সবাইকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের লেখাটা। আজ থেকে বছর খানেক আগে একদিন ল্যাপটপে কিছু ডাটা নিয়ে কাজ করছিলাম। কাজ করতে করতে একসময় হাঁপিয়ে উঠে কিছু ভাল কবিতা পড়ার আশায় একটা কবিতার ওয়েবসাইট খুঁজতে শুরু করি। একটা লিঙ্ক ধরে সামহোয়্যারইনব্লগে প্রবেশ করি। এখানে এসেই কয়েকটা ব্লগ পড়ে ফেলি এবং সেগুলো পড়া বেশ উপভোগ করি। সাথে সাথেই মনস্থির করে ফেলি এখানে লেখার। তার কয়েকদিন পর ঠিক আজকের এই দিনের রাত ১১টা ২৬ মিনিটে সামহোয়্যারইনব্লগে প্রকাশিত হয় আমার প্রথম কবিতা, বক্ষমাঝে থাকবে তুমি। খুব দ্রুতই, মাত্র কয়েকটা দিনের মাথায় ই-মেইলে নিশ্চয়তা পাই যে আমি একজন “নিরাপদ ব্লগার” এবং আমার লেখা প্রথম পাতায় প্রকাশ পাবে।
সেই থেকে শুরু, আজ অবধি প্রায় নিয়মিতভাবেই লিখে চলেছি। মনের আনন্দে লিখি, নিজের কথাকে, ভাবনাকে, অনুভূতিকে অন্য আরও অনেকের সাথে শেয়ার করার অভিপ্রায়ে লিখি, কখনোবা স্রেফ মস্তিষ্কের আবদ্ধ ভাবনা-চিন্তাকে মুক্ত মিডিয়াতে প্রকাশ করার জন্যই লিখি। কে পড়বে বা না পড়বে, সেটা মোটেই মাথায় রাখিনা। আমার প্রথম লেখাটি দুই মাসেরও বেশী সময় ধরে মন্তব্যহীন পড়েছিল। ১৭ই নভেম্বর ২০১৫ তারিখে এহসান সাবির প্রথম মন্তব্য করেন বক্ষমাঝে থাকবে তুমি কবিতাটার উপর। এরপর তিনি অবশ্য আমার প্রথম পাঁচটি কবিতার প্রত্যেকটিতে মন্তব্য করেছেন। আমার দ্বিতীয় কবিতা- পূর্ণতা প্রথমটার পরের দিনই প্রকাশ পায় আর প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মাথায় প্রামানিক সেটার উপর প্রথম মন্তব্য করেন। সেই হিসেবে সামহোয়্যারইনব্লগে প্রকাশিত আমার কোন লেখায় প্রথম মন্তব্যটা পাই আমি প্রামানিক এর কাছ থেকেই, আমার দ্বিতীয় লেখায়। এজন্য আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। আমার কোন লেখায় প্রথম লাইক টা আমি পেয়েছিলাম না মানুষী জমিন এর কাছ থেকে। তিনি আমার প্রথম লেখাটাতে (বক্ষমাঝে থাকবে তুমি) কোন মন্তব্য না করে নীরবে লাইক দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। আমার সবচেয়ে পুরনো লেখা যেটার উপরে আমি আজ পর্যন্ত কারো মন্তব্য পাই নাই, সেটা হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তে প্রকাশিত আমার কবিতা সরবে নীরবে। আমার একটা অন্যতম প্রিয় কবিতার এই দুর্দশা দেখে হতাশ হয়ে অবশেষে প্রায় সাত মাস পরে আমি নিজেই সেখানে একটা মন্তব্য রেখে এসেছি, কবিতাটিকে বড় ভালবেসে। এর পরের কবিতা ঘুম দিয়েছে আড়ি এর ব্যাপারেও একই কথা বলা যায়।
