somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি লেক একটি নাফ নদী আর কাটাতাড়ের বেড়া

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেক কান্দাইয়াগি
এক সময়ে বার্মা ছিল বৃটিশ কলোনী, তার রাজধানী ছিল ইয়াঙ্গন তো সেই বৃটিশ কলোনীতেই ছিল সুপেয় পানির অভাব। পানির সেই অভাব মেটাতেই বৃটিশরা শডেগন প্যাগোডার সামনে ৬১ হেক্টর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলে এক বিশাল জলাধার নাম কান্দাইয়াগি লেক। লেকটির গভীরতা কম বেশি ৪৫ ইঞ্চি । আর বিশেষ চ্যানেলের মাধ্যমে শান প্রদেশের লেক ইনলে থেকে আনা হয়েছে সুপেয় পানি। কান্দাইয়াগি শব্দের অর্থ গ্রেট লেক ইন মিয়ানমার। এই লেকের চারপাশ ঘেষে তৈরী হয়েছে সবুজ শ্যমল গাছ গাছালী আর ফুলে ফলে ভরা এক অনিন্দ্য সুন্দর নয়নাভিরাম পার্ক । পার্কটি ঘিরে আছে ইয়াঙ্গন জ্যু লজিক্যাল গার্ডেন, এক্যুরিয়াম, আনন্দ উপভোগের জন্য এমিউজমেন্ট পার্ক ছাড়াও হোটেল রয়েল লেক সহ অনেক রেস্তোরা । ছুটির দিন হলেই স্থানীয় লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে টলটলে পানির এই লেকের পারে ছুটে আসে চড়ুইভাতি করতে ।

কারাভিক হলের ভেতরে স্বর্নময় এক দেবতা নাকি পৌরাণিক চরিত্র কিন্নরী তার স্বর্ন সিংহাসনে আসীন
তবে এই লেকের সবচেয়ে বড় আকর্ষন হলো কারাভিক হল নামে একটি বজরা যা লেকের পানিতে ভেসে আছে। এই শব্দটি এসেছে পালি থেকে । এটা একটি পৌরানিক পাখি যা মিয়ানমারের বিভিন্ন মন্দিরে দেখা যায় । ১৯৭২ সালে তৈরী হওয়া এই বজরাটির নকশা করেছেন ইউ নি হ্লাইং । দোতালা এই অপরূপ বজরাটি নানান কারুকার্য্য ভরা যা বর্তমানে একটি ব্যুফে রেস্তোরায় পরিনত হয়েছে ।


এই লেকের পারে কারাভিক বজরার সামনে একটি মডেল ফটোশ্যুট করছিল , তার অনুমতি নিয়ে কিছু ছবি তোলার আগ্রহ দেখালে অমায়িক হাসি দিয়ে মাথা ঝুকালো

আমি মিয়ানমারের চারটি প্রদেশ ভ্রমন করেছি । সে সময় প্রতিটি পথের বাকে বাকে দেশটির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য আর সাধারন মানুষের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছি। সেখানে কান্দাইয়াগি লেকের পানির মতই স্বচ্ছ সরল মানুষের মন। ছবির মডেলের হাসির মতই প্রানখোলা হাসিখুশি বেশিরভাগ মানুষ।
কিন্ত এই দেশটির সাধারন মানুষরা বৃটিশদের থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই প্রকৃতপক্ষে আর স্বাধীনতা ভোগ করে নি । অপরিসীম সম্পদের মালিক হয়েও তারা সেই সম্পদের ফল ভোগ করতে পারে নি । আজও তারা বেচে থাকার জন্য, সবচেয়ে নীচু কাজের জন্য না খেয়ে জমানো টাকা দালালের হাতে দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে লুকিয়ে চুরিয়ে ছুটে যায়। পথে মারা যায় সেই সুইপারের কাজের জন্য যাওয়া মানুষগুলো, ধরা পরে হয়রানি হয় পুলিশের হাতে। মুষ্টিমেয় জনসংখ্যার তুলনায় ওদের যেই বিশাল দেশ যেই বনজ -খনিজ আর প্রাকৃতিক সম্পদ তাতে তো ওদের প্রত্যেকের সোনার থালায় ভাত খাওয়ার কথা। কিন্ত থালা তো দুরঅস্ত, দু বেলা দু মুঠো ভাত জোটানোই কঠিন আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা দেশটির সাধারণ জনগণ এর।

আমার জানতে ইচ্ছে করে এই জান্তা বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পেয়েই কি তারা সত্যি স্বাধীন হবে । অং সান সুচীর উপর আমার ব্যক্তিগতভাবে কোন ভরসা নাই । জান্তা সৈনিকরা যখন রোহিংগাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছিল তখন তিনি তার বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারন করে নি। তখন ভেবেছিলাম উনি জান্তার বিরোধিতা করতে চান না তার গদী রক্ষার্থে। পরে একটি ঘটনায় জানা যায় সে কতখানি রেসিস্ট। সামরিক বাহিনীর আক্রমনে দিশেহারা রোহিঙ্গারা স্রোতের মত যখন বাংলাদেশে প্রবেশ ও আশ্রয় নিচ্ছিল তখন এই বিষয়ে তার
মতামত জানার জন্য একটি সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেছিলেন বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা বিবিসি। আর সেই সাক্ষাৎকার নিতে হাজির হয়েছিলেন বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক ও সংবাদক পাঠক মিশেল হুসেইন। সে সময় শাসক গোষ্ঠীর অংশীদার অং সান সুচী রোহিঙ্গাদের বিষয়টিকে ইনিয়ে বিনিয়ে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন।কিন্ত আলাপের এক পর্যায়ে তিনি যখন মিশেল হুসেইনের ধর্মীয় পরিচয় জানতে পারলেন সাথে সাথে উনি চেয়ার ছেড়ে এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে যান, তার চোখ মুখ ফুটে বের হচ্ছিল প্রচন্ড রাগ আর তীব্র ঘৃনা। সেই রাগত স্বরেই সুচী বলে উঠেন তুমি মুসলমান এটা জানলে আমি কখনোই তোমাকে সাক্ষাৎকার দিতাম না

আজ সেই মুসলমানদের দেশে তাদের প্রিয় সৈনিক থেকে শুরু করে সরকারি কর্মচারী, সাধারন মানুষ এসে আশ্রয় নিয়েছে। কই মুসলমানরাতো তাদের তাড়িয়ে দেয় নি, দেয়নি বহু বছর ধরে ঘাড়ে বোঝা হয়ে ওঠা সেদেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ! আমাদের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাদের যুদ্ধ বন্দীর সন্মানে আশ্রয় দিয়েছে , খাবার দিয়েছে, দ্রুত দেশে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে ।
ভারত তো সব সময় তাদের কলাটা মুলাটা খাচ্ছে, কিন্ত এই সংকট শুরু হওয়ার পর কিছু মিয়ানমারের জনগন ত্রিপুরা মনিপুর দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে চাইলে তাদের বিশিষ্ট মন্ত্রী এই অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য সীমান্তে অবিলম্বে কাটা তারের বেড়া নির্মানের আদেশ দিয়েছেন, যেমনটা দিয়েছে তাদের প্রানের বন্ধু প্রতীম দেশ বাংলাদেশের সীমান্তে । সাথে অবাধে গুলিও চলছে তাদের বন্ধুদের উপর ।

১ নং বাদে বাকি দুটো ছবি আমার ক্যানন ক্যামেরায় তোলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:২১
৩২টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×