মহান মুক্তিযোদ্ধা মনসুরুল আজীমের নিজ হাতে লেখা দিনলিপির একটি পাতা
সকালে ঘুম থেকে উঠে যথারীতি সেই পুরি আর চা নাস্তা খেয়ে বসেছি মাত্র । হঠাৎ খবর এলো আমাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের সকল আয়োজন সম্পন্ন। শুনলাম আমাদের জন্য বড় দুটো নৌকার ব্যবস্থা হয়েছে সেই সাথে আমাদের জন্য সকল অস্ত্রশস্ত্র বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে।
সন্ধ্যার মধ্যেই আমাদের সবাইকে রওনা দিতে হবে। সে খবরে আমাদের সবারই পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক গভীর আনন্দ সাথে ভয়ের এক শিহরণ বয়ে গেল। আগের রাতটি যেহেতু ঘুমহীন কেটেছিল তাই ভেবেছিলাম দিনে সবাই একটু ঘুমিয়ে নেবো । কিন্ত দেশে ফেরার খবর পেয়ে উত্তেজনায় ঘুম যে কোথায় গেল সবার তার আর খবর নেই।তবে আশ্চর্যের ঘটনা হলো আমাদের কারো মাঝেই কোন ক্লান্তির ছাপ ছিল না ।
দেশ,নিজের দেশ মনের মাঝে তার যে কত বড় স্থান তা সেদিন অনুভব করেছিলাম মনে প্রানে।টুকটাক কিছু কাজ এবং কয়েকজনের সাথে দেখা করতে আমি আর বাকী বেড়িয়ে পড়লাম, সারাদিন পর সন্ধ্যায় দুজন নিমতলী ক্যম্পে ফিরে আসলাম।
সকালে ক্যম্প থেকে বের হওয়ার সময়ই বাকী সবাইকে সমস্ত অস্ত্র পরিস্কার করে গোলা বারুদ ভরে রাখার জন্য নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিল।যাতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত ব্যবহার করা যায়।
সন্ধ্যায় ক্যম্পে ফিরে এসে বাকী নিজে সবগুলো অস্ত্র পরীক্ষা করে এবং লক করে সবার মাঝে সেগুলো বিতরণ করে দিল অর্থাৎ এখন থেকে যার যার অস্ত্র তাকেই বহন করতে হবে সাথে সেটার দায়িত্বও। বাকি যা ছিল যেমন গোলা বারুদ, মাইন,অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ সেগুলোও কার কার দায়িত্বে থাকবে তা বুঝিয়ে দিয়ে সবাইকে খেয়ে নেবার জন্য নির্দেশ দিল।
মনে আছে নিমতলী ক্যাম্প থেকে বিদায় বেলায় ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন সাহেব আমাদের উদ্দ্যশ্যে ছোটখাটো একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং আমাদেরকে নৌকা পর্যন্ত পৌছে দেয়ার জন্য একজন নন কমিশন্ড অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
উনি গ্রামের ভেতর দিয়ে আমাদের প্রায় সাড়ে তিন কিঃমিঃ রাস্তা পেরিয়ে নৌকায় উঠিয়ে দিয়েছিল। তার কাছেই জানলাম আমাদের আসার আগেই তারা লোক পাঠিয়ে আমাদের এই যাত্রাপথের নিরাপত্তাটি ব্যাপারটি নিশ্চিন্ত করেছিল।সেই নিরাপদ পথটুকু পার হবার পর আমাদেরকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।