আর সবার মত নিজের লেখায় মন্তব্য পেলে আমারও খুব ভাল লাগে। এ্যপ্রিসিয়েশন কে না চায়, বলুন! কিন্তু আমার প্রথম দিকের কবিতাগুলো যখন খুবই স্বল্প পঠিত থেকে যাচ্ছিল, তখন একদিন কবিতা বাদ দিয়ে ব্লগর ব্লগর টাইপের অন্য একটি লেখা দিলাম, নাম- অজানা অদেখা কোন এক নাজমা বেগম এর সমাধিতে....। দেখলাম, ওটা বেশ সমাদৃত হলো (২৭২ বার পঠিত, ৮টা ‘লাইক’)। সেখানে ব্লগার কাল্পনিক_ভালোবাসা মন্তব্য করেছিলেনঃ ভাল লাগলো। আপনার কাছ থেকে নিয়মিত আরো লেখা চাই। শুভেচ্ছা জানবেন। তার এ মন্তব্য আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার কয়েকদিন পর "দুটি ক্ষুদ্র সাফল্যের কথা" শিরোনামে আরও একটি একই ধরণের লেখা পোস্ট দিলাম, সেটাও মোটামুটি সাদরে গৃহীত হলো (১০২ বার পঠিত, ৪টি ‘লাইক’, ১টি ‘প্রিয়’তে)। তারও কিছুদিন পর অজানা পথে অচেনা সাথী, স্মৃতির আকরে আজো আছে গাঁথি......অজানা পথে অচেনা সাথী, স্মৃতির আকরে আজো আছে গাঁথি নামে আরেকটি ব্লগ লিখলাম, সেটা পাঠকপ্রিয়তা পেল (২০৮ বার পঠিত, ৬টি ‘লাইক’)। এই গদ্য লেখাগুলো পাঠকপ্রিয়তা পাবার পর পরই লক্ষ্য করলাম, আমার কবিতার পাঠক সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। লেখালেখির ব্যাপারে কবিতাই যদিও আমার প্রথম প্রেম, তথাপি আমি কবিতার পাশাপাশি কিছু গদ্য লেখাও চালিয়ে যেতে থাকলাম। “আমার কথা” নামে আমার একটা আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা লিখতে শুরু করলাম। সেটাতেও অনেকের বেশ আগ্রহ আছে বলে লক্ষ্য করলাম। এই সিরিজে মোট ৩২টি পর্ব লিখে আপাততঃ ক্ষান্ত দিয়েছি। “আমার কথা-৬” এ প্রথম পাঠক সংখ্যা ৫০০ অতিক্রম করে, পরে আরো কয়েকটা পর্বে তা ছাড়িয়ে যায়। ৫০০ সংখ্যাটাকে আমি হ্রস্বতম মাইলফলক ধরেছি। আমি জানি এখানকার জনপ্রিয় ব্লগারদের লেখা কয়েক হাজারবার পঠিত হয়, সেখানে এমনকি মন্তব্যের সংখ্যাও হাজার অতিক্রম করে এবং ‘লাইক’ এর সংখ্যা কয়েকশ’ তে গড়ায়। তবুও আমি আমার এ ক্ষুদ্র মাইলফলক স্পর্শ করতে পেরে যারপরনাই সন্তুষ্ট।
এর মধ্যে চলে এলো অমর একুশে বইমেলা। এবারের বইমেলায় আমার প্রথম দুটো বই প্রকাশিত হয়েছিলঃ কবিতার বই “গোধূলীর স্বপ্নছায়া” এবং আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা “জীবনের জার্নাল”। প্রতিদিন না হলেও চেষ্টা করেছি বেশ ঘন ঘনই বইমেলায় উপস্থিত থাকতে। সেখানকার অভিজ্ঞতা এবং বইমেলার টুকিটাকি নিয়ে লেখা শুরু করলাম অনিশ্চিত তীর্থযাত্রা নামে আরেকটা সিরিজ। মোট দশটি পর্বে লেখা এ সিরিজটি যতটুকু পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে, তাতে আমি মোটামুটি সন্তুষ্ট, যদিও এখানকার জনপ্রিয় ব্লগারদের লেখার তুলনায় সেটা অতি নগন্য মাত্র। ব্লগার মাহমুদ ০০৭ এবং অপর্ণা মন্ময় আমাকে বেশ কয়েকবার বলেছিলেন গল্প লেখা ট্রাই করতে। তাদের হয়তো আশা ছিল, গল্প লেখার চেষ্টা করলে আমি হয়তো সফলতা পেতে পারি। আমি তাদের এই আশাব্যঞ্জক অনুরোধে ভীষণ উৎসাহিত