(কৈফিয়ৎঃ ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ, তাই একটু বেশী ডিটেইলসে লেখা, শব্দসংখ্যাঃ ১৬৯৭। ব্যস্ত পাঠকের কাছে অনেক কথা অপ্রাসঙ্গিক, এবং লেখাটা অতি দীর্ঘ মনে হতে পারে।)
দেখতে দেখতে আমাদের অস্ট্রেলিয়া-নিউজীল্যান্ড সফরের সময়সীমা প্রায় শেষ হয়ে এলো। দুটো দেশেরই মালটিপল এন্ট্রী ভিসা ছিল, অস্ট্রেলিয়ারটার একসাথে তিন মাস করে এক বছরের মেয়াদে, নিউজীল্যান্ড এর টার এক মাস করে চার মাসের মেয়াদে। এসব দেশের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবারের এন্ট্রীর দিন থেকে নতুন করে তিনমাস/ একমাসের হিসেব শুরু হয়। আমি যেহেতু নিউজীল্যান্ড সফর শেষে ১৪ ফেব্রুয়ারীতে পুনরায় অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করেছিলাম, সেই হিসেবে আমি ১৩ মে পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যেতে পারতাম। কিন্তু তাতে বাধ সাধছিল দুটো ভীতি। এক, তিন মাস থাকবো হিসেব করে আমরা আমাদের নিত্যসেব্য কিছু ঔষধপত্র ১০০ দিনের জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। ঔষধ শেষ হয়ে গেলে প্রথমে সেখানে ডাক্তার দেখাতে হতো, পরে তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধ কিনতে হতো। আমরা সে ঝামেলায় যেতে চাইনি। দুই, প্রথমদিকে ধীর গতিতে প্রসারমান হলেও, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় করোনার বিস্তার মারাত্মক দ্রুত গতিতে বেড়ে চলছিল। ‘লকডাউন’ এবং ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ ইত্যাদি শুরু হয়ে যাওয়ায় আর থাকতে মন চাইছিল না।
এ সিরিজের তৃতীয় পর্বে উল্লেখ করেছিলাম, আমরা এসেছিলাম চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন যোগে। তখন সপ্তাহের প্রতিদিনই ঢাকায় এবং মেলবোর্নে এদের ফ্লাইট যাতায়াত করতো। আমাদের দেশে ফেরার টিকেট করা ছিল ১৯ মার্চ। কিন্তু করোনার কারণে যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়াতে ওরা সপ্তাহে ফ্লাইটের সংখ্যা তিনটিতে কমিয়ে আনে। এ কারণে সপ্তাহের যেদিনে ১৯ তারিখ পড়ে, নতুন সময়সূচী অনুযায়ী সে দিনে ফ্লাইটটি ছিল না। এয়ারলাইন থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারীতে আমার ট্রাভেল এজেন্ট এর মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়, ফ্লাইটটি মার্চের ২৩ তারিখে পরিবর্তন করলে আমি সেটা মেনে নেব কিনা। তখনো করোনা পরিস্থিতি তেমন বিপজ্জনক ছিলনা। তাই আমি আরও অতিরিক্ত চার দিন থাকতে পারবো বলে সানন্দে রাজী হয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারি, যদিও করোনার উদ্ভবের জন্য সবাই চীনকে দায়ী করছে, কেবলমাত্র চীনের এয়ারলাইনের টিকেট করেছিলাম বলেই আমরা সেদিন দেশে ফিরে আসতে পেরেছিলাম। কেননা আমরা রওনা হবার দুই দিন আগেই অস্ট্রেলিয়া লকডাউনে চলে যায়। অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির প্রাণভোমরা চীনের হাতে থাকায় ওরা চীনের ফ্লাইটকে ব্যান করতে পারেনি। ঠিক একই কারণে বাংলাদেশও তা পারেনি। এবং এ কারণেই আমরা সেদিন যাত্রা সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম, যদিও বিচিত্র কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে! আল্লাহ রাব্বুল ‘আ-লামীন অন্তর্যামী, ভূত ভবিষ্যৎ সবই তার জানা, এবং তিনি তার বান্দাদের প্রতি করুণাময়, দয়ালু! পেছনের দিকের কথাগুলো স্মরণ করলে এখন এ কথাগুলোই আমার মনে বাজতে থাকে।
আসার আগের কয়েকটা দিন আমাদের বৌমা খুব চাপের মধ্যে ছিল। তার কলেজের টার্ম এন্ড পরীক্ষার খাতা দেখে শেষ করা, রেজাল্ট কম্পাইল করা, ল্যাপটপে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এর এ্যাপস ডাউনলোড করে নিয়ে দূরশিক্ষণ পদ্ধতি প্র্যাকটিস করা, তদুপরি করোনা ভীতির কারণে এখানে সেখানে ছুটোছুটি করে নিত্য প্রয়োজনীয় এটা ওটা জোগাড় করে রাখা ইত্যাদি চাপের কারণে বেচারী হিমসিম খাচ্ছিল। এতদিন একসাথে থেকেছি, ঘোরাফেরা করেছি বলে আমাদের উপর ওর খুব মায়াও জন্মেছিল। তাই আমাদের আসার দিন যত ঘনিয়ে আসছিল, ওর অস্থিরতা ততই বাড়ছিল, আমাদের জন্য সে আর কী কী করতে পারে তা ভেবে ভেবে। ছেলেরও খারাপ লাগছিল, তবে তা সে চেপে রাখতে পারঙ্গম ছিল। আমাদের যেসব খাবার প্রিয়, বৌমা একটা একটা করে সেসব খাবারই প্রস্তুত করছিল আমাদের আসার কয়েকদিন আগে থেকে, তার শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও। তাকে আগেই বলে রেখেছিলাম, আসার আগের রাতে যেন খুব সিম্পল মেন্যু রাখে। সে তাই করেছিল।
রাতে ডিনারের পর ছেলে, বৌমা আর আমি মিলে আমাদের বড় চেক-ইন লাগেজগুলো ওজন করে, তালা লাগিয়ে নীচে নামিয়ে আনলাম। আমাদের বিল্ডিং এর সামনে একটা পার্কিং খালি পেয়ে ছেলে আগেই ওর গাড়ীটা সেখানে পার্ক করে রেখেছিল, যেন সাত সকালে উঠে গাড়ী পার্কিং এবং লাগেজ টানাটানির ঝামেলা না করতে হয়। গাড়ীটা লাগেজসহ সারারাত রাস্তার ওপরেই পার্ক করা ছিল, যা আমাদের দেশে চুরির ভয়ে কল্পনাই করা যায় না। ঘরে ফিরে বৌমা আমাদের দু’জনকে দুটো মাস্ক আর কয়েক জোড়া হ্যান্ড গ্লোভস দিল, পরের দিন যাত্রাপথে ব্যবহারের জন্য। এগুলো হঠাৎ করে বাজার থেকে উধাও হয়ে যাবার কারণে সে দূর দূরান্তের স্টোর থেকে বহু কষ্ট করে সেগুলো সংগ্রহ করে এনেছিল। সকালে সাড়ে সাতটার সময় রওনা হবো, এটা সাব্যস্ত করে সবাই ঘুমাতে গেলাম।
২৩ মার্চে সকালে ফজরের নামায পড়ে ধীরে সুস্থে তৈরী হওয়া শুরু করলাম। একসাথে বসে সবাই নাশতা করলাম। টেবিলে বসে একটু হাল্কা আলাপচারিতা শুরু হলে সবার অলক্ষ্যেই সময় গড়িয়ে গেল। সাড়ে সাতটায় রওনা হবার কথা ছিল, কিন্তু আমাদের নাশতার টেবিলে বসে থাকতেই সাড়ে সাতটা বেজে গেল। সেদিনটা ছিল বৌমার সশরীরে কলেজে উপস্থিত হবার শেষ দিন, তার পরের দিন থেকেই তার ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ শুরু হবার