পবিত্র ঈদ উপলক্ষে পোষ্টটি উপহার হিসেবে উৎসর্গ করা হলো সামহ্যোয়ার ইন ব্লগের আমার সব সহ-ব্লগারদের ছোট ছোট বাবু, ছোট ভাই- বোন আর কারো বা রয়েছে নাতি নাত্নী তাদের সবাইকে সবাইকে জানাই ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা, যখন আমরা কেউ জন্মই হইনি, এমন কি আমাদের আব্বু আম্মুরাও না। ঠিক সে সময় একদিন ঘোর লাগা দুপুর বেলায় না ঘুমিয়ে এক দুষ্টু ছেয়ে খরগোশ নদীর তীরে ঘাসের মাঝে ছুটোছুটি করে খেলছিল। খেলতে খেলতে এক সময় তার ভীষন পানি পিপাসা পেলো।এদিকে পাশেই কাক চক্ষু জল নিয়ে ছোট নদীটি কুলকুল করে বয়েই চলেছে । সেদিকে তাকিয়ে ক্লান্ত খরগোশ ভাবলো
‘যাক বাপু এখানে বসেই একটু পানি খেয়ে নেই’।
কোনদিকে না তাকিয়ে এক্কেবারে নদী্র কিনারে এসে লেজটাকে ভালো করে গুটিয়ে নিয়ে উপুর হয়ে বসলো, তারপর পানির মাঝে মুখ লাগিয়ে চুক চুক করে নিশ্চিন্তে পানি পান করতে লাগলো। কিন্ত কপালমন্দ বেচারা খরগোশের। ঠিক সে সময় নদীতে ভেসে ভেসে কোথা থেকে কেমন করে জানি এক হোৎকা কুমির এসে হাজির । মুটুসুটু গাপ্পু গুপ্পু খরগোশকে দেখেই তো তার জিভ দিয়ে একেবারে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো, যেমন রসগোল্লা দেখলে তোমাদের হয় আর কি।
তাড়াতাড়ি ঢোক গিলে জিভের পানি সামলে সুমলে কোন সাড়া শব্দ না করে চুপি চুপি সাতরে তীরের কাছে এসে হাজির। তারপর সেই পাজী কুমির একবারে গপ করে ছোট্ট খরগোশকে মুখে পুরে ফেল্লো । খরগোশ বাবাজীকে সোৎ করে একটানে মুখে পুরলেও কিন্ত সাথে সাথে পেটে চালান করলোনা কুমির। মনে মনে ভাবলো এখন ওকে কিছুক্ষন মুখের ভেতর রেখে দেই যেমন করে তোমরা চকলেট রাখো ঠিক তেমন করে। তারপর নাহয় আস্তে ধীরে রসিয়ে রসিয়ে খাওয়া যাবে ।
যে সময়ের কথা তোমাদের বলছি সেসময় খরগোসের কিন্ত এখনকার মত এমন ছোট্ট একটুখানি লেজ ছিল না। তার লেজটি ছিল মস্ত লম্বা সুন্দর আর গোছাওয়ালা এক্কেবারে কাঠবেড়ালীর লেজের মত। আর কুমিরেরও ছিল তখন ইয়া বড় মস্ত এক জিভ যা এই দুনিয়ার আর কোন প্রানীরই ছিল না।
কুমির ভাবলো গিলে ফেলার আগে বেচারা খরগোশটিকে আচ্ছামত একটু ভয় দেখিয়ে নেই। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। খরগোশকে ভয় দেখানোর জন্য কুমির মুখটা বন্ধ করেই এমন এক বিকট আওয়াজ করলো। যা শুনে খরগোশ বেচারা ভয়ের চোটে কুমিরের মুখের ভেতরেই অজ্ঞান হয়ে পরার অবস্থা। কিন্ত বাঁচতে হলে তো ভয় পেলে চলবে না তাই খরগোশটা এবার ভাব দেখালো যেন সে একটুও ভয় পায়নি। উলটো সে জোরে চিৎকার করে কুমিরকে ডেকে বল্লো,
‘ওহে কুমির মশাই তুমি তো আমার চেয়ে মস্ত বড়, কিন্ত তাতে কি? আমি তোমাকে একটুও ভয় পাই না বুঝলে। তুমি যদি মুখ খুলে হাঁ করে আরো জোরে একটা আওয়াজ করতে তাহলে হয়তো আমি ভয় পেতাম’।
খরগোশের চালাকি একটুও বুঝতে পারলোনা বোকা কুমির। খরগোশের কথায় তার সাংঘাতিক রাগ হলো । রাগে গজ গজ করতে করতে এবার কুমির তার মুখটা পুরো হা করে খুলে বিশাল এক শব্দ করে উঠলো।
যেই না কুমির হা করলো অমনি খরগোশ তার মুখ থেকে বেরিয়ে নদীর তীর বরাবর দিল এক বিরাট লাফ । আর সেই লাফ দেয়ার সাথে সাথে কি হোলো জানো ? তাহলে বলি শোনো খরগোশের পা তো দেখেছো তোমরা তাই না ? তাদের পায়ের আঙ্গুলে ছোট ছোট নখ থাকলে কি হবে সেগুলো যে কি ধার কি ধার তা আর বলার নয় । তা খরগোশতো লাফ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো কিন্ত তার সেই ধারালো নখ লেগে গেল কিনা কুমিরের লম্বা জিভের ঠিক মধ্যিখানে । আর সাথে সাথে কাটা জিভটা ঝপ করে গিয়ে পড়লো এক্কেবারে পানিতে।
ব্যথার চোটে কুমিরতো চোখে মুখে সর্ষে ফুল দেখতে শুরু করলো আর সেই সাথে তার মুখটাও খটাস করে বন্ধ করে ফেল্লো। এদিকে খরগোশের শরীর বাইরে বেড়িয়ে আসলে কি হবে ? তার মস্ত গোছাওয়ালা লেজটা তো তখনো কুমিরের মুখের ভেতর। সেই ইয়া বড় বড় অনেক ধারালো দাতওয়ালা মুখটা বন্ধ করার সাথে সাথেই খরগোশের পুরো লেজটাও কেটে রয়ে গেল সেই হোৎকা পেটুক কুমিরের মুখের ভেতর।
আর এ ভাবেই তারা দুজন তাদের সেই লম্বা জিভ আর লম্বা লেজ হারিয়ে ফেল্লো সারা জীবনের মত। খরগোশের হলো এখন একটুখানি পুঁচকে লেজ আর কুমিরেরও হলো অন্য জীব জন্তর মত সাধারন আকারের এক জিভ।
সেদিনের পর থেকে খরগোশরা পানি পিপাসায় মরে গেলেও কুমিরের ভয়ে নদী বা কোন খাল বিলের ধারে কাছে যাবার নামটিও মুখে আনেনা। পিপাসায় ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দুই এখন তাদের ভরসা।
আমার কথাটি ফুরলো
নটে গাছটি মুড়লো ।
অনুবাদ: জুন
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২২