বেশ কয়েক বছর আগের কাহিনী। কেন জানি আমার সারাক্ষণই মনে হতো আমার এই অসুখ হয়েছে, সেই অসুখ হয়েছে। সত্যি বলতে সে সময় রোগ বালাই ও তা নিরাময় নিয়ে এত ইউ টিউব / ভিডিওর চল ছিল না। আমার গৃহকর্তা একদিন অতিষ্ঠ হয়ে বল্লো "সারাদিন তোমার ইহা দরদ, হিয়া দরদ তো আর শুনতে ভালো লাগে না। তার চেয়ে ডাক্তার দেখাও সে কি বলে "।
গেলাম ঢাকার বিখ্যাত এক হসপিটালে। রিসিপশনে সুন্দরী একজন বসা যথারীতি আমার স্বামীর মুখে আকর্ন বিস্তৃত হাসি। মহিলাও ততোধিক হাসি দিয়ে বল্লো "স্যার কি সমস্যা"?
সমস্যা আমার না, সমস্যা এর। কোন একটা বিশেষ সমস্যার কথা বলতে না পারায় সুন্দরী সাজেষ্ট করলো একটা এক্সিকিউটিভ চেক আপ করাতে। বিগলিত স্বামী বিনা বাক্যব্যায়ে এডভান্সের জন্য কার্ড বাড়িয়ে দিল।
যাই হোক এরপর শুরু হলো আমাকে নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নীরিক্ষা। আমি তো ছেড়ে দে মা কেদে বাচি অবস্থা। আমার সকল রোগ তো গায়েব কিন্ত তাদের হাত থেকে ছাড়ান নেই। বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষার নামে কমপক্ষে এক কেজি রক্ত মনে হয় শুষে নিল। আল্ট্রাসনোগ্রামের লোকটা পাশে যে বসে ডিক্টেশন নিচ্ছিল তাকে জানালো ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র একটা সিস্ট আছে কিডনীতে। শুনে আমি লাফিয়ে বসে পরলাম, গলা দিয়ে কোনমতে বের হলো "কি বললেন কিডনিতে সিস্ট"! লোকটা চমকে উঠে একটা মৃদু ধমক দিল। শুয়ে পরেন, বাংলাদেশের অনেক মানুষের কিডনিতে এমন সিস্ট আছে, এটা কোন সমস্যা নয়"। আবার বালিশে মাথা দিলাম।
যাই হোক এবার পালা হৃদয় যন্ত্রের। হাটলাম, দৌড়ালাম, ইকো, ইসিজি সহ যত রকম পরীক্ষা আছে সব হলো। আমি কাকুতি মিনতি করে সেই সব পরীক্ষকদের বার বার জিজ্ঞেস করলাম আমার হৃদয়ে কোন সমস্যা আছে কি না? তারা বল্লো ডাক্তার জানাবে তারপর ও আমার পিড়াপিড়িতে বল্লো না কিছু নেই।
এরপর রিপোর্ট নিয়ে পরদিন আমি একাই একে একে সকল ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট দেখাতে লাগলাম। তারা জানালো না কোন সমস্যা নেই। আর ইদানীং রিপোর্টে লিখেই দেয় ভালো না খারাপ। এরপর গেলাম বিশিষ্ট হৃদয়ের ডাক্তারের চেম্বারে। উনি অনেক্ষন আমার রিপোর্ট গুলো নেড়েচেড়ে দেখে বল্লো "আপনার তো হার্টে সমস্যা আছে, আপনাকে আজই এনজিওগ্রাম করতে হবে"। আমি তো ভয়ে আতংকে জড়োসড়ো হয়ে একেবারে চেয়েরের কোন ঘেঁষে বসে আছি।
উনি বললেন আর বেশি দেরি করা যাবে না আপনাকে এক্ষুনি এই হসপিটালে ভর্তি হতে হবে"। আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম " ডাক্তার সাহেব আজকে তো আমি একা এসেছি, আমি কি করে ভর্তি হবো"! উনি বল্লেন না না আর দেরি করা যাবেনা"।
এই কথা শুনে আমি দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে যখন দাঁড়িয়ে পেছনে দরজার দিকে পিছিয়ে যাচ্ছি। উনি আমার চেয়ে দ্রুত উঠে টেবিলের পাশ কাটিয়ে হাত বাড়িয়ে যেন আমাকে ধরতে আসছে, আমি সেই সময় দৌড়ে দরজা খুলে বের হয়ে এক দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম। এত বড় ডাক্তার তার রুমে একটা এসিস্ট্যান্ট নেই!
যাই হোক আমার রোগবালাই তো দূর হলো। এরপর আমি এই রিপোর্টগুলো আরও দু একজন বিশেষ করে আমার কাজিন কার্ডিওলজিষ্টকে দেখালাম। সবাই জানালো না আমার হৃদয়ে ইনশাআল্লাহ কোন রকম সমস্যা নেই।
আমি বুঝলামনা সব রিপোর্ট ওকে তারপর ও ডাক্তার কি দেখে বুঝলো আমার হার্টে সমস্যা! নাকি সে আমার কানের লতিতে ভাজ দেখেছিল!!
ছবি নেট।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:১২