somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নভোনীল এর চতুর্থ পর্ব ....

১৮ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগের পর্বগুলোঃ
সুচনা পর্বঃ নভোনীল (অসম্পূর্ণ লেখা) লিখেছেন রিম সাবরিনা জাহান সরকার
দ্বিতীয় পর্বঃ নভোনীল এর দ্বিতীয় পর্ব লিখেছেন পদ্ম পুকুর
তৃতীয় পর্বঃ নভোনীল (তৃতীয় পর্ব) - লিখেছেন মেঘশুভ্রনীল
পঞ্চম পর্বঃ নভোনীল-৫ লিখেছেনঃ আখেনাটেন
ষষ্ঠ পর্বঃ নভোনীল-৬ লিখেছেনঃ পুলক ঢালী


“হঠাৎ কোন কথা না বলেই নভো হাঁটতে শুরু করলো। তীব্র রোদ, পীচ ঢালা পথটা আজ বেশ তেঁতে উঠেছে”... (তৃতীয় পর্বের শেষ বাক্য)

নভোর সাথে রিক্সা শেয়ার করার ইচ্ছেটুকু পূরণ না হওয়াতে মৃন এমনিতেই একটু খারাপ বোধ করছিল। যার সাথে সে শেষ পর্যন্ত একই রিক্সায় উঠেছিল, সে তার একই বর্ষের সহপাঠী, তবে অন্য বিভাগের। আলাপ পরিচয় তেমন ছিল না আগে থেকে, নতুন করে করতেও তার ভাল লাগছিল না। তার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা, এই তীব্র গরমে ফুটপাথ ধরে পায়ে হেঁটে নভো কতক্ষণে ক্যাম্পাসে পৌঁছাবে! প্রথম ক্লাসটা তার মিস হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই, দ্বিতীয়টাও সময়মত ধরতে পারবে কিনা সে চিন্তাটাই মনে উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল।

রিক্সা শাহবাগ পর্যন্ত ঠিক করা ছিল, ওরা সেখানেই নেমে গেল। মৃন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একাই রিক্সাভাড়া পুরোটাই মিটিয়ে দিল। তার সহযাত্রী যথেষ্ট জোর করলো অর্ধেক ভাড়া শেয়ার করতে, কিন্তু মৃন সেকথা কানে তুললো না। সে সহযাত্রীকে বললো, পাবলিক লাইব্রেরীতে তার একটু কাজ আছে, তাকে সেখানে কিছুক্ষণ বসতে হবে। একথা শুনে সহযাত্রী হাসিমুখে বিদায় নিয়ে এবং তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে একাই আরেকটা রিক্সা নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে যাত্রা শুরু করলো। মৃন পাবলিক লাইব্রেরীতে না গিয়ে চারুকলার সামনে তরুছায়ার নীচে দাঁড়িয়ে গরমে হাঁসফাস করতে করতে তার ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা হাতপাখা বের করে নিজেকে বাতাস করতে লাগলো। গাছের ছায়ায় ফুটপাথ দখল করে চাদর বিছিয়ে এক মামা নামী দামী গল্প উপন্যাসের পাইরেটেড কপি বিক্রী করছিল। মৃন কোন কিছু না ভেবেই বিভূতিভূষণের একটা ‘পথের পাঁচালী’ হাতে নিল।

বই হাতে থাকলেও তার চোখ ঘন ঘন যাচ্ছিল শাহবাগের মোড়ের দিকে। মামার এসিস্ট্যান্ট একটা ছোকরা তাকে বারে বারে জিজ্ঞেস করছিল সে বইটা নেবে নাকি। অর্থাৎ কিনলে কিনো, নইলে বই রেখে দাও। মৃন ভাবলো, এত মোটা একটা বই হাতে রাখতে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। তাই সে ওটা রেখে হাল্কা পাতলা আরেকটি বই হাতে তুলে নিল- ‘শেষের কবিতা’। সাধারণতঃ এসব বই যে দাম প্রথমে চাওয়া হয়, তার অর্ধেক কিংবা কোন কোন সময় এক তৃতীয়াংশ দামেও বিক্রী হয়। এ কথাটা জানা থাকা সত্ত্বেও মৃন ছোকরাটিকে চাহিদাকৃত দামের চেয়েও আরো দশটাকা বেশী ধরিয়ে দিয়ে বললো, পাশের ভ্যানের ফেরীওয়ালা থেকে দুটো আমড়া কিনে খেতে। টাকা বেশী দেয়ার আরেকটা উদ্দেশ্য, আর যেন সে এসে জ্বালাতন না করে।

