বিষণ্ণ বিদায়!
২৮ জুন ২০২৪, ২১ঃ৩৩
সাস্কাচুয়ানের গরম
আমি এখন আছি কানাডার সাচকাচুয়ান প্রভিন্সের প্রাদেশিক রাজধানী রিজাইনা শহরে। সাস্কাচুয়ানের নাম শুনলেই সবার মুখে এক কথাঃ উহ, কি ঠাণ্ডারে বাবা! সবার খালি মেঘে ঢাকা ধূসর আকাশ থেকে টিপটিপ ঝরে পড়া শ্বেতশুভ্র তুষারপাতের কথাই মনে হয়। এখানে আসার আগে আমি যখন ঢাকায় একটা সেমিনারে যোগ দিতে আসা এক কানাডিয়ান যুবকের সাথে পরিচিত হয়ে তাকে বলেছিলাম, ‘আমি তোমাদের দেশে বেড়াতে যাচ্ছি’, তখন সে সাস্কাচুয়ানের নাম শুনে বলে উঠেছিল, ‘ও, দ্যাটস আ ভেরী কোল্ড প্লেস’! তাই শুধু প্রবাসী বাঙালীরাই নয়, খোদ কানাডিয়ানরাও সাস্কাচুয়ানের শীতকে ভয় পায়।
সাস্কাচুয়ানের নাম শুনলেই সবাই শীতের কথা বললেও, আমি আজ বলছি সাস্কাচুয়ানের গরম নিয়ে কিছু কথা। গত বছরেও আমি বছরের এ সময়টাতে রিজাইনাতে ছিলাম। সেবারে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই মোটামুটি শীত সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ, কোন গরম পোষাক ছাড়াই অন্ততঃ দিনের বেলায় শুধু শার্ট প্যান্ট পড়ে ঘরের বাইরে যাওয়া যেত। এবারে একই ধরনের আবহাওয়া পেতে জুন মাসের শেষার্ধ অবধি অপেক্ষা করতে হলো।জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহটাতে এখানকার আবহাওয়া চমৎকার ছিল। দৈনিক তাপমাত্রা মোটামুটি ২৪-১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত থাকতো। ০৮-০৯ তারিখে সেটা বেড়ে ২৮-২১ এর মধ্যে থাকে, যা মোটামুটি সহনীয় (আমার কাছে আরামদায়ক) পর্যায়ে ছিল। কিন্তু গত দু’দিনে সেটা দিনের বেলায় ৩৪ পর্যন্ত ওঠায় দেখি এখানকার লোকজনের হাঁসফাস উঠে গেছে। ঢাকার মত এখানে হিউমিডিটি’র সমস্যা প্রকট নয় (এখন অবশ্য একটু বেশিই চলছে, ৬৯%), তাই শরীর থেকে তেমন ঘাম ঝরে না। তবুও মানুষ গরম গরম করছে। আমরা ঢাকার মানুষেরা তো এইটুকু গরমে এতটা অস্থির হই না। তবে এ সপ্তাহ থেকে আমরাও এখানে দিনের বেলায় এসি ব্যবহার শুরু করেছি। যেসব বাঙালী পরিবার এ সময়টাতে অনেক কষ্ট ও যত্ন করে নিজস্ব এলাকায় শাক-সব্জীর বাগান (কিচেন গার্ডেন) করেছেন, তারা অবশ্য গরমে বেশ উৎফুল্লই আছেন। কেননা এরকম গরম পেলে শাক-সব্জীর গাছপালা লতা-পাতা লকলক করে বেড়ে ওঠে। অবশ্য তার চেয়েও দ্রুত বেড়ে ওঠে আগাছার জঞ্জাল।
১৯৯২ থেকে ২০২১, এই ত্রিশ বছরের গড় আবহাওয়ার ভিত্তিতে রিজাইনার আবহাওয়ার কিছু পরিসংখ্যান এবং পাশাপাশি বাংলাদেশেরও কিছু তথ্য নিম্নে তুলে ধরলামঃ
* উষ্ণতম মাসঃ জুলাই। তাপমাত্রা- ২৬/১২, গড় ১৯ সেঃ।
