সমাধি সৌধের দেয়ালে টাঙ্গানো শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের প্রতিকৃতি
১৮ই মার্চ ২০১৫ ইয়াঙ্গন এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসতেই চোখে পড়লো আমাদের নাম লেখা কার্ড হাতে দাড়িয়ে আছে হাসি খুশী এক তরুনী। হোটেলে যেতে যেতে পরিচয় হলো। দুদিন ইয়াঙ্গুন শহর ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্ব এই তরুনী মিজ ওয়া লিউইনের উপর। জিজ্ঞেস করলাম কি কি আছে আইটেনারীতে ? অনেক কিছুর নামই বল্লো কিন্ত যা দেখার জন্য আমি উদ্গ্রীব বহুদিন বছর ধরে, তার নাম ও উচ্চারিত হলো না ।
তাই নিজে থেকেই প্রশ্ন করলাম 'বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধি সৌধ নেই তালিকায়' ?
গাইড লিউইন অপ্রস্ততভাবে জানালো সে নাকি জীবনেও এর নাম শুনেনি।
শডেগনের পেছন দিকে জীবক রোডের ৬নং ঐতিহাসিক বাড়ীটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
আমার মন খারাপ দেখে আমার স্বামী বল্লো, ‘চিন্তা করো না আমি খুজে বের করবো। এর আগের বার আমি দেখে গেছি ওদের বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহার শডেগনের আশেপাশেই আছে’। মনটা শান্ত হলো । পরদিন থেকে এক সপ্তাহ ইয়াঙ্গনের বাইরে ঘুর ঘুর করে ফিরতেই আবারো দেখি মিজ লিউইন আমাদের জন্য এয়ারপোর্টে অপেক্ষারত ।
রাস্তার ওপাশে ঐ সেই লাল দেয়াল ঘেরা বাড়িটি বৃটিশ ক্যাপ্টেন ডেভিসের গাড়ীর গ্যারেজ, যা একদা হয়ে উঠেছিল মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের শেষ আশ্রয়স্থল।
আমার হাত ধরে এক গাল হেসে বল্লো ‘জুন, সুখবর,। আমার প্রশ্নবোধক চোখের দিকে তাকিয়ে বল্লো, ‘আমি শুধু তোমার জন্য অনেক খুজে খুজে বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধি সৌধের ঠিকানা বের করেছি, আজই যাবো আমরা'। বুঝলাম এদেশের বেশিরভাগ মানুষ এই ইতিহাসের নুন্যতম খবরও রাখে না । গাইড স্কুল শিক্ষিকা মিস লিউইন আমাদের আগ্রহের কথা জেনে অন্তর্জাল ঘেটে এর অস্তিত্ব খুজে পেল।
প্রবেশ দরজা, উপরে গ্রীলের মাঝে লেখা দরগা বাহাদুর শাহ জাফর, এম্পেরর অফ ইন্ডিয়া ১৮৩৭ -১৮৫৭
ইয়াঙ্গন শহরের ঠিক মাঝখানে বুদ্ধদের প্রধান তীর্থ কেন্দ্র শডেগনের পাশ ঘেষেই জীবক রোড। দু একটা বাড়ী ছাড়াতেই হাতের বা দিকে চোখে পড়লো একটি সাদামাটা লোহার গেট। গাড়ী থেকে নেমে ৬ জীবক রোডের গেট ঠেলে ছোট্ট একটি আঙ্গিনায় ঢুকলাম। চোখ পড়লো দেয়ালের গায়ে বাহাদুর শাহ জাফরের ছবি সহ লেখা মসোলিয়াম । উপরে লেখা দরগা এবং এখানকার লোকজনের কাছে তার পরিচিতি একজন সন্ত হিসেবেই।
সামনের আঙ্গিনায়, বাদিকে ওজুখানা
