সত্যি বলতে কি আমিও আশ্চর্য হয়েছি এই দৃষ্টিনন্দন সুদীর্ঘ চীনের প্রাচীর দেখে। ব্লগ শব্দটির সাথে আমার পরিচয় চীন ভ্রমনে গিয়েই আর তারই সাথে শুরু ছবি তোলার নেশা। প্রথম দিকে নিজের ক্যামেরা, পরে এন্ড্রোয়েড ফোনের ক্যামেরা আমাকে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্ত ব্লগে ছবি দিতে হয় কি করে তা আমাকে আর সুরঞ্জনাকে শিখিয়েছিল ব্লগার দুরন্ত স্বপ্নচারী আর কাব্য। আমিতো সারাদিন ধরে তাদের অক্লান্ত চেষ্টার পরেও একটা ছবি আপলোড করতে পারিনি , সন্ধ্যার দিকে মনে হয় সুরঞ্জনা তাঁর নাতির একটা ছবি দিয়ে ছবি ব্লগে পা রাখে । আর আমি তারও অনেক পরে । আজ আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি দুরন্ত স্বপ্নচারী আর কাব্যকে । তারা যদি দেখতো আজ আমাকে ।
ব্রোঞ্জের তৈরী ড্রাগন মুখো কচ্ছপ, ফরবিডেন সিটি, বেইজিং চীন
বেইজিং এর বুকে ৫৭ একর জায়গা জুড়ে প্রাচীন চৈনিক রাজাদের প্রাসাদ সমুহ তার নাম ফরবিডেন সিটি।সাধারনের জন্য নিষিদ্ধ এই নগরীটি ছিল ৫০০ বছর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থল। বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক এই নিষিদ্ধ নগরী সেজে উঠেছিল অসংখ্য মিং এবং সিং ডায়নেস্টির সংগ্রহিত বিভিন্ন আর্টিফেক্টে । আমার দেখা তারই একটি নমুনা রইলো আপনাদের জন্য।
ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ডেজার্ট এ বাতাসের ঘায়ে খয়ে যাওয়া চুনাপাথরের তৈরি ভাস্কর্য্য যা প্রকৃতি নিজ হাতে বানিয়েছে। বাহারিয়া মরুভূমি, মিশর
মিশর বেড়াতে গেলে আমাদের হোটেল ম্যানেজার কাম ট্যুর অপারেটর পিরামিড ছাড়াও এই মরুভুমি দর্শন জুড়ে দিয়েছিল । কি যে বিরক্ত হয়েছিলাম বলার নয় । কিন্ত সেই অপরূপ স্বর্গীয় জায়গাটি ঘুরে এসে আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে তাকে কত যে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
ফারাও হাটসেপসুটের সমাধি, থীবসের দেড় এল বাহার, মিশর
মিশরের প্রাচীন ইতিহাসে এক বিশেষ জায়গা জুড়ে আসীন ফারাও হাটসেপসুটস যার নারী হিসেবে সিংহাসনে বসার অধিকার ছিল না। তাই পর পর দুবার তাঁর থেকে বয়সে ছোট সৎ ভাইদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য হন। একজন নারী শাসনকর্তা হিসেবে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সবচেয়ে বেশি দিন মিশর শাসন করেছে। বিখ্যাত পিরামিড আর কিংস ভ্যালির সমাধির মাঝে এই সমাধিটি ব্যাতিক্রম । থিবসের প্রচন্ড তাপদাহে আমাদের গা পুড়ে যাচ্ছিল কিন্ত চোখ ছিল বিস্ফারিত এর নান্দনিক সৌন্দর্য্যে।
প্রাসাত বেয়ন, সিয়েমরেপ, ক্যাম্বোডিয়ার প্রাচীন রাজধানী এংকরথমের গর্ব
১২শ শতাব্দীদে তৈরি বিখ্যাত মন্দিরটি তৈরি করেন খেমার সাম্রাজ্যের বিখ্যাত রাজা সপ্তম জয়বর্মন। তাঁর রাজধানীর কেন্দ্রে তৈরি এই বেয়ন অত্যন্ত জাকালো কারুকাজ করা । এংকরথমের সবটাই বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রতীক তাঁর মাঝে এই প্রাসাত বেয়ন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। একবার দেখে আসার পরও মনে হয় আরেকবার দেখে আসি।
মালয়েশিয়ার শাহ আলম রাজ্যের এক চীনা মন্দির প্রাঙ্গন