কথা। ছেলের শুরু হয়েছিল এর আগের সপ্তাহ থেকেই। আমাদেরকে বিমানবন্দরে গিয়ে বিদায় জানাতে না পারার জন্য বৌমার আফসোসের সীমা ছিল না। সকাল সাতটা ছাপ্পান্ন মিনিটে আমরা সবাই একসাথে রওনা হ’লাম। বাসা থেকে বৌমার কলেজ- ম্যাকিনন সেকন্ডারী কলেজ, দশ মিনিটের পথ। গাড়ীতে ওঠার পর থেকে বৌমা গিন্নীর একটা হাত নিজের হাতে চেপে ধরে বসে থাকলো। নামার সময় ছলছল চোখে একটা ঢোক গিলে কোনমতে বিদায় নিল। আমি কষ্টে ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। চলে আসার সময় গিন্নী বললো, ও বারবার ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিল। আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের বাসায় কয়েকদিন থেকে যখন কোন আত্মীয় স্বজন বিদায় নিয়ে চলে যেত, আমি এক দৃষ্টিতে তাদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকতাম। আবার আমি যখন কোন প্রিয়জনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতাম, আসার পথে আমি বারবার পেছন ফিরে তাকাতাম। কি অদ্ভূত এক মায়ার জাল স্রষ্টা এ জগতে ছড়িয়ে রেখেছেন, মানুষের মনে মনে!
বৌমা গাড়ী থেকে নেমে যাবার পর থেকে দেখলাম, ছেলে ভারী মনে গাড়ী চালাচ্ছে, প্রায় নিশ্চুপ থেকে। ওর জন্যেও খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমাদেরকে এয়ারপোর্টে বিদায় জানিয়ে ওকে এতটা পথ (৫৫ কিমি) একা একা গাড়ী চালিয়ে ফিরতে হবে। বৌমা সাথে থাকলে তাও দু’জনে মিলে টুকটাক কথা বলতে বলতে ফিরে আসতে পারতো। ও জানে রবীন্দ্র সঙ্গীত আমার কতটা প্রিয়। অন্যদিন আমি ওর পাশে বসলে ও গাড়ীতে রবীন্দ্রসঙ্গীত ছেড়ে দিয়ে গাড়ী চালাতো। আমি একটা স্বর্গীয় অনুভূতি নিয়ে আনমনে তা শুনতাম, আর মাঝে মাঝে আমার মাথাটা স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতায় এমনিতেই নুয়ে আসতো। কিন্তু সেদিন সে রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়লো না, ছাড়লো এফ এম ব্যান্ড রেডিও। সেখানে থেমে থেমে দিনের খবরের শিরোনামগুলো শোনানো হচ্ছিল। আমি শুনলাম, চীনে সেদিনই আবার নতুন করে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। খবরটাকে আমার কাছে অশনি সংকেত বলে মনে হলো, বুকটা সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় কেঁপে উঠলো। বে সাইড বীচ এর সমান্তরাল পথে ছেলে গাড়ী চালাচ্ছিল। আমার বাঁ দিকে পথের সমান্তরালে ছিল বিস্তীর্ণ সৈকত। আমি সেটা খেয়াল করিনি। ছেলে জানে, আমি সাগরের জলরাশি দেখতে ভালবাসি। সে আমাকে বাঁয়ে ইশারা করে বললো, “বাবা, বীচ দেখো”। আমি ঘাড় ঘুরালাম, দেখি অত্যন্ত চমৎকার, সফেন ঢেউ খেলানো সৈকত। গাড়ির সাথে সাথে বীচও এগোচ্ছিল। কেন জানি আমার বুকটা খুব ভারী ভারী মনে হচ্ছিল। আমি ঘাড় ফিরিয়ে নিলাম। একটু দেরী হয়ে গেছে বলে ছেলে গাড়ীর গতিসীমা একটু বাড়াতে চাচ্ছিল। একটু অস্থিরতায় ভুগছিল। আমি তাকে সাবধান করে দিয়ে বললাম, হাতে প্রচুর সময় আছে, গতিসীমা অতিক্রমের প্রয়োজন নেই।