* উষ্ণতম তিন মাসঃ জুন থেকে অগাস্ট, উচ্চতম/নিম্নতম তাপমাত্রা- ২২-২৬/৯-১২ সেঃ। বাংলাদেশে এপ্রিল-জুন।
* শীতলতম মাসঃ জানুয়ারী। তাপমাত্রা- মাইনাস-৯ থেকে মাইনাস-২০, গড় মাইনাস-১৪। বাংলাদেশেও জানুয়ারী।
* শীতলতম তিন মাসঃ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী, উচ্চতম/নিম্নতম তাপমাত্রা- মাইনাস-৭ থেকে মাইনাস-২০ সেঃ।
* আর্দ্রতম মাসঃ জুন। গড় বৃষ্টিপাতঃ ৭৪..৪ মিঃমিঃ (বাংলাদেশে জুলাই, ৪২৭ মিঃমিঃ।
* সবচেয়ে তীব্র বাতাসের মাসঃ এপ্রিল। বাতাসের গড় গতিবেগঃ ৩৫ কিঃমিঃ/ঘণ্টা। (বাংলাদেশে এপ্রিল, গড় গতিবেগ ৭ মাইল বা প্রায় ১২ কিঃমিঃ/ঘণ্টা)।
* বার্ষিক বৃষ্টিপাতঃ ৩৭১..৪ মিঃ মিঃ, প্রতি বছর। (বাংলাদেশের ২০৩০ মিঃ মিঃ প্রতি বছর)।
গ্রীষ্মকালের ছুটোছুটিঃ
কানাডার অন্যান্য প্রভিন্সের মত এবং বিশ্বের অন্যান্য শীতল দেশের নাগরিকদের মত সাস্কাচুয়ানের লোকজনও গ্রীষ্মকালের দিকে মুখিয়ে থাকে। একটু একটু উষ্ণ আবহাওয়া শুরু হতে থাকলেই তারা প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তেই কোথাও না কোথাও সপরিবারে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এখানে গাড়িতে দুই/তিন ঘণ্টার দূরত্ব-পথের মধ্যে (ড্রাইভিং ডিসট্যান্স) অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে দেখার মত। তার মধ্যে রয়েছে পার্ক, লেক, ক্যাম্পিং এরিয়া পিকনিক স্পট এবং রিসোর্ট। সবখানেই বার-বি-কিউ এর ব্যবস্থাও আছে। আড়াই-তিন ঘণ্টার মধ্যে সাস্কাচুয়ানের আরেক শহর সাস্কাটুনেও যাওয়া যায়। সেখানেও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে বলে শুনেছি। লং উইকএন্ড (তিন দিনের) পেলে কিংবা দুইদিনের উইকএন্ড এর সাথে আরও দুই এক দিনের ছুটি যোগ করতে পারলে কেউ ছোটে পূর্বে, কেউ পশ্চিমে। পূর্বে আছে ম্যানিটোবা প্রভিন্স, সেই প্রভিন্সের আছে প্রধান দুটো শহর দেখার মত। একটা উইনিপেগ, অপরটা Portage la Prairie, ফ্রেঞ্চ নাম। দুটো শহরেরই অনেক পুরনো ঐতিহ্য রয়েছে। গতবছর আমরা এ দুটো শহর বেড়িয়ে এসেছি, এ বছরে যাওয়ার এখনো কোন পরিকল্পনা নেই। আর পশ্চিমে আছে এ্যালবার্টা প্রভিন্স, আর সেই প্রভিন্সে বেশ কয়েকটা বড় শহর রয়েছে, নিজস্ব ঐতিহ্য ধারণ করে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যালগেরী, এডমন্টন, জ্যাসপার, ক্যানমোর, ব্যানফ, ম্যালিন, হিন্টন, ইত্যাদি।