সমাধি সৌধের ভেতর সবুজ চাদরে ঢাকা পাশাপাশি তিনটি কবর । যার একটি হলো বাহাদুর শা জাফরের কবরের রেপ্লিকা বাকি দুটির একটি প্রিয়তমা পত্নী জিনাত মহল যিনি সম্রাটের মৃত্যুর ২০ বছর পর মৃত্যুবরন করেন আরেকটি তাদের পুত্র মির্জা জওয়ান বখতের। চারিদিকে দেয়ালের গায়ে ঝোলানো সম্রাটের বিভিন্ন সময়ের ছবি , তার পত্নী ও ছেলেদের আলোকচিত্র, তার শের , তার সুবিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি, তার নিকাহনামার সার্টিফিকেট যা প্রত্যেকটি এক একটি ক্ষুদ্র ইতিহাস তুলে ধরছে আমাদের সামনে।
সম্রাটের নিজ হাতে লেখা কবিতা হয়তো বা, অপরুপ ক্যালিগ্রাফি
ঝুলানো আছে দেয়ালে শায়েরী চিত্র
ইতিহাস ভীড় করে এলো, মনে পড়লো বিখ্যাত মুঘল সম্রাট বাবর, আকবর, জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের উত্তরসূরী এই বাহাদুর শাহ জাফর মুঘল সাম্রাজ্যের মহাদুর্দিনে ভারতবর্ষের ক্ষমতা গ্রহণ করেন। যে কয়েকজন প্রবাদ পুরুষ অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেম ও চরম আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছিলেন, এই বাংলার মাটিতে স্বাধীনতার স্বপ্ন বীজ বপন করেছিলেন তাদের মাঝে সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পরিচয়
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নামে ব্যাবসা করতে এসে বৃটিশ বেনিয়ারা একসময় ভারতবর্ষের শাসন ক্ষমতাও কুক্ষিগত করে নেয় । বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা পেনশন দিয়ে দুর্বল সম্রাটকে দিল্লীর লাল কেল্লায় করা হলো গৃহবন্দী।সেই অপমান লাঞ্ছনা ভুলে থাকার জন্য তিনি তার পুর্বসুরী জাহাংগীরের মত সুরায় নিমগ্ন না থেকে কবিতা আর গজল লেখায় মন দেন।
সৌধ দেখার জন্য টিকিট ঘর
১৮৫৭ খৃঃ মিরাটে বৃটিশদের সৃষ্ট ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাদের মাঝে ভারতীয় হিন্দু এবং মুসলিম সৈন্যরা বৃটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে। যা ইতিহাসে সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই বিদ্রোহ প্রথম শুরু হয়েছিল মিরাটে গুলি বা কার্তুজে শুকরের ও গরুর চর্বি ব্যবহারের প্রতিবাদে। ১১মে ১৮৫৭ সিপাহীরা দিল্লী অধিকার করে বহু ইংরেজকে হত্যা ও বিতাড়িত করলো।
দেশপ্রেমিক সিপাহিরা এ দিন লালকেল্লায় প্রবেশ করে ক্ষমতাহীন নামে মাত্র মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে ভারতের স্বাধীন সম্রাট বলে ঘোষণা করেন।
সমাধিতে প্রবেশ দুয়ার
সিপাহিরা সম্রাটের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শপথ নেন। এ দিন গভীর রাতে লালকেল্লায় একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে ৮২ বছরের বৃদ্ধ সম্রাটকে দেওয়ান-ই খাস এ সম্মান জানানো হয়। বাহাদুর শাহ জাফর সিপাহিদের বিপ্লব তথা ভারতবর্ষের প্রথম সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এ সংবাদে একের পর সেনাছাউনিতে বিদ্রোহ হতে থাকে। কিন্ত ইংরেজরা অতি নির্মমভাবে এই বিদ্রোহ দমন করেন। এক ঘন্টার এই যুদ্ধে ৪১ জন সিপাহী মৃত্যবরণ করেন।