ভারত থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে এবার আসল যাত্রা হলো শুরু। দুটো নৌকায় আমরা প্রায় নব্বই জন প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা আমরা দুই নৌকায় সতর্ক অবস্থায় গাদাগাদি হয়ে বসে আছি।এক বিলের মাঝ দিয়ে আমাদের নৌকা দুটো চলতে শুরু করলো।রাতের বেলা সেই বিলের পানি থেকে উঠে আসা শীতল বাতাসে স্বল্প এবং স্যতস্যতে প্রায় ভেজা কাপড় পড়া আমরা সবাই প্রচন্ড ঠান্ডায় রীতিমত ঠক ঠক করে কাপছিলাম।
সারারাত ধরে চলতে চলতে রাত প্রায় তিনটা সাড়ে তিনটার দিকে বিলের মাঝ বরাবর আড়াআড়ি এক রাস্তার এক কিঃমিঃ দুরত্বে এসে পৌছালাম। রাস্তাটি সিএনবি রোড নামে পরিচিত।আমরা সেই রাস্তা অতিক্রম করে ঐপাশে যাবার জন্য পথ খুজে বেড়াচ্ছি।
সে সময় আমাদের সবার মনের মাঝে প্রচন্ড উত্তেজনা সাথে আশংকাও বিরাজ করছিল। মাঝি খুব সন্তর্পনে লগি বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল যাতে কোন আওয়াজ না হয়। আর রাতের বেলা সামান্য আওয়াজই বহুদুর পর্যন্ত শোনা যায়।
ঠিক সে সময় সিএনবি রোডের উপর পাক বাহিনীর একটি জীপ আর দুই ট্রাক ভর্তি সৈন্যের এক কনভয় এসে হাজির। তারা ঠিক আমাদের বরাবর এসে থামলো। এই রুটটা যে মুক্তিবাহিনীরা যাতায়তের জন্য ব্যাবহার করতো সেই তথ্য বোধ হয় তাদের কাছে ছিল। এরপর তারা ট্রাক থেকে চারিদিকে সার্চ লাইট ফেলতে লাগলো। ভাগ্য সহায় ছিল যার জন্য মাঝি্রা একেবারে নিঃশব্দে আমাদের নৌকা দুটোকে খুব দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে ঝাউবনের আড়ালে নিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর ওরা চলে গেল, এতে বোঝা গেল তারা নিশ্চিত হয়ে নয়, সন্দেহ আর নিয়মিত টহলেরই অংশ হিসেবেই তাদের এই অভিযান ছিল।
এ ঘটনার পর আমরা আর রাস্তা পার হওয়ার ঝুকি না নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এক গৃহস্থ বাড়ীর পাশে নৌকা থামালাম। বাড়ীর মালিক আমাদের দেখে তাৎক্ষনিক ভাবে তার বিভিন্ন ঘরে আমাদের এতগুলো ছেলের থাকার বন্দোবস্থ করলেন।খাওয়ার জন্য চিড়া, মুড়ি আর গুড়।আমাদের আশ্রয় দেয়া ছাড়াও তার সবচেয়ে বড় উপকারটি ছিল আমাদের দুই নৌকা ভর্তি অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা।
পরে জানতে পেরেছিলাম বাড়ীর মালিক সেই গৃহস্থ ভদ্রলোক সেই গ্রামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি।আমাদের সব রকম সহযোগীতা করার পর তিনি সিএনবি রোডের দিকে চলে গেলেন। সেখানে বার বার পাক বাহিনীর টহল দল আসছিল । তাকে জিজ্ঞেস করায় উনি জানালেন তার দলবল সারাক্ষন সেখানে পাহারা দিচ্ছে, কোন মুক্তির সাধ্য নেই এখান দিয়ে যাওয়ার। তার কথা শুনে হানাদাররা আশ্বস্ত হয়ে চলে গেল। উনি এসে এই ঘটনা জানালেন এবং দিনে নয় রাতের বেলা রওনা হওয়ার পরামর্শ দিলেন।
