somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশের মাটিতে কোন একজন নাজমা বেগম এর সমাধিতে....

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৩ সালে তিন মাসের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলেম মার্কিণ মুলুকে। সফরের এক পর্যায়ে পাঁচ দিনের জন্য ফ্লোরিডার নেপলসে, এক বাল্যবন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলাম তার বহুদিনের বকেয়া আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে। সেখানে থাকতেই, গত ২৭ মে ২০১৩ তারিখে তার এক মিসরীয় বন্ধুর অকস্মাৎ মৃত্যুর খবর আসে। দাফন হবে ‘টাম্পা বে’ এর কাছে, ‘স্কাইওয়ে মেমোরিয়াল গার্ডেন্স’ এর এক সমাধিস্থলে, শ্যামলিমায় ঘেরা একটি নীরব প্রান্তরে।

সেটা ছিল বন্ধুর বাড়ি থেকে প্রায় ঘন্টা তিনেকের ড্রাইভ। বব গ্রাহাম সানশাইন স্কাইওয়ে ব্রীজের পর আরো কিছুদূর যেতে হয়। দুই একবার পথ ভুল করাতে সেখানে পৌঁছে দেখি দাফন-পর্ব প্রায় শেষের পথে, মাটি দেওয়া হচ্ছে। মরহুম ব্যক্তি জীবনে নিঃসঙ্গ ছিলেন। তার অস্ট্রিয়ান বিমানবালা স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হবার পর বহুবছর ধরে একাই নেপলসে থাকতেন। আর বহুদিন ধরে আমার বন্ধুটির সাথে শুধু জুম্মার দিনে কাকতালীয়ভাবে পাশাপাশি এসে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেন, প্রায় কোন রকম ব্যতিক্রম ছাড়াই। প্রথমে এভাবেই তাদের মাঝে অল্প স্বল্প সখ্য গড়ে ওঠে, তারপরে আরও জানাশোনা এবং তারও পরে সেটা বন্ধুত্বের পর্যায়ে চলে যায়। এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে প্রথমদিকে কোন মেলামেশা ছাড়াই শুধু পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সাপ্তাহিক জুম্মার নামাজ আদায় করার মাধ্যমেই এ বন্ধুত্বের ভিত্তি রচিত হয়েছিল।

‘স্কাইওয়ে মেমোরিয়াল গার্ডেন্স’ এর এক কোণের সেই নিঝুম নিরিবিলি ক্ববরস্থানে গিয়ে আমিও একমুঠো মাটি তার ক্ববরে ছড়িয়ে দিলাম, আর শান্তি কামনা করলাম সেখানে শায়িত সকলের জন্যে। অনতিদূরেই একটি সমাধিফলক নজর কেড়ে নিল। সমাধিফলক না বলে বলা উচিৎ কালো মার্বেল পাথরে উৎকীর্ণ একটি নামফলক, কবরের উপরে সেঁটে দেওয়া। সবুজ ঘাসে প্রায় চাপা পড়া সে প্রস্তর ফলকে উৎকীর্ণ ছিল সম্ভবতঃ এক বাঙালী মায়ের নাম, ‘নাজমা বেগম – জন্ম মার্চ ২৩, ১৯৩৭ – মৃত্যু অগাস্ট ১১, ২০১১’ (ইংরেজীতে লেখা)। জন্ম-মৃত্যুর তারিখ দেখে ঠাওর করেছিলাম, প্রায় ৭৫ বছর বয়সে এ মায়ের মৃত্যু হয় স্বদেশ থেকে দূরে, বিদেশ বিভুঁইয়ে। সেখানেই রয়ে গেছেন তিনি, চিরতরে। তিনি একজন বাঙালি মা ছিলেন, এটা ভাবতেই আমার ভাল লাগলো। কিন্তু শুধু নামেই কি একজন মানুষের সঠিক পরিচয় পাওয়া যায়? হতে পারে, নামটা কোন পাকিস্তানি, ভারতীয়, মালদিভীয়, ব্রুনীয়, মালয়েশীয়, ইন্দোনেশীয় এমনকি ইরানী মহিলারও হতে পারে!

সেখানে অন্যান্য আরও অনেক ভিন্ন ধর্মালম্বীদেরও সমাধি ছিল। সেটি যেন ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক অনন্য নজির। ধারণা হলো, শুধু কবরস্থান পরিদর্শক, গোরখোদক আর সদ্যপ্রয়াতদের নিকটস্থ ব্যক্তিগণ ছাড়া সেখানে তেমন আর কারো যাতায়াত নেই। তাই নাজমা বেগমের কবর দেখে মনটা ব্যথিত হলো। তাঁর নামফলক দীর্ঘ ঘাসের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে দেখে মনে হলো, ব্যস্ততার এই দেশে জীবিত লোকদেরই কেউ খবব্র রাখেনা। মৃত ব্যক্তির কবরে কেই বা আসবে দু’দন্ড মৌন সময় কাটাতে! বড় হওয়া ঘাসগুলো কেটে রাখতে! হয়তো বা কেউ কখনো আসেনি, আর আসবেও না। তবে দেশে থাকলেও যে এর ব্যতিক্রম হতো, এমন কোন নিশ্চয়তাও নেই।

ব্যথিত হৃদয়ে তার প্রায় ঢাকা পরে যাওয়া কবরের ফলক থেকে আমার দু'হাতে যতটুকু পারা যায়, কিছু ঘাস উপড়ে দিলাম, চারিপাশ একটু পরিস্কার করে দিলাম। আর তার জন্য রেখে এলাম নীরব কিছু প্রার্থনা।


নেপলস, ফ্লোরিডা
ইউ এস এ
৩১ মে ২০১৩


নাজমা বেগম এর সমাধি থেকে ঘাস পরিস্কার করে লেখক ছবি তুলছেন। লেখকের প্রতিচ্ছায়া ছবিতে প্রতিফলিত।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। সকল ধর্মালম্বী শান্তিতে একত্রে। কোন সংঘাত নেই, কোন দ্বন্দ্ব নেই।

মরহুমের তালাকপ্রাপ্তা অস্ট্রিয়ান স্ত্রী তার নাবালিকা দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন নিথর দেহকে শেষ বিদায় জানাতে।

মাটি হতে সৃষ্ট, মাটিতে বিলীন। ধরিত্রী মাতার গর্ভে, পাশাপাশি একত্রে।

(ইতোপূর্বে অন্যত্র প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৩৫
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×