দুই ছেলে সহ বন্দী বৃদ্ধ সম্রাট বৃটিশ দের হাতে
বাহাদুর শাহ জাফর তখন উদভ্রান্তের মতো প্রাণ বাঁচাতে লালকেল্লা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাদশাহ হুমায়ুনের কবরে। মাত্র দুই ছেলেকেই সঙ্গে নিয়ে যেতে পেরেছেন তিনি। মির্জা খোয়ায়েশ আর জওয়ান বখত। তাঁর মোট ২২ জন ছেলের বাকিরা নিছক প্রাণটুকু বাঁচাতে লালকেল্লা ছেড়া জামা মসজিদের চারপাশে, উর্দু বাজার, রোশনপুরা মালিওয়ারাতে আশ্রয় নিলেন, তবে, সেই আশ্রয় ছিল ক্ষণস্থায়ী। ইণ্ডিয়া গেটের কাছে এখন যা ‘খুনি দরওয়াজা’ বলে কুখ্যাত, সেখানে মির্জা খোয়ায়েশের আঠারো জন ভাইকে ফাসী দেয়া হল। এক মুহুর্তে শেষ হয়ে গেল একদা দর্পিত মোগল পরম্পরা। নিভে গেল সম্রাট বাবরের প্রতিষ্ঠিত, মহামতি আকবরের ভারত বর্ষ জুড়ে বিস্তৃত মুঘল সুর্য্যের শেষ রশ্মি।
বেঁচে যাওয়া সম্রাটের দুই পুত্রের ছবি
২২ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৭-য় ধরা পড়লেন শেষ মোগল সম্রাট। সঙ্গে গ্রেফতার হলেন তাঁর বেগম আসরাফ মহল, আর জিনাত মহল। ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে সেই রাতেই হুমায়ুনের কবরস্থান থেকে ব্রিটিশ রণবাহিনীরই এক দেশি সেপাইয়ের সাহায্যে একবস্ত্রে পালিয়ে গেলেন আসরাফ মহলের পুত্র মির্জা খোয়ায়েশ।ইতিহাসে যার আর কোন উল্লেখই নেই।
বৃটিশদের বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতার চরম উদাহরন হলো বাহদুর শাহের কয়েকজন পুত্র ও নাতিদের ছিন্ন মাথাগুলো একটি থালায় সাজিয়ে নওরোজ উৎসব উপলক্ষে বন্দী বাদশাহর কাছে উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়ে তাকে উপহাস করা! কতখানি অমানবিক ।
সমাধির ভেতরে অল্প সংখ্যক দর্শনার্থী
ধরা পরার পর বিচারের নামে প্রহসনের আদালতে দাড় করানো হলো বৃদ্ধ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে। হাজির করা হলো বানোয়াট সাক্ষী। বিচারকরা রায় দেন, দিল্লির সাবেক সম্রাট ১০ মে থেকে ১ অক্টোবর ১৮৫৭ পর্যন্ত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংগঠনের দায়ে অপরাধী। তার শাস্তি চরম অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু তার বার্ধক্যের কথা বিবেচনা করে প্রাণ দণ্ডাদেশ না দিয়ে তাঁকে বার্মার তথা মায়ানমা্রের রাজধানী ইয়াঙ্গু্নে নির্বাসনে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।
সম্রাটের আসল কবরটি