দুপুরে মাঝি সহ আমাদের এই বিশাল বাহিনীর জন্য তিনি ডাল ভাতের বন্দোবস্ত করলেন।বহুদিন পর সেই দেশীয় পদ্ধতিতে রান্না করা সামান্য ডাল ভাতের স্বাদ আমাদের কাছে অমৃতের মত বলেই মনে হলো।
দিন যেন আর শেষ হয় না । আমরা লুকিয়ে বসে আছি নিঃশব্দে।অবশেষে দিন পেরিয়ে রাত আসলো। রাত্রি দশটার দিকে উনি মাঝিদের বুঝিয়ে দিলেন সিএন্ডবি রোডের কোথায় ব্রীজ আছে এবং কোন ব্রীজের তলা দিয়ে আমাদের পার হতে হবে।সেই দয়ালু অতিথিপরায়ন লোকটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এবং তারই পাঠানো লোকের ইঙ্গিত পেয়ে আমরা সেই ব্রিজের নীচ দিয়ে সিএন্ডবি রাস্তা পার হয়ে আসি।
খুব সম্ভবত সকাল নটা কি দশটার দিকে আমরা নবীনগর গ্রামে প্রবেশ করি। তখন আমরা না থেমেই এগিয়ে যাচ্ছি একটি খালের মাঝ দিয়ে।সামনে নদী সেটা পার হতে হবে।
কিন্ত সেই নদীতে পাক বাহিনী গান বোট নিয়ে টহল দেয় নিয়মিত। সকলের ভেতর এক টান টান উত্তেজনা।এমন সময় একটু উচু জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোক আমাদের থামতে আদেশ দিল।কিন্ত তাদের কথার উত্তর না দিয়ে বাকী মাঝিদের নৌকা চালিয়ে যাবার আদেশ দিল।আমরা থামিনি দেখে ওদের মাঝখান থেকে দুজন লোক ছোট এক ডিঙ্গি নৌকা করে আমাদের পিছু নিল।কাছে এসে বল্লো ‘নৌকা থামাও, ভেতরে কি কি জিনিস আছে দেখতে হবে’।
বাকী বল্লো “সামনে আসো দেখো কি আছে”।
যেই লোকটি সামনে এসেছে অমনি আমাদের ভেতর একজন ঢাকা দিয়ে রাখা সেট করা এল এম জির উপর থেকে কাপড় সরিয়ে তার বুক বরাবর তাক করলো।তাই না দেখে সেই কাপুরুষ দুটো সাথে সাথে নৌকা ঘুরিয়ে পালিয়ে গেল।
আমাদের পরিকল্পনা ছিল এখানে দিনটা কাটিয়ে রাতের অন্ধকারে নদী পার হবো। কিন্ত এই ঘটনার পর সেই গ্রামে নৌকা ভেড়ানো নিরাপদ না। সিদ্ধান্ত নিলাম দিনের বেলায়ই আমরা নদী পার হয়ে যাবো।
শুরু হলো এক বিশাল মেঘনার পাড়ি দেয়া। ভয় ছিল নদীর মাঝে যদি আমাদের থামতে বলে বা আক্রমন করে তাহলে কাউন্টার এটাক করার মত অবস্থা আমাদের নেই। একেতো অল্প কয়টি অস্ত্রতে গুলি ভরা তাতে এক একটি নৌকায় এত জন আমরা বসে আছি।কোন সমস্যা হলে নড়াচরার কোন কায়দা নেই।তখন ছিল ভরা বর্ষা। নদীর একূল ওকূল দুকূলই যেন দেখা যায়না।
অত্যন্ত দক্ষ সেই মাঝিরা বিনা ঝামেলায় সেই ঘোর বর্ষার বিশাল মেঘনা পার করে দিয়েছিল যদিও এতে আমাদের দীর্ঘ সময় লেগেছিল । প্রায় বিকেল নাগাদ আমাদের নৌকাদুটো নদী ছেড়ে আবার একটি গ্রামের ভেতর প্রবেশ করলো। প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ আমরা নরসিংদী্র একটি গ্রামে পৌছাই। মুক্তিসেনাদের জন্য এলাকাটি মোটামুটি নিরাপদ ছিল।
আমাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। সেখানে আমরা দুদিন সতর্ক অবস্থায় ছিলাম। সেই গ্রামে দিনের বেলা কোন সমস্যা না থাকলেও রাতে পাহারা দিতে হতো। কিছু দিন আগে এখানে পাক বাহিনী কমান্ডো স্টাইলে আক্রমন চালায় তবে খুব একটা ক্ষতি করতে পারে নি। খুব সম্ভবত তাদের কাছে তথ্য ছিল যে এলাকাটি মুক্তিযোদ্ধারা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
এবার আমরা সবাই দু ভাগে ভাগ হয়ে ঢাকায় ওঠার পরিকল্পনা করলাম।তৃতীয় দিন বিকেল নাগাদ আমরা তিনজন তিনজন মোট ছয় জন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আমার সাথে ছিল একজন নাম নান্নু, আরেকজনের নাম মনে পড়ছে না। ঐদিকে বাকী আর দুজন কিছুক্ষন পর রওনা হলো।আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকার আশে পাশে অস্ত্রশস্ত্র সহ ক্যম্প করার জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা খুজে বের করা।
কিছু দুর হেটে আসার পর একটা হাটের কাছে এসে হাজির হোলাম।সেদিন ছিল হাট বার।মনে আছে নান্নুর বুদ্ধিমত তিনজন তিনটি নোনা ইলিশ কিনে হাতে ঝুলিয়ে নিলাম। নান্নুর মতে নোনা ইলিশের গন্ধ পাক বাহিনী সহ্য করতে পারে না সুতরাং তারা আমাদের কাছে আসবে না।
আমাদের পরিকল্পনা ছিল নৌকা করে নরসিংদী গিয়ে ট্রেনে বা বাসে ঢাকায় আসবো।
বাকীরা অন্য ভাবে চলে যাবে। সিদ্ধান্ত হলো তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার চেষ্টা দূরে থাক দেখা হলেও কেউ কাউকে চিনবে না এবং কথা বলবে না ।
প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ আমরা নরসিংদী ঘাটের কাছে এসে পৌছাই।চারিদিক অন্ধকার, আমাদের নৌকা ঘাটে ভিড়তেই চারিদিক থেকে সার্চ লাইট জ্বলে উঠলো আর সাথে সাথে কয়েকজন রাজাকার ‘হল্ট’ বলে আমাদের ঘিরে ফেল্লো।
ধরা পড়লে আমরা কি বলবো তা আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। ওরা প্রথমেই আমাদের তিনজনকেই একে একে সারা শরীর তল্লাশী করলো।তারপর ঘাটের পাশেই স্থাপিত এক রাজাকার ক্যম্পে আমাদের নিয়ে গেল। সেখানে আগে থেকে যারা ছিল তাদের তল্লাশী করে ছেড়ে দিল কিন্ত আমরা যেহেতু ঢাকা যাবো তাই আমাদের আটকে রাখলো।পরে ওখান থেকে আধা কিঃমিঃ দূরে এক স্কুলের একটি রুমে বসিয়ে তাদের কমান্ডারকে ডেকে আনলো।
উনি আমাদের প্রায় দুই ঘন্টা জেরা করলো আর আমরা তিনজনই আমাদের য়াগে থেকে ঠিক করা গল্পটি বলে গেলাম বার বার ।গল্পটি ছিল আমার অসুস্থ ফুপুকে দেখতে নবীনগর গিয়েছিলাম প্রতিবেশী নান্নুকে নিয়ে। এখন কলেজ খুলে গেছে তাই বাসায় ফিরে যাচ্ছি। ভাঙ্গা রেকর্ডের মত একই কথা দুই ঘন্টা ধরে বলার পর এক সময় মনে হলো ওরা আমাদের কথা বিশ্বাস করছে। রাত তখন দশটা বাজে জানালাম আমাদের কাছে কোন টাকা নেই, এখন কোথায় যাবো কি খাবো?