এয়ারপোর্টের কাছাকাছি আসতেই ছেলে আমাদেরকে গাড়ীতে বসেই হ্যান্ড গ্লোভস আর ফেইসমাস্ক পরিয়ে নিয়েছিলো। নয়টা দশ মিনিটে আমরা গাড়ী থেকে নামলাম। ট্রলী টেনে বের করতে গিয়ে দেখি, পয়সা ছাড়া (চার ডলার) সেটা নড়বে না। এর আগে একই বিমানবন্দর থেকে নিউজীল্যান্ড যাবার সময় ট্রলীর জন্য কোন পয়সা দিতে হয়নি, তাই এবারে একটু অবাক হ’লাম। ছেলে পকেট থেকে ওর কার্ড বের করে যথাস্থানে ছুঁইয়ে দিয়ে একটা শেকলবন্দী ট্রলীকে অবমুক্ত করলো। লাগেজগুলো সে একাই টানাটানি করে ট্রলীতে উঠিয়ে দিয়ে বললো, “বাবা, এখানে এক মিনিটের বেশী গাড়ী রাখা যায় না। আমি গাড়ীটাকে একটা পার্কিং এ রেখে পুনরায় এখানে হেঁটে আসবো, এতে বিশ মিনিটের মত লাগবে। হাতে যেহেতু সময় বেশী নেই, তোমরা ইতোমধ্যে একা একাই চেক-ইন এর কাজে অগ্রসর হও”। আমি তাই করলাম। কাউন্টারে অল্প ভিড় ছিল, তাই ছেলে আসার আগেই আমি লাগেজগুলো চেক-ইনে দিয়ে, ট্যাগসহ বোর্ডিং পাস ও পাসপোর্ট হাতে ফিরে পেয়ে একটা খালি আসনে বসার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলাম। এমন সময় ছেলেও ফিরে আসলো। আমরা সবাই একত্রে বসলাম। ততক্ষণে মনিটরে দেখাচ্ছে আমাদের প্লেন এক ঘন্টা বিলম্বে ছাড়বে। মূল সময়সূচী অনুযায়ী গুয়াংঝুতে আমাদের মাত্র তিন ঘন্টার বিরতি ছিল। সেটা থেকে আরো এক ঘন্টা কমে যাওয়াতে মনে মনে সন্দেহ হতে থাকলো, গুয়াংঝুতে আমাদের দৌড়োদৌড়ি পড়ে যাবে।
প্লেন বিলম্বে ছাড়বে, এটা জানার পরেও আমাদের সবার মনে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছিল। ফলে, একসাথে যে সবাই বসে খানিকক্ষণ গল্প সল্প করবো, সেটা না আমার, না ছেলের, কারোই ভাল লাগছিল না। একসময় সে বললো, “তোমরা অগ্রসর হও”। হাঁটতে হাঁটতে সেই স্থানটিতে এলাম, যেখান থেকে দর্শনার্থীরা আর এগোতে পারেনা। মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে শারিরীক আলিঙ্গণের মাধ্যমে যাত্রীদেরকে তাদের থেকে বিদায় নিতে হয়। ছেলে পা ছুঁয়ে সালাম করলো। আমি বুকে টেনে নিলাম। ওর মাকে সালাম করে যখন ও উঠে দাঁড়ালো, তখন ও মুছে ফেলার আগেই আমি ওর চোখে অশ্রুর ফোঁটা দেখে ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলাম। ওরা বড় হবার পর কোনদিন আমি ওদেরকে কাঁদতে দেখিনি। শুধু বড় ছেলেকে দেখেছিলাম একদিন, ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রসূতি কক্ষে ওর কন্যা সন্তানের জন্মের ক্ষণে, তবে সেটা ছিল আনন্দাশ্রু! আর সেদিন দেখলাম মেজ ছেলেকে।
