পুত্রাজায়ার পথে
জ্বালানী বিষয়ক কোর্স বলে প্রথম দিন বিকেলেই আমাদের নেয়া হলো জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে। ফেডারেল সরকারের সব অফিস যেহেতু পুত্রাজায়ায় তাই লাঞ্চের পর রওয়ানা হলাম পুত্রাজায়ার পথে।
পুত্রাজায়া কুয়ালা লামপুর থেকে ২৫ কিলো মিটার দূরে। পুত্রা অর্থ যুবরাজ। আর জায়া মানে সাফল্য। সবমিলে দাঁড়ায় যুবরাজের সাফল্য। তবে এখানে পুত্রা মানে স্বাধীন মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আবদুল রহমান পুত্রা। এছাড়া জায়া শব্দটি নামের অংশ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। আমাদের এখানে যেমন পুর বা গঞ্জ ( মীরপুর /মোহাম্মদপুর বা পীরগঞ্জ/নারয়নগঞ্জ) ব্যবহৃত হয়। সেখানে আরো আছে সাইবারজায়া, পেটালিংজায়া, আমপাংজায়া, মুডাজায়া, নুসাজায়া ইত্যাদি।
কুয়ালা লামপুর থেকে পুত্রাজায়া যাবার পথে প্রকৃতি আর মানুষের মেলবন্ধনে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে তার তুলনা নেই। ঢোকার মুখে ছোট্ট একটা টিলার মতো জায়গায় লেখা আছে পুত্রাজায়া।
তারপর ভেতরে গিয়ে দেখলাম প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা ভবন। বিভিন্ন বিভাগের সদর দপ্তরের জন্য আলাদা ভবন। প্রতিটি ভবনের স্থাপত্য নকসা আলাদা। আমাদের সাথে থাকা গাইড জানালেন ২৬ রকমের স্ট্রিট লাইট আছে পুত্রাজায়ায়। প্রতিটি ভবন অত্যাধুকিন স্থাপত্যের সাথে মালয়েশিয়া এবং ইসলামী ঐতিহ্যের সংমিশ্রনে করা হয়েছে।
জ্বালানী মন্ত্রনালয়ে
জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে পৌঁছার পর আমরা জানলাম নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে আমরা পৌঁছে গেছি। তাই রিসিপশনে এসে বসলাম সবাই। কেউ কেউ আগে থেকে অপেক্ষা করছিলেন। ভেতর থেকে ডাক এলে ভেতরে যাচ্ছেন। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ আছে কিন্তু লোকজনের প্রবেশ করতে কোন সমস্যা বা বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না।
দেখলাম বেশ বড়ো হরফে মন্ত্রণালয়ের নাম লেখা -
KEMENTERIAN TENAGA, TEKNOLOGI HIJAU DAN AIR
Ministry of Energy, Green Technology and Watar
তাদের দায়িত্ব হলো বিদ্যুৎ, নবায়নযোগ্য জ্বালানী এবং পানিসম্পদ। কারণ পানির সাহায্যে তারা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন। আমাদের দেশে জ্বালানীর মধ্যে আছে তেল, গ্যাস,কয়লা ইত্যাদি। একজন সচিবের নেতৃত্বে একটি বিভাগ। আর বিদ্যুতের জন্য আরেকজন সচিবের নেতৃত্বে আরেকটি বিভাগ। দুটি মিলে একটি মন্ত্রণালয়। ওখানে তেল গ্যাস জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সাথে নেই। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সাথে যুক্ত।
আমাদের ব্রীফ করলেন বিদ্যুতের দায়িত্বে নিযুক্ত এক কর্মকর্তা। পদবী ডেপুটি সেক্রেটারী জেনারেল। আমাদের এখানে সরকারের সর্বোচ্চ কর্মকর্তার পদবী সচিব বা সেক্রেটারী (ভারত ও পাকিস্তানেও তাই) ওখানে বলা হয় সেক্রেটারী জেনারেল। সাথে ছিলেন একজন সিনিয়র আন্ডার সেক্রেটারী ( আমাদের দেশে সিনিয়র সহকারী সচিব) আর দু'জন আন্ডার সেক্রেটারী (আমাদের এখানে সহকারী সচিব)।
জানলাম পেনিন সুলার মালয়েশিয়ার শতভাগ নাগরিক বিদ্যুৎ সুবধা পান। সাবাহ আর সারাওয়াকে সামান্য বাকী আছে। (২% আর ১৪%)
সবচেয়ে যেটা বিস্ময়কর সেটা হলো মালয়েশিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৫৩% প্রয়োজন হয় পিক আওয়ারে। পেনিনসুলার মালয়েশিয়ার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২১৭৮০ মেগাওয়াট। পিক আওয়ারে দরকার হয় ১৩ হাজার মেগাওয়াটের কম। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি সাবাহ সারাওয়াকে। সেখানে চাহিদার কয়েকগুন বেশি উৎপাদনের ক্ষমতা আছে।
কর্মকর্তারা জানালেন জ্বালানী মন্ত্রণালয় ভবনটি গ্রীন বিল্ডিং। জ্বালানী সাশ্রয়ী। দিনের বিলায় বেশিরভাগ কক্ষে বাতি জ্বালাতে হয় না।
সময় ছিলো না বলে সেদিন পুত্রাজায়ার অন্য অংশ ঘুরে দেখা হয়নি। পরে আরো দু'বার নিয়েছে পুত্রাজায়ায়। একবার শহর দেখাতে আরেকবার এনার্জি কমিশনে। তার বিবরন পরে পেশ করবো ইনশাল্লাহ।
(চলবে)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১০:৩৮