একথা শুনে রাজাকার কমান্ডার একজনকে আদেশ দিল একটা ছাপড়া হোটেলে আমাদের রেখে আসতে।খাবারও দিতে বলে দিল কিন্ত একটাই শর্ত সকালে তার সাথে অবশ্যই দেখা করতে হবে।
দোতালা সেই ছাপরা হোটেলে মই বেয়ে উঠে মাচায় শোবার বন্দোবস্থ।হোটেল আলার দেয়া খাবার খেয়ে পানির বদলে জল বলে ফেলেছিলাম। অনেক দিন ভারতে থাকার অভ্যাস।জল শব্দটা শুনেই বেয়ারা তাড়াতাড়ি ইশারা করলো এবং ফিস ফিস করে বল্লো ‘খবরদার এই শব্দটা উচ্চারণ করো না’। আমি এই ঘটনায় কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কারন আমার সাথে আরো দুজনের জীবন জড়িত।
উপড়ে উঠে শুয়েছি মাত্র হঠাৎ শুনি কে যেন ফিস ফিস করে আমার নাম ধরে ডাকছে।দেখি পাশের ঐ রকমই এক হোটেলে বাকীরাও উঠেছে।কোন কথা বললাম না শুধু ইশারায় জানালাম সব কিছু ঠিক আছে।
সকালে উঠে রাজাকার কমান্ডারের নির্দেশমত তার সাথে দেখা করতে যাবো। নান্নু বল্লো ‘চলো আমরা পালিয়ে যাই, তার সাথে দেখা করার দরকার নাই’।আমি বললাম “না পালিয়ে যাবো না”।
নানা রকম যুক্তি তর্কের পর শেষ পর্যন্ত আমারই জয় হয়েছিল। দেখা করার পর সেই কমান্ডার আমার টোপটাই গ্রহন করলো। সে বিশ্বাস করলো আমরা নিরীহ নইলে দেখা করতাম না। এরপর সে আমাদের একটা পাস দিয়েছিল যাতে ঢাকায় আসার পথে আর কেউ আমাদের না ধরে।
সেই পাস নিয়ে আমরা নরসিংদী স্টেশনে আসলাম এবং ট্রেন ধরলাম। এরপর রাস্তায় আর কোন ঝামেলা হলো না।
ট্রেন ছেড়েছিল দুপুরের পর ফলে তেজঁগা স্টেশন আসতেই সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত । আগেই সিদ্ধান্ত ছিল কমলাপুর স্টেশনে যাবো না। কারন পরিচিত কারো সাথে দেখা হতে পারে। তেজঁগা নেমে আমি আর নান্নু রিকশা করে নয়াটোলা এসে নামলাম। আরেকটি ছেলে বাসা গ্রীন রোডে তাই সে একা আরেকটা রিকশায় চলে গেল।
আমরা দুজন হেঁটে হেঁটে এ গলি ও গলি দিয়ে বাসায় এসে পৌছালাম। নান্নুর বাসা ছিল মালিবাগ বাজারে পাশে কলোনীতে। বাসায় যখন পৌছালাম রাত তখন দশটা। সে সময় ঢাকার অবস্থা অবর্ননীয়। সন্ধ্যা হতে না হতেই সবাই যার যার ঘরে দরজা বন্ধ। দোকানপাট খোলা্ থাকতো না। আর সে সময় দোকান পাটে এত আলোকশয্যার বাহারও ছিল না । আর সেই সময় শহর জুড়ে এক ভীতিকর আতংকজনক অবস্থা।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে বাড়ী পৌছালাম। তার আগে চারিদিক ভালো করে দেখেনিলাম কেউ অনুসরণ করছে কি না ?
নিশ্চিন্ত হয়ে নীচ তালায় বাবার ঘরের জানালায় আস্তে করে টোকা দিয়েছিলাম। ভেতর থেকে শুনতে পেলাম মা বাবাকে বলছে, ' দেখো আমার শফিক এসেছে '। একেই বলে মা এর মন।
চলবে:-
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সেক্টর ২ রনাঙ্গনে সক্রিয় অংশগ্রহনকারী এক বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বহস্তে লেখা দিনলিপি (পঞ্চম পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৫