শ্রীমঙ্গলের পথে... ১০ নভেম্বর ২০২২
এর পরের পর্বটি পড়তে পারবেন এখানেঃ শ্রীমঙ্গলে আড়াই দিন - দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব (ছবি ব্লগ)
“দিলিতান্তি ফটোগ্রাফার্স সোসাইটি" (Dilettante Photographers Society) বা সংক্ষেপে DPS নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সাথে আমি সংযুক্ত আছি প্রায় সাত বছর ধরে। আমি একজন নিতান্তই ‘নবিশ’ ফটোগ্রাফার; নিজেকে ‘সৌখিন ফটোগ্রাফার’ বলে আখ্যায়িত করলেও অনেক বাড়িয়ে বলা হবে। ফটোগ্রাফিতে আমার দৌড় সেলফোন ক্যামেরা পর্যন্ত; ফটোগ্রাফি’র খুঁটিনাটি বিষয়াদি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। কলেজে আমার তিন বছরের অগ্রজ মাহবুব শহীদ ভাই এই গ্রুপের একজন এ্যাডমিন। তিনি আমাকে একদিন গ্রুপে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। প্রথমে তো গ্রুপের নাম উচ্চারণ করতেই আমার দাঁত ভাঙ্গার অবস্থা। অভিধান খুলতে বাধ্য হলাম। দেখলাম, গ্রুপের প্রথম শব্দটির উচ্চারণ আমি যেভাবে ভেবেছি, তা ভুল। এ শব্দটির সঠিক উচ্চারণ 'দিলিতান্ত', 'দিলিতান্তে' অথবা ‘দিলিতান্তি’ (সবগুলোই শুদ্ধ উচ্চারণ)। আর শব্দটির অর্থঃ “An admirer or lover of the fine arts; কাব্য বা সঙ্গীত ইত্যাদির অনুরাগী কিন্তু এসব বিষয়ে অগভীর জ্ঞানসম্পন্ন বা এসব বিষয়ে যথেষ্ট অভিনিবেশ নেই, এমন ব্যক্তি”। ভাবলাম, এ সংজ্ঞা তো আমার জন্য খাপে খাপে মিলে যায়। তাই আর দ্বিধা না করে আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম, গ্রুপে যোগদান করলাম। বর্তমানে এ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৪১৬১ জন। সদস্যদের বয়সের রেঞ্জ ২৫ থেকে ৭৫, কমবেশি।
গ্রুপে ছবি পোস্ট করার ব্যাপারে আমার অবদান নেই বললেই চলে। কারণ, এত এত সব চমৎকার ফটোগ্রাফারদের পোস্ট করা ছবির মাঝে আমার অদক্ষ হাতে তোলা ছবিগুলো পাতে তোলার মত হয় না। তাই গ্রুপে নিজের তোলা ছবি পোস্ট করার ব্যাপারে বাধ্য হয়ে আমি যথাসম্ভব সংযত থাকি, যদিও নিজের ওয়ালে অহরহ যা কিছু তুলি, তাই পোস্ট করে থাকি। তবে গ্রুপের সুন্দর সুন্দর সব ছবি দেখে অকাতরে ‘রিয়্যাক্ট’ দেখাতে এবং সময় থাকলে মন্তব্যও করতে মোটেই কার্পণ্য করি না, এবং তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও কালেভদ্রে দুই একটা নিজের তোলা ছবিও পোস্ট করে থাকি। বলা যায়, নিজে ছবি পোস্ট না করলেও আমি অনেকটা নিয়মিতভাবেই গ্রুপ ভিজিট করি, তাই গ্রুপের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত থাকি। ছবি দেখা ছাড়াও গ্রুপের আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করে আমি মুগ্ধ হই, গ্রুপের সদস্যরা মাঝে মাঝেই ছোট ছোট দল বেঁধে এখানে সেখানে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। বিশেষ করে স্মর্তব্য তাদের ‘বৃহত্তর রাজশাহী এলাকা’ সফরের কথা। সেই সফরে আমি যাইনি, তবে সফরকারী সদস্যরা ফিরে এসে তাদের অভিজ্ঞতা, অন্তরঙ্গতা এবং স্থানীয় দুই একজন সদস্যদের আন্তরিকতা, আতিথেয়তা ও সহযোগিতার যে বিবরণ মৌখিকভাবে এবং পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তা শুনে/দেখে আমি যারপরনাই মুগ্ধ হই।
একবার এদের একটি স্থানীয় সফরে আমি যোগদানের অঙ্গীকার করেছিলাম। কিন্তু নির্দিষ্ট তারিখের আগের রাতে আমার এক নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুর কারণে সে সফর থেকে বিরত থাকি। তাই এবারে অক্টোবর মাসের শুরুতে যখন শ্রীমঙ্গল সফরের জন্য রেজিস্ট্রেশনের ডাক এলো, আমি সাথে সাথে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। প্রথমে তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০-২২শে অক্টোবর। কিন্তু হঠাৎ করে একজন সদস্য কভিডাক্রান্ত হওয়ায় তারিখ পরিবর্তন করে ১০-১২ নভেম্বর করা হয়। ঢাকা থেকে আমরা দশজন সদস্য ‘পারাবত এক্সপ্রেস’ ট্রেনযোগে রওনা দিয়েছিলাম, দু’জন শ্রীমঙ্গল এবং মৌলভীবাজার থেকে যোগদান করেছিলেন। মোট ১২ জন সফরসঙ্গীর মধ্যে ৫ জন আমার পূর্ব পরিচিত ছিলেন। বাকি সাতজন নতুন সফরসঙ্গীর সাথে পরিচিত হয়ে সকলের সান্নিধ্যে বেশ আনন্দের সাথে আড়াই দিন শ্রীমঙ্গলে কাটিয়ে এলাম। এই ১২ জনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠের বয়স ২৫, আর সর্বজ্যেষ্ঠর ৭৩। বয়সের এ বিস্তর ব্যবধান যূথবদ্ধ সকলের আনন্দ আহরণে কোন তারতম্য করতে পারেনি, এক অদৃশ্য বিনিসূতোর বাঁধন যেন সবাইকে বেঁধে রেখেছিল। আমরা যারা একটু বয়স্ক ছিলাম, তাদেরকে ট্রেনে ওঠানামা এবং ছোট হলেও লাগেজ ক্যারী করতে কনিষ্ঠরা যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করেছিলেন।
প্রথমদিন গন্তব্যে পৌঁছানোর পর কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে লাঞ্চের পর গিয়েছিলাম কমলগঞ্জে অবস্থিত “লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান” দেখতে। সেখানে আমি আগেও অন্ততঃ তিন/চারবার গিয়েছিলাম, সর্বশেষ গিয়েছিলাম বছর দশেক আগে, ২০১২ সালের দিকে। এবারে রেল লাইনের পার্শ্বস্থিত একটি বিলবোর্ডে চোখ আটকে গেল, যেখানে একটি তিরচিহ্ন দিয়ে লেখা আছেঃ “লাউয়াছড়া বনে ১৯৫৫ সনে শ্যুটিংকৃত অস্কারবিজয়ী হলিউড মুভি ‘Around The World In Eighty Days’ এর শ্যুটিং স্পট (রেল লাইন)”। এই বিজ্ঞাপনটি আগে কখনো দেখেছিলাম বলে মনে করতে পারলাম না। রেললাইন আমার আজন্ম প্রিয় একটি দর্শনীয় বস্তু। সুদূরবিস্তৃত সোজা রেললাইন শেষ পর্যন্ত একটি বিন্দুতে মিলিয়ে যাওয়া দেখতে যেমন ভালো লাগে, বাঁক নেয়া সমান্তরাল দুটো লাইন দেখতেও একইরকম ভালো লাগে। তবে দুটোতে দু’রকমের ভাবনা মনে উদয় হয়। এই ভালো লাগার কারণে লাউয়াছড়ার এই সোজা রেললাইন আমি যতবার এখানে এসেছি, ততবারই বেশ কিছুটা সময় নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছি। লাউয়াছড়া থেকে ফেরার পথে ‘নীলকণ্ঠ’ এর ‘লেয়ার চা’ এর দোকানে কিছু সময়ের জন্য বসেছিলাম। DPS এর স্থানীয় সদস্য অনুতোষ সরকার তথা অন্তু স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঘোষণা দিলেন যে সবার চায়ের মূল্য তিনি মিটিয়ে দিবেন। দলাধিনায়ক মাহবুব শহীদ ভাই সাথে সাথে যোগ করলেন যে চায়ের সাথে ‘টা’ এর মূল্যটা তিনি পরিশোধ করবেন। চা ও টা খেতে খেতে আমাদের মধ্যকার আলাপ সালাপ কিছুক্ষণের জন্য বেশ জমাট বেঁধেছিল।
ঢাকা
১৬ নভেম্বর ২০২২
শব্দসংখ্যাঃ ৬৯০
চলন্ত ট্রেন থেকে তোলা চা বাগানের ছবি
সকাল ১০ঃ৪১, ১০ নভেম্বর ২০২২
পৌঁছে গেলাম শ্রীমঙ্গল....
সকাল ১১ঃ০২, ১০ নভেম্বর ২০২২
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
বিকেল ৩ঃ৩৬, ১০ নভেম্বর ২০২২
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজারে বিরল প্রজাতির একটি "আফ্রিকান টীক ওক" গাছ। বাংলাদেশে এই প্রজাতির গাছ একটি মাত্রই ছিল বলে জনৈক দর্শনার্থী জানালেন।
বিকেল ৩ঃ৪৩, ১০ নভেম্বর ২০২২
সেই গাছটি বজ্রাঘাতে এখন নিষ্প্রাণ!
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
বিকেল ৩ঃ৪৩, ১০ নভেম্বর ২০২২
চলে সমান্তরালে....
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
বিকেল ৪ঃ০৫, ১০ নভেম্বর ২০২২
এক টুকরো ইতিহাস....
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার
বিকেল ৪ঃ০৯, ১০ নভেম্বর ২০২২
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে তখন যারা যারা উপস্থিত ছিলেন (তিন জন অনুপস্থিত), তারা একটা গ্রুপ ছবি তুললেন। এখানে একজনই আছেন, যাকে যে কোন দিক থেকে দেখলেই, তার স্থানের ক্রম একই থাকবে!
বিকেল ৩ঃ৫৩, ১০ নভেম্বর ২০২২
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৬