গাইড জানালো চীনাদের নাকি একটাই দেবতা আর সে হলো অর্থের দেবতা। চৈনিক রাশিমতে যে বারোটি প্রানী রয়েছে তাঁর একটি হলো ড্রাগন আর সেই রঙ্গীন কারুকার্য্যময় ড্রাগনের মুর্তি শোভা পাচ্ছে মন্দির প্রাঙ্গনে অন্যান্য রাশির প্রানীদের সাথে। আমাদের ট্যুর গাইড কাম চালক যখন মন্দিরে পুজা দিতে ব্যাস্ত তখন সেই ফাকে আমরা প্রাঙ্গনটি ঘুরে ঘুরে দেখেছি।
অং আং ন্যাশনাল মেরিন পার্ক, কোহ সামু্ই, থাইল্যান্ডে কায়াক রত পর্যটকের দল
মূল ভুখন্ড সুরাট থানি থেকে কোহ সামুই ফেরীতে যেতে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা। পরদিন পুরোটাই কাটলো নয়নাভিরাম জাতীয় মেরিন পার্কে অং আং এ। গালভ অভ থাইল্যান্ডের নীলাভ পানির মাঝে বহু বছর আগের সেই রুক্ষ শক্ত পাথরের পাহাড় যার বুক জুড়ে আছে সবুজ শ্যামল গাছের বন। সেই সৌন্দর্য্য বর্ননার ভাষা নেই আমার কাছে। আমি শুধু দু চোখ ভরে তাঁর রূপ দেখে গেছি।
থাইল্যান্ডের চালের তৈরি রঙ বেরঙ্গের স্থানীয় মিস্টি খাবার
চাল থাইবাসীদের প্রধান খাবার। কত রকম চাল যে আছে আর তা দিয়ে কত রকমের খাবারই যে বানায় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না । এরা প্রায়ই বিভিন্ন মলে খাবারের মেলার আয়োজন করে থাকে। তেমনি একটি মেলায় ছিল এই রঙ্গ বেরঙ্গের চাল দিয়ে তৈরি খাবারটি।
রুশিকোন্ডা বীচ, বিশাকাপটনম, ভারত
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে সামরিক শহর বিশাখাপত্তনম আর তারই মাঝে রয়েছে বিখ্যাত রুশিকোন্ডা বীচ যে কি না তাঁর অপার সৌন্দর্য্যের হাতছানি দিয়ে ডাকে অগনিত পর্যটককে। যার ডাকে আমরাও সাড়া দিয়েছিলাম একদিন ।
বিশ্বের বৃদাকার বই, মিয়ানমার
এটা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকৃতির বই যার স্রষ্টা বার্মার শেষ স্বাধীন রাজা মিন্ডন যা তাকে অমর করে রেখে গেছে। ১৪৬০ পাতার বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থ ত্রিপিটকের বানীকে একটি শিলার দুদিকে খোদাই করে মোট ৭৩০টি শিলাপাতা তৈরি হয়। শিলালিপিগুলোকে এই ছোট ছোট ঘর যাকে ওরা বলে ধাম্মা শেঠি তার মাঝখানে খাড়া ভাবে রাখা আছে। চারিদিক খোলা এই শেটিতে যে কোন লোক যে কোন সময় ঢুকে তাঁর অভীষ্ট লেখাটি পড়তে পারে। আমি এই বইটির নতুনত্বে বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম আর ভেবেছি যে তারা পৃথিবীর অন্যান্য রাজা বাদশাহদের মত নিজ নিজ সমাধি সৌধ বানিয়ে দিন কাটাননি।
ভুটানের পাহাড়ি গ্রাম ওয়াংডি
ভুটানের দোচুলা রিসোর্টে রাত কাটিয়ে যাবো পবজিখা যেখানে আছে কত শত রঙের রডোড্রেনডন আর ব্ল্যাক ক্রেন এর দুর্লভ নাচ। কিন্ত পাহাড়ের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যেতে যেতে অর্ধেক পথেই যাত্রা অসুস্থতার কারনে শেষ হলো। পথের মাঝে ওয়াংডি গেষ্ট হাউসেই থাকা হলো সেদিন। সকালে জানালা খুলে দিয়ে দেখলাম নদীর ওপারে পাহাড়ের ঢালে ভুটানের এক গ্রামের অদ্ভুত শান্ত নীরব কুমারী রূপ যার দেখা খুব কম পথিকেরই মিলে।
সিলেটের চা বাগানের দুই নারী শ্রমিক
ছবি তুলতে গেলে আপত্তি জানিয়েছিল তারা। জানিয়েছিল তাদের অর্থনৈতিক কষ্টের কথা। আমি শুধু শুনে গিয়েছিলাম যুগ যুগ ধরে তাদের উপর চলা শোষন আর বঞ্চনার ইতিহাস। মনটা আদ্র হয়ে গিয়েছিল মাথায় চা পাতা ভর্তি পুটুলি নিয়ে চলা চা শ্রমিকদের কথায়। সকাল বিকেল চায়ের কাপ হাতে নিলেই তাদের কথা আমার মনে পরবেই পরবে।
সব ছবি আমার ক্যামেরা আর মোবাইলে তোলা ।
ছবির সর্বসত্ব সংরক্ষিত
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৯