১৮৫৮ সালের ৯ ডিসেম্বর সম্রাট ও তার পরিবারকে বহনকারী জাহাজ ইয়াঙ্গনে পৌঁছে। ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন নেলসন ডেভিসের বাসভবনের ছোট গ্যারেজে সম্রাট ও তার পরিবার-পরিজনের বন্দিজীবন শুরু হয়। আজীবন আরাম আয়েশ আর বিলাস ব্যাসনে অভ্যস্থ সম্রাটকে শুতে দেয়া হলো একটা পাটের দড়ির খাটিয়ায়। প্রিয় মাতৃভূমি ভারত থেকে বহু দূরে ইয়াঙ্গনের মাটিতে সম্রাটের জীবনের বাকি দিনগুলো চরম দু:খ ও অভাব অনটনের মধ্যে কাটতে লাগলো। ইংরেজ সরকার নির্বাসিত সম্রাট ও তার পরিবারের ১৬ জন সদস্যের জন্য খোরাকি বাবদ দৈনিক এগার টাকা এবং প্রতি রোববারে বার টাকা করে দিতেন। আর মাসের পহেলা দিনে সাবান, তোয়ালে কেনার জন্য মাথাপিছু দু’টাকা করে দিতেন।এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই তা হলো বার্মা তথা মায়ানমার দখলের পর ব্রিটিশরা সেখানকার শেষ রাজা থিবোকেও ভারতে নির্বাসন দিয়েছিল । তবে তার জন্য রত্নগিরীতে দোতলা বাংলো বাড়ী আর মাসিক ৫০ রুপি বরাদ্দ ছিল ।
পত্নী জিনাত মহল
এমন অর্থনৈতিক কষ্ট ছাড়াও কোনো লোককে সম্রাট ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে দেয়া হতো না। কাজের লোকদেরও পাস নিয়ে তাদের কাছে যেতে হতো। কারাগারের অভ্যন্তরে এক বদ্ধ প্রকোষ্ঠে, শতরকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মধ্যেই ৮২ বছরের বৃদ্ধ সম্রাট রচনা করেছিলেন অসংখ্য সুবিখ্যাত পংক্তিমালা, গজল, শায়েরি। কষ্ট ও বিষাদ ছিল তাঁর কবিতার মূল বিষয়। এর সাথে দেশ ও জাতির পরাধীনতার কথা বিধৃত। একটি কবিতায় আছেঃ
“Umer e daraz mang ka lae the char din,
Do arzo me kat gae; do intezar me.”
যার অর্থ:
“চার দিনের জন্য আয়ু নিয়ে এসেছিলাম।
দু’দিন কাটল প্রত্যাশায় আর দু’দিন অপেক্ষায়।”
বাহাদুর শাহ জাফরের লেখা গজল পরিবেশন করছে তার ভক্তরা
সম্রাটের শেষ ইচ্ছা ছিল স্বদেশের মাটিতে সমাহিত হওয়া। জন্মভূমির প্রতি ছিল তার প্রচণ্ড অনুরাগ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে। স্বদেশের মাটিতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ কিংবা সমাহিত হওয়ার সাধ কোনোটাই পূরণ হবে না। নিদারুণ দু:খে তিনি লিখেছেন একের পর এক কালোত্তীর্ণ কবিতা।
নীচের জগত বিখ্যাত শেরটি যা কাঁচ দিয়ে বাধানো আছে সমাধির বুকে
"কিতনা বদ নসীব হ্যায় জাফর,
দাফনে কে লিয়ে দু গজ জমিন ভী না মিলি কু ইয়ার মে"
ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী মায়ানমার সফরে গিয়ে তার সমাধি সৌধ পরিদর্শন করেন ।সে সময় তিনি আক্ষেপভরা এই বিখ্যাত শায়েরীর জবাবে পরিদর্শক বইতে লিখেছিলেন
"দু গজ জমিন তো না মিলি হিন্দুস্তান মে , পার তেরী কোরবানী সে উঠি আজাদী কি আওয়াজ, বদনসীব তো নাহি জাফর, জুড়া হ্যায় তেরা নাম ভারত শান আউর শওকত মে, আজাদী কি পয়গাম সে"।
বাংলায় অনুবাদ করলে দাড়ায়;
"হিন্দুস্তানে তুমি দু গজ মাটি পাও নি সত্য।তবে তোমার আত্মত্যাগ থেকেই আমাদের স্বাধীনতার আওয়াজ উঠেছিল। দুর্ভাগ্য তোমার নয় জাফর, স্বাধীনতার বার্তার মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষের সুনাম ও গৌরবের সঙ্গে তোমার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে"।
