বিশ্ব বিখ্যাত বক্সিং চ্যাম্পিয়ন, The Butterfly Boxer মোহাম্মদ আলী ক্লে (প্রাক্তন ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়র) আমেরিকার কেন্টাকি রাজ্যের লুইভিল শহরে এক খৃষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪২ সালে। একই রাজ্যে একদা জন্ম নিয়েছিলেন আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনও। যখন তিনি বড় ও কেবল বিখ্যাত হওয়া শুরু করলেন, তখনই ১৯৬৪ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে তাকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাবার জন্য আদেশ দেয়া হলে তিনি একজন ‘conscientious objector’ হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন এবং সে আদেশ পালনে অস্বীকৃতি জানান। সংবিধানে একজন ‘conscientious objector’ হিসেবে এ অস্বীকৃতি জানানোর সুযোগ থাকলেও (a ‘conscientious objector’ is an individual who has claimed the right to refuse to perform a ‘military service’ on the grounds of freedom of thought, conscience or religious faith) তাকে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। ১৯৬৭ সালে হিউস্টন অঙ্গরাজ্যের আদলত কর্তৃক গঠিত এক জুরী বোর্ড মাত্র একুশ মিনিটের বিচারে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের জেল ও দশ হাজার ডলার জরিমানা করে। আলী উচ্চ আদালতে আপীল দায়ের করেন। ১৯৭১ সালে আমেরিকার সুপ্রীম কোর্ট এক সর্বসম্মত রায়ে (৮-০ ভোটে) নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে দেয়। মাঝখানের ঐ পাঁচ বছরের জন্য আলীর সকল শিরোপা কেড়ে নেয়া হয়েছিল। সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পর আলী তার শিরোপাসমূহ ফেরত পান এবং পুনরায় সগৌরবে বক্সিং রিং এ ফিরে আসেন। তবে জেল জরিমানার পরেও আলী জামিনে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে শ্বেতাঙ্গদের প্রতি তার মনোভাব ব্যক্ত করেন এভাবেঃ
“My enemy is the white people, not Viet Cong or Chinese or Japanese. You my opposer when I want freedom. You my opposer when I want justice. You my opposer when I want equality. You won't even stand up for me in America for my religious beliefs—and you want me to go somewhere and fight, but you won't even stand up for me here at home?
—Muhammad Ali to a crowd of college students during his exile from boxing”
আলী পরবর্তী জীবনে শিকাগো, নিউ জার্সী এবং এ্যারিযোনা রাজ্যেও বসতি গড়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, তাকে যেন কেন্টাকির লুইভিল সমাধিক্ষেত্রে দাফন করা হয়। তার আরেকটা পরিচয়, তিনি একজন চারণ কবিও ছিলেন এবং মুখে মুখে উপস্থিত কবিতার চরণ (spoken word poetry) রচনা করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেন। তার লুইভিল সমাধিক্ষেত্রে সমাধিস্থ হবার ইচ্ছেটা ছিল অনেকটা ‘মায়ের ছেলে মায়ের কোলে ফিরে আসা’র মতই। মৃত্যুর আগে তাই তিনি পুনরায় কেন্টাকি রাজ্যেই ফিরে এসেছিলেন। এমনকি তিনি নিজেই তার নিজের সমাধিলিপিও রচনা করে গিয়েছিলেন। ০৩ জুন ২০১৬ তারিখে ৭৪ বছর বয়সে তার মৃত্যুর পর গোটা বিশ্বের প্রায় একশ’ কোটি লোক টেলিভিশনে তার দাফন-কার্য অশ্রুসিক্ত চোখে প্রত্যক্ষ করেন। টুইটারে ১২ ঘন্টা ধরে একনাগাড়ে তিনিই ছিলেন ট্রেন্ডিং টপিক, আর ফেসবুকে কয়েকদিন ধরে। ESPN বিরতিহীন চার ঘন্টা ধরে সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপনমুক্ত কাভারেজ প্রদান করে। এটা ছিল একজন প্রখ্যাত প্রয়াত ক্রীড়াবিদের প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্রীড়া বিষয়ক টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃক প্রদর্শিত এক বিরল সম্মান। লুইভিল এর মেয়র গ্রেগ ফিশার বলেনঃ "Muhammad Ali belongs to the world. But he only has one hometown." বক্সিং রিং এ তার এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী ল্যারী হোমস, মাইক টাইসনসহ আরও অনেকে ‘পল বিয়ারার’ হিসেবে তার লাশ বহন করেন। তার ইচ্ছে অনুযায়ী তার ক্ববরে উৎকীর্ণ রয়েছে তারই রচিত এ কথাগুলোঃ
“Service to others is the rent you pay for your room in heaven." - এ কথাটিকে তিনি ব্যক্তিজীবনেও নিষ্ঠার সাথে পালন করে গেছেন। বক্সিং থেকে যেমন তিনি অনেক আয় করেছিলেন, তেমনি সেই আয়ের অর্থ অকাতরে অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে দানও করে গেছেন। গোপনে তিনি অনেক সাহায্যপ্রার্থী ব্যক্তিদেরকেও দান করতেন।
আর শেষ কথাটাকে উপলক্ষ করেই এ পোস্ট রচিত, আলীর জীবনী আলোচনার জন্য নয়। “Service to others” – তুমুল প্রতিযোগিতাময় এ জীবনে আমরা নিজেদের ভালমন্দ ছাড়াও, এটা নিয়েও যেন কিছু ভাবি।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
ঢাকা
০২ জুন ২০২১