বিদায় নিয়ে আমরা আর্চওয়ে দিয়ে প্রবেশ করে ইমিগ্রেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। আবার সেই স্বভাবসুলভ পিছু ফিরে তাকানো। দেখি ছেলে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। একটু অগ্রসর হতেই এক ইউনিফর্মধারী মহিলা আমাদেরকে একটা কোণায় ডেকে নিয়ে সেখানে রাখা একটা বেঞ্চির উপর আমাদের ক্যারী অন লাগেজগুলো রাখতে বললেন এবং আমাদেরকে পরস্পর থেকে একটু দূরত্বে থাকতে বললেন। একটাতে তালা লাগানো ছিল, সেটার চাবি চাইলেন। চাবি গিন্নীর কাছে ছিল, তিনি এগিয়ে এসে চাবিটা দিয়ে নির্দেশানুযায়ী আবার দূরত্বে চলে গেলেন। মহিলা নিজ হাতে চাবি খুলে সেখানে হাতে রাখা একটা বোতল জাতীয় পাত্র থেকে কিছু স্প্রে করলেন। দেখলাম, উপরের কিছু কাপড় ভেজা ভেজা হয়ে গেল। আমার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগটাতেও (গত বছরে কাশ্মীর ভ্রমণে যাবার সময় দিল্লি বিমান বন্দরে হারিয়ে যাওয়া এবং ফিরে পাওয়া সেই কালো ব্যাগটা!) স্প্রে করে আমাদেরকে সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে ইমিগ্রেশনের দিকে অগ্রসর হতে ইশারা করলেন। আমরা ইমিগ্রেশনে যাবার পথে পুনরায় পিছু ফিরে তাকালাম। দেখি, ছেলে তখনো সেখানে দাঁড়িয়ে। অনেকক্ষণ ধরে আমরা দু’জনে হাত নাড়ালাম। আমি চশমার কাঁচ মুছে নিয়ে বাঁয়ে মোড় নিলাম।
ছেলে বলেছিল, আমরা বোর্ডিং গেইটে না পৌঁছা পর্যন্ত সে এয়ারপোর্টেই অপেক্ষা করবে। প্রতিটি স্টেজে আমরা যেন সেলফোনে তাকে আমাদের অগ্রগতি জানাই। এজন্য সে তার মায়ের সেলফোনে অস্ট্রেলিয়ান সিম টা রেখে দিয়েছিলো। আমারটাতে সে গ্রামীণফোনের সিমটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল, যেন আমি ঢাকায় নেমে সহজেই ছোট ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। কঠোর ইমিগ্রেশন ও সিকিউরিটি চেকিং এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। সে তুলনায় বেশ সহজেই সে বৈতরণী পার হয়ে এলাম বলে মনে হলো, শুধুমাত্র সবকিছু খুলে ট্রে/বক্স এ রেখে স্ক্রীনিং এর পর আবার সবকিছু সংগ্রহ করে পরে নেওয়ার ঝামেলাটুকু ছাড়া। আমরা ফোন করার আগেই ছেলে ফোন করে অগ্রগতি জানতে চাইলো। আমরা তখন বোর্ডিং গেইটের পথে অগ্রসরমান। ওকে তাই বললাম। বোর্ডিং এরিয়ায় আসন গ্রহণ করার পর চায়না সাউদার্ন এর কাউন্টার থেকে ঘোষনা শুনতে পেলাম, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী গুয়াংঝুর বাইয়ুন বিমান বন্দরে কিছু “কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়া চলছে”। এ কারণে প্লেন এক ঘন্টা দেরীতে ছাড়বে। ঘোষণাটি শুনে বুঝতে পারলাম, কপালে ভোগান্তি আছে। ছেলেকেও ঘোষণাটির কথা জানালাম। তার কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলাম, সেও শঙ্কিত। তাকে বাড়ী ফিরে যেতে বললাম। আর মনে মনে সাহস সঞ্চয় করে নিজেকে বলতে থাকলাম, “carpe diem”, “carpe diem”!
ঢাকা
৩১ মার্চ ২০২০
শব্দসংখ্যাঃ ১৬৯৭
আমার রাতের আকাশ দেখার জায়গা। ছবি তোলার জন্য আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল। আলো নেভানো থাকলে আকাশ দেখার জন্য খুব সুন্দর জায়গা।
প্রিয় জায়গা
আমার লেখার টেবিল
বৌমার কলেজ
নিবিষ্ট মনে...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৮