনীল, শঙ্খ, হাফিজ ওঁরা আমায় কবিতা শিখিয়েছিল। সেইতো শুরু- এরপর তোমায় নিয়ে শব্দের খেলা, বাক্যের ফুলঝুরি আর উপমার যত কারুকাজ। বুঝলাম তুমি মানেই কবিতা, তুমি মানেই ভালবাসা। আমি নিজের অজান্তেই কবি হয়ে গেলাম। আসলেই কী কবি? কে স্বীকৃতি দেবে আমাকে? নিভৃতচারী এক কবি হয়ে রয়ে গেলাম সবার অজান্তে- যার কবিতার খোঁজ তুমি ছাড়া আর কেউ জানেনা। আমার কবিতায় তোমাকে খুঁজে পেলাম আকাশের নীলে, মেঘের শুভ্রতায়, সাগরের ঢেউয়ে, পাহাড়ের ঝর্ণায়, নির্জন বালুকাবেলায়, দিগন্তের অস্তাচলে। আমার প্রতি নিঃশ্বাসে, আমার দৃঢ় বিশ্বাসে- তুমিই আমার কবিতা হয়ে গেলে। আমার অপ্রকাশিত বইয়ের প্রতিটি পাতায়, প্রতিটি অক্ষরে শুধু তোমারই নাম। কাল্পনিক এক মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে সবাই জেনে গেল, আমার ভালবাসার একটাই নাম, “অনিন্দিতা”। তুমিই আমার অপ্রকাশিত প্রেমের কবিতা।