এডমন্টন ও ম্যালিন ছাড়া গতবছর এ্যালবার্টার সব শহরগুলোই ঘুরে এসেছি। ঐ জায়গাগুলো অনেক বড় ও বিস্তৃত, এক বারে সব দেখা সম্ভব নয়। তাই আমরা আবারও সেসব জায়গায় গিয়েছি, তবে গতবারে যা যা দেখেছিলাম, এবারে সেসব বাদে অন্যান্য জায়গা দেখার জন্য এবং জায়গাগুলোর পৃথক পৃথক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। এছাড়া এবারে এডমন্টন শহরেও গিয়েছিলাম। সেখানে আমার এক কলেজ-বন্ধু সস্ত্রীক তার ছেলের বাসায় বেড়াতে এসেছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করা আমার সেই বন্ধুর সাথে ক্ষীণ যোগাযোগ থাকলেও গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের মাঝে কোন দেখা সাক্ষাৎ হয় নাই। সে বারংবার আমাকে ফোন করে কিছুক্ষণের জন্য হলেও তার সাথে একবার দেখা করে যাবার অনুরোধ করে। কিন্তু যাত্রার দিন কিছুটা দেরিতে যাত্রা শুরু করাতে এবং পথে কিছুটা দেরি হবার কারণে আমরা সেদিন বেশ বিলম্বে এডমন্টন পৌঁছি। তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত আর ব্যাটে-বলে হয়নি। আমার আরেক বন্ধুও সস্ত্রীক এডমন্টনে অবস্থান করছিল, কিন্তু আমাদের যাবার কয়েকদিন আগে তাদেরকে কিছুদিনের জন্য আমেরিকায় যেতে হয়েছিল। আমরা যেদিন ক্যালগেরী থেকে ফিরে আসছিলাম, সেদিন সেই বন্ধু আমেরিকা থেকে ফিরে এসে ক্যালগেরীতে অবস্থান করছিল। সেও আমাকে ফোন করে তাদের সাথে দেখা করে যাবার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু আমরা ততক্ষণে ক্যালগেরী থেকে অনেক দূরে চলে এসেছিলাম, আর পাঁচদিনের ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফেরার একটা তাড়া ও ক্লান্তিবোধ ছিল বলে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমাদের একই প্রভিন্সের আরেক শহর সাস্কাটুনে অবশ্য এখনও যাওয়া হয় নাই। গতবারেও যাই নাই। এবারে কানাডা ত্যাগের আগে একবার সেখানেও যাওয়ার আশা ও আগ্রহ রয়েছে।
রিজাইনা, সাস্কাচুয়ান, কানাডা
১১ জুলাই ২০২৪
শব্দ সংখ্যাঃ ৮১১
(তথ্যসূত্রঃ আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যগুলো গুগুল ঘেঁটে সংগৃহীত)
আপডেটঃ ডঃ এম এ আলী গুগুল ঘেঁটে এ বিষয়ে আরও কিছু তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের জানিয়েছেন যে ১৯৮১-২০১০ পর্যন্ত সময়কালে রিজাইনার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩. ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস (জুলাই মাসে) এবং সর্বনিন্ম - 50 ডিগ্রী সেলসিয়াস (তিনি মাস উল্লেখ করেন নি, তবে সম্ভতঃ জানুয়ারী মাসে, কারণ, বছরের ওটাই রিজাইনার সর্বাধিক শীতল মাস)। অর্থাৎ এ তথ্য থেকে এটাই পরিষ্কার হলো যে শুধু শৈত্যেই রিজাইনা এক্সট্রিম নয়, মাঝে মাঝে উষ্ণতায়ও এক্সট্রিম হয়ে থাকে। তাপমাত্রার এই চরম খামখেয়ালিপনা ও এক্সট্রিমিটি আমাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলো অনুসন্ধান করে তার প্রতিকারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। বাংলাদেশে ২০২৩ সালে অত্যধিক গরম ছিল। তবে আবহাওয়াবিদগণ আশঙ্কা করছেন, ২০২৪ সাল ২০২৩ এর চেয়েও উষ্ণতর বছর হিসেবে রেকর্ডে লিপিবদ্ধ থাকবে। হয়তো বাংলাদেশে ২০২৪ সালই এ যাবত রেকর্ডকৃত উষ্ণতম বছর।
তুষারাচ্ছাদিত পাহাড় ও ঝর্না। কলাম্বিয়া আইসফিল্ড যাবার পথে, চলন্ত গাড়ি থেকে তোলা।
২৯ জুন ২০২৪, ১২ঃ৪৪
উঁচু অরণ্য, আকাশ, পাহাড় ও ঝর্না ।
২৯ জুন ২০২৪, ১২ঃ৩৮
উঁচু অরণ্য, আকাশ ও পাহাড়।
২৯ জুন ২০২৪, ১২ঃ৩৬
নীরব, নিঝুম এলাকায় একটি লাস্যময়ী পাহাড়ি ঝর্না, নিম্নে ধাবমান।
২৯ জুন ২০২৪, ১১ঃ২২
প্রায় ১৪০/১৫০ কিঃ মিঃ গতিবেগে ছুটে চলা গাড়ি থেকে তোলা এ ছবিটি Borden নামক একটি এলাকার। এ ছবির সাথে বাংলাদেশের গ্রামীন ছবির মিল রয়েছে।
২৭ জুন ২০২৪, ১৩ঃ২৭
প্রায় ১৪০/১৫০ কিঃ মিঃ গতিবেগে ছুটে চলা গাড়ি থেকে তোলা এ ছবিটি Battleford নামক একটি এলাকার। ছবিটি নর্থ সাস্কাচুয়ান রিভারের। এর সাথেও হয়তো বাংলাদেশের কোন না কোন নদীর মিল রয়েছে।
২৭ জুন ২০২৪, ১৫ঃ৪৮
@Lake Maligne Boat House, Cadomin, Alberta, Canada.
28 June 2024, 17:52
শুধু পাহাড়ের সাদা তুষারাবৃত অংশটুকুকে সবুজ মনে করে নিলে এটাকে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি লেক বলে মনে হতে পারে।
@Lake Maligne, Cadomin, Alberta, Canada.
28 June 2024, 17:52
Lake Maligne এর পথে..... জায়গাটির নাম Robb.
২৮ জুন ২০২৪, ১৩ঃ৪৩
Motor Boat Cruise on Lake Maligne
28 June 2024, 16:47
Lake Maligne এর পথে..... @ক্যাডোমিন, আলবার্টা, কানাডা
২৮ জুন ২০২৪, ১৫ঃ০৭
গ্রীষ্মে রিজাইনা বীচে ছুটে যাওয়া মানুষের ভিড়.....
০৭ জুলাই ২০২৪, ১৫ঃ৪৪
'কমিউনিটি গার্ডেন' এর কার পার্ক এর সতর্কবাণী
১৫ জুলাই ২০২৪, ২০ঃ৩৪
'কমিউনিটি গার্ডেন' এর অভ্যন্তরীণ রাস্তা
১৫ জুলাই ২০২৪, ২০ঃ৪৪
'কমিউনিটি গার্ডেন' এর একটি সব্জী প্লট
১৫ জুলাই ২০২৪, ২০ঃ১৯
'কমিউনিটি গার্ডেন' এ মানুষ নিজেরা যেমন নিজেদের জন্য সব্জী উৎপন্ন করছে, পাখিদের জন্যেও একটি নিরাপদ ঘর তৈরি করে সেখানে জলখাবার ছিটিয়ে রাখছে।
১৫ জুলাই ২০২৪, ২০ঃ৪১
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:০৮