এবারে তার বারে বারে শাহবাগের দিকে তাকানো সার্থক হলো। সে দূর থেকে দেখতে পেলো, হাল্কা আকাশী রঙের জীন্স এর সাথে গাঢ় নীল রঙের পোলো শার্ট গায়ে চড়ানো লম্বা একহারা গড়নের কেউ একজন আনমনে হেঁটে শাহবাগের মোড় পার হয়ে এগিয়ে আসছে, যে কিনা একটু পরেই তাকে অতিক্রম করবে। তাকে দেখে তার বুকটা ভেতরে ভেতরে ঢিবঢিব করা শুরু করলো, ক্রমান্বয়ে সে আওয়াজ কোন স্টেথেস্কোপ ছাড়াই তার কানে বড্ড বেশী বাজা শুরু করলো। সে লক্ষ্য করে দেখলো, ছেলেটার কানে কোন হেডফোন লাগানো নেই। এটা দেখে সে স্বস্তি পেল, কারণ এতে একডাকে তার মনযোগ আকর্ষণ করাটা সহজ হবে। ‘ক্ষণিকা’য় বসে ছেলেটা তাকে ‘আপনি’ সম্বোধন করেছিল, সে নিজেই আগ বাড়িয়ে তাকে ‘তুমি’ সম্বোধন করতে বলেছিল। কিন্তু কি আশ্চর্য, এখন আবার তাকেই ‘তুমি’ করে ডাকবে কিনা, এ নিয়ে তার কেন যেন নতুন করে সঙ্কোচ হচ্ছিল। ছেলেটি তাকে অতিক্রম করে যাবার ঠিক এক মুহূর্ত আগে সে যথাসাধ্য শক্তি সঞ্চয় করে ডাকলো, “নভো”!

এ ডাক শুনে নভোর চমকে ওঠার কথা। কিন্তু সে এমনভাবে ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকালো, যেন ও জানতো এখান থেকে কেউ ওকে ডাকবে। ওর কপাল জুড়ে ঘামের বড় বড় ফোঁটা জমেছে, লম্বা নাকের ডগায়ও কয়েকটা ঝুলে আছে। ফর্সা মুখে লালচে আভা, চীপের কাছে ও কপালের নীলচে শিরাগুলো আরো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। ঘামে ভিজে গায়ের গেঞ্জীটা গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। ফলে গাঢ় নীল রঙটাকে কিছুটা কালচে মত দেখাচ্ছে। সে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনি সেই তখন থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন’? সাহস করে ‘আপনি-তুমি’র দোলাচল কাটিয়ে উঠে মৃন এক গাল হেসে জবাব দিল, ‘হ্যাঁ, তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম’। তার হাসিতে কাজ হলো। এই প্রথম যেন সে নীল আকাশ জুড়ে দেখতে পেল সেখানে শুধু সাদা সাদা হাসি আর হাসির ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। ওর হাতে ধরা বইটি দেখে নভোও ওর মত করেই হেসে তাকে শুধালো, “আপনি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ‘শেষের কবিতা’ পড়ছিলেন”?
'না, আমি পড়ার ছলে অমিত এর অপেক্ষায় ছিলাম' - এই বলে মৃন সেই 'নিকষ কালো মনি' দুটোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, ‘চলো, এবারে একসাথে হেঁটে ক্লাসে যাই’।


চলবে....

(অনুরোধে একটা আস্ত ঢেঁকি গিলে ফেললাম! গত দু’সপ্তাহ ধরে নভোনীল-মৃন্ময়ী নামের এক যুগলের গল্প ‘পিলো পাসিং’ খেলার মত এ ব্লগে হাত বদল হয়ে ঘুরছে। শেষ পর্যন্ত যে এটা আমার হাতেই এসে চতুর্থ পর্বের জন্য হাঁটু গেড়ে বসে থাকবে তা কে জানতো! গল্পের মূল সূচনাকারীর অনুরোধে হাল ধরতে বাধ্য হ’লাম। বলা বাহুল্য, আমার কাছে প্রবন্ধ কবিতার চেয়ে গল্প লেখা বেশ কঠিন একটা বিষয়, তাও আবার যদি সেটা কাঙ্খিত হয় সীমিত শব্দের সীমারেখার মধ্যে! যাহোক, প্রচেষ্টা আমার, মূল্যায়ন আপনাদের। পাশ ফেলের তো কোন ব্যাপার নেই এখানে, এটাই যা ভরসা!)

ঢাকা
১৮ জুন ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ৭৪৬
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:২৯
৫৭টি মন্তব্য ৫৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×