সম্রাট তার শেষ দিনগুলোতে
১৮৬২ সালের ৭ই নভেম্বর হতভাগ্য সম্রাটের করুন মৃত্যুর সাথে সাথে অস্তমিত হলো চেঙ্গিস খান আর তৈমুর লং এর উত্তরসুরী ভারত তথা পৃথিবীর ইতিহাস বিখ্যাত মহাপরাক্রমশালী মুঘল রাজবংশের। সেই সাথে নিভে গেল মুঘল সুর্য্যের শেষ রশ্মি। তড়িঘড়ি করে নির্বাসিত জীবনের চারটি বছর কাটানো বাসাটির পেছনের বাগানে মাটি দেয়া হলো । না তৈরী হলো কোন সৌধ, না রাখা হলো কোন চিনহ। বাশ দিয়ে ঘেরা কবরটি হারিয়ে গেল ঘাসের আচ্ছাদনে। লুকিয়ে ফেলতে চাইলো তাকে সকল লোক চক্ষুর অন্তরালে যা কিনা ১৯৯১ সালে পুনঃ আবিস্কৃত হয় । অবশ্য এর আগে ডেভিস চাপে পড়ে তার কবরটি চুন সুরকী দিয়ে চারিদিক ঘিরে দিয়েছিল।
সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের কবরের রেপ্লিকা, পত্নী জিনাত মহল ও এক ছেলের কবর
এই ভাগ্য বিড়ম্বিত বৃদ্ধ সম্রাটের শেষ আশ্রয়স্থল দেখে চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠলো ।মিজ লিউইন ও সব্কিছ জেনে নির্বাক হয়ে গেলেন।
সেখানকার একজন খাদেম নাম হাফিজ কামালুদ্দিন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখালো সব কিছু সাথে তার আবেগ আর ভালোবাসায় জড়ানো প্রমানিত অপ্রমানিত কিছু ঐতিহাসিক বিবরণ। নিয়ে গেল বর্তমান ভবনের নীচ তালায় ইটের গাথুনি দেয়া সাদা মাটা আসল কবরটি দেখাতে । চাদর তুলে দেখালো আমাদের ।
কবরটি দেখাচ্ছে খাদেম হাফিজ কামালুদ্দিন
।বৃটিশ শাসকরা চেয়েছিল বাহাদুর শাহ জাফরকে সবার মন থেকে মুছে ফেলতে, আজ দেখলাম এব্যাপারে তারা সত্যি সফল। তবে আজও ভারতের যে কজন শীর্ষ নেতা মায়ানমার সফর করেছেন তারা প্রত্যেকে তাদের পুর্বসুরী আত্বত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভারতের স্বাধীনতার আওয়াজ তোলা সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পন করতে ভুল করেনি। এর মাঝে রাজীব গান্ধী, এ পি জে আবুল কালাম আজাদ আর মন মোহন সিং এর ছবি দেয়ালে ঝুলানো দেখলাম।ছবিতে আরো আছে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার ।
ভারতীয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পরিদর্শন বইতে সাক্ষর করছেন
এসব নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ ছাড়াও স্থানীয় কিছু সাধারন মুসলিম জনগনও তাকে একজন সুফী সাধক হিসেবে সন্মান করতে ভুলেন না।আর বেশ কিছু ভক্তদের দেখলাম নীরবে কবরের পাশে বসে সুফী এই সম্রাটের আত্বার মাগফেরাত কামনা করে কোরআন তেলওয়াত করছে।
শেষ জীবনে সুফী হিসেবে তার শিস্যদের মাঝে
বের হয়ে আসার আগ মুহুর্তে আমার সহপর্যটকের একটি ছবি ক্যামেরাবন্দী করলাম
অনেক দিনের সাধ ছিল দেখার,কিন্ত দেখার পর বিষন্ন মনে বের হয়ে আসলাম ইতিহাসের এক দুর্ভাগা সম্রাটের সমাধি থেকে।
সব ছবি আমাদের ক্যামেরায় তোলা
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:২৪