somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়াদের জ্ঞ্যান গরিমা

২২ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পড়াশোনা করার কারনে আমারা নিজেদের অনেক সময় সর্বাজ্ঞ মনে করি। কিন্ত পড়ালেখা না করেও আমাদের গৃহকর্মীরা কতটা বুদ্ধিমতি তা তাদের কিছু কিছু কথা বা কাজে বোঝা যায়। যেমন এই দুদিন আগের ঘটনা, আমার এক বান্ধবী যে কি না আমার প্রতিবেশীও বটে ফোন করলো। বল্লো "দোস্ত চলো তুমি আর আমি গিয়ে কোথাও থেকে চাইনীজ খেয়ে আসি"। বুঝলাম আমি তাকে একটি ব্যাপারে হেল্প করেছিলাম সে তার রিটার্ন দিতে চাচ্ছে। কিন্ত তার প্রস্তাব শুনে এই দুর্যোগকালে আমি তো অবাক তার উপর বিব্রত। তার কারন সে করোনায় আক্রান্ত ছিল। শারিরীক ভাবে বর্তমানে সে সুস্থ বোধ করছে কিন্ত তার কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড মাত্রই শেষ হয়েছে, কিন্ত সম্পুর্ন করোনা মুক্ত হয়েছে কি না সেই টেষ্টও করেনি। আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম "কি বলো এই সময় বাইরে খাওয়া ঠিক না, পেপারে দেখলাম রেস্টুরেন্ট, হোটেল আর জিম হলো করোনার আস্তানা "।
বান্ধবী বলে উঠলো ' তাইতো, তুমি ঠিকই বলেছো দোস্ত, কিন্ত কি করা যায় বলতো ? শোনো আমার পারু ( তার সার্বক্ষনিক গৃহকর্মী) যে রন্ধনপটিয়সী সেতো তুমি জানোই, পোলাও কোর্মা থেকে চাইনীজ সব কিছুই ফাসক্লাশ রান্না করে। ও তাহলে কিছু রান্না করে তোমার বাসায় দিয়ে আসবে '। আমি না না করছি দরকার নেই, কিন্ত সে কিছুতেই মানছে না, পাঠাবেই। তিন চার বার ফোন করা হয়ে গেল । শেষে আর কোন উপায় না দেখে রাতে মেসেজ পাঠালাম যে 'আমরা তো কাল বাসায় থাকবো না, তুমি ঝামেলা কোরো না'।

পরদিন আবার ফোন আসলো "দোস্ত তাহলে কালকে পাঠাই? কাল থাকবে তো? তুমি পরিস্কার করে বলো তো কেন না করছো? শোনো আরেকটা কথা, পারুর সাথে আলাপ করলাম খাবার পাঠানোর ব্যাপারে, তুমি যে রাজী হচ্ছো না সেটাও বলেছি কিন্ত ও শুনে বল্লো
"আফা আপনের যে করোনা হইছে তার জন্যই মনে হয় জুন আপা মানা করতেছে। আগে তো কোনদিন না করে নাই"। সত্যি কি তাই জুন! "। আমি মনে মনে বললাম দোস্ত আমি এই কথাটি তোমাকে ইনিয়ে বিনিয়ে দুইদিন ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছি কিন্ত তুমি বুঝলে না, আর পারু যে কি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারাও জীবনে দেখেনি, তোমার মত কলেজের টিচারও না সে কিনা একবারেই বুঝে ফেল্লো। কিন্ত এ কথাতো আর বান্ধবীকে বলা যায় না। তাই বলি ' খাবার পাঠালে তো আর এক সাথে বসে খাবার আনন্দ থাকে না, দুনিয়াটা ভালো হোক তারপর আমরা না হয় কোথাও বসে খাবো '। ওর মাথাতে মনে হয় চিন্তাটা বিদ্যুৎ চমকের মত উকি দিয়ে গেল, তাইতো ---

করোনার আগের কাহিনী । রান্নাঘরে বুয়া তরকারী কাটছে আমি চা বানাই, বললাম 'বুয়া জানো কয়েকদিন ধরেই আমার পেটটা চিন চিন করে ব্যাথা করছে'। বুয়া জিজ্ঞেস করলো কোথায় ? আমি হাত দিয়ে দেখালাম , বুয়া তাচ্ছ্যিল্যের ভংগীতে বলে উঠলো "আফা এইডা কিছু না, এইডা ঘেষ্টিকের ব্যাথা, আমারও মাঝে মইদ্দে হয়"। আমি বললাম তাই ! বল্লো "হ ,একটু তেল আর মরিচ কম খাইয়েন, চাও কম খাইয়েন, আফনে অনেক তেল আর ঝাল খান আমি দেখছি। আর ওষধের দোকানে এক রকম টেবলিট আছে কইলেই দিবো চুইষ্যা খাইতে হয় আর বোতলে এক রকম পাওয়া যায় পানির মত হেইডায় তাত্তাড়ি উপকার পাইবেন "।
আমার স্বামী শুনে টুনে বল্লো ভালোইতো বুয়াই এখন তোমার ডাক্তার । কিছুদিন পরে এপোলো হসপিটাল বর্তমানে এভার কেয়ারে যেই ডাক্তারকে আমি সব সময় দেখাই তাকে পেট ব্যাথার কথা বললাম । সাথে সাথে সে আমাকে আরেক ডাক্তারের কাছে রেফার করলো যিনি কিনা একজন gastroenterologists । এই নাম উচ্চারন করতেই আমার দাত ভাংগার অবস্থা।
সেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমার পেট ব্যাথা শোনামাত্রই নানা রকম টেষ্ট আর আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে দিল। এখন তো আর নাড়ী টেপা ডাক্তার নেই, সবই যন্ত্র নির্ভর। যাই হোক তার ফি সহ দশ হাজার টাকা টোটাল বিল দিলাম। রিপোর্ট আসার পর উনি পিসিতেই দেখে প্রেস্ক্রিপশন লিখে দিল । প্রিন্ট আউট হাতে আসার পর দেখলাম ডায়গ্নোসিস এক বিশাল লম্বা লেখা। জিজ্ঞেস করলাম 'ডাক্তার সাহেব এটার অর্থ কি ? আমার কি হয়েছে পরিস্কার বাংলায় বলেন ? বল্লো " না না তেমন ভয়ের কিছু নেই, সোজা বাংলায় বললে এই যাকে বলে গ্যাষ্ট্রিক এর প্রবলেম। ঔষধ লিখে দিয়েছি আর তেল ঝাল খাবেন না"। ঔষধ সেই এন্টাসিড ট্যবলেট যা চুষে খেতে হয় অথবা তাড়াতাড়ি কাজের জন্য লিকুইড আর খাবার আগে সাতদিন একটা করে সার্জিল ক্যাপ্সুল যা বুয়ার মৌখিক প্রেস্ক্রিপশনে ছিল না, ছিল না দশ হাজার টাকার বিলও :(
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩
৩৭৫ বার পঠিত
৪১টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫২



শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার করছেন। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি অশান্তি হোক। কারণ ভারত একটি মসনদ হারিয়েছে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রতিদিন একটি সোনার ডিম পেড়ে নরেন্দ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×