বোধ করি। অবশেষে গত মে মাসে “একটি অসম্পূর্ণ গল্পের গল্প” নামে একটা গল্প লিখে এখানে প্রকাশ করি। আমার চেনাজানা কয়েকজনকে অনুরোধ করেছিলাম গল্পটা পড়ে একটা সত্যনিষ্ঠ ফীডব্যাক আমাকে দিতে। তাদের ফীডব্যাক পেয়ে বুঝলাম, গল্পটা একেবারে ফ্লপ না করলেও, গল্প লেখার কম্ম আমাকে দিয়ে হবেনা। এই ব্লগে গল্পটা ৬৩১ বার পঠিত হয়েছে, ৪৯টি মন্তব্য পেয়েছে এবং ১৪টি ‘লাইক’ পেয়ছে; তথাপি আমার মনে হয়েছে বেশীরভাগ মন্তব্য এবং ‘লাইক’ই নিতান্ত সৌজন্যমূলকভাবে দেয়া হয়েছে। একটি অসম্পূর্ণ গল্পের গল্প
এই হলো আমার এক বছরের আমলনামা। এই এক বছরে আমি ২৩৬টি ব্লগ লিখেছি, অর্থাৎ প্রতি দেড় দিনে একটি করে লিখেছি। মন্তব্য করেছি ৪৫১৬টি, পেয়েছি ৪৬৭৫টি, অর্থাৎ প্রতিদিনে ১২+ টি করে। আমাকে অনুসরণ করছেন ১০১ জন। এই সংখ্যাটা আরও বেশী ছিল, ১০-১৫ জন অনুসরণ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আমার ব্লগটি এ যাবত ৩৪৩৪০ বার দেখা হয়েছে, অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিনে ৯৪+ বার করে দেখা হয়েছে, এটাই বা কম কিসে! এই এক বছরে যারা আমার লেখা পড়ে মন্তব্য কিংবা সমালোচনা করেছেন, কিংবা তাদের লেখায় আমার মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন, আমার লেখা তাদের পছন্দ হবার কথা জানিয়েছেন, তারা সবাই আমাকে তাদের কথা দ্বারা অনুপ্রেরণা যুগিয়ে গেছেন। তাদের সবাইকে অন্তর থেকে শুভেচ্ছা, সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এদের মধ্যে একজন আছেন, যিনি আমার ২৩৬টি লেখার মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই (একটি দুটি হয়তো ভুলক্রমে বাদ পড়তে পারে) মন্তব্য করেছেন, বেশীরভাগেই লাইক দিয়েছেন এবং বেশ কয়েকটা “প্রিয়”তে নিয়েছেন। অত্যন্ত সংবেদনশীল মনের এই মানুষটি আপনাদের সবারই প্রিয়। তিনি হচ্ছেন জনাব শামছুল ইসলাম। এ ছাড়া আমার প্রথম দিকের লেখাগুলোতে ব্লগার মানবী, জুন, সুমন কর, বিজন রয়, মাঈনুদ্দিন মইনুল, আরজুপনি, প্রামানিক, কাল্পনিক ভালোবাসা, শায়মা, পুলহ, রাতুল_শাহ, দৃষ্টিসীমানা প্রমুখ এবং পরের দিকে ডঃ এম এ আলী, প্রথমকথা, বিলিয়ার রহমান, শাহরীয়ার কবীর, ভ্রমরের ডানা, সাদা মনের মানুষ প্রমুখ মন্তব্য করে যে উৎসাহ ও প্রেরণা যুগিয়ে গেছেন, সেজন্য আমি তাদের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। স্মৃতি থেকে নামগুলো স্মরণ করলাম, কোন রেকর্ড দেখে নয়। তাই হয়তো আরও অনেকের নাম বাদ পড়ে গেছে, যাদের নামটা উল্লেখ করা সমীচীন ছিল। তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনাদের সবার জন্য পবিত্র ঈদ আনন্দময় হোক, এই কামনা করে শেষ করছি।
